01.04.2025 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - বাবা হলেন নলেজফুল, তাঁকে জানি জাননহার বললে ভুল মহিমা করা হয়, বাবা আসেনই তোমাদেরকে পতিত থেকে পবিত্র বানাতে"

প্রশ্নঃ -
বাবার সাথে সাথে আর কাদের মহিমা সবথেকে বেশি হয়ে থাকে এবং কেন?

উত্তরঃ  
১) বাবার সাথে সাথে ভারতেরও অনেক মহিমা রয়েছে। ভারত হলো অবিনাশী ভূমি। ভারত ভূমিই স্বর্গে পরিণত হয়। বাবা ভারতবাসীদেরকেই ধনী, সুখী এবং পবিত্র বানান। ২) গীতার মহিমাও অসীম। গীতা হলো সকল শাস্ত্রের মস্তকমণি। ৩) তোমাদের মতো চৈতন্য জ্ঞান-গঙ্গাদেরও অনেক মহিমা রয়েছে। তোমার সরাসরি সাগর থেকে উৎপন্ন হয়েছো।

ওম্ শান্তি ।
ওম্ শান্তির অর্থ তো নতুন কিংবা পুরাতন বাচ্চারা বুঝেছে। তোমরা বাচ্চারা জেনেছো যে - আমরা সকল আত্মারাই হলাম পরমাত্মার সন্তান। পরমাত্মা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অত্যন্ত প্রিয় সকলের প্রিয়তম (মাশুক) । জ্ঞান আর ভক্তির রহস্যও বাচ্চাদেরকে বোঝানো হয়েছে। জ্ঞান মানে দিন অর্থাৎ সত্য এবং ত্রেতাযুগ আর ভক্তি মানে রাত্রি অর্থাৎ দ্বাপর এবং কলিযুগ। এ হলো কেবল ভারতের কাহিনী। সবার আগে তোমরা ভারতবাসীরা এখানে আসো। ৮৪ চক্রের কাহিনীও তোমাদের মতো ভারতবাসীদের জন্য। ভারত-ই হলো অবিনাশী ভূমি। ভারতভূমিই স্বর্গে পরিণত হয়। অন্য কোনো স্থান এইরকম স্বর্গ হয় না। বাচ্চাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে নুতন দুনিয়া অর্থাৎ সত্যযুগে কেবল ভারত ভূমিই থাকবে। ভারতকেই স্বর্গ বলা হত। তারপর ভারতবাসীরাই ৮৪ বার জন্ম নেওয়ার পরে নরকবাসী হয়ে যায়। এরপর তারাই আবার স্বর্গবাসী হবে। এখন সকলেই নরকবাসী হয়ে গেছে। এরপর অন্যান্য সমস্ত ভূখণ্ডের বিনাশ হবে এবং কেবল এই ভারত-ই থাকবে। ভারতভূমির অসীম মহিমা। এই ভারতেই বাবা এসে তোমাদেরকে রাজযোগ শেখান। এটা হলো গীতার পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ। ভারত-ই পুনরায় পুরুষোত্তম হবে। এখন সেই আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম আর নেই। সেই রাজত্ব নেই, তাই সেই যুগও আর নেই। তোমরা বাচ্চারা জানো যে কেবল বাবাকেই ওয়ার্ল্ড অলমাইটি অথরিটি বলা যায়। ভারতবাসীরা ওনাকে অন্তর্যামী বলে দিয়ে খুব ভুল করেছে। তিনি নাকি সকলের অন্তরের কথা জানেন। বাবা বলেন, আমি কারোর অন্তরের কথা জানি না। আমার কাজ কেবল পতিতদেরকে পবিত্র বানানো। অনেকেই বলে- শিববাবা, তুমি তো অন্তর্যামী। বাবা বলেন, আমি মোটেও ঐরকম নয়, আমি কারোর অন্তরের কথা জানি না। আমি কেবল এখানে এসে তোমাদেরকে পতিত থেকে পবিত্র বানাই। আমাকে এই পতিত দুনিয়াতেই স্মরণ করা হয়। যখন পুরাতন দুনিয়াকে নুতন বানানোর প্রয়োজন হয়, তখন কেবল একবারই আমি আসি। মানুষ তো জানেই না যে এই দুনিয়াটা কখন নতুন থেকে পুরাতন আর পুরাতন থেকে নতুন হয়। সবকিছুই নুতন থেকে পুরাতন অর্থাৎ সতঃ, রজঃ, তমঃ অবস্থা অবশ্যই প্রাপ্ত করে। মানুষের অবস্থাও এইরকম হয়। বালক হলো সতোপ্রধান অবস্থা, তারপর ক্রমশঃ যুবা এবং বৃদ্ধ হয় অর্থাৎ রজঃ এবং তমঃ অবস্থা প্রাপ্ত করে। শরীর যখন একেবারে বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন সেটা ত্যাগ করে পুনরায় বাচ্চা হয়ে যায়। বাচ্চারা জানে যে নুতন দুনিয়াতে ভারত কতো শ্রেষ্ঠ ছিল। ভারতের অসীম মহিমা। অন্য কোনো ভূখন্ড এতো সুখী, ধনবান আর পবিত্র ছিল না। এরপর সতোপ্রধান বানানোর জন্য বাবা এসেছেন। সতোপ্রধান দুনিয়া স্থাপন হচ্ছে। ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শঙ্করের রচয়িতা কে ? শিববাবা-ই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। ওরা কোনো অর্থ না বুঝে ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা বলে দেয়। বাস্তবে তো ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা না বলে ত্রিমূর্তি শিব বলা উচিত । গান করে - দেবতাদের দেবতা মহাদেব। শঙ্করকেই যদি শ্রেষ্ঠ দেখানো হয় তবে তো ত্রিমূর্তি শঙ্কর বলা উচিত । তাহলে ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা কেন বলা হয়? শিববাবা হলেন রচয়িতা। গায়ন রয়েছে - ব্রহ্মার দ্বারা পরমপিতা পরমাত্মা ব্রাহ্মণদের রচনা করেন। ভক্তিমার্গে তো নলেজফুল বাবাকে জানি জাননহার বলে দিয়েছে। কিন্তু ঐরকম মহিমার কোনো অর্থই হয় না। তোমরা বাচ্চারা জানো যে বাবার কাছ থেকে আমরা উত্তরাধিকার পাচ্ছি। তিনি নিজে আমাদের মতো ব্রাহ্মণদেরকে পড়াচ্ছেন। কারন তিনি যেমন আমাদের পিতা, তেমনই সুপ্রীম টিচার। তিনিই হলেন নলেজফুল। কিভাবে ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি জিওগ্রাফির পুনরাবৃত্তি হয় সেটাও তিনি বোঝাচ্ছেন। তবে তিনি জানি জাননহার নন। এখানেই ভুল করে ফেলে। আমি তো কেবল পতিতদেরকে পবিত্র করার জন্যই আসি। ২১ জন্মের জন্য রাজত্বের ভাগ্য প্রাপ্ত করাই। ভক্তিমার্গে ক্ষণিকের সুখ রয়েছে। সন্ন্যাসী কিংবা হঠযোগীরা সেটা জানে না। ওরা ব্রহ্মকে স্মরণ করে। কিন্তু ব্রহ্ম তো ভগবান নয়। ভগবান তো কেবল নিরাকার শিব, যিনি সকল আত্মার পিতা। আমাদের মতো সকল আত্মাদের নিবাসস্থান হলো ব্রহ্মান্ড বা সুইট হোম। ওখান থেকে আমরা আত্মারা ভূমিকা পালন করতে এখানে আসি। আত্মা বলে - আমি একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করি। তারপরে সেটা ত্যাগ করে আরেকটা নিই। ৮৪ জন্ম তো কেবল ভারতবাসীদের-ই হয়। যারা অনেক ভক্তি করেছে, তারা ভালো জ্ঞান ধারণ করবে। বাবা বলেন - ঘর গৃহস্থে থাকতে চাইলে থাকো, কিন্তু শ্রীমৎ অনুসারে চলো। তোমরা সবাই সেই অদ্বিতীয় পরমাত্মা প্রেমিকের প্রেমিকা। ভক্তিমার্গের শুরু থেকেই তোমরা স্মরণ করে আসছো। আত্মা তার পিতাকে স্মরণ করে। এটা হলো দুঃখের দুনিয়া। আমরা আত্মারা আসলে শান্তিধাম নিবাসী। পরবর্তী কালে আমরা সুখধামে এসেছি এবং তারপর ৮৪ জন্ম নিয়েছি। "আমিই সেই, সে-ই আমি" (হম সো, সো হম) - কথার অর্থও তোমাদেরকে বোঝানো হয়েছে। ওরা বলে দেয় - আত্মাই পরমাত্মা, পরমাত্মা-ই আত্মা। বাবা এখন বোঝাচ্ছেন - আমরাই হলাম সেই দেবতা, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য আর শূদ্র। এখন আমরাই ব্রাহ্মণ হয়েছি এবং এরপর আমরাই আবার দেবতা হবো। এটাই হলো সঠিক অর্থ। ওটা একেবারে ভুল ছিল। সত্যযুগে কেবল দেবী-দেবতা ধর্ম বা অদ্বৈত (অদ্বিতীয়) ধর্ম ছিল। পরবর্তীকালে যখন অনেক ধর্ম স্থাপন হয়েছে তখন দ্বৈত হয়ে গেছে। দ্বাপর যুগ থেকে আসুরিক রাবণ রাজ্য শুরু হয়ে যায়। সত্যযুগে রাবণ রাজ্য থাকে না বলে ৫ বিকার থাকাও সম্ভব নয়। ওটা সম্পূর্ণ নির্বিকারী দুনিয়া। রাম সীতাকেও ১৪ কলা সম্পূর্ণ বলা হয়। রামের হাতে তির-ধনুক কেন দেখানো হয়েছে সেটাও কোনো মানুষ জানে না। ওখানে তো হিংসার কোনো ব্যাপার থাকে না। তোমরা হলে গডলী স্টুডেন্ট। সুতরাং ইনি একদিকে বাবা এবং অন্যদিকে তোমাদের মতো স্টুডেন্টদের কাছে ইনি একজন টিচার। আবার তোমাদের মতো বাচ্চাদেরকে সদগতি প্রদান করে স্বর্গে নিয়ে যান বলে বাবা, টিচার এবং গুরু তিনটেই ইনি। তোমরা এনার সন্তান হয়েছ বলে কতোই না খুশিতে থাকা উচিত। দুনিয়ার মানুষ তো কিছুই জানে না। এটা তো রাবণের রাজত্ব। প্রত্যেক বছর রাবন পোড়ায়, কিন্তু রাবন আসলে কে সেটাই জানে না। তোমরা বাচ্চারা জানো যে রাবন হলো ভারতের সবথেকে বড় শত্রু। বাচ্চারা, কেবল তোমরাই নলেজফুল বাবার কাছ থেকে এই জ্ঞান পাচ্ছ। এই বাবা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর, আনন্দের সাগর। জ্ঞানের সাগরের কাছ থেকে তোমরা মেঘ ভর্তি করে নিয়ে গিয়ে বর্ষণ করো। তোমরাই হলে জ্ঞান গঙ্গা। তোমাদেরই মহিমা করা হয়। বাবা বলছেন - আমি এখন তোমাদেরকে পবিত্র করতে এসেছি। এই একটা জন্ম পবিত্র হয়ে আমাকে স্মরণ করলে তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হয়ে যাবে। আমিই হলাম পতিত-পাবন। যত বেশি সম্ভব স্মরণকে বৃদ্ধি করো। মুখে শিববাবা-শিববাবা বলতে হবে না। যেভাবে প্রেমিকা তার প্রেমিককে স্মরণ করে, একবার দেখেই বুদ্ধিতে তার স্মৃতি রয়ে যায়। ভক্তিমার্গে যে যেই দেবতাকে স্মরণ করে, পূজা করে তাঁর দর্শন পেয়ে যায়। কিন্তু সে'সব হলো ক্ষণিকের। ভক্তি করতে করতে ক্রমাগত অধঃপতন হয়। এখন তো মৃত্যু অতি নিকটে। হায়-হায় হওয়ার পর জয়জয়কার হবে। ভারতেই রক্তের নদী বইবে। গৃহযুদ্ধের পরিণাম তো দেখতেই পাচ্ছ। তমোপ্রধান হয়ে গেছে। এখন তোমরা সতোপ্রধান হচ্ছো। আগের কল্পে যারা দেবতা হয়েছিল, তারাই এসে বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার নেবে। যদি কম ভক্তি করে থাকে, তাহলে কম জ্ঞান ধারণ করবে। তখন ক্রমানুসারে প্রজা পদ পাবে। যে ভালো পুরুষার্থী হবে, সে শ্রীমৎ অনুসারে চলে ভালো পদ পাবে। চাল-চলন খুব ভালো হতে হবে। দিব্যগুন ধারণ করতে হবে যা পরবর্তী ২১ জন্ম কায়েম থাকবে। এখন তো সকলের মধ্যেই আসুরিক গুন রয়েছে। দুনিয়াটাই তো আসুরিক বা পতিত দুনিয়া। বাচ্চারা, তোমাদেরকে ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফিও বোঝানো হয়েছে। বাবা এখন বলছেন, স্মরণ করার পরিশ্রম করলে তোমরা খাঁটি সোনা হয়ে যাবে। সত্যযুগকেই খাঁটি সোনা বা গোল্ডেন এজ বলা হয়। তারপর ত্রেতাযুগে রূপার খাদ মিশে যায়। কলা (ডিগ্রী) কম হয়ে যায়। এখন তো কোনো কলা নেই। যখন এইরকম অবস্থা হয়ে যায়, তখনই বাবাকে আসতে হয়। এটাই ড্রামাতে রয়েছে। এই রাবণের রাজত্বে সকলেই এমন অবুঝ হয়ে গেছে যে ড্রামার অভিনেতা হয়েও ড্রামার আদি-মধ্য-অন্তকে জানে না। তোমরা তো অভিনেতা। তোমরা জানো যে আমরা এখানে ভূমিকা পালন করতে এসেছি। কিন্তু অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও তোমরা এইসব জানতে না। তাই অসীম জগতের বাবা এখন বলছেন, তোমরা কতোই না অবুঝ হয়ে গেছো। এখন আমি তোমাদেরকে বিচক্ষণ এবং হিরে তুল্য বানাচ্ছি। তারপর রাবন আবার কড়িতুল্য বানিয়ে দেবে। আমি এসেই সবাইকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। তারপর এই পতিত দুনিয়ার বিনাশ হয়ে যায়। মশার মতো সবাইকে নিয়ে যাই। এইম অবজেক্ট তো তোমাদের সামনেই রয়েছে। এইরকম হলেই তোমরা স্বর্গবাসী হতে পারবে। তোমরা ব্রহ্মাকুমার এবং কুমারীরাই এইরকম পুরুষার্থ করছো। দুনিয়ার মানুষের বুদ্ধি তমোপ্রধান বলে ওরা বুঝতে পারে না। যখন এতজন বি.কে. আছে, তাহলে প্রজাপিতা ব্রহ্মাও নিশ্চয়ই আছেন। ব্রাহ্মণ হলো সবথেকে শ্রেষ্ঠ, ব্রাহ্মণের পরে রয়েছে দেবতা…। কিন্তু ছবিতে ব্রাহ্মণ আর শিববাবাকে দেখানোই হয়না। তোমরা ব্রাহ্মণরাই ভারতকে স্বর্গ বানাচ্ছ। আচ্ছা !

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) ভালো পদ পাওয়ার জন্য শ্রীমৎ অনুসারে চলে ভালো ম্যানার্স ধারণ করতে হবে।

২ ) সত্যিকারের প্রেমিকা (আশিক) হয়ে কেবল প্রিয়তমকেই (মাশুক) স্মরণ করতে হবে। যতখানি সম্ভব স্মরণের অভ্যাসকে বাড়াতে হবে।

বরদান:-
নিমিত্তভাবের স্মৃতির দ্বারা মায়ার গেট বন্ধ করে ডবল লাইট ভব

যে সদা নিজেকে নিমিত্ত মনে করে চলে সে স্বতঃই ডবল লাইট স্থিতি অনুভব করে। করণকরাবনহার করাচ্ছেন, আমি হলাম নিমিত্ত, এই স্মৃতিতে থাকলে সফলতা হবে। আমিত্ব ভাব আসা অর্থাৎ মায়ার গেট খুলে যাওয়া, নিমিত্ত মনে করা অর্থাৎ মায়ার গেট বন্ধ হওয়া। তো নিমিত্ত মনে করলে মায়াজীতও হয়ে যাবে আর ডবল লাইটও হয়ে যাবে। সাথে সাথে সফলতাও অবশ্য প্রাপ্ত হবে। এই স্মৃতিই নম্বর ওয়ানে নিয়ে যাওয়ার আধার হয়ে যায়।

স্লোগান:-
ত্রিকালদর্শী হয়ে সকল কাজ করো তবে সফলতা সহজেই প্রাপ্ত হতে থাকবে।

মাতেশ্বরীজীর মহাবাক্য:-

১) “মনুষ্য আত্মা নিজের সম্পূর্ণ উপার্জন অনুসারে ভবিষ্যতে ফল ভোগ করে”

দেখো, অনেক মানুষই মনে করে যে, আমাদের আগের জন্মের ভালো উপার্জনের জন্য এখন এই জ্ঞান লাভ করেছি। কিন্তু এইরকম কোনো ব্যাপার নয়। পূর্বজন্মের ফল থাকে, সেটা তো আমরা জানি। কল্পের চক্র আবর্তিত হয়ে সতো, রজো, তমো-তে পরিবর্তিত হয় *কিন্তু ড্রামা অনুসারে পুরুষার্থের দ্বারা প্রাপ্তির সুযোগ আছে বলেই তো ওখানে সত্যযুগে কেউ রাজা-রানী, কেউ দাসী, কেউ প্রজা পদ পায়।* পুরুষার্থের সিদ্ধি এটাই যে ওখানে কোনো দ্বিমত, কোনো ঈর্ষা থাকবে না, ওখানে প্রজারাও সুখী থাকবে। যেভাবে বাবা-মা বাচ্চাদের দেখাশুনা করে, সেইভাবে রাজা-রানী প্রজাপালন করবে। ওখানে গরিব থেকে ধনী সকলেই সন্তুষ্ট থাকে। এই একটা জন্মের পুরুষার্থের দ্বারা ২১ জন্ম ধরে সুখ ভোগ করব। এটা হলো অবিনাশী উপার্জন। এই অবিনাশী জ্ঞানের দ্বারা যে অবিনাশী উপার্জন হয় তার দ্বারা অবিনাশী পদ প্রাপ্ত হয়। এখন আমরা সত্যযুগের দুনিয়ায় যাচ্ছি। এখন বাস্তবে এই খেলাটা হচ্ছে, এখানে কোনো ছু-মন্তরের ব্যাপার নেই।

২) “গুরুর দেওয়া মত কিংবা শাস্ত্রের মত গুলি পরমাত্মার মত নয়”

পরমাত্মা বলেন - বাচ্চারা, গুরুদের মত কিংবা শাস্ত্রের মতামতগুলো আমার মত নয়। এরা তো কেবল আমার নাম করে নিজেরা মতামত দেয়, কিন্তু আমার মত তো শুধু আমিই জানি। আমি এসেই আমার সাথে মিলিত হওয়ার ঠিকানা বলি। তার আগে কেউই আমার অ্যাড্রেস জানতে পারে না। গীতাতে হয়তো ভগবানুবাচ লেখা আছে, কিন্তু গীতাও তো মানুষই লিখেছে। ভগবান তো স্বয়ং জ্ঞানের সাগর। ভগবান যেসব মহাবাক্য শুনিয়েছিলেন, তারই স্মৃতিতে গীতা লেখা হয়েছে। বিদ্বান, পন্ডিত, আচার্যেরা বলে থাকেন - পরমাত্মা সংস্কৃত ভাষায় যেসব মহাবাক্য বলছেন সেগুলো না শিখলে পরমাত্মাকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এরফলে আরও বেশি করে উল্টোপাল্টা কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। বেদ, শাস্ত্র পড়ে যদি সিঁড়িতে দিয়ে ওঠা যায় তাহলে তো আবার ততটাই নীচে নামতে হবে অর্থাৎ সেইসব ভুলে কেবল পরমাত্মার সাথে বুদ্ধি যুক্ত করতে হবে কারন পরমাত্মা পরিষ্কার ভাবে বলেন যে এইসব ক্রিয়াদির দ্বারা এবং বেদ-শাস্ত্র অধ্যয়নের দ্বারা আমাকে পাওয়া যায় না। দেখো তো, ধ্রুব, প্রহ্লাদ কিংবা মীরা কি কোনো শাস্ত্র পড়েছিল ? এখানে তো যা কিছু পড়েছি সেগুলোও ভুলতে হয়। যেমন দেখানো হয়েছে যে অর্জুন যা কিছু পড়েছিল সেগুলো ভুলতে হয়েছে। ভগবানের পরিষ্কার মহাবাক্য হলো - কেবল প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গেই আমাকে স্মরণ করো, এছাড়া আর কিছু করতে হবে না। যতক্ষণ এই জ্ঞান থাকে না, ততক্ষণ হয়তো ভক্তিমার্গ প্রচলিত থাকে কিন্তু জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্বলিত হলে এইসব ক্রিয়াদি থেকে মুক্ত হয়ে যায় কারন ক্রিয়াদি করতে করতেই যদি আয়ু শেষ হয়ে যায় তবে কি কোনো লাভ হবে ? কিছুই তো প্রাপ্তি হলো না, কর্ম বন্ধনের হিসাবপত্র থেকে তো মুক্তি হলো না। দুনিয়ার মানুষ ভাবে যে মিথ্যে কথা না বলা, চুরি না করা, কাউকে দুঃখ না দেওয়া… এগুলোই ভালো কাজ। কিন্তু এখানে তো সদাকালের এই কর্মবন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হবে এবং বিকর্মগুলোকে সমূলে বিনাশ করতে হবে। আমরা তো এমন বীজ বপন করতে চাই যার থেকে ভালো কর্মের বৃক্ষ হবে। তাই মানব জীবনের কর্তব্যকে জেনে শ্রেষ্ঠ কর্ম করতে হবে। আচ্ছা - ওম্ শান্তি।

অব্যক্ত ঈশারা :- “কম্বাইন্ড রূপের স্মৃতির দ্বারা সদা বিজয়ী হও”

শিবশক্তির অর্থই হলো কম্বাইন্ড। বাবা আর তোমরা মিলিত রূপে হলে শিবশক্তি। তো যারা কম্বাইন্ড আছো, তাদেরকে কেউ আলাদা করতে পারবে না, এটাই স্মরণে রাখো যে আমরা কম্বাইন্ড থাকার অধিকারী হয়ে গেছি। আগে ভগবানকে খুঁজতাম আর এখন ভগবানের সাথে থাকি - এই নেশা যেন সর্বদা থাকে।