21-04-2024 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 30-03-99 মধুবন


"তীব্র পুরুষার্থের একাগ্রতাকে জ্বালা রূপ বানিয়ে অসীম বৈরাগ্যের তরঙ্গ ছড়াও"


আজ বাপদাদা প্রত্যেক বাচ্চার ললাটে তিন রেখা দেখছেন। যার মধ্যে একটা রেখা হলো - পরমাত্ম - পালনের ভাগ্যের রেখা। পরমাত্ম-পালনের এই ভাগ্য সারা কল্পে একবারই এখন প্রাপ্ত হয়, এই সঙ্গমযুগ ব্যতীত এই পরমাত্ম-পালন কখনও প্রাপ্ত হতে পারে না। এই পরমাত্ম-পালন খুব অল্প বাচ্চার প্রাপ্ত হয়। দ্বিতীয় রেখা হলো - পরমাত্ম-পাঠের ভাগ্যের রেখা। পরমাত্ম-পাঠ এটা কত ভাগ্যের যে স্বয়ং পরম আত্মা শিক্ষক হয়ে পড়াচ্ছেন। তৃতীয় রেখা - পরমাত্ম-প্রাপ্তি সমূহের রেখা। ভাবো, কত প্রাপ্তি! সকলের মনে আছে তো না - সমূহ প্রাপ্তির লিস্ট কত লম্বা! তো প্রত্যেকের ললাটে এই তিন রেখা ঝলমল করছে। নিজেদের এমন ভাগ্যবান আত্মা মনে করো তোমরা? লালন-পালন, পাঠের পড়া আর সমূহ প্রাপ্তি। সেইসঙ্গে বাপদাদা বাচ্চাদের নিশ্চয়ের আধারে অধ্যাত্ম নেশাও দেখছিলেন। প্রত্যেক পরমাত্ম-বাচ্চা কত আধ্যাত্মিক নেশার বাচ্চা! সারা বিশ্বে আর সারা কল্পে তোমরা হাইয়েস্টও, মহানও এবং হোলিয়েস্টও। তোমাদের মতো পবিত্র আত্মা তন দ্বারাও, মন দ্বারাও দেবরূপে সর্বগুণ সম্পন্ন, সম্পূর্ণ নির্বিকার আর কেউ হয় না। তাছাড়া, তোমরা হাইয়েস্টও, হোলিয়েস্টও সেইসঙ্গে রিচেস্টও। বাপদাদা স্থাপনার কালেও বাচ্চাদের স্মৃতি জাগিয়ে দিতেন এবং বলিষ্ঠ চিত্তে সংবাদপত্রেও ছাপিয়েছিলেন যে, "ওম্ মন্ডলী রিচেস্ট ইন দ‍্য ওয়ার্ল্ড।" এ হলো স্থাপনার সময় তোমাদের সকলের মহিমা। যতই তাবড় তাবড় মাল্টি-মাল্টি মিলিয়নিয়র হোক কিন্তু এক দিনে তোমাদের মতো রিচেস্ট হতে পারে না। এত রিচেস্ট হওয়ার সাধন কী? খুব ছোট একটা সাধন। লোকে রিচেস্ট হওয়ার জন্য কত পরিশ্রম করে আর তোমরা কত সহজে উত্তরোত্তর সৌভাগ্যবান (মালামাল) হতে থাকো। সাধন কি তোমরা জানো তো না! শুধু ছোট একটা বিন্দু লাগাতে হবে, ব্যস্। বিন্দু লাগালে আর উপার্জন হলো। আত্মাও বিন্দু, বাবাও বিন্দু আর ড্রামাতে ফুলস্টপ লাগাও, সেও বিন্দু। তো বিন্দু আত্মাকে স্মরণ করার সাথে সাথে উপার্জন বেড়ে গেলো। সাধারণতঃ লৌকিকেও দেখো, বিন্দু দ্বারাই সংখ্যা বেড়ে যায়। একের পিছনে যদি বিন্দু লাগাও তাহলে কি হয়? ১০, দুটো বিন্দু লাগাও, তিন বিন্দু লাগাও, চার বিন্দু লাগাও, বাড়তেই থাকে। তো তোমাদের সাধন কত সহজ! "আমি আত্মা" - এই স্মৃতির বিন্দু লাগানো অর্থাৎ সম্পদের ভান্ডার জমা হওয়া। আবার "বাবা" বিন্দু লাগানোর সাথে সাথে ভান্ডার জমা হয়ে গেল। কর্মে, সম্বন্ধ-সম্পর্কে ড্রামার ফুলস্টপ লাগাও, যা অতীত হয়ে গেছে তা'তে ফুলস্টপ লাগালে আর ভান্ডারের বৃদ্ধি হতে থাকলো। তাহলে বলো সারা দিনে কতবার বিন্দু লাগাও? তাছাড়া, বিন্দু লাগানো কত সহজ! কঠিন কি? বিন্দু পিছলে যায় কি?

উপার্জনের সাধন হিসেবে বাপদাদা কেবল এটাই শিখিয়েছেন যে, বিন্দু লাগাতে থাকো, তো সবাই তোমরা জানো কীভাবে বিন্দু লাগাতে হয়? যদি জানো তো এক হাতের তালি বাজাও। পাক্কা তো না! নাকি কখনো পিছলে যায়, কখনো লেগে যায়? সবচাইতে সহজ বিন্দু লাগানো। কেউ এই চর্মচক্ষে যদি ব্লাইন্ডও হও, সেও যদি কাগজের উপরে পেন্সিল রাখে তো বিন্দু লেগে যায় আর তোমরা তো ত্রিনেত্রী, সেইজন্য এই তিন বিন্দুকে সদা ইউজ করো। কোশ্চেন মার্ক কত বাঁকা হয়, লিখে দেখ, বাঁকা তো না? আর বিন্দু কত সহজ! সেইজন্য বাপদাদা ভিন্ন ভিন্ন রূপে বাচ্চাদেরকে সমান বানানোর বিধি শুনাতে থাকেন। বিন্দুই বিধি। আর কোনো বিধি নেই। যদি বিদেহী হও তবুও বিধি হলো - বিন্দু হওয়া। অশরীরী হও, কর্মাতীত হও, সবের বিধি বিন্দু। সেইজন্য বাপদাদা আগেও বলেছেন - অমৃতবেলায় বাপদাদার সাথে মিলন উদযাপন করাকালীন, আত্মিক বার্তালাপ করাকালীন যখন কার্যে আসো তখন প্রথমে তিন বিন্দুর তিলক মস্তকে লাগাও, ওই লাল বিন্দুর তিলক লাগানো শুরু ক'রো না, বরং স্মৃতির তিলক লাগাও। আর চেক করো - কোনও কারণে এই স্মৃতির তিলক যেন মুছে না যায়। অবিনাশী, দুর্মোচ্য তিলক রয়েছে তোমাদের?

বাপদাদা বাচ্চাদের প্রীতি-ভালোবাসাও দেখেন। কত ভালোবাসার সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে মিলন উদযাপন করতে এখানে পৌঁছায়, তারপর আবার আজ হলেও মিলনের জন্য কত পরিশ্রম ক'রে, কত ভালোবাসায় নিদ্রা, তৃষ্ণা ভুলে প্রথম নম্বরের সারিতে কাছে বসার পুরুষার্থ করে। বাপদাদা সব দেখেন, তোমরা কী কী করো সেই সমগ্র ড্রামা দেখেন। বাপদাদা বাচ্চাদের ভালোবাসায় নিজেকে সমর্পণ করেন এবং বাচ্চাদের এটাও বলেন, যেভাবে সাকারে মিলিত হওয়ার জন্য দৌড়ে দৌড়ে আসো, সেভাবেই বাবা সমান হওয়ার জন্যও তীব্র পুরুষার্থ করো, এক্ষেত্রে ভাবো তো না যে, সবচেয়ে সামনের থেকেও সামনে নম্বর যেন পাওয়া যায়! সবাই তো পায় না, এখানে সাকার দুনিয়া, তাই না! তো সাকার দুনিয়ার নিয়ম রাখতেই হয়। সেই সময় বাপদাদা ভাবেন সবাই সামনে এসে বসে যাক কিন্তু এটা হতে পারে কি? হচ্ছেও, কীভাবে? যারা পিছনে বসে আছে বাপদাদা দেখেন তারা সদা নয়নে সমাহিত হয়ে আছে। তো সবচেয়ে কাছে হলো নয়ন। সুতরাং পিছনে বসে নেই তোমরা বরং বাপদাদার নয়নে বসে আছ। প্রকাশময় রত্ন তোমরা। যারা পিছনে বসে তারা শুনেছ? তোমরা দূরে নেই, কাছে আছ। শরীরের হিসেবে পিছনে বসে আছ কিন্তু আত্মা সবচাইতে কাছে রয়েছে। তাছাড়া, পিছনে যারা বসে আছে বাপদাদা তো সবচাইতে বেশি তাদেরকেই দেখেন। দেখো, যারা কাছে আছে তাদের তো এই স্থূল নয়নে দেখার চান্স রয়েছে আর যারা পিছনে বসে তাদেরকে এই নয়নে কাছে দেখার চান্স নেই, সেইজন্য বাপদাদা তাদেরকে তাঁর নয়নে সমাহিত করে নিয়েছেন।

বাপদাদা মৃদু মৃদু হাসতে থাকেন, দু'টো বাজার সাথে সাথে লাইন শুরু হয়ে যায়। বাপদাদা বোঝেন যে, বাচ্চারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্তও হয়ে যায় কিন্তু বাপদাদা সব বাচ্চাকে ভালোবাসার ম্যাসাজ করে দেন। পায়ে ম্যাসাজ হয়ে যায়। বাপদাদার ম্যাসাজ দেখেছো তো না - অনেক আলাদা আর আদরপূর্ণ। তো আজ সবাই এই সিজনের লাস্ট চান্স নেওয়ার জন্য চারদিক থেকে দৌড়ে দৌড়ে এসে পৌঁছে গেছে। এটা ভালো। বাবার সঙ্গে মিলনের উৎসাহ-উদ্দীপনা সদা সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বাপদাদা তো বাচ্চাদের এক সেকেন্ডও ভোলেন না। বাবা এক আর বাচ্চা অনেক কিন্তু অনেক বাচ্চাকেও এক সেকেন্ডও ভোলেন না কেননা হারানিধি তোমরা। দেখ, দেশ- বিদেশের কোথায় কোথায় কোণ কোণ থেকে বাবাই তোমাদের খুঁজেছেন। তোমরা বাবাকে খুঁজতে পেরেছ? লক্ষ্যহীনভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছো

কিন্তু খুঁজে পাওনি আর বাবা বিভিন্ন দেশ, গ্রাম, গঞ্জ, শহর শহরতলী যেখানে যেখানেই বাবার বাচ্চা রয়েছে, সেখান থেকে খুঁজে নিয়েছেন। নিজের বানিয়ে নিয়েছেন। গীত গেয়ে থাকো তো না - আমি বাবার আর বাবা আমার। না জাতি দেখেছেন, না দেশ দেখেছেন, না রঙ দেখেছেন, সবার মস্তকে একই রূহানী রঙ দেখেছেন - জ্যোতির্বিন্দু। ডবল ফরেনার্স কী ভাবছো তোমরা? বাবা জাতি দেখেছেন? তোমরা কালো বা গৌর, শ্যাম বা সুন্দর কিনা দেখেছেন? কিছু দেখেননি। আমার - এটা দেখেছেন। তাহলে বলো, বাবার স্নেহ-ভালোবাসা নাকি তোমাদের ভালোবাসা? কার আছে? (উভয়ের আছে) উত্তর দিতে বাচ্চারাও

হুঁশিয়ার, বলে বাবা আপনিই বলেন যে, ভালোবাসা ভালোবাসাকে টানে, তো আপনার ভালোবাসা আছে তো আমাদের আছে, তবে তো টানে। বাচ্চারাও হুঁশিয়ার আর বাবাও খুশি হন যে, বাচ্চারা এত মনোবল, উৎসাহ-উদ্দীপনা বজায় রাখে।

বাপদাদার কাছে অনেক বাচ্চার ১৫ দিনের চার্টের রেজাল্ট এসেছে। একটা বিষয় তো বাপদাদা চতুর্দিকের রেজাল্টে দেখেছেন যে, মেজরিটি বাচ্চার অ্যাটেনশন ছিল। তারা নিজেরাও যতটা পার্সেন্টেজ চায় ততটা হয় না, কিন্তু অ্যাটেনশন আছে এবং যে তীব্র পুরুষার্থী বাচ্চারা আছে মনে মনে তারা নিজের প্রতিজ্ঞা পুরো করার লক্ষ্যে অগ্রচালিত হচ্ছে। আর অগ্রচালিত হতে হতে গন্তব্যে পৌঁছেই যাবে। মাইনরিটি এখনও কখনো গড়িমসিতে কখনো আলস্যের বশে অ্যাটেনশনও কম দিচ্ছে। তাদের এক বিশেষ স্লোগান আছে - হয়েই যাবে, করেই যাবো... আমাকে যেতে হবে এটা বলে না, যাবো। হয়েই যাবো, এটা হচ্ছে - হবে ভাব। যেতেই হবে এটা তীব্র পুরুষার্থ। বাপদাদা অনেক প্রতিজ্ঞা শোনেন, বারবার খুব ভালো প্রতিজ্ঞা করে। বাচ্চারা এত মনোবলের সাথে প্রতিজ্ঞা করে যে সেই সময় বাপদাদাকেও দিলখুশ মিঠাই খাইয়ে দেয় বাচ্চারা। বাবাও খেয়ে নেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা অর্থাৎ পুরুষার্থে অধিকতম লাভ। যদি লাভ নেই তো প্রতিজ্ঞা শক্তিশালী নয়। সুতরাং, যদিও বা প্রতিজ্ঞা করো অন্ততঃ দিলখুশ মিঠাই খাওয়াও তো না! এইসঙ্গে তীব্র পুরুষার্থের একাগ্রতাকে অগ্নিরূপে নিয়ে এসো। জ্বালামুখী হও। সময় অনুসারে মনের যা কিছুই রয়ে গেছে – সম্বন্ধ-সম্পর্কের হিসাব-নিকাশ সেসব জ্বালা স্বরূপের দ্বারা ভস্ম করো। এটাই তোমাদের একাগ্রতা যাতে বাপদাদাও তোমাদের পাশ করিয়ে দেন কিন্তু এখন একাগ্রতাকে অগ্নিরূপে নিয়ে এসো।

বিশ্বে একদিকে ভ্রষ্টাচার, অত্যাচারের অগ্নি হবে, অপরদিকে তোমরা সব বাচ্চার পাওয়ারফুল যোগ অর্থাৎ একাগ্রতার অগ্নি জ্বালারূপে আবশ্যক। এই জ্বালারূপ এই ভ্রষ্টাচার, অত্যাচারের অগ্নিকে সমাপ্ত করবে এবং সকল আত্মাকে সহযোগ দেবে। তোমাদের একাগ্রতা জ্বালারূপ হোক অর্থাৎ পাওয়ারফুল যোগ হোক, তো স্মরণের এই অগ্নি, সেই অগ্নিকে সমাপ্ত করবে এবং অপরদিকে আত্মাদের পরমাত্ম-সমাচারের, শীতল স্বরূপের অনুভূতি করাবে। অসীম বৈরাগ্যের বৃত্তি প্রজ্জ্বলন করাবে। একদিকে ভস্ম করাবে, অন্যদিকে শীতলও করাবে। অসীম বৈরাগ্যের তরঙ্গ ছড়াবে। বাচ্চারা বলে - আমার যোগ তো আছে, বাবা ছাড়া আর কেউ নয়, এটা খুব ভালো। কিন্তু সময় অনুসারে এখন জ্বালারূপ হও। স্মারকে যে শক্তিসমূহের শক্তি রূপ, মহাশক্তি রূপ, সর্বশস্ত্রধারী দেখানো হয়েছে, এখন সেই মহাশক্তি রূপ প্রত্যক্ষ করাও। পান্ডব হও বা শক্তি হও, সবাই সাগর থেকে নিঃসৃত জ্ঞান নদী তোমরা, সাগর নও, নদী। জ্ঞান গঙ্গা। তো সমূহ জ্ঞান গঙ্গা এখন আত্মাদের নিজের জ্ঞানের শীতলতা দ্বারা পাপের অগ্নি থেকে মুক্ত করো। এটাই হলো বর্তমান সময়ের ব্রাহ্মণের কার্য।

বাচ্চারা সবাই জিজ্ঞাসা করে এই বছরে কী সেবা করা যায়? তো বাপদাদা প্রথম সেবা এটাই বলেন যে, এখন সময় অনুসারে সব বাচ্চা বাণপ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে, তো বাণপ্রস্থী নিজের সময়, সাধন সব বাচ্চাকে দিয়ে স্বয়ং বাণপ্রস্থী হয়। সুতরাং তোমরাও সবাই নিজের সময়ের খাজানা, শ্রেষ্ঠ সংকল্পের খাজানা এখন অন্যদের প্রতি নিয়োগ করো। নিজের প্রতি সময়, সঙ্কল্প কম লাগাও। অন্যদের প্রতি নিয়োগ করায় নিজেও সেই সেবার প্রত্যক্ষফল খাওয়ার নিমিত্ত হয়ে যাবে। মন্স সেবা, বাচা সেবা আর সবচেয়ে বেশি - ব্রাহ্মণ হোক বা যে কেউই সম্বন্ধ-সম্পর্কে আসুক তাদেরকে মাস্টার দাতা হয়ে কিছু না কিছু দিতে থাকো। নিঃস্বার্থ হয়ে খুশি দাও, শান্তি দাও, আনন্দের অনুভূতি করাও, প্রেমের অনুভূতি করাও। দিতে হবে আর দেওয়া মানে স্বতঃই নেওয়া। যে কেউই যে সময়ে, যে রূপে সম্বন্ধ-সম্পর্কে আসুক যেন কিছু নিয়ে যায়। তোমরা মাস্টার দাতার কাছে এসে যেন খালি না যায়। ব্রহ্মা বাবাকে যেমন দেখেছ - চলতে-ফিরতেও যেকোনো বাচ্চা যদি সামনে এসে যায় তো কিছু না কিছু অনুভূতি ব্যতীত খালি যায় না। এটা চেক করো যে-ই এসেছে, তারা পেয়েছে। কিছু না কিছু দিয়েছো, নাকি খালি চলে গেছে? খাজানায় যে পরিপূর্ণ হয় সে না দিয়ে থাকতে পারে না। অটুট, অখন্ড দাতা হও। কেউ চাইবে, না। দাতা কখনো এটা দেখে না যে, এ' চাইবে তো দেবো। অটুট মহাদানী, মহাদাতা নিজেই দেয়। তো এই বছরে প্রথম সেবা - মহান দাতা হওয়ার সেবা করো। দাতা দ্বারা যা কিছু প্রাপ্ত করেছো তোমরা সেটাই দিয়ে থাকো। ব্রাহ্মণ কোনো ভিখারী নয়, বরং সহযোগী। তো ব্রাহ্মণদের নিজেদের পরস্পরের মধ্যে দান দিতে হবে না, সহযোগ দিতে হবে। এটা হলো প্রথম নম্বরের সেবা। আর সেইসঙ্গে বাপদাদা বিদেশের বাচ্চাদের খুশ-খবর শুনেছেন, তো বাপদাদা দেখেছেন যে, এই সৃষ্টির আওয়াজ ছড়ানোর নিমিত্ত তিনি যে মাইক নাম দিয়েছেন সেটা বিদেশের বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে সেই কার্য করেছে আর প্ল্যান যখন তৈরি হয়েছেই, প্র্যাকটিক্যাল তো হতেই হবে। কিন্তু ভারতেও যে ১৩- টা জোন আছে, প্রতিটা জোন থেকে কমপক্ষে এক এমন বিশেষ নিমিত্ত সেবাধারী যেন হয়, যাকে মাইক বলো বা যা কিছু বলো, আওয়াজ ছড়িয়ে দিতে পারবে এমন বিশেষ কাউকে নিমিত্ত বানাও, বাপদাদা এটা ন্যূনতম বলেছেন কিন্তু বড়- বড়ো দেশে এমন নিমিত্ত যদি হতে পারে তবে শুধু বিভিন্ন জোনের নয়, বরং বড় দেশের থেকেও তাদের এমন তৈরি করে প্রোগ্রাম বানাতে হবে। বাপদাদা বিদেশের বাচ্চাদেরকে হৃদয় থেকে হৃদয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এখন শব্দেও জানাচ্ছেন যে প্ল্যান প্র্যাকটিক্যালি করবে তা' প্রথমে বাপদাদার সামনে তোমরা নিয়ে এসেছ। কার্যতঃ, বাপদাদা জানেন যে, ভারতে এটা করা আরও সহজ, কিন্তু এখন কিছু কোয়ালিটি আত্মার সেবা করার সমীপ সহযোগী বানাও। অনেক সহযোগী আছে কিন্তু সংগঠনে তাদেরকে আরও সমীপে নিয়ে এসো।

এর সাথে সাথে বাপদাদার এই সঙ্কল্প রয়েছে প্রতিটি বড় শহরের যে এরিয়া হয়, তা' অনেক বড় হয়, প্রতিটি সেন্টারকে তাদের নিজের এরিয়া থেকে এইরকম বিশেষ কাউকে তৈরি করা আবশ্যক, কেননা সময় সমাগত প্রায় আর লাস্ট সময় তোমাদের সবাইকে নিজেদের পরিচয় নিজেদের দিতে হবে না, তারা স্পিকার হোক আর তোমাদের তরফে যেন স্পিচ দেয়, তোমরা সার্চলাইট হবে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেককে নিজের এরিয়া থেকে এমন মাইক তৈরি করতে হবে। প্রতিটা এরিয়াতে কোনো না কোনো বিশেষ বিজনেসম্যান বলো কিংবা প্রধান বলো, ভিন্ন ভিন্ন বর্গে থাকেই। নিজের এরিয়ার নিজের নিজের সেন্টারে বিশেষ আত্মাদের তৈরি করো। তাদেরকে শোনাতে দাও যে এই জ্ঞান কি! এখন লাস্ট সময়ে তোমরা সাক্ষাৎকার-মূর্ত, ফরিস্তা হয়ে দৃষ্টি দাও আর তারা যেন স্পিকার হয়। কীভাবে স্পিকার হতে হয় তা' তো সবাই শিখে গেছে, ছোট ছোট টিচাররাও খুব ভালো স্পিচ করে। তোমরা সবাই স্পিচ দিয়ে থাকো। এখন অন্যদের স্পিকার তৈরি করো। তোমাদের দৃষ্টি আর দু'টো কথা এমন আভাস দেয় যেন অনেক সময় ধরে তোমরা তাদের স্পিচ দিয়েছ। এরকম সময় আসতেই হবে।

এখন সময়ও ফাস্ট গতি নিচ্ছে, শুধু সময় বারবার ফাস্ট হয়ে পিছন ফিরে তোমাদের এমনভাবে দেখে যে আমাদের মালিক তীব্রগতিতে আসছে, নাকি সময় ফাস্ট যাচ্ছে? তোমরা মালিক তো না? তাইতো বারবার তোমাদের দেখছে, তোমরা ফাস্ট যাচ্ছ! সেইজন্য এই বছরে কোয়ালিটি সেবাতে বিশেষ অ্যাটেনশন দাও। প্রতিটা সেন্টারের রেজাল্ট আসা চাই - আমাদের সেন্টারে কোন বর্গের আর কত কোয়ালিটি সেবা হচ্ছে! কোয়ান্টিটি তো আপনা থেকেই ক্রমশ: বাড়বেই, এখন এরকম প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপ তৈরি করো।

এর সাথে সাথে ব্রাহ্মণ আত্মাদের আরও সমীপে আনার জন্য, প্রতি দিকে কিংবা মধুবনের চারদিকে জ্বালাস্বরূপের বায়ুমন্ডল বানানোর জন্য, হতে পারে যাকে তোমরা ভাট্টি বলো সেটা করো, অথবা নিজেদের মধ্যে সংগঠনে আত্মিক বার্তালাপ ক'রে জ্বালা স্বরূপের অনুভব করাও এবং অগ্রচালিত করো। যখন এই সেবাতে নিয়োজিত হবে তখন ছোট ছোট যে বিষয়গুলো আছে না - যাতে সময় লাগে, পরিশ্রম লাগে, ভগ্নোৎসাহ হয় সেসব এমন লাগবে, যেন জ্বালামুখী হাইয়েস্ট স্টেজ আর সেই হেতু এই সময় দেওয়া, পরিশ্রম করা, এক পুতুল খেলা অনুভব হবে। আপনা থেকেই সহজভাবে সেফ হয়ে যাবে। বাপদাদা বলেছেন যে, সর্বাপেক্ষা বেশি বাপদাদার কৃপা তখনই হয় যখন তিনি দেখেন যে, মাস্টার সর্বশক্তিমান বাচ্চারা ছোট ছোট বিষয়ের জন্য পরিশ্রম করে। অনুরাগ জ্বালামুখী রূপের তুলনায় কম, তখনই পরিশ্রম লাগে। তো এখন পরিশ্রম থেকে মুক্ত হও, ঢিমেতালে হয়ো না। বরং পরিশ্রম মুক্ত হও।এমন ভেবো না পরিশ্রম করতে হবে না তো আরামে শুয়ে যাবে। বরং অনুরাগ দ্বারা পরিশ্রম শেষ করো। হচ্ছে হবে ভাব দ্বারা নয়। বুঝেছ - কী করতে হবে?

এখন বাপদাদাকে আসতে তো হবেই। জিজ্ঞাসা করে পরে কী হবে? বাপদাদা আসবেন, নাকি আসবেন না? বাপদাদা না তো করেন না, হাঁ জী, হাঁ জী করেন। বাচ্চারা বলে, হুজুর, বাবা বলেন জী হাজির। তো বুঝেছ কী করতে হবে, কী করতে হবে না! অনুরাগ দ্বারা পরিশ্রম কাট করো। এখন পরিশ্রম-মুক্ত বর্ষ উদযাপন করো - অনুরাগে, আলস্যে নয়। এটা দৃঢ়তার সাথে স্মরণে রেখো - আলস্য নয়।

ঠিক আছে - সব সঙ্কল্প পুরো হয়েছে? কিছু রয়ে গেছে? জনককে (দাদি জানকিকে) জিজ্ঞাসা করছি - কিছু রয়েছে? দাদি তো মুচকি মুচকি হাসছেন। খেলা পুরো হয়ে গেছে? এই অপারেশনই বা কি? খেলার মধ্যেকার খেলা। খেলা ঠিক ছিলো তো না!

(ড্রিল)সেকেন্ডে বিন্দু স্বরূপ হয়ে মন-বুদ্ধিকে একাগ্র করার অভ্যাস বারবার করো। স্টপ বলার সাথে সাথে সেকেন্ডে দেহবোধ থেকে মন-বুদ্ধি যেন একাগ্র হয়ে যায়। এইরকম কন্ট্রোলিং পাওয়ার সারাদিনে ইউজ করে দেখো। এইভাবে অর্ডার ক'রো না যে - কন্ট্রোল আর দু' মিনিট পরে কন্ট্রোল হবে, পাঁচ মিনিট পরে কন্ট্রোল হবে। সেইজন্য মাঝে মাঝে কন্ট্রোলিং পাওয়ারকে ইউজ করে যাচাই করতে থাকো। সেকেন্ডে হয়, মিনিটে হয়, বেশি মিনিটে হয়, এই সব চেক করতে করতে চলো।

এখন সবাইকে তিন মাসের চার্ট আরও পরিপক্ক বানাতে হবে। সার্টিফিকেট নিতে হবে। প্রথমে নিজে নিজেকে সার্টিফিকেট দাও তারপরে বাপদাদা দেবেন। আচ্ছা।

চতুর্দিকের পরমাত্ম-পালনের অধিকারী আত্মাদের,
পরমাত্ম-পাঠের অধিকারী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, পরমাত্ম-প্রাপ্তিসমূহ দ্বারা সম্পন্ন আত্মাদের, সদা বিন্দুর বিধির দ্বারা তীব্র পুরুষার্থী আত্মাদের,সদা পরিশ্রম থেকে মুক্ত হয়ে অনুরাগে সমাহিত হওয়া বাচ্চাদের, জ্বালা স্বরূপ বিশেষ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার।

বরদান:-
শুদ্ধ আর শক্তিশালী শক্তির দ্বারা ব্যর্থ ভাইব্রেশনকে সমাপ্ত করে প্রকৃত সেবাধারী ভব

বলা হয়ে থাকে সঙ্কল্পও সৃষ্টি রচনা করে দেয় । যখন দুর্বল আর ব্যর্থ সংকল্প করো তখন ব্যর্থ বায়ুমণ্ডলের সৃষ্টি তৈরি হয়ে যায়। প্রকৃত সেবাধারী সেই হয় যে শুদ্ধ শক্তিশালী সংকল্প দ্বারা পুরানো ভাইব্রেশনও সমাপ্ত করে দেয়। সায়েন্সের ওরা যেমন শস্ত্র দ্বারা শস্ত্র বিনষ্ট করে দেয়, একটি বিমানের দ্বারা অন্য বিমান নিচে ফেলে দেয় - সেইরকম তোমাদের শুদ্ধ, শক্তিশালী সংকল্পের ভাইব্রেশন, ব্যর্থ ভাইব্রেশনকে যেন সমাপ্ত করে দেয়, এখন এইরকম সেবা করো।

স্লোগান:-
বিঘ্ন রূপী সোনার মিহি সূতো থেকে মুক্ত হও, মুক্তি বর্ষ উদযাপন করো।

সূচনাঃ- আজ মাসের তৃতীয় রবিবার অন্তর্রাষ্ট্রিয় যোগ দিবস, সকল ব্রহ্মা বৎস সংগঠিত ভাবে সন্ধ্যা ৬:৩০ থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত নিজের বিশেষ পূজ্য স্বরূপে স্থিত হয়ে নিজেকে ইষ্ট দেব, ইষ্ট দেবী মনে করে নিজের ভক্তদের মনোকামনা পূরণ করুন, দৃষ্টি দ্বারা কৃপা করার দর্শনীয় মূর্ত হয়ে সকলকে দর্শন করিয়ে প্রসন্ন করার সেবা করুন।