02.12.2024 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের নিজেদের আত্মা রূপী দীপকের দেখাশোনা নিজেদেরকেই করতে হবে, মায়ার তুফান থেকে বাঁচার জন্য জ্ঞান-যোগের ঘৃত অবশ্যই চাই"

প্রশ্নঃ -
কোন্ পুরুষার্থ গুপ্ত বাবার থেকে গুপ্ত উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করিয়ে দেবে?

উত্তরঃ  
অন্তর্মুখ অর্থাৎ চুপ থেকে বাবাকে স্মরণ করো, তো গুপ্ত উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়ে যাবে। স্মরণে থাকাকালীন শরীর ছাড়লে তো খুবই ভালো, এতে কোনো কষ্ট হয় না। স্মরণের সাথে সাথে জ্ঞান-যোগের সার্ভিসও করতে হবে, আর তা যদি করতে না পারো, তবে কর্মণা সেবা সেবা করো। অনেককে সুখ প্রদান করলে তো আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেই। কথাবার্তা এবং ব্যবহারও অত্যন্ত সাত্বিক চাই।

গীতঃ-
দুর্বলের সঙ্গে লড়াই বলবানের.....

ওম্ শান্তি ।
বাবা বুঝিয়েছেন যে, যখনই তোমরা এইরকম গীত শুনবে, তখন প্রত্যেকেই এর উপরে বিচার সাগর মন্থন করবে। তোমরা বাচ্চারা জানো যে, যখন কেউ মারা যায়, তখন সেই আত্মার উদ্দেশ্যে ১২ দিনের জন্য প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।তোমরাও এখন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো এবং নিজেদের আত্মারূপী প্রদীপের জ্যোতিকে সর্বদা দীপ্তমান রাখতে পুরুষার্থ করছো। এই পুরুষার্থ তারাই করবে যারা মালায় আসবে। প্রজারা এই মালায় আসতে পারবে না। বিজয় মালাতে প্রথমে আসার জন্য তোমরা এখন পুরুষার্থ করছো। কখনও যেন মায়ারূপী বিড়াল তুফান লাগিয়ে কুকর্ম না করিয়ে দেয়, যার ফলস্বরূপ আত্মারূপী প্রদীপ নিভে যায়। এখন এতে জ্ঞান আর যোগ এই দুই শক্তি চাই। যোগের সাথে জ্ঞানও জরুরী। প্রত্যেককে নিজের দীপককে রক্ষা করতে যত্নশীল হতে হবে। অন্তিম সময় পর্যন্ত পুরুষার্থ চলতেই থাকবে। রেস (প্রতিযোগিতা) চলতে থাকলে তো খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যে - কখনো যেন আত্মার জ্যোতি কম না হয়ে যায়, নিভে না যায়। এইজন্য যোগ আর জ্ঞানের ঘৃত প্রতিদিন ঢালতে হবে। যোগবলের শক্তি নেই তো দৌড়াতেও পারবে না। পিছনে থেকে যাবে। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে পড়াশোনা করা হয়, যদি কোনো ছাত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো না হয়, সে তখন অন্যান্য বিষয়ের উপরে বিশেষ মনোযোগ দেয়। এখানেও একইরকম। স্থুল সেবার বিষয়ও খুব ভালো। অনেকের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। কোনো কোনো বাচ্চা জ্ঞানদানের সেবা করে। দিন দিন সেবার বৃদ্ধি হতে থাকে। কোনো কোনো ধনী ব্যক্তির ৬-৮ টি দোকানও থাকে। সব দোকানে একইরকম বেচাকেনা চলেনা। কোনো দোকানে কম গ্রাহক সংখ্যা আবার কোনো দোকানে বেশী। তোমাদেরও একদিন সেই সময় আসবে, যখন রাতে ঘুমানোর সময় পাবেনা। সবাই জেনে যাবে যে জ্ঞানের সাগর বাবা এসেছেন জ্ঞানরত্ন দিয়ে আমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করতে। সেই সময় কতৈ যে বাচ্চার আগমন হবে সে কথা আর জিজ্ঞাসা করোনা। যখন কোনো দোকানে খুব কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যায়, সাধারণ ক্রেতারা পরস্পরকে তা শোনায়। তোমরা বাচ্চারা জানো যে, এই রাজযোগের শিক্ষা খুবই সহজবোধ্য। যখন প্রত্যেকে এ বিষয়ে জেনে যাবে যে, এখানে জ্ঞানরত্ন পাওয়া যায়, তখন তারা আসতেই থাকবে। তোমরা এই জ্ঞান এবং যোগের সার্ভিস করে থাকো। যারা এই জ্ঞান ও যোগের সেবা করতে অক্ষম, তারা কর্মণা সার্ভিস করেও মার্কস নিতে পারে। সকলের আশীর্বাদ প্রাপ্ত করবে। সবাই সবাইকে সুখ দিতে হয় । এট হলো খুবই সস্তা খনি। এ হলো অবিনাশী হীরে জহরতের খনি। তারা ৮ রত্নের মালা বানায় এবং পূজাও করে, কিন্তু তারা এটা জানেনা যে, এ কাদের মালা।

তোমরা বাচ্চারাই জানো যে, কিভাবে আমরা পূজ্য থেকে পূজারী হই। এই বড়ই ওয়ান্ডারফুল নলেজ, যা পৃথিবীতে আর কেউই জানেনা। এখন তোমাদের অর্থাৎ লাকি স্টারদের এই নিশ্চয় রয়েছে যে, আমরাই স্বর্গের মালিক ছিলাম, এখন নরকের মালিক হয়ে গেছি, স্বর্গের মালিক হবো তো পুনর্জন্মও সেখানেই নেবো। এখন আমরা পুনরায় স্বর্গের মালিক হচ্ছি। শুধুমাত্র তোমাদের ব্রাহ্মণদেরই এই সঙ্গম যুগের বিষয়ে জানা আছে। অন্য দিকে সমগ্র পৃথিবীতে হলো কলিযুগে। যুগ তো হলো আলাদা আলাদা তাই না! সত্যযুগে থাকলে পুনর্জন্ম সত্যযুগেই নেবে। এখন তোমরা রয়েছো সঙ্গম যুগে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এখন শরীর ত্যাগ করে তবে সংস্কার অনুসার এখানেই এসে জন্মগ্রহণ করবে। তোমরা ব্রাহ্মণরা হলে সঙ্গম যুগের । তারা, শূদ্ররা হলো কলিযুগের। কেবলমাত্র সঙ্গম যুগেই তোমরা এই নলেজ প্রাপ্ত করো। তোমরা বি. কে. জ্ঞান গঙ্গারা প্র্যাক্টিক্যালে এখন সঙ্গম যুগে রয়েছো। এখন তোমাদেরকে রেস করতে হবে। দোকান সামলাতে হবে। জ্ঞান-যোগের ধারণা না হলে তো দোকান সামলাতে পারবে না। সেবার প্রত্যর্পণ (রিটার্নে) তো বাবা-ই দেবেন। যখন কোনো মহাযজ্ঞ রচনা করা হয়, তো বিভিন্ন ধরনের ব্রাহ্মণরা সেখানে আসে। তাদের মধ্যে কারোর দক্ষিণা বেশি, কারোর কম হয়। এখন পরমপিতা পরমাত্মা এই রুদ্র জ্ঞানযজ্ঞ রচনা করেছেন। আমরাই হলাম ব্রাহ্মণ এবং আমাদের ধান্ধাই হলো মানুষকে দেবতা বানানো। আর কোনো যজ্ঞে কেউ বলবে না যে আমি মনুষ্য থেকে দেবতা হতে চলেছি। এখন এটাকে রুদ্র জ্ঞানযজ্ঞ বা পাঠশালাও বলা হয়ে থাকে। জ্ঞান এবং যোগের দ্বারাই প্রত্যেক বাচ্চা দেবী-দেবতা পদ প্রাপ্ত করে। বাবা রায়ও দেন যে, তোমরা পরমধাম থেকে বাবার সাথে এসেছো। তোমরা বলবে যে, আমরা হলাম পরমধাম নিবাসী। এই সময় আমরা বাবার শ্রীমতানুসারে স্বর্গের স্থাপনা করছি। যে স্থাপনা করবে, সে অবশ্যই মালিক হবে। তোমরা জানো যে, এই পৃথিবীতে আমরা হলাম অতিভাগ্যশালী, জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান চন্দ্রমা আর জ্ঞান নক্ষত্র । রচয়িতা হলেন জ্ঞানের সাগর। ঐ সূর্য, চন্দ্র, তারা হলো স্থুলাকার বিশিষ্ট। তাদের সাথেই আমাদের তুলনা করা হয়েছে। সেই অনুসারে আমরাও আবার জ্ঞান সূর্য , জ্ঞান চন্দ্রমা আর জ্ঞান নক্ষত্র হবো। আমাদেরকে এইরকম যিনি বানাচ্ছেন তিনি হলেন - জ্ঞানের সাগর। নাম তো সেটাই হবে তাইনা। জ্ঞান সূর্য অথবা জ্ঞান সাগরের আমরা হলাম বাচ্চা। তিনি তো এখানকার নিবাসী নন। বাবা বলেন, আমি আসি তোমাদেরকে নিজের সমান তৈরী করতে। জ্ঞান সূর্য, জ্ঞান নক্ষত্র তোমাদেরকে এখানেই হতে হবে। তোমরা বুঝে গেছো যে আমরাই ভবিষ্যতে পুনরায় এখানেই স্বর্গের মালিক হবো। সবকিছুই নির্ভর করছে পুরুষার্থের উপরে। আমরা হলাম মায়ার উপরে বিজয় প্রাপ্তকারী ওয়ারিয়র্স। তারা তো মনকে বশ করার জন্য হঠযোগ ইত্যাদি করে। তোমরা তো হঠযোগ ইত্যাদি করোনা। বাবা বলেন, তোমাদেরকে কোনো পরিশ্রমাদি করার দরকার নেই, কেবল বলি যে, তোমাদেরকে আমার কাছে আসতে হবে তাই আমাকে স্মরণ করো। বাচ্চারা আমি তোমাদেরকে নিতে এসেছি। এইরকম আর অন্য কোনো ব্যক্তি বলতে পারেনা। হয়তো নিজেদেরকে ঈশ্বর বলে পরিচয় দেয় কিন্তু নিজেদেরকে গাইড বলে পরিচয় দিতে পারেনা। বাবা বলেন, আমিই হলাম মুখ্য পান্ডা, কালেরও কাল। সাবিত্রী সত্যবানের গল্প আছে না! তার ভালোবাসা ছিলো ব্যক্তি (শরীর) কেন্দ্রিক। তাই সে দুঃখী হয়েছিল। তোমরা তো সদা খুশীতে থাকো। আমি তোমাদের আত্মাদেরকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, তোমরা কখনো দুঃখী হবেনা। তোমরা এখন জেনে গেছো যে, আমাদের বাবা এসেছেন আমাদেরকে সুইট হোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাকে মুক্তিধাম, নির্বাণধাম বলা হয়। তিনি বলেন, আমি হলাম সকল কালেরও কাল। সেই কাল তো একটি আত্মাকে নিয়ে যায়, আমি তো হলাম অনেক বড় কাল। ৫ হাজার বছর আগেও আমি গাইড হয়ে সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সজন সজনীদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যান, তাই তাঁকে স্মরণ তো করতেই হবে!

তোমরা জেনে গেছো যে, এখন আমরা পড়াশোনা করছি, পুনরায় এখানেই আসবো। প্রথমে তোমরা সুইট হোমে ফিরে যাবে তারপর তোমরা পুনরায় নিচে নেমে আসবে। তোমরা বাচ্চারা হলে স্বর্গের নক্ষত্র । পূর্বে তোমরা নরকের নক্ষত্র ছিলে। তোমরা বাচ্চারাই হলে তারা; নম্বরক্রমে পুরুষার্থ অনুসারে তোমাদেরকেই লাকি স্টার বলা হয়। ঠাকুরদাদার সম্পত্তি তোমাদের প্রাপ্ত হয় । এই খনি হলো বড়ই জবরদস্ত আর এই খনি একবারের জন্যই উন্মুক্ত হয়। সেখানে তো অনেক রকমের ভিন্ন ভিন্ন খনি থাকে যেগুলি সর্বদা উন্মুক্ত অবস্থাতেই থাকে। যদি তোমরা সেগুলিকে খুঁজতে থাকো, তোমরা অনেক খুঁজে পেয়ে যাবে। এখানে তো কেবলমাত্র একটি বারের জন্য একটাই খনি প্রাপ্ত হয়, তাও আবার অবিনাশী জ্ঞান রত্নের। সেখানে তো পুস্তক অনেক আছে, কিন্তু তাদেরকে রত্ন বলা যায়না। বাবাকেই জ্ঞানের সাগর বলা হয়। এ হলো অবিনাশী জ্ঞানরত্নের নিরাকারী খনি। এই রত্ন দিয়েই আমরা আমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করি। বাচ্চারা তোমাদের তো খুশি হওয়া উচিত । প্রত্যেকের এই নেশা বা গর্বও থাকে । কোনো দোকান যদি খুব ভালো চলে তো তার নামও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এখানে প্রজাও বানানো হচ্ছে তো উত্তরাধিকারীও বানানো হচ্ছে। এখানেই তোমরা তোমাদের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে রত্ন দিয়ে ভরপুর করে পুনরায় অন্যদের দান করে থাকো। পরমপিতা পরমাত্মা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর, যিনি জ্ঞান রত্ন দিয়ে আমাদের বুদ্ধির পাত্রকে ভরপুর করে দেন। বাকি ওই সমুদ্র নয় যেটা দেখানো হয়েছে যে রত্নের থালা ভরপুর করে দেবতাদের প্রদান করে। ওই সাগর থেকে তো তোমরা কোনো রত্ন প্রাপ্ত করতে পারো না। এখানে জ্ঞানরত্নের কথা বলা হচ্ছে। ড্রামা অনুসারে পুনরায় তোমাদের রত্নের খনি গুলি প্রাপ্ত হয়। সেখানে তো অনেক অনেক হিরে জহরত থাকবে, যার দ্বারা পুনরায় ভক্তি মার্গে মন্দির তৈরি করবে। আর্থকোয়েক ইত্যাদি হওয়ার কারণে সবকিছুই ভূপৃষ্ঠের অন্দরে চলে যায় । সেখানে মহলাদি তো অনেক অনেক তৈরি হয়, কেবল একটাই নয়। এখানেও তো রাজাদের মধ্যেও অনেক কম্পিটিশন হয়ে থাকে । তোমরা জানো যে কল্প পূর্বে যেরকম মহলাদি তৈরি হয়েছিল, সেই রকমই পুনরায় হবে। সেখানে তো খুব সহজেই মহলাদি তৈরি হয়ে যাবে। সায়েন্স অনেক কাজে আসবে। কিন্তু সেখানে 'সায়েন্স' এই শব্দটি থাকবে না। 'সায়েন্স'- কে হিন্দি (বা বাংলায়) 'বিজ্ঞান' বলা হয়। আজকাল তো "বিজ্ঞান ভবন"-ও নাম রেখে দেয়। এই শব্দটির সাথে জ্ঞানের মিল পাওয়া যায়। জ্ঞান আর যোগকে 'বিজ্ঞান' বলা হয়। জ্ঞান থেকে রত্ন প্রাপ্ত হয়, এবং যোগের দ্বারা আমরা এভারহেল্দি হয়ে যাই। এ হলো জ্ঞান এবং যোগের নলেজ, যার দ্বারা পুনরায় বৈকুণ্ঠে বড় বড় ভবন তৈরি হবে। এখন আমরা এই সমস্ত নলেজকে জানি। তোমরা জানো যে, এখন তোমরাই ভারতকে স্বর্গ বানাচ্ছো। তোমাদের এই দেহের সাথে কোনো মমত্ব যেন না থাকে। আমি আত্মা এই শরীরকে ছেড়ে স্বর্গে গিয়ে নতুন শরীর ধারণ করবো। সেখানেও জানবে যে, এক পুরানো শরীর ছেড়ে নতুন শরীর নেবো। সেখানে কোনো দুঃখ বা শোক থাকবেনা। নতুন শরীর নিলে তো ভালই হয়। বাবা আমাদেরকে একইরকম তৈরি করছেন, যেরকম কল্প পূর্বেও তৈরি করেছিলেন। আমরা এখন মানব থেকে দেবতা তৈরি হচ্ছি। একইরকমভাবে কল্পপূর্বেও যেমন অনেক ধর্ম ছিল, এখনও তেমনই আছে। গীতাতে এসব কিছুই লেখা নেই। বলা হয় যে, ব্রহ্মার দ্বারাই আদি সনাতন ধর্মের স্থাপনা হয়েছিল। অনেক ধর্মের বিনাশ কিভাবে হয় সেটাও তোমরা এখন বুঝে গেছো। এখন স্থাপনার কার্য চলছে। বাবা আসেন তখনই, যখন দেবী-দেবতা ধর্ম সম্পূর্ণ ভাবে লোপ পেয়ে যায়। পুনরায় পরম্পরা কিভাবে চলবে? এ তো খুবই সহজ বিষয়। বিনাশ কিসের হয়েছিল? অনেক ধর্মের। তো এখন অনেক ধর্ম আছে, তাইনা! এই সময় হলো অন্তের সময়। এই সমগ্র জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধির মধ্যে থাকা চাই। এরকম তো নয় যে, শিববাবাই সবকিছু বোঝাচ্ছেন ; এই বাবা কি কিছুই বলছেন না? এঁনারও পার্ট রয়েছে । ব্রহ্মার শ্রীমৎ এরও গায়ন রয়েছে, কৃষ্ণের জন্য তো শ্রীমৎ বলা হয় না। সেখানে তো সবকিছুই সুন্দর হয়। সেখানে তো তাদের মতের কোনো প্রয়োজন হয় না । এখানে তো তোমরা ব্রহ্মা বাবারও মত প্রাপ্ত করছো। সেখানে তো যথা রাজা-রানী, তথা প্রজা, সকলেরই শ্রেষ্ঠ মত হবে। নিশ্চয়ই পূর্বে কেউ তাদের এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। দেবতারা হলেন শ্রীমতাবলম্বী। শ্রীমতের দ্বারাই স্বর্গ রচনা হয়। অসুরের মত থেকে নরক রচিত হয়। শ্রীমৎ হলো শিবের। এসমস্তই সহজে বোধগম্য হওয়ার মতো কথা। শিববাবার এইসব হলো দোকান। আমরা বাচ্চারা সেগুলিকে পরিচালনা করি। যে বাচ্চা ভালোভাবে দোকানকে পরিচালনা করে তার নাম হয়। যে রকম ভাবে লৌকিক দোকানের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু সেই ব্যবসা তো কোনো ধনী ব্যক্তিই করতে পারে। ব্যবসা তো সবাই করতে পারে। ছোট বাচ্চাও জ্ঞান আর যোগের ব্যবসা করতে পারে। শান্তি আর সুখধাম, ব্যস্, বুদ্ধিতে এগুলি স্মরণ করতে হবে। তারা তো রাম রাম বলে। এখানে চুপ থেকে স্মরণ করতে হয়। কিছু বলতে হয়না। শিবপুরী, বিষ্ণুপুরী হলো খুব সহজ কথা। সুইট হোম, সুইট রাজধানী স্মরণে আছে? তারা তো স্থুল মন্ত্র প্রদান করে। এখানে হলো সূক্ষ্ম মন্ত্র। অতি সূক্ষ্ম স্মরণ। কেবলমাত্র এই স্মরণ করলেই আমরা স্বর্গের মালিক হয়ে যাবো। যপ আদি কিছু করতে হয় না। কেবলমাত্র স্মরণ করতে হয়। কোনও আওয়াজের প্রয়োজন হয় না। গুপ্ত বাবার থেকে গুপ্ত উত্তরাধিকার চুপ থেকে অন্তর্মুখী হলে তবেই আমরা প্রাপ্ত করতে পারি। এইরকমই স্মরণে থাকাকালীন শরীর ছেড়ে দিলে তো খুবই ভালো ব্যাপার। কোনো পরিশ্রম হয় না। যাদের স্মরণ স্থায়ী হয় না তারা নিজের অভ্যাস করো। সবাইকে বলো যে বাবা বলেছেন, "আমাকে স্মরণ করো তাহলেই অন্তিম কালে যেমন মতি, তেমনই গতি হয়ে যাবে। স্মরণের দ্বারাই বিকর্ম বিনাশ হয় আর আমি স্বর্গে পাঠিয়ে দেবো। বুদ্ধিযোগ শিববাবার সাথে লাগানো তো খুব সহজ। এখানে তো সব প্রকারের সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। সতোপ্রধান হতে হলে, তবে সাত্বিক হতে হবে - আচার ব্যবহার সাত্বিক, কথাবার্তা সাত্বিক। এ হলো নিজের সাথে কথা বলা। সাথীর সাথে ভালোবাসার সাথে কথা বলতে হয় । গান আছে না - "প্রিয় প্রিয় (পিয়ু = প্রিয়তম) বোল, সদা অনমোল...."।

তোমরা হলে রূপ-বসন্ত। আত্মা রূপ হয়ে ওঠে। জ্ঞানের সাগর হলেন বাবা, তাই অবশ্যই এসে জ্ঞান শোনাবেন। তিনি বলেন যে, আমি একবারই এসে শরীর ধারণ করি। এ কম জাদু নয়। বাবাও হলেন রূপ বসন্ত। কিন্তু নিরাকার তো কথা বলতে পারে না। এইজন্য শরীর ধারণ করতে হয়। কিন্তু তিনি পুনর্জন্মে আসেন না। আত্মারা তো পুনর্জন্ম এসে থাকে ।

তোমরা বাচ্চারা বাবার উপরে সমর্পিত হয়ে যাও। তাই বাবা বলেন যে, পুনরায় কারো সাথে মমত্ব রেখো না। নিজের বলে কিছু মনে করো না। মমত্ব সমাপ্ত করার জন্য বাবা যুক্তি বলে দেন। প্রতি কদমে বাবার কাছ থেকে রায় নিতে হবে। মায়া এমনই, যে আঘাত করে। এটা একদম বক্সিংয়ের মতো। অনেক আঘাত খেয়েও পুনরায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লিখতে থাকে বাবা মায়া থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়েছে, মুখ কালো করে দিয়েছে। যেন মনে হয় চারতলা থেকে পড়ে গেছি। ক্রোধ করলে তো তিনতলা থেকে পড়ে যাবে। এ হলো অনেক বোঝার বিষয়। এখন দেখো, বাচ্চারা টেপ-রেকর্ডার মেশিনের জন্য প্রার্থনা করে। বাবা টেপ-রেকর্ডার মেশিন দাও, তাহলে আমরা ভালোভাবে মুরলী শুনতে পাবো। এরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেকে শুনলে তো অনেকেরই বুদ্ধির দরজা খুলে যাবে। অনেকের কল্যাণ হবে। যখন কোনো ব্যক্তি কলেজ খোলে, তো পরবর্তী জন্মে তার অনেক বিদ্যা প্রাপ্ত হয়। বাবা বলেন, টেপ-রেকর্ডার মেশিন ক্রয় করো, তো অনেকেই এর থেকে লাভান্বিত হয়ে যাবে। আচ্ছা!

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) সতোপ্রধান হওয়ার জন্য নিজের উপর খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। নিজের খাদ্য-পানীয়, কথাবার্তা, আচার ব্যবহার সবকিছুতেই পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। বাবার সমান রূপ-বসন্ত হতে হবে।

২ ) অবিনাশী জ্ঞান রত্নের খনি থেকে নিজের বুদ্ধিরূপী পাত্রকে ভরপুর করে অপার খুশিতে থাকতে হবে আর অন্যদেরকেও এই রত্নের দান দিতে হবে।

বরদান:-
নষ্টমোহ হয়ে দুঃখ-অশান্তির নাম লক্ষণকে সমাপ্তকারী স্মৃতি স্বরূপ ভব

যে সদা এক-এর স্মৃতিতে থাকে, তার স্থিতি একরস হয়ে যায়। একরস স্থিতির অর্থ হল একের সাথে সর্ব সম্বন্ধ, সর্ব প্রাপ্তির রস অনুভব করা। যে বাবাকে সর্ব সম্বন্ধ দিয়ে নিজের বানিয়ে স্মৃতি স্বরূপ থাকে সে সর্বদাই নষ্টমোহ হয়ে যায়। যে নষ্টমোহ থাকে সে ধন উপার্জনে, ধন-সম্পত্তি দেখাশোনায়, কারো অসুস্থতায়.... দুঃখের ঢেউ এ আসে না। নষ্টমোহ অর্থাৎ দুঃখ অশান্তির নাম লক্ষণ থাকবে না। সদা নিশ্চিন্ত।

স্লোগান:-
ক্ষমাশীল হলো সে, যে করুণাময়ী হয়ে সবাইকে আশীর্বাদ দিতে থাকে।