02-03-2025 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 15-10-2004 মধুবন


"এক-কে প্রত্যক্ষ করানোর জন্য একরস স্থিতি বানাও, স্বমানে থাকো, সবাইকে সম্মান দাও"


আজ বাপদাদা প্রত্যেক বাচ্চার মস্তকে ভাগ্যের তিন নক্ষত্র ঝলমল করতে দেখছেন। এক পরমাত্ম পালনার ভাগ্য, দুই পরমাত্ম পঠন পাঠনের ভাগ্য, তিন পরমাত্ম বরদানের ভাগ্য। তিনি এমন তিন নক্ষত্র সবার ললাটভাগে দেখছেন। তোমরাও নিজের ভাগ্যের ঝলমলে নক্ষত্র দেখতে পাচ্ছ? দেখা যায়? শ্রেষ্ঠ ভাগ্যের এমন দ্যুতিমান নক্ষত্র সমগ্র বিশ্বে অন্য কারও ললাটভাগে নজরে আসবে না। ভাগ্যের এই নক্ষত্র তো সবার ললাটভাগে দ্যুতিমান কিন্তু কোথাও কোথাও দ্যুতিতে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কারও দ্যুতি খুব শক্তিশালী, কারও দ্যুতি মধ্যম। ভাগ্য বিধাতা সব বাচ্চার ভাগ্য এক সমান দিয়েছেন। কাউকে স্পেশ্যাল দেননি। পালনাও একরকম, পঠন পাঠনও একসাথে, বরদানও সবার একইরকম প্রাপ্ত হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের কোণে কোণে সদা একই পঠন পাঠন হয়। এটা চমৎকার যে একই মুরলী, একই ডেট আর অমৃতবেলার সময়ও নিজের নিজের দেশের হিসেবে আলাদা হওয়া সত্ত্বেও একই, বরদানও একই। স্লোগানও একই। ফারাক হয় কি? আমেরিকা আর লন্ডনে ফারাক হয়? হয় না। তবে প্রভেদ কেন?

চতুর্দিকে অমৃতবেলায় বাপদাদা একইরকম পালনা করে থাকেন। নিরন্তর স্মরণের বিধিও সবার একইরকম প্রাপ্ত হয়, তাহলে নম্বরক্রম কেন? বিধি এক কিন্তু সিদ্ধির প্রাপ্তিতে প্রভেদ কেন? চতুর্দিকের বাচ্চাদের প্রতি বাপদাদার ভালবাসাও একরকমই। এমনকি, কেউ যদি তার পুরুষার্থ অনুসারে লাস্ট নম্বরও হয় বাপদাদার সেই একই ভালবাসা থাকে লাস্ট নম্বরের জন্য। তাছাড়া, ভালবাসার সাথে লাস্ট নম্বরের জন্য কৃপাও থাকে যে এই লাস্টও ফাস্ট যাবে এবং ফার্স্ট হয়ে আসবে। তোমরা সবাই যে দূর দূর থেকে এখানে পৌঁছেছ, কীভাবে পৌঁছেছো? পরমাত্ম ভালবাসা টেনে এনেছে তো না! পরমাত্ম প্রেম- ডোরের টানে এসে গেছো। তো সবার প্রতি বাপদাদার ভালবাসা রয়েছে। এমন মনে করো, নাকি কোশ্চেন ওঠে যে আমার জন্য ভালবাসা আছে নাকি কম আছে? বাপদাদার ভালোবাসা প্রত্যেক বাচ্চার প্রতি রয়েছে, পরস্পরের প্রতি ভালবাসার থেকে বেশি।

আর এই পরমাত্ম ভালবাসাই সব বাচ্চার পালনার বিশেষ আধার। প্রত্যেকে তোমরা কী ভাবো - বাবার প্রতি আমার ভালবাসা বেশি, নাকি অন্যের ভালবাসা বেশি, আমার কম? এরকম মনে করো? এরকম মনে করো তো না যে আমার ভালবাসা আছে? আমার ভালবাসা আছে, আছে না এরকম? পান্ডব, এরকম আছে? প্রত্যেকে বলবে "আমার বাবা", এটা বলবে না সেন্টার ইনচার্জের বাবা, দাদির বাবা, জানকি দাদির বাবা, বলবে? না। 'আমার বাবা' বলবে। যখন আমার বলে দিয়েছ, আর বাবাও আমার বলে দিয়েছেন, তাহলে কেবল এক আমার শব্দেই বাচ্চারা বাবার হয়ে গেছে আর বাবা বাচ্চাদের হয়ে গেছেন। পরিশ্রম লেগেছে কী? পরিশ্রম হয়েছে? অল্প অল্প? লাগেনি? কখনো কখনো তো লাগে? লাগে না? লাগে। যদি পরিশ্রম লাগে তো কী করো? ক্লান্ত হয়ে যাও? অন্তর্মনের ভালবাসায় বলো "আমার বাবা", তবে পরিশ্রম ভালবাসায় পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমার বাবা বলাতেই বাবার কাছে আওয়াজ পৌঁছে যায় আর বাবা এক্সট্রা সহায়তা দেন। কিন্তু সওদা হয় মনের, বোলের সওদা হয় না। মনের সওদা। তো মনের সওদা করতে তোমরা হুঁশিয়ার তো না? জানা আছে তো, তাই না? পিছনের তোমরা জানো? তবেই তো পৌঁছেছো। কিন্তু সবচাইতে দূরদেশী কে? আমেরিকা? আমেরিকা আগতরা দূরদেশী, নাকি বাবা দূরদেশী? আমেরিকা তো এই দুনিয়াতে। বাবা তো অন্য দুনিয়া থেকে আসেন। তাহলে, সবচাইতে দূরদেশী কে? আমেরিকা নয়। সবচাইতে দূরদেশী বাপদাদা। এক আসেন আকার বতন থেকে, এক আসেন পরমধাম থেকে, তো তার তুলনায় আমেরিকা কী? কিছুই না।

তো আজ দূরদেশী বাবা এই দুনিয়ার দূরদেশী বাচ্চাদের সাথে মিলিত হচ্ছেন। নেশা আছে না? আজ আমাদের জন্য বাপদাদা এসেছেন। ভারতবাসী তো বাবার হয়ই, কিন্তু ডবল বিদেশিদের দেখে বাপদাদা বিশেষ খুশি হন। কেন খুশি হন? বাপদাদা দেখেছেন, বাবা তো ভারতে এসেছেন সেইজন্য ভারতবাসীর এই নেশা এক্সট্রা, কিন্তু ডবল ফরেনারদের প্রতি ভালবাসা এইজন্য আছে যে বিভিন্ন রকম কালচার থাকা সত্ত্বেও তারা ব্রাহ্মণ কালচারে পরিবর্তন হয়ে গেছে। হয়ে গেছ তো না? এখন সংকল্প আসে না তো - এটা তো ভারতের কালচার, আমাদের কালচার তো অন্য। না। এখন বাপদাদা রেজাল্টে দেখেন, সবাই এক কালচারের হয়ে গেছে। যে কোনও জায়গারই হোক না কেন, সাকার শরীরের জন্য দেশ হয়তো ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু আত্মা ব্রাহ্মণ কালচারের, ডবল ফরেনার্সের আরেকটা বিষয় বাপদাদার খুব ভালো লাগে, জানো তোমরা, সেটা কী? (তাড়াতাড়ি সেবায় নিয়োজিত হয়ে যায়) আর কিছু বলো। ( চাকরিও করে, সেবাও করে) এরকম তো ইন্ডিয়াতেও করে। ইন্ডিয়াতেও চাকরি করে। কিছু যদি হয় তবে সত্যতার সাথে নিজের দুর্বলতা ব'লে দেয়, স্পষ্টবাদী) আচ্ছা, ইন্ডিয়া স্পষ্টবাদী নয়?

বাপদাদা এটা দেখেছেন যে তারা হয়তো দূরে থাকে কিন্তু বাবার ভালবাসার কারণে ভালবাসায় মেজরিটি পাশ করেছে। ভারতের ভাগ্য তো আছেই কিন্তু দূরে থেকেও ভালবাসার ব্যাপারে সবাই পাশ। যদি বাপদাদা জিজ্ঞাসা করেন ভালবাসায় পার্সেন্টেজ আছে কী? বাবার প্রতি ভালবাসার সাবজেক্টে পার্সেন্টেজ আছে? যারা মনে করে ভালবাসায় ১০০% আছে তারা হাত তোলো। (সবাই হাত তুলেছে) আচ্ছা - ১০০%? ভারতবাসী হাত তুলছ না? দেখ, ভারতের তো সর্বাধিক ভাগ্য লাভ হয়েছে যে বাবা ভারতেই এসেছেন। এক্ষেত্রে, বাবার আমেরিকা পছন্দ হয়নি, তিনি ভারত পছন্দ করেছেন। ইনি (আমেরিকার গায়ত্রী বোন) সামনে ব'সে আছেন সেইজন্য আমেরিকা বলছেন। কিন্তু দূরে থেকেও ভালবাসা অনেক। প্রবলেম উপস্থিত হলেও কিন্তু বাবা বাবা ব'লে সেটা মিটিয়ে নেয়।

ভালোবাসার বিষয়ে তো বাপদাদাও পাশ করিয়ে নিয়েছেন, এখন আর কোন বিষয়ে পাশ করতে হবে? পাশ করতে তো হবে, তাই না! করেছ আর করতেও হবে। তো বর্তমান সময় অনুসারে বাপদাদা এটাই চান - প্রত্যেক বাচ্চার স্ব-পরিবর্তনের শক্তির পার্সেন্টেজ, ঠিক যেমন ভালবাসার শক্তির ক্ষেত্রে সবাই হাত তুলেছো, সবাই হাত তুলেছো তো না! স্ব-পরিবর্তনের তীব্র গতি কি এতটাই? এই ব্যাপারে অর্ধেক হাত উঠবে, নাকি পুরো? কী উঠবে? তোমরা পরিবর্তন করো ঠিকই কিন্তু সময় লাগে। সময়ের নৈকট্য অনুসারে স্ব-পরিবর্তনের শক্তি এত তীব্র হওয়া উচিত যেমন, কাগজের ওপরে যদি বিন্দু লাগাও তো সেটা কত সময়ের মধ্যে লাগে? কত সময় লাগে? বিন্দু লাগাতে কত সময় লাগে? সেকেন্ডও নয়। ঠিক কিনা! তো এমন তীব্র গতি থাকে? এ' ব্যাপারে অর্ধেক হাত উঠবে। সময়ের বেগ প্রবল। স্ব পরিবর্তনের শক্তি এমনই প্রবল হতে হবে, আর যখন পরিবর্তনের কথা বলো তখন পরিবর্তন-এর সামনে স্ব শব্দ সদা স্মরণে রাখো। পরিবর্তন নয়, স্ব পরিবর্তন। বাপদাদার স্মরণে আছে, বাচ্চারা বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল এক বছরের মধ্যে সংস্কার পরিবর্তন দ্বারা সংসার পরিবর্তন করবে। মনে আছে তোমাদের? বছর উদযাপন করেছিলে - সংস্কার পরিবর্তন দ্বারা সংসার পরিবর্তন। তো সংসারের গতি তো অতি মাত্রায় যাচ্ছে। কিন্তু এই গতির মতো সংস্কার পরিবর্তনের গতি এতটাই ফাস্ট হচ্ছে? বাস্তবে, ফরেনের বিশেষত্ব হলো, কমনলি (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তারা ফাস্ট চলে, ফাস্ট করে। তো বাবা জিজ্ঞাসা করছেন যে সংস্কার পরিবর্তনে তোমরা ফাস্ট? বাপদাদা এখন স্ব-পরিবর্তনের গতি তীব্র হ'তে দেখতে চান। সবাই তোমরা জিজ্ঞাসা করো তো না যে বাপদাদা কী চান? নিজেদের মধ্যে আত্মিক বার্তালাপ তো করো, করো না! তখন তোমরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করো বাপদাদা কী চান? তো বাপদাদা এটাই চান। সেকেন্ডে যেন বিন্দু লেগে যায়। যেমন কাগজে বিন্দু লাগাতে যে সময় লাগে, তার থেকেও ফাস্ট, পরিবর্তনের ব্যাপারে যা কিছু ব্যর্থ তা'তে বিন্দু লাগতে দাও। বিন্দু লাগাতে জানো তোমরা? জানো তো না! কিন্তু কখনো কখনো কোশ্চেন মার্ক হয়ে যায়। তোমরা লাগাও বিন্দু, কিন্তু হয়ে যায় কোশ্চেন মার্ক। এটা কেন? এটা কী? এই কেন আর কী, এগুলো বিন্দুকে কোশ্চেন মার্কে বদলে দেয়। বাপদাদা আগেও বলেছিলেন - হোয়াই হোয়াই ক'রো না। কী করবে তবে? ফ্লাই কিংবা বাঃ বাঃ! বাঃ বাঃ করো অথবা ফ্লাই করো। হোয়াই হোয়াই ক'রো না। হোয়াই হোয়াই করা এটা তাড়াতাড়ি এসে যায়, তাই না! এসে যায়? যখন হোয়াই এসে যাবে তখন সেটাকে বাঃ ! বাঃ! ব'লে দাও। যদি কেউ কোনও কিছু করে বা বলে তখন বলো বাহ্! ড্রামা বাঃ! এ' কেন এটা করলো, কেন এটা বললো, না। এ' যদি করে তো আমি করবো, না।

আজকাল বাপদাদা দেখেছেন, বলবো তোমাদের? পরিবর্তন করতে হবে তো না! তো আজকাল রেজাল্টে তা' ফরেনে হোক অথবা ইন্ডিয়াতে দু'দিকে একটা বিষয়ের তরঙ্গ, সেটা কী? এটা হওয়া চাই, এটা পাওয়া চাই, এর এটা করা চাই, যা আমি ভাবি, যা ব'লি সেটা হওয়া চাই। এই চাই, চাই যা সংকল্প মাত্রও হয়, সেটা ওয়েস্ট থটস, বেস্ট হতে দেয় না। বাপদাদা সকলের অল্প সময়ের ওয়েস্টের চার্ট নোট করেছেন। চেক করেছেন। বাপদাদার কাছে চেকিং মেশিনারি আছে তো না! তোমাদের মতো কম্পিউটার নেই, তোমাদের কম্পিউটার তো গালিও দেয়। কিন্তু বাপদাদার চেকিং মেশিনারি খুব ফাস্ট। তো বাপদাদা দেখেছেন মেজরিটির ওয়েস্ট সংকল্প সারাদিন ধরে মধ্যে মধ্যে চলতে থাকে। কী হয়, এই ওয়েস্ট সংকল্পের ওজন ভারী হয় এবং বেস্ট থটসের ওজন কম হয়। তো এই যে মধ্যে মধ্যে চলতে থাকা ওয়েস্ট থটস সেটা বুদ্ধিকে ভারী করে দেয়। পুরুষার্থকে ভারী করে দেয়, বোঝা তো না, সেইজন্য এটা নিজের দিকে টেনে নেয়। সুতরাং শুভ সংকল্প যা স্ব উন্নতির লিফ্ট, সিঁড়ি নয় লিফ্ট, এটা কম হওয়ার কারণে পরিশ্রমের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। কেবল দুটো শব্দ স্মরণ করো - ওয়েস্ট শেষ করার জন্য অমৃত বেলা থেকে শুরু ক'রে রাত পর্যন্ত দুটো শব্দ সংকল্পে, বোলে আর কর্মে, কার্য-ব্যবহারে লাগাও। প্র্যাকটিক্যালি করো। সেই দুটো শব্দ হলো - স্বমান আর সম্মান। স্বমানে থাকতে হবে এবং সম্মান দিতে হবে। যে যেমনই হোক না কেন, আমাকে সম্মান দিতে হবে। সম্মান দেওয়া আর স্বমানে স্থিত হওয়া - দুইয়ের ব্যালেন্স দরকার। কখনো তোমরা স্বমানে বেশি থাকো, কখনো সম্মান দেওয়াতে ঘাটতি থেকে যায়। এমন নয় যে কেউ যদি সম্মান দেয় তবে আমি সম্মান দেবো, না। আমাকে দাতা হতে হবে। শিব শক্তি, পান্ডব সেনা, দাতার বাচ্চারা দাতা। সে দিলে আমি দেবো, এটা তো বিজনেস হয়ে গেল, দাতা হলো না। তাহলে তোমরা বিজনেসম্যান নাকি দাতা? দাতা কখনো গ্রহীতা হয় না। নিজের বৃত্তি আর দৃষ্টিতে এই লক্ষ্য রাখো আমাকে, অন্যদের নয়, আমাকে সদা প্রত্যেকের প্রতি অর্থাৎ সকলের প্রতি, অজ্ঞানী হোক বা জ্ঞানী হোক, অজ্ঞানীদের প্রতিও কিন্তু শুভ ভাবনা রাখতে হবে, কিন্তু জ্ঞানী তু আত্মাদের প্রতি নিজেদের মধ্যে সবসময় শুভ ভাবনা, শুভ কামনা যেন থাকে। বৃত্তি যেন এমনই হয়ে যায়, দৃষ্টিও যেন এমনই হয়ে যায়। কেবল দৃষ্টিতে যেমন স্থূল বিন্দু আছে, বিন্দু কখনো অদৃশ্য হয়ে যায় কি! চোখ থেকে যদি বিন্দু অদৃশ্য হয়ে যায় তবে কী হয়ে যাবে তোমরা? দেখতে পাবে? তো যেমন চোখে বিন্দু আছে, তেমনই আত্মা বা বাবা বিন্দু নয়নে যেন সমাহিত হয়। চোখের মধ্যেকার যে বিন্দু দেখে সেটা যেমন কখনো গায়েব হয়ে যায় না, তেমনই আত্মা বা বাবার স্মৃতির বিন্দু বৃত্তি থেকে, দৃষ্টি থেকে যেন গায়েব না হয়। ফলো ফাদার করতে হবে তো না! তো যেমন বাবার দৃষ্টিতে বা বৃত্তিতে সব বাচ্চার জন্য স্বমান থাকে, সম্মান থাকে তেমনই তোমাদের নিজেদের দৃষ্টি বৃত্তিতে যেন স্বমান, সম্মান থাকে। তোমাদের মনে উৎপন্ন হওয়া ভাবনা - এ' পরিবর্তন হোক, এটা করা উচিত নয়, এটা এরকম হোক, এসব শিক্ষা দ্বারা হবে না, বরং যদি অন্যকে সম্মান দাও তবে মনে যে সংকল্প থাকে এটা হোক, এ' পরিবর্তন হয়ে যাক, এটা এভাবে করা উচিত, তারা এসব করতে শুরু করে দেবে। তোমাদের বৃত্তি দ্বারা তারা বদলাবে, তোমাদের বলাতে তারা বদলাবে না। সুতরাং কী করবে? স্বমান আর সম্মান, দুইই স্মরণে থাকবে তো না! নাকি শুধু স্বমান স্মরণে থাকবে। সম্মান দেওয়া অর্থাৎ সম্মান নেওয়া। কাউকে মান দেওয়া মনে করো মাননীয় হওয়া। আত্মিক ভালবাসার লক্ষণ হলো - অন্যের খামতি নিজের শুভ ভাবনা, শুভ কামনার দ্বারা পরিবর্তন করা। এখন, বাপদাদা লাস্ট বার্তাও পাঠিয়েছেন যে বর্তমান সময়ে নিজের স্বরূপ মার্সিফুল বানাও, উদারচিত্ত। লাস্ট জন্মেও তোমার নিজের জড় চিত্র মার্সিফুল হয়ে ভক্তদের প্রতি কৃপা করছে। যদি চিত্র এত মার্সিফুল হয় তবে চৈতন্যে কী হবে? চৈতন্য তো দয়ার খনি। দয়ার খনি হয়ে যাও। যে-ই আসুক তার প্রতি দয়া, এটাই আন্তরিক ভালবাসার লক্ষণ। করতে হবে তো না? নাকি শুধু শুনলেই হবে? করতেই হবে, সেরকম হতেই হবে। তো বাপদাদা কী চান, সেটার উত্তর দিচ্ছেন তিনি। তোমরা প্রশ্ন করো তো না, তাইতো বাপদাদা উত্তর দিচ্ছেন।

বর্তমান সময়ে সেবাতে ভালো বৃদ্ধি হচ্ছে, তা' ভারতে হোক বা ফরেনে, কিন্তু বাপদাদা চান এমন কোনো আত্মাকে নিমিত্ত বানাও, যে বিশেষ কোনো কার্য করে দেখাবে। সহযোগী যেন এমন কেউ হয় এখনো পর্যন্ত যা করতে চেয়েছে তা' করে দেখাবে। অনেক প্রোগ্রাম তো করেছ, যেখানেই প্রোগ্রামস্ করেছ সবদিকের সেই সব প্রোগ্রামের সকলকে বাপদাদা মঙ্গল আশিস দেন। এখন, আরও কোনো নবীনত্ব দেখাও, যাতে তোমাদের পক্ষ থেকে তারা বাবাকে প্রত্যক্ষ করায়, ঠিক যেমন তোমরা করো। তাদের মুখ থেকে এটাও যেন নির্গত হয় - এটা পরমাত্ম পড়াশোনা। হৃদয় থেকে যেন বাবা বাবা শব্দ বের হয়। তারা সহযোগী তো হয়, কিন্তু যে একটা বিষয় রয়ে গেছে ইনিই এক, ইনিই এক, ইনিই এক এই আওয়াজ এখন ছড়িয়ে পড়া উচিত। ব্রহ্মাকুমারীরা ভালো কাজ করছে, করতে পারে, এই অব্দি তারা এসেছে, কিন্তু ইনি এক এবং সেটা পরমাত্ম জ্ঞান। যারা বাবাকে প্রত্যক্ষ করাবে তারা যেন নির্ভীক হয়ে বলে। তোমরা বলো পরমাত্মা কার্য করাচ্ছেন, পরমাত্মার কার্য, কিন্তু তারা যেন বলে, যে পরমাত্মা পিতাকে সবাই আর্তস্বরে ডাকছে, তিনি জ্ঞান, এখন এটা অনুভব করাও। যেমন, তোমাদের হৃদয়ে সবসময় কী থাকে, বাবা, বাবা, বাবা। এমন গ্রুপ যেন বের হয়। এটা ভালো, তোমরা করতে পারো, এই অব্দি তো ঠিক আছে। পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু লাস্ট পরিবর্তন হলো - এক আছেন, এক আছেন, এক আছেন। সেটা হবে, যখন ব্রাহ্মণ পরিবার একরস স্থিতির হয়ে যাবে। এখন স্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে। একরস স্থিতি এককে প্রত্যক্ষ করাবে। ঠিক আছে তো না! তো ডবল ফরেনার্স এক্সাম্পল হও। সম্মান দেওয়া আর স্বমানে থাকার ক্ষেত্রে এক্সাম্পল হও, এতে নম্বর নিয়ে নাও। চতুর্দিকে যেমন মোহজিত পরিবারের দৃষ্টান্ত বলা হয়ে থাকে না যে, চাপরাশি ভৃত্য সবাই মোহজিত! বাস্তবে, যেখানেই যাও, আমেরিকা যাও, অস্ট্রেলিয়া যাও, সব দেশে একরস, একমত, স্বমানে থাকা, সম্মান দেওয়া এতে নম্বর নাও। নিতে পারো তো না?

চতুর্দিকে, বাবার নয়নে সমাহিত হওয়া, নয়নের আলোক বাচ্চাদের, সদা একরস স্থিতিতে স্থিত হওয়া বাচ্চাদের, সদা ভাগ্যের নক্ষত্র ঝলমল করা ভাগ্যবান বাচ্চাদের, যারা সদা স্বমান আর সম্মান সাথে সাথে রাখে এমন বাচ্চাদের, যারা সদা পুরুষার্থ তীব্র গতি করে তেমন বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন, মঙ্গল আশিস এবং নমস্কার।

বরদান:-
সত্য সাথীর সাথ নিয়ে সবার থেকে স্বতন্ত্র, প্রিয় নির্মোহ ভব

প্রতিদিন অমৃতবেলায় সর্ব সম্বন্ধের সুখ বাপদাদার থেকে নিয়ে অন্যকে দান করো। সর্ব সম্বন্ধের অধিকারী হয়ে অন্যদেরও সেরকম বানাও। যে কোনও কাজে সাকার সাথী স্মরণে আসা উচিত নয়, সবার আগে বাবাকে স্মরণ করা উচিত, কেননা, সত্য সাথী বাবা। সত্য সাথীকে যদি সঙ্গে রাখ তবে সহজেই সবার থেকে স্বতন্ত্র এবং প্রিয় হয়ে যাবে। যে সর্ব সম্বন্ধ দ্বারা সব কার্যে বাবাকে স্মরণ করে সে সহজেই নির্মোহ হয়ে যাবে। তার কোনও দিকে মোহ বা আকর্ষণ থাকে না। সেইজন্য মায়ার দ্বারা পরাজয়ও হয় না।

স্লোগান:-
মায়াকে দেখার জন্য এবং জানার জন্য ত্রিকালদর্শী ও ত্রিনেত্রি হও, তবে বিজয়ী হবে।

অব্যক্ত ইশারা :- একান্তপ্রিয় হও, একতা আর একাগ্রতাকে ধারণ করো সত্যতার লক্ষণ হলো সভ্যতা। যদি তুমি সত্য হও, তোমার মধ্যে সত্যতার শক্তি থাকে তবে সভ্যতাকে ছেড়ো না, সত্যতাকে প্রমাণ করো, কিন্তু সভ্যতাপূর্বক। যদি সভ্যতা ছেড়ে অসভ্যতাকে নিয়ে সত্যকে প্রমাণ করতে চাও, তবে সেই সত্য প্রমাণ হবে না। অসভ্যতার লক্ষণ হলো জিদ আর সভ্যতার লক্ষণ হলো নিরহংকার। যারা সত্যকে প্রমাণ করে তারা সদাসর্বদা স্বয়ং অহংকারশূন্য হয়ে সভ্যতাপূর্বক ব্যবহার করবে।