03.12.2024 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - স্মরণের যাত্রায় অমনোযোগী হয়ো না, স্মরণের দ্বারাই আত্মা পবিত্র হবে, বাবা এসেছেন সকল আত্মাদের সেবা করে তাদেরকে শুদ্ধ বানাতে"

প্রশ্নঃ -
কোন্ স্মৃতি বজায় থাকলে খাদ্য-পানীয় (খান-পান) শুদ্ধ হয়ে যাবে?

উত্তরঃ  
যদি স্মৃতি থাকে যে, আমরা বাবার কাছে এসেছি সত্যখন্ডে যাওয়ার জন্য বা মানুষ থেকে দেবতা হওয়ার জন্য, তবেই পানীয় এবং আহার শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ দেবতারা কখনও অশুদ্ধ জিনিস খায় না। যখন আমরা সত্য-পিতার কাছে, এসেছি সত্যখন্ড, পবিত্র দুনিয়ার মালিক হওয়ার জন্য, তখন পতিত হতে পারি না।

ওম্ শান্তি ।
আধ্যাত্মিক পিতা আধ্যাত্মিক বাচ্চাদেরকে প্রশ্ন করেন -- বাচ্চারা, তোমরা যখন বসো, তখন কাকে স্মরণ করো? আমাদের অসীম জগতের বাবাকে। তিনি কোথায়? তাঁকে আহ্বান করা হয়, তাই না যে - হে পতিত-পাবন! আজকাল সন্ন্যাসীরাও বলে - পতিত-পাবন সীতারাম অর্থাৎ পতিতদের পবিত্র পরিণত করেন যিনি সেই রাম এসো। এ তো বাচ্চারা জানে যে, পবিত্র দুনিয়া সত্যযুগকে, পতিত দুনিয়া কলিযুগকে বলা হয়। এখন তোমরা কোথায় বসে রয়েছো? কলিযুগের শেষে সেইজন্য (বাবাকে) আহ্বান করা হয় যে - বাবা এসে আমাদের পবিত্র করো। আমরা কে? আত্মা। আত্মাকেই পবিত্র হতে হবে। আত্মা যখন পবিত্র হয় তখন শরীরও পবিত্র হয়ে যায়। আত্মা পবিত্র হলে শরীরও পবিত্র পাওয়া যায়। এই শরীর তো মাটির পুতুল। আত্মা অবিনাশী। আত্মা এই কর্মেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কথা বলে, আহ্বান করে - আত্মা অত্যন্ত পতিত হয়ে গেছে, আমাদের এসে পবিত্র করো। বাবা পবিত্র বানায়। ৫ বিকার-রূপী রাবণ পতিত করে দেয়। বাবা এখন স্মরণ করিয়েছেন যে - আমরা পবিত্র ছিলাম পুনরায় এইভাবে ৮৪ বার জন্মগ্রহণ করতে করতে এখন অন্তিম জন্মে রয়েছি। বাবা বলেন, মনুষ্য সৃষ্টি-রূপী এই যে বৃক্ষ আমি হলাম এর বীজরূপ। আমাকে আহ্বান করা হয় - হে পরমপিতা পরমাত্মা, ও গডফাদার, আমাকে লিবারেট করো। প্রত্যেকেই নিজের জন্য বলে, আমাকে মুক্ত করো আর পান্ডা হয়ে শান্তিধাম অর্থাৎ ঘরে নিয়ে চলো। সন্ন্যাসী ইত্যাদিরাও বলে যে, স্থায়ী শান্তি কীভাবে প্রাপ্ত হবে? এখন শান্তিধাম হলো ঘর, যেখান থেকে আত্মারা নিজের নিজের পার্ট প্লে করতে আসে। ওখানে শুধু আত্মারাই থাকে শরীর থাকে না। আত্মারা নগ্ন অর্থাৎ শরীর ব্যতীত থাকে। নগ্ন অর্থ এটা নয় যে বিনা পোশাকে থাকা। না, শরীর ব্যতীত আত্মা নগ্ন (অশরীরী) থাকে। বাবা বলেন - বাচ্চারা! তোমরা আত্মারা ওখানে মূললোকে (পরমধাম) শরীর ব্যতীত থাকো, একে নিরাকারী দুনিয়া বলা হয়।

বাচ্চাদের সিঁড়ির চিত্রের উপরে বোঝান হয়েছে যে - সিঁড়িতে কীভাবে আমরা অধঃপতনে গেছি। সর্বাধিক ৮৪ জন্ম লেগেছে। কেউ আবার এক জন্মও নেয়। আত্মারা উপর থেকে আসতেই থাকে। এখন বাবা বলেন, আমি এসেছি পবিত্র বানাতে। শিববাবা, ব্রহ্মাবাবা তোমাদের পড়ান। শিববাবা হলেন আত্মাদের পিতা আর ব্রহ্মাকে আদিদেব বলা হয়। এই দাদার মধ্যে বাবা কীভাবে আসেন, একথা তোমরা বাচ্চারাই জানো। আমাকে আহ্বানও করা হয় -- হে পতিত-পাবন এসো। আত্মারা এই শরীরের মাধ্যমে আহ্বান করে। মুখ্য হলো আত্মা, তাই না। এ হলো দুঃখধাম। এখানে কলিযুগে দেখো বসে বসেই হঠাৎ মৃত্যু হয়ে যায়, ওখানে এমন কোনো রোগই হয় না। নামই হলো স্বর্গ। কত সুন্দর নাম। বললেই মন খুশীতে ভরে ওঠে। খ্রীস্টানরাও বলে খ্রাইস্টের জন্মের ৩ হাজার বছর পূর্বে স্বর্গ ছিল। এখানে ভারতবাসীদের তো কিছুই জানা নেই। কারণ তারা প্রচুর সুখ দেখেছে আবার দুঃখও প্রচুর দেখেছে। তমোপ্রধান হয়ে গেছে। এদেরই ৮৪ জন্ম হয়। আধাকল্প পরে আবার অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা আসে। এখন তোমরা জানো যে, আধাকল্প যেমন দেবী-দেবতারা ছিল তখন আর অন্য কোনো ধর্ম ছিল না। পুনরায় ত্রেতায় যখন রাম আসে তখনও ইসলামী-বৌদ্ধীরা ছিল না। মানুষ সম্পূর্ণ গভীর অন্ধকারে রয়েছে। তারা বলে দুনিয়ার আয়ু লক্ষ-লক্ষ বছর, তাই মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, মনে করে কলিযুগ এখনও ছোট বাচ্চা (সবে শুরু হয়েছে)। তোমরা এখন জানো যে, কলিযুগ সম্পূর্ণ হয়ে এখন সত্যযুগের আগমন ঘটবে তাই তোমরা এসেছো বাবার থেকে স্বর্গের উত্তরাধিকার নিতে। তোমরা সকলেই স্বর্গবাসী ছিলে। বাবা আসেনই স্বর্গ স্থাপন করতে। তোমরাই স্বর্গে আসো, বাকিরা শান্তিধামে অর্থাৎ ঘরে চলে যায়। ওটা হলো সুইট হোম, আত্মারা ওখানে বসবাস করে। পুনরায় এখানে এসে পার্টধারী হয়। শরীর ব্যতীত আত্মা কথা বলতেও পারে না। ওখানে শরীর না থাকার কারণে আত্মারা শান্তিতে থাকে। পুনরায় আধাকল্প দেবী-দেবতারা থাকে, সূর্যবংশীয়-চন্দ্রবংশীয় পুনরায় দ্বাপর-কলিযুগে হয় মানুষ। দেবতাদের রাজ্য ছিল কিন্তু এখন তা কোথায় গেছে ? কেউ জানে না। এই জ্ঞান এখনই তোমরা বাবার কাছ থেকে পাও। আর কোনো মানুষের মধ্যে এই জ্ঞান থাকে না। বাবা-ই এসে মানবকে এই জ্ঞান প্রদান করেন, যার দ্বারা মানুষ থেকে দেবতা হয়। তোমরা এখানে এসেছই মানুষ থেকে দেবতা হতে। দেবতাদের পানাহার কখনো অশুদ্ধ হয় না, তারা কখনো বিড়ি ইত্যাদি খান না। এখানকার পতিত মানুষদের কথা আর জিজ্ঞাসা কোরোনা - কী-কীই না সব খায়। এখন বাবা বোঝান, এই ভারত প্রথমে সত্যখন্ড ছিল। অবশ্যই তা সত্য পিতাই স্থাপন করেছিলেন। বাবাকেই ট্রুথ বলা হয়। বাবা-ই বলেন, আমিই এই ভারতকে সত্যখন্ডে পরিণত করি। তোমরা সত্যিকারের দেবতা কীভাবে হবে তাও তোমাদের শেখাই। কত বাচ্চারা এখানে আসে এসব বাড়ী-ঘর বানাতে হয়। তা শেষপর্যন্ত তৈরী হতেই থাকবে, অনেক তৈরী করা হবে। বাড়ী ক্রয়ও করে। শিববাবা ব্রহ্মার দ্বারা কার্য করেন। ব্রহ্মা হলেন শ্যামবর্ণ, কারণ এ অনেক জন্মের অন্তিম জন্ম, তাই না। এই ব্রহ্মাই পুনরায় গৌরবর্ণের হবে। কৃষ্ণের চিত্রও তো গৌরবর্ণের এবং শ্যামবর্ণের হয়, তাই না। মিউজিয়ামে বড়-বড় সুন্দর চিত্র রয়েছে, যার উপর তোমরা যেকোন কাউকে ভালভাবে বোঝাতে পারো। এখানে বাবা মিউজিয়াম তৈরী করেন না, একে বলা হয় টাওয়ার অফ সাইলেন্স। তোমরা জানো, আমরা শান্তিধাম, নিজেদের ঘরে যাই। আমরা ওখানকার বাসিন্দা পুনরায় এখানে এসে শরীর ধারণ করে নিজ ভূমিকা পালন করি। সর্বপ্রথমে বাচ্চাদের এই নিশ্চয় হওয়া উচিত যে, এই পড়া কোনো সাধু-সন্ত পড়ায় না। ইনি (দাদা) তো সিন্ধুপ্রদেশ-নিবাসী ছিলেন। এঁনার মধ্যে প্রবেশ করে যিনি বলেন - তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর। তাঁকে কেউ জানেই না। তারা বলেও গডফাদার। কিন্তু বলে দেয় যে, তাঁর নাম-রূপই নেই। তিনি নিরাকারী, তাঁর কোনো আকার নেই। পুনরায় বলে, তিনি সর্বব্যাপী। আরে, পরমাত্মা কোথায়? তখন বলবে, তিনি সর্বব্যাপী, সকলের মধ্যেই বিরাজমান। আরে, প্রত্যেকের মধ্যে তো আত্মা বসে রয়েছে, সকলেই ভাই-ভাই, তাই না। তাহলে ঘটে-ঘটে (প্রতিটি আত্মায়) পরমাত্মা কোথা থেকে আসে? এমন বলা যাবে না যে, পরমাত্মাও রয়েছে আর আত্মাও রয়েছে। পরমাত্মা বাবাকে বলা হয় - বাবা, তুমি এসে আমাদের মতন পতিতদের পবিত্র কর। আমাকে তোমরা ডাকো, এই কাজ, এই সেবা করাবার জন্য। আমাদের সকলকে এসে শুদ্ধ করো। পতিত দুনিয়ায় নিমন্ত্রণ করো, তোমরা বলো যে, বাবা আমরা পতিত। বাবা তো পবিত্র দুনিয়া দেখেই না। পতিত দুনিয়াতেই তোমাদের সেবা করার জন্য আসে। এখন এই রাবণ-রাজ্য বিনাশ প্রাপ্ত হবে। বাকি তোমরা যারা রাজযোগ শেখো তারা গিয়ে রাজার রাজা হবে। তোমাদের অগণিতবার পড়িয়েছি, পুনরায় ৫ হাজার বছর পর তোমাদেরকেই পড়াবো। সত্যযুগ-ত্রেতার রাজধানী এখন স্থাপিত হচ্ছে। প্রথমে হলো ব্রাহ্মণকুল। প্রজাপিতা ব্রহ্মা বলা হয়, তাই না, যাকে অ্যাডম বা আদিদেব বলা হয়। তা কারোরই জানা নেই। অনেকেই আছে যারা এখানে এসে শুনে পুনরায় মায়ার অধীন হয়ে যায়। পুণ্যাত্মা হতে-হতে পাপাত্মা হয়ে পড়ে। মায়া অত্যন্ত প্রবল। সকলকে পাপাত্মায় পরিণত করে। এখানে কোনো পবিত্র আত্মা, পুণ্যাত্মা থাকে না। দেবী-দেবতারাই ছিল পবিত্র আত্মা, এখন সকলেই পতিত হয়ে গেছে তবেই তো বাবাকে ডাকে। এখন হলো রাবণ-রাজ্য পতিত দুনিয়া, একে বলে কাঁটার জঙ্গল। সত্যযুগকে বলা হয় ফুলের বাগিচা। মোগল-গার্ডেনে কত ফার্স্টক্লাস সুন্দর-সুন্দর ফুল হয়। আবার আকন্দ ফুলও পাওয়া যাবে কিন্তু এর অর্থ কেউই জানেনা যে, শিবের (মাথায়) উপরে আকন্দ ফুল কেন দেয়? এ'কথাও বাবা বসে বোঝান। আমি যখন পড়াই তখন তারমধ্যে কেউ ফার্স্টক্লাস জুঁইফুল, কেউবা রতনজ্যোতি, কেউ আবার আকন্দও হয়। নম্বরের ক্রমানুসারেই তো হয়, তাই না। তাই একে বলাই হয় দুঃখধাম, মৃত্যুলোক। সত্যযুগ হলো অমরলোক। এই কথা কোনো শাস্ত্রতে নেই। শাস্ত্র তো এই দাদাও পড়েছে, বাবা শাস্ত্র পড়াবেন না। বাবা স্বয়ং সদ্গতিদাতা। কখনো তিনি গীতার কথা বোঝান। সর্বশাস্ত্রময়ী শিরোমণি গীতা ভগবানের কথা কিন্তু ভগবান কাকে বলা হয়, তা ভারতবাসীদের জানা নেই। বাবা বলেন, আমি নিষ্কাম সেবা করি। তোমাদের বিশ্বের মালিক বানিয়ে দিই, আমি হই না। স্বর্গে তোমরা আমাকে স্মরণ করো না। দুঃখে সকলেই স্মরণ করে, সুখে কেউ-ই করে না। একে দুঃখ-সুখের খেলা বলা হয়। স্বর্গে আর কোন অন্য ধর্মই থাকেই না। ওসব(ধর্ম) আসেই পরে। তোমরা জানো, এখন এই পুরানো দুনিয়া বিনাশপ্রাপ্ত হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তুফান অতি প্রবলভাবে আসবে। সব শেষ হয়ে যাবে।

এখন বাবা এসে অবোধ-কে বিচক্ষণ বানান। বাবা কত ধন-সম্পদ দিয়েছিলেন, সেসব কোথায় গেছে? এখন কেমন দেউলিয়া হয়ে গেছে। ভারত, যা সোনার চড়ুই পাখী (ঐশ্বর্য্যশালী) ছিল, তা এখন কী হয়ে গেছে? এখন পুনরায় পতিত-পাবন পিতা এসেছেন রাজযোগ শেখানোর জন্য। ওটা ছিল হঠযোগ, এটা হলো রাজযোগ। এই রাজযোগ দুটোর জন্যই, ওই হঠযোগ শুধুমাত্র পুরুষরাই শেখে। এখন বাবা বলেন, পুরুষার্থ কর, বিশ্বের মালিক হয়ে দেখাও। পুরানো দুনিয়ার বিনাশ তো এখন অবশ্যই হবে, এছাড়া সময় এখন অতি অল্প, এই যুদ্ধই অন্তিম যুদ্ধ। এই যুদ্ধ যখন শুরু হবে তখন তা আর থামতে পারবে না। এই লড়াই শুরুই হবে তখন, যখন তোমরা কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করবে আর স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য হয়ে যাবে। বাবা পুনরায় এও বলেন যে, স্মরণে যাত্রায় অমনোযোগী হয়ো না, এতেই মায়া বিঘ্ন ঘটায়। আচ্ছা!

মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) বাবার কাছে ভালোভাবে পড়াশোনা করে ফার্স্টক্লাস ফুল হতে হবে, কাঁটার এই জঙ্গলকে ফুলের বাগিচায় পরিণত করতে বাবাকে পুরোপুরি সাহায্য করতে হবে।

২ ) কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করতে বা স্বর্গে উচ্চপদাধিকার লাভ করার জন্য স্মরণের যাত্রায় তৎপর হতে হবে, অমনোযোগী হবে না।

বরদান:-
নিজের মস্তকে সদা বাবার আশীর্বাদের হাত অনুভবকারী মাস্টার বিঘ্ন-বিনাশক ভব

গনেশকে বিঘ্ন বিনাশক বলা হয়। বিঘ্ন-বিনাশক সে-ই হয়, যার মধ্যে সর্ব শক্তি থাকে। সর্বশক্তিগুলিকে সময় অনুসারে কাজে লাগাও তাহলে বিঘ্ন থাকতে পারবে না। যেকোনও রূপে মায়া আসুক, কিন্তু তোমরা নলেজফুল হও। নলেজফুল আত্মা কখনও মায়ার কাছে পরাজিত হয় না। যখন মাথার উপর বাপদাদার আশীর্বাদের হাত আছে তার মানে বিজয়ের তিলক লেগে আছে। পরমাত্মার হাত আর সাথ বিঘ্ন-বিনাশক বানিয়ে দেয়।

স্লোগান:-
নিজের মধ্যে গুণগুলিকে ধারণ করো অন্যদেরকে গুণদান করে গুণমূর্তি হও।