02.06.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
স্মরণে থাকো, তাহলে দূরে থেকেও বাবার সাথেই থাকবে, স্মরণে থাকলে বাবার সাথে থাকারও
অনুভব হয় আর বিকর্মও বিনাশ হয়”
প্রশ্নঃ -
দূরদেশী বাবা
বাচ্চাদেরকে দূরদর্শী বানানোর জন্য কোন্ জ্ঞান প্রদান করছেন?
উত্তরঃ
সৃষ্টিচক্রে
আত্মা কিভাবে ভিন্ন-ভিন্ন বর্ণে আসে, এই জ্ঞান দূরদর্শী বাবা-ই প্রদান করেন। তোমরা
এখন জেনেছো যে - এখন তোমরা হলে ব্রাহ্মণ বর্ণের, ইতিপূর্বে যখন তোমাদের কাছে এই
জ্ঞান ছিল না তখন তোমরা শূদ্র বর্ণের ছিলে, তারও পূর্বে বৈশ্য বর্ণের ছিলে।
দূরদেশের বাসিন্দা বাবা এসে বাচ্চাদেরকে দূরদর্শী বানানোর জন্য এই জ্ঞান প্রদান
করছেন ।
গীতঃ-
যে প্রিয়
বাবার সাথে আছে, তার জন্য জ্ঞানের বর্ষণ আছে...
ওম্ শান্তি ।
যে জ্ঞান
সাগরের সাথে আছে, তার জন্য জ্ঞানের বর্ষণ আছে। তোমরা এখন বাবার সাথে আছো, তাই না!
হয়তো বিদেশে আছো বা অন্য কোথাও, কিম্তু বাবার সাথেই আছো। বাবাকে মনে তো রাখো, তাই
না! যে বাচ্চারা বাবাকে স্মরণ করে, তারা সর্বদা বাবার সাথেই থাকে। যোগযুক্ত হয়ে
থাকার কারণে বাবার সাথেও থাকে আবার বিকর্মও বিনাশ হয়, তারপর শুরু হয় বিকর্মাজিৎ
সম্বৎ। পুনরায় যখন রাবণ রাজ্য শুরু হয়, তখন বলা হয় রাজা বিক্রমের সম্বৎ। তিনিই
বিকর্মাজিৎ ছিলেন আবার (দ্বাপরযুগ থেকে) তিনিই বিক্রমী হয়ে যান। এখন তোমরা বিকর্মাজিৎ
তৈরী হচ্ছ। পুনরায় তোমরাও বিক্রমী হয়ে যাবে। এই সময় সবাই অতিবিক্রমী হয়ে গেছে।
কারোরই নিজের ধর্ম সম্বন্ধে কিছুই জানা নেই। আজ বাবা তোমাদেরকে একটি ছোটো প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা করছেন - সত্যযুগে দেবতাদের এই জ্ঞান থাকে কি, যে তারা হল আদি সনাতন
দেবী-দেবতা ধর্মের? যেরকম তোমরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলো যে - আমি হলাম হিন্দু
ধর্মের, কেউ বলে - আমি খ্রীস্টান ধর্মের। সেইরকম সেখানে দেবতারা নিজেদেরকে
দেবী-দেবতার ধর্মের মনে করবে? ভাবনা চিন্তা করবার মতো বিষয়, তাই না! সেখানে
দ্বিতীয় আর কোনো ধর্ম তো নেই যে পরিচয় দেওয়ার জন্য বলবে - আমি হলাম অমুক ধর্মের।
এখানে অনেক ধর্ম আছে, তাই পরিচয় দেওয়ার জন্য আলাদা আলাদা নাম রেখে দিয়েছে। সেখানে
তো হল-ই এক ধর্ম, এইজন্য বলার দরকার পড়ে না যে - আমি এই ধর্মের। তাদের এটাও জানা
নেই যে, ধর্ম বলে কিছু হয়, তাদেরই তো হল রাজত্ব। এখন তোমরা জানো যে আমরাই হলাম আদি
সনাতন দেবী দেবতার ধর্মের। দেবী-দেবতা আর অন্য কাউকে বলা যায় না। পতিত হওয়ার কারণে
নিজেদেরকে দেবতা বলতে পারে না। পবিত্রকেই দেবতা বলা যায়। সেখানে তো এরকম কোনও কথা
হবে না। কারো সাথে তুলনাও করা হয় না। এখন তোমরা সঙ্গম যুগে আছো। তোমরা জেনে গেছ যে
আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম পুনরায় স্থাপন হচ্ছে। সেখানে তো কোনো ধর্মের কথা নেই।
সেখানে তো হলোই এক ধর্ম। এটাও বাচ্চাদেরকে বোঝানো হয়েছে, তারা যে বলে - মহাপ্রলয়
হবে অর্থাৎ কিছুই থাকবে না, এটাও মিথ্যা হয়ে যায়। বাবা বসে বোঝাচ্ছেন - সত্য কোনটি?
শাস্ত্রে তো দেখিয়ে দিয়েছে যে - চারিদিক জলমগ্ন হয়ে যাবে। বাবা বোঝাচ্ছেন যে এক
ভারত ছাড়া বাকি সব জলমগ্ন হয়ে যাবে। সত্যযুগে এত বড় সৃষ্টি থেকে কি হবে ! এক
ভারতের মধ্যেই দেখো কত গ্রাম আছে। প্রথমে জঙ্গলে ভরা থাকে তারপর আস্তে আস্তে বসতি
বৃদ্ধি হয়। সেখানে তো কেবল তোমরাই আদি সনাতন ধর্মেরই হয়ে থাকবে। এই সমস্ত কথা
তোমাদের ব্রাহ্মণদের বুদ্ধিতে বাবা ধারণা করাচ্ছেন। এখন তোমরা জেনে গেছে যে উঁচুর
থেকেও উঁচু শিব বাবা কে? তাঁকে কেন পূজা করা হয়? আকন্দ, ধুতুরা ইত্যাদি ফুল কেন
তাকে অর্পণ করা হয়? তিনি তো হলেন নিরাকার, তাই না! ভক্তি মার্গে তো বলে দেয় যে
ভগবান হল নাম-রূপ থেকে পৃথক, কিন্তু নাম-রূপ থেকে পৃথক কোন জিনিস হয় না। তাহলে কার
উদ্দেশ্যে এই ফুল আদি অর্পণ করে? প্রথম প্রথম পূজা তো তাঁর-ই হয়। মন্দিরও তাঁর তৈরি
হয় কেননা ভারতের এবং অন্যান্য সমগ্র দুনিয়ার বাচ্চাদেরকে বাবা-ই সেবা করেন।
মানুষদেরকেই সেবা করা যায়, তাই না! এই সময় তোমরা নিজেদেরকে দেবী-দেবতা ধর্মের বলতে
পারো না। তোমাদের এটা জানাও ছিল না যে আমরাই দেবী দেবতার ধর্মের ছিলাম, পুনরায় এখন
সেই ধর্মের হচ্ছি। এখন বাবা বোঝাচ্ছেন তো বুঝতে হবে - এই জ্ঞান এক বাবা ছাড়া আর
কেউ দিতে পারেন না। তাঁকেই বলা হয় - জ্ঞানের সাগর, নলেজফুল। গাওয়া হয় যে -
রচয়িতা আর রচনাকে ঋষি মুনি আদি কেউই জানেন না। নেতি-নেতি বলে দেন। যেরকম ছোট
বাচ্চাদের মধ্যে কোনো জ্ঞান থাকে কি ? ধীরে ধীরে যখন বড় হয় তখন তাদের বুদ্ধিও
খুলতে থাকে। বুদ্ধিতে আসতে থাকে যে বিদেশ কোথায়, এটা কোথায়। বাচ্চারা তোমরাও
প্রথমে এই অসীম জগতের জ্ঞানের কিছুই জানতে না। এটাও বলেছো যে - আমরা যদিও শাস্ত্র
আদি অনেক পড়েছিলাম, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি। মানুষ-ই এই ড্রামাতে অ্যাক্টর থাকে,
তাইনা !
সমস্ত খেলা দুটি কথার
উপর ভিত্তি করে রচিত । ভারতের পরাজয় আর ভারতের জয়। ভারতে সত্যযুগ আদির সময়
পবিত্র ধর্ম ছিল, আর এখন হলো অপবিত্র ধর্ম। অপবিত্রতার কারণে নিজেদেরকে দেবতা বলতে
পারে না, তবুও ‘শ্রী শ্রী’ নাম রেখে দেয়। কিন্তু ‘শ্রী’ কথার অর্থ হলো শ্রেষ্ঠ।
শ্রেষ্ঠ বলা-ই যায় দেবতাদেরকে। শ্রীমৎ ভগবানুবাচ বলা হয়, তাই না! এখন ‘শ্রী’তবে
কে হলেন? যে বাবার কাছ থেকে শুনে তোমরা ‘শ্রী’ তৈরি হচ্ছো নাকি যে নিজেকে শ্রী শ্রী
বলে পরিচয় দিচ্ছে? বাবার কর্তব্য অনুসারে যে নাম দেওয়া হয়েছে, সেটাও নিজেদের উপর
রেখে দিয়েছে। এটাই হল সত্য ঘটনা। তবুও বাবা বলছেন যে - বাচ্চারা! এক বাবাকে স্মরণ
করতে থাকো। এটাই হলো বশীকরণ মন্ত্র। তোমরাই রাবনের উপর জয় প্রাপ্ত করে জগৎজিত তৈরি
হচ্ছো। প্রতিমুহূর্তে নিজেদেরকে আত্মা মনে করো। এই শরীর তো এখানকার পাঁচ তত্ত্ব
দিয়ে তৈরি। তৈরী হবে, আবার বিনাশ হবে, পুনরায় তৈরি হবে। কিন্তু আত্মা তো হল
অবিনাশী। অবিনাশী আত্মাদেরকেই এখন অবিনাশী বাবা পড়াচ্ছেন এই সঙ্গমযুগে। যদিও অনেক
বিঘ্ন আদি পড়ে, মায়ার ঝড় আসতে থাকে, তোমরা বাবার স্মরণে থাকো। তোমরা বুঝে গেছো
যে - আমরা সতোপ্রধান ছিলাম, পুনরায় তমোপ্রধান হয়েছি। তোমাদের মধ্যেও নম্বরের
ক্রমানুসারে জানে। বাচ্চারা তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে - আমরাই প্রথমে প্রথমে ভক্তি
শুরু করেছি। অবশ্যই যিনি সার প্রথম ভক্তি করেছেন তিনিই শিবের মন্দির বানিয়েছিলেন,
কেননা ধনবানও তিনিই ছিলেন, তাই না! বড় রাজাকে দেখে অন্যান্য রাজারা এবং প্রজারাও
সেটাই করতে থাকে। এইসব হলো ডিটেলের বিষয়। এক সেকেন্ডে জীবনমুক্তি বলা হয়, তবুও
বোঝানোর জন্য কত বছর লেগে যায়! জ্ঞান তো খুবই সহজ, জ্ঞান বুঝতে এতটা সময় লাগে না,
যতটা স্মরণের যাত্রায় লাগে। আহ্বান করেছিলে যে - বাবা এসো, এসে আমাদেরকে পতিত থেকে
পবিত্র বানাও, এরকম বলো নি যে - বাবা এসে আমাকে বিশ্বের মালিক বানাও। সবাই বলে -
পতিত থেকে পবিত্র বানাও। পবিত্র দুনিয়া বলা-ই হয় সত্যযুগকে, আর এটা হল পতিত দুনিয়া,
পতিত দুনিয়া বলা সত্ত্বেও নিজেদের পতিত বলে স্বীকার করে না। নিজের প্রতি ঘৃণাভাব
রাখেনা। তোমরা কারো হাতে তৈরি খাবার খাও না, তখন তারা বলে যে আমরা কি অচ্ছুৎ? আরে,
তোমরা নিজেরাই তো বলে দিচ্ছো, তাই না! পতিত তো সবাই, তাই না! তোমরা তো বলোই যে আমরা
হলাম পতিত, এই দেবতারা হলেন পবিত্র। তাহলে পতিতদেরকে কি বলা যাবে? গায়ন আছে না -
অমৃত ছেড়ে বিষ কেন পান করেছো। বিষ তো হলো খারাপ, তাই না! বাবা বলেন, এই বিষ
তোমাদেরকে আদি-মধ্য-অন্ত দুঃখ প্রদান করে, কিন্তু এর বিষাক্ততা তোমরা বুঝতে পারো
না। যেমন কোনো অভ্যাসে আসক্ত ব্যক্তি সেই অভ্যাস ছাড়া থাকতে পারে না, যেমন কোনো
মদাসক্ত ব্যক্তি মদ ছাড়া থাকতে পারে না। যুদ্ধের সময় হলে তখন সেই মদাসক্ত
ব্যক্তিকে মদ পান করিয়ে নেশাগ্রস্ত করে যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয়। নেশা চড়ে গেলে ঠিক-বেঠিক
জ্ঞান থাকে না, তখন তারা শত্রুপক্ষের ক্ষমতা না যাচাই করে যুদ্ধ করতে চলে যায়। সেই
মানুষদের মৃত্যু ভয় থাকেনা। কোথাও কোথাও বম্বকে নিজের শরীরে বেঁধে নিয়ে
গন্তব্যস্থলে যায়। বলা হয় যে মিসাইলের মাধ্যমে যুদ্ধ হবে, সঠিকটা তোমরা এখন
বাস্তবে দেখতেই পাচ্ছো। আগে তো তোমরা কেবল পড়েছিলে, পেট থেকে মিসাইল বের হলো....
তারপরে এটা হলো....। এখন তোমরা বুঝে গেছো যে পাণ্ডব কারা, আর কৌরব কারা? স্বর্গবাসী
হওয়ার জন্য পান্ডবেরা বেঁচে থেকেও দেহ-অভিমান থেকে ভুলে থাকার পুরুষার্থ করেছিল।
তোমরা এখন এই পুরানো জুতোকে ছেড়ে দেওয়ার পুরুষার্থ করছো। তোমরা বলো যে পুরানো জুতা
ছেড়ে নতুন নিতে হবে। বাবা বাচ্চাদেরকেই বোঝাচ্ছেন। বাবা বলছেন যে - আমি
কল্প-কল্পেই আসি। আমার নাম হল শিব। শিব-জয়ন্তীও পালন করে। ভক্তি মার্গের জন্য অনেক
মন্দির আদি বানায়। অনেক ভিন্ন ভিন্ন ধরনের নাম রেখে দেয়। দেবীদেরও এইরকম অনেক নাম
রেখে দেয়। এই সময় তোমাদের পূজা হচ্ছে। বাচ্চারা এটাও তোমরা জেনে গেছো যে, যাঁকে
আমরা পূজা করে এসেছি, তিনিই এখন আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। যে লক্ষ্মী-নারায়ণের আমরা
পুজারী ছিলাম সেই লক্ষ্মী-নারায়ণ এখন আমরা হতে চলেছি। এই জ্ঞান-বুদ্ধিতে এসে গেছে।
মনন-চিন্তন করতে থাকো আর অন্যদেরকেও শোনাও। অনেকেই আছে যারা ধারণা করতে পারে না।
বাবা বলেন যে - বেশি ধারণ না করতে পারলেও কোনো চিন্তার বিষয় নেই। বাবাকে কিভাবে
স্মরণ করতে হয়, সেই ধারণা তো আছে, তাইনা! বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। যে মুরলী পড়তে
পারে না তো, এখানে বসে জ্ঞানের চিন্তন করো। এখানে কোনো বন্ধন, ঝঞ্ঝাটাদি নেই।
বাড়িতে পুত্র-পৌত্রদের পরিবেশকে দেখে এই নেশা উধাও হয়ে যায়। এখানে চিত্রও রাখা আছে।
কাউকে বোঝানো খুব সহজ। তারা তো গীতা আদি সম্পূর্ণ কণ্ঠস্থ করে নেয়। শিখ
ধর্মাবলম্বীদেরও গ্রন্থ কণ্ঠস্থ থাকে। তোমাদেরকে কি কণ্ঠস্থ করতে হবে? বাবাকে। তোমরা
বলো যে বাবা, এটা তো একদম নতুন বিষয়। কল্পের মধ্যে এই হল সেই সময় যখন তোমাদেরকে,
নিজেদেরকে আত্মা মনে করে এক বাবাকে স্মরণ করতে হয়। ৫ হাজার বছর পূর্বেও
শিখিয়েছিলাম, আর কারোর এতটা শক্তি নেই যে এইভাবে তোমাদেরকে বোঝাতে পারে। জ্ঞানের
সাগর হলেনই এক বাবা, দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। জ্ঞানের সাগর বাবা-ই তোমাদেরকে
বোঝাচ্ছেন, আজকাল তো এরকম অনেক বেরিয়ে আসে, যে বলে যে - আমি অবতার নিয়েছি, এই
জন্য সত্যের স্থাপনা করতে অনেক বিঘ্ন পড়ে যায়। কিন্তু এটাও গাওয়া হয় যে -
সত্যের নৌকা হেলবে, দুলবে কিন্তু ডুববে না।
বাচ্চারা, এখন তোমরা
বাবার কাছে এসেছ তাই তোমাদের মধ্যে এখন হৃদয় থেকে অনেক খুশি থাকা দরকার। আগে যখন
তীর্থযাত্রা করতে যেতে তখন কিরকম মনে হতো? এখন বাড়ি-ঘর ছেড়ে যখন এখানে আসো তখন কি
চিন্তা চলে? আমরা বাপ-দাদার কাছে যাচ্ছি। বাবা এটাও বুঝিয়েছেন যে - আমাকে কেবল শিব
বাবা-ই বলা হয়, আর আমি যার মধ্যে প্রবেশ করি, তিনি হলেন ব্রহ্মা। বংশতালিকা হয়,
তাইনা ! সবার প্রথমে ব্রাহ্মণদের বংশতালিকা করা হয়। তারপর দেবতাদের বংশলতিকা হয়ে
যায়। এখন দূরদেশী বাবা বাচ্চাদেরকে দূরদর্শী বানাচ্ছেন। তোমরা জেনেছ যে, আত্মা
কিভাবে সমগ্র চক্রে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণে আসে, এই জ্ঞান দূরদর্শী বাবা-ই প্রদান করেন।
তোমরা বিচার করবে যে, এখন আমরা ব্রাহ্মণ বর্ণের হয়েছি, এর পূর্বে যখন আমাদের জ্ঞান
ছিল না, তখন আমরা শূদ্র বর্ণের ছিলাম। ইনি (ব্রহ্মা বাবা) হলেন আমাদের গ্রেট গ্রেট
গ্র্যান্ড ফাদার। গ্রেট শূদ্র, গ্রেট বৈশ্য, গ্রেট ক্ষত্রিয়....তারও পূর্বে গ্রেট
ব্রাহ্মণ ছিলাম। এখন এই সমস্ত কথা এক বাবার ছাড়া আর কেউই বোঝাতে পারে না। এই
জ্ঞানকে বলা হয় দূরদর্শী জ্ঞান। দূরদেশে বসবাসকারী বাবা এসে দূর দেশের সমগ্র জ্ঞান
বাচ্চাদেরকে শোনাচ্ছেন। তোমরা জেনে গেছো যে - আমাদের বাবা দূর দেশ থেকে এঁনার (ব্রহ্মা
বাবার) মধ্যে আসেন। এটা হল পরের দেশ, পরের রাজ্য। শিব বাবার নিজের কোনো শরীর নেই আর
তিনিই হলেন জ্ঞানের সাগর, স্বর্গের রাজ্যও তিনি প্রদান করেন। কৃষ্ণ কি স্বর্গের
অবিনাশী উত্তরাধিকার দিতে পারেন ! শিব বাবা-ই প্রদান করেন। কৃষ্ণকে তো বাবা বলা
যায়না। বাবা রাজ্য প্রদান করেন, বাবার থেকেই অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়। এখন
লৌকিক জগতের সমস্ত উত্তরাধিকার প্রাপ্তিও সম্পূর্ণ হয়। সত্যযুগে তোমাদের এইসব
কিছুই জানা থাকবে না, যে আমরাই সঙ্গমযুগে ২১ জন্মের অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত
করেছিলাম। এটা এখনই তোমরা জেনেছো যে আমরা ২১ জন্মের অবিনাশী উত্তরাধিকার অর্ধ
কল্পের জন্য গ্রহণ করছি। ২১ জন্ম, সম্পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত হবে । যখন শরীর বৃদ্ধ হবে
তখন সময় অনুসারে শরীর ত্যাগ করবে। যেরকম সাপ পুরানো খোলস ছেড়ে নতুন গ্রহণ করে।
আমাদের এখন অভিনয় করতে-করতে এই শরীর রূপী বস্ত্র পুরানো হয়ে গেছে।
তোমরাই হলে
সত্যিকারের ব্রাহ্মণ। তোমাদেরকেই ভ্রমরী বলা হয়। তোমরাই কীটদেরকে নিজের সমান
ব্রাহ্মণ বানাও। তোমাদেরকেই বলা যায় যে কীটদেরকে নিয়ে এসে বসে ভুঁ-ভুঁ করো অর্থাৎ
জ্ঞানের গুঞ্জন করতে থাকো। ভ্রমরীরাও ভুঁ-ভুঁ করতে থাকে, তারপর কোনো কোনো কীটের তো
ডানা জন্মায় আবার কেউ কেউ তো মরেও যায়। এইসব কিছুর উদাহরণ হলো এখনকার। তোমরা হলে
বাবার অতি প্রিয় বাচ্চা, বাচ্চাদেরকে চোখের মনিও বলা হয়। বাবা বলেন যে - তোমরা হলে
নয়নের মনি। তোমাদেরকে নিজের বানিয়েছি তাে তোমরাও আমার হয়ে গেছো তাই না! এইরকম
বাবাকে যত স্মরণ করবে ততই তোমাদের পাপ বিনাশ হয়ে যাবে। আর অন্য কোনো দেহধারীকে
স্মরণ করলে পাপ বিনাশ হবে না। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
জীবিত থেকেও দেহ-অভিমান থেকে ভুলে থাকার পুরুষার্থ করতে হবে। দেহরূপী এই পুরানো
জুতোর প্রতি এতটুকুও যেন মোহ না থাকে।
২ ) সত্যিকারের
ব্রাহ্মণ হয়ে কীটের উপর ভ্রমরের গুঞ্জন করার ন্যায় অজ্ঞানী আত্মাদের কাছে জ্ঞানের
গুঞ্জন করে তাদেরকেও নিজের সমান ব্রাহ্মণ বানাতে হবে।
বরদান:-
অমৃতবেলার মহত্বকে জেনে উন্মুক্ত ভান্ডার থেকে নিজের ঝুলি ভরপুর-কারী ভাগ্যবান ভব
অমৃতবেলায় বরদাতা,
ভাগ্য বিধাতার থেকে যতটা ভাগ্যের রেখা টানতে চাও, টেনে নাও কেননা সেইসময় ভোলা
ভগবানের রূপে লভফুল থাকেন এইজন্য মালিক হও আর অধিকার নাও। খাজানার উপর কোনও তালা
চাবি দেওয়া নেই। সেই সময় কেবল মায়ার বাহানাবাজি (অজুহাত) ছেড়ে একটাই সংকল্প করো যে,
আমি যা আছি, যেরকম আছি, বাবা তোমার আছি। মন-বুদ্ধি বাবাকে অর্পন করে সিংহাসনধারী হয়ে
যাও তাহলে বাবার সকল খাজানা, নিজের খাজানা অনুভব হবে।
স্লোগান:-
সেবাতে
যদি স্বার্থ মিক্স থাকে তাহলে সফলতাও মিক্স হয়ে যাবে, সেইজন্য নিঃস্বার্থ সেবাধারী
হও।
অব্যক্ত ঈশারা : -
আত্মিক স্থিতিতে থাকার অভ্যাস করো, অন্তর্মুখী হও
এমন কোনও ব্রাহ্মণ
নেই, যে আত্ম-অভিমানী হওয়ার পুরুষার্থী হবে না। কিন্তু নিরন্তর আত্ম-অভিমানী, যার
দ্বারা কর্মেন্দ্রিয়ের উপর সম্পূর্ণ বিজয় হয়ে যাবে, প্রত্যেক কর্মেন্দ্রিয়
সতোপ্রধান স্বচ্ছ হয়ে যাবে, দেহের পুরানো সংস্কার আর সম্বন্ধের থেকে সম্পূর্ণ মরজীবা
হয়ে যাবে, তার জন্য অন্তুর্মুখী হও, এই পুরুষার্থের দ্বারাই নম্বরের ক্রম হবে।