04.01.2025 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা অশরীরী হয়ে যখন বাবাকে স্মরণ করো তখন তোমাদের কাছে এই দুনিয়াটাই মৃত হয়ে যায়, দেহ এবং দুনিয়াকে ভুলে যাও"

প্রশ্নঃ -
বাবার দ্বারা বাচ্চাদের জ্ঞানের তৃতীয় নেত্র কেন প্রাপ্ত হয়?

উত্তরঃ  
নিজেকে আত্মা মনে করে বাবা যেমন, ঠিক সেই রূপে স্মরণ করার জন্য তৃতীয় নেত্র পেয়ে থাকে। কিন্তু এই তৃতীয় নেত্র তখনই কাজ করবে যখন কেউ সম্পূর্ণ যোগযুক্ত থাকবে অর্থাৎ বাবার সাথে সত্যিকারের প্রীতি থাকবে। কারোর নাম-রূপে ফেঁসে থাকবে না। বাবার সাথে প্রীতি রাখার ক্ষেত্রেই মায়া বাধা প্রদান করে। এই বিষয়েই বাচ্চারা ধোঁকা খেয়ে যায়।

গীতঃ-
মরণ তোমার গলিতে....

ওম্ শান্তি ।
কেবল তোমরা ব্রাহ্মণ বাচ্চারা ছাড়া এই গানের অর্থ অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। যেমন বেদ শাস্ত্র ইত্যাদি বানানো হয়েছে সেগুলো পাঠ করলেও তার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারে না। তাই বাবা বলেন - আমি ব্রহ্মার মুখ দ্বারা সকল বেদ শাস্ত্রের সার বোঝাই। সেইরকম এই গানগুলোর অর্থও কেউ বুঝতে পারে না। বাবা-ই এগুলোর অর্থ বোঝান। আত্মা যখন শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন এই দুনিয়ার থেকে সকল সম্বন্ধ ছিন্ন হয়ে যায়। গানেও বলা হয়েছে নিজেকে আত্মা মনে করে অশরীরী হয়ে বাবাকে স্মরণ করলে এই দুনিয়াটার বিনাশ হয়ে যায়। এই শরীরটা তো পৃথিবীর ওপরে রয়েছে। আত্মা যখন শরীর থেকে বেরিয়ে যায় তখন তার কাছে এই মনুষ্য সৃষ্টিটাই থাকে না। আত্মা নগ্ন (অঙ্গ বিহীন) হয়ে যায়। তারপর যখন আবার শরীরে আসে, তখন বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। তারপর আবার একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য একটা শরীরে প্রবেশ করে। কিন্তু কখনোই ব্রহ্ম মহাতত্ত্বতে ফিরে যায় না। উড়ে গিয়ে অন্য একটা শরীরে প্রবেশ করে। এখানে এই আকাশ তত্ত্বের মধ্যেই সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে। কেউই মূলবতনে ফিরে যায় না। শরীর ছাড়ার পর আর কোনো কর্ম বন্ধন থাকে না। শরীর থেকেই তো আলাদা হয়ে যায়। তারপর যখন অন্য শরীরে প্রবেশ করে তখন পুনরায় সেই কর্মবন্ধন গুলো আরম্ভ হয়ে যায়। এইসব কথা কেবল তোমরা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। বাবা এসে বুঝিয়েছেন। সবাই একেবারে নির্বোধ হয়ে গেছে। কেউই সহজে বুঝতে পারে না। নিজেকে খুব বিচক্ষণ ব্যক্তি বলে মনে করে। শান্তি পুরস্কারও প্রদান করা হয়। তোমরা ব্রাহ্মণ কুল ভূষণ বাচ্চারা এই বিষয়গুলো নিয়েও বোঝাতে পারো। ওরা তো জানেই না যে শান্তি বলতে আসলে কি বোঝায়। অনেকেই কোনো মহাত্মার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে - কিভাবে মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে ? এই দুনিয়ায় কিভাবে শান্তি স্থাপন হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করে কিন্তু কেউ এইরকম বলে না যে - নিরাকারী দুনিয়ায় কিভাবে শান্তি থাকে? ওই দুনিয়াটাকে শান্তিধাম বলা হয়। আমরা আত্মারা শান্তিধামেই থাকি। কিন্তু দুনিয়ার মানুষ মনের শান্তির খোঁজ করে। ওরা জানেই না কিভাবে শান্তি পাওয়া যায়। শান্তিধাম তো আমাদের নিজেদের ঘর। এখানে কিভাবে শান্তি পাওয়া সম্ভব? তবে সত্যযুগে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি সবকিছুই থাকবে। বাবা এসেই সত্যযুগ স্থাপন করেন। এখানে তো কত অশান্তি। তোমরা বাচ্চারাই এখন এইসব কথা বুঝতে পারছো। এই ভারতেই সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ছিল। ওটা ছিল বাবার উত্তরাধিকার। আর দুঃখ, অশান্তি, দুর্ভিক্ষ - এইগুলো হলো রাবণের উত্তরাধিকার। অসীম জগতের পিতা নিজে বসে থেকে বাচ্চাদেরকে এইসব বিষয় বোঝাচ্ছেন। বাবা হলেন পরমধাম-নিবাসী এবং নলেজফুল। তিনি আমাদেরকে সুখধামের উত্তরাধিকার দেন। আমাদের মতো আত্মাদেরকে তিনি বোঝাচ্ছেন। এটা তো তোমরা জানো যে আত্মার মধ্যেই জ্ঞান থাকে। তাঁকেই জ্ঞানের সাগর বলা হয়। ওই জ্ঞানের সাগর এই শরীরের দ্বারা ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি বোঝাচ্ছেন। এই দুনিয়ার তো একটা নির্দিষ্ট আয়ু থাকা উচিত। দুনিয়া তো একটাই। এটাকেই পুরাতন দুনিয়া আর নুতন দুনিয়া বলা হয়। এগুলোও দুনিয়ার মানুষ জানে না। নিউ ওয়ার্ল্ড থেকে ওল্ড ওয়ার্ল্ড হতে কত বছর সময় লাগে? তোমরা বাচ্চারা জানো যে কলিযুগের পর সত্যযুগ তো অবশ্যই আসবে। তাই কলি এবং সত্যের সঙ্গমেই বাবাকে আসতে হয়। এটাও তোমরা বাচ্চারা জানো যে পরমপিতা পরমাত্মা ব্রহ্মার দ্বারা নুতন দুনিয়া স্থাপন করেন, শঙ্করের দ্বারা পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ করেন। ত্রিমূর্তির অর্থই হলো - স্থাপন, পালন এবং বিনাশ। এগুলো তো খুবই সাধারণ কথা। কিন্তু তোমরা বাচ্চারা এই কথাগুলোও ভুলে যাও। নাহলে তো তোমাদের মধ্যে অনেক খুশি থাকা উচিত । নিরন্তর বাবার স্মরণেই থাকা উচিত । বাবা এখন আমাদেরকে নুতন দুনিয়ার যোগ্য বানাচ্ছেন। তোমরা ভারতবাসীরাই মালিক হও, অন্য কেউ হয় না। তবে যারা অন্যান্য ধর্মে কনভার্ট হয়ে গেছে, ওরা ফিরে আসবে। তারপর যেভাবে ওই ধর্মে কনভার্ট হয়ে গেছিল, সেইভাবে আবার এই ধর্মে কনভার্ট হয়ে যাবে। তোমাদের বুদ্ধিতে এখন এই সকল জ্ঞান রয়েছে। মানুষদেরকে বোঝাতে হবে - এবার এই পুরাতন দুনিয়ার পরিবর্তন হবে। মহাভারতের লড়াই অবশ্যই লাগবে। এই সময়েই বাবা এসে রাজযোগ শেখান। যারা এই রাজযোগের শিক্ষা অর্জন করে, তারা নুতন দুনিয়ায় যাবে। তোমরা সবাইকে বোঝাও যে সকলের ওপরে রয়েছেন ভগবান। তাঁর পরে রয়েছেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্কর। তারপর এখানের মধ্যে মুখ্য হলো জগৎ-পিতা এবং জগৎ-মাতা। বাবা তো ব্রহ্মার শরীরেই আসেন। প্রজাপিতা ব্রহ্মা তো এখানেই রয়েছেন। সূক্ষ্মবতনে তো ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপন হবে না। ইনি ব্যক্ত থেকে অব্যক্ত হয়ে যান। তারপর বিষ্ণুর দুই রূপ ধারণ করেন। ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি তো অবশ্যই বুঝতে হবে। নিশ্চয়ই মানুষরাই বুঝবে। যিনি ওয়ার্ল্ডের মালিক, তিনিই ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি বোঝাতে পারবেন। তিনি হলেন নলেজফুল এবং কখনো পুনর্জন্ম নেন না। কারোর বুদ্ধিতেই এই জ্ঞান নেই। পরখ করার বুদ্ধিও থাকা উচিত। আদৌ কিছু বুঝছে, না কি এমনিই বসে আছে… নাড়ি দেখতে হবে। আজমল খাঁ নামে একজন খ্যাতনামা বৈদ্য ছিল। বলা হয়, সে নাকি কাউকে দেখেই তার রোগ ধরে ফেলতো। বাচ্চারা, তোমাদেরকেও বুঝতে হবে যে এই ব্যক্তি এই জ্ঞান ধারণ করার যোগ্য কিনা। বাবা তাঁর সন্তানদেরকে জ্ঞান রূপী তৃতীয় নেত্র দিয়েছেন যার দ্বারা তোমরা নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে বাবাকে যথাযথ ভাবে স্মরণ করতে পারো। কিন্তু যে সম্পূর্ণ যোগযুক্ত থাকবে, যার বুদ্ধিতে বাবার প্রতি ভালোবাসা থাকবে তার-ই এইরকম বুদ্ধি থাকবে। সবাই তো এইরকম হয় না। একে অন্যের নাম-রূপে ফেঁসে যায়। বাবা বলেন - আমার প্রতি ভালোবাসা রাখো। কিন্তু মায়া বাবার সাথে প্রীত রাখতে দেয় না। মায়া যখন দেখে যে আমার খদ্দের চলে যাচ্ছে তখন একেবারে নাক-কান পাকড়ে ধরে। তারপর যখন ধোঁকা খায়, তখন বুঝতে পারে যে মায়ার কাছে ধোঁকা খেয়েছি। মায়াজিৎ নাহলে জগৎজিৎ হতে পারবে না এবং উঁচু পদও পাবে না। এই জন্যই পরিশ্রম করতে হয়। শ্রীমৎ হল - একমাত্র আমাকে স্মরণ করলেই তোমাদের বুদ্ধি পতিত থেকে পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু কারোর কারোর এটা খুবই কঠিন লাগে। এতে একটাই বিষয় - বাবা আর উত্তরাধিকার। এই দুটো কথা মনে রাখতে পারো না! বাবা বলছেন বাবাকে স্মরণ করতে, কিন্তু বাচ্চারা নিজের শরীর আর অন্যের শরীরকে স্মরণ করছে। বাবা বলছেন - দেহধারীকে দেখার সময়েও আমাকে স্মরণ করো। আত্মা এখন তৃতীয় নেত্র পেয়েছে আমাকে দেখার জন্য এবং আমাকে বুঝতে পারার জন্য। ওই নেত্রকেই ব্যবহার করো। তোমরা বাচ্চারা এই সময়ে ত্রিনয়নী এবং ত্রিকালদর্শী হয়ে যাও। কিন্তু ত্রিকালদর্শী হওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ক্রম রয়েছে। নলেজ ধারণ করা তো খুব একটা কঠিন কিছু নয়। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে কিন্তু যোগবল কম থাকার জন্য দেহী-অভিমানী অবস্থাও অতি অল্পই থাকে। সামান্য ব্যাপারেই রেগে যায়, অবনতি হয়ে যায়। উন্নতি আর অবনতি চলতেই থাকে। আজকে কিছুটা উন্নতি করল, কালকে আবার অবনতি হয়ে গেল। দেহ-অভিমান হলো মুখ্য। তারপর অন্যান্য বিকার যেমন লোভ, মোহ ইত্যাদিতেও ফেঁসে যায়। দেহের প্রতিও মোহ থাকে। মাতাদের মধ্যে বেশি মোহ থাকে। এখন বাবা এইসব থেকে মুক্ত করছেন। তুমি অসীম জগতের পিতাকে পেয়েছ, এরপরেও কেন মোহ রেখেছো? মোহগ্রস্থ অবস্থায় মুখমণ্ডল এবং কথাবার্তা পুরো বাঁদরের মতো হয়ে যায়। বাবা বলছেন - নষ্টমোহ হয়ে যাও, অবিরাম আমাকে স্মরণ করো। মাথায় অনেক পাপের বোঝা রয়েছে। সেগুলো নামবে কিভাবে? মায়া এমনই যে স্মরণ করতেও দেয় না। যতই বোঝানো হোক, প্রতি মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয়। সর্বদা কেবল প্রিয়তম বাবার গুনগান করার জন্য কত চেষ্টা করতে হয়। বাবা, তোমার কাছে এলাম বলে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে বুদ্ধি চলে যায়। হয়তো ইনিই প্রথম হবেন, কিন্তু এখন তো ইনিও পুরুষার্থী। বাচ্চাদের বুদ্ধিতে থাকা উচিৎ যে আমরা হলাম ঈশ্বরীয় শিক্ষার্থী। গীতাতে রয়েছে - ভগবানুবাচ হলো, আমি তোমাদেরকে রাজাদের রাজা বানিয়ে দিই। কেবল শিবের পরিবর্তে কৃষ্ণের নাম দিয়ে দিয়েছে। বাস্তবে তো গোটা দুনিয়ায় শিববাবার জন্মদিন পালন করা উচিত । শিববাবা সবাইকে দুঃখ থেকে মুক্ত করে গাইড হয়ে নিয়ে যান। এটা তো সকলেই মানে যে তিনি হলেন গাইড এবং মুক্তিদাতা। তিনি সকলের পিতা, পতিত-পাবন, তিনিই শান্তিধাম এবং সুখধামে নিয়ে যান। তাহলে তাঁর জন্মদিন কেন পালিত হবে না? ভারতবাসীরাও পালন করে না। সেইজন্যই ওদের এত অধঃগতি হয়েছে। এই অধঃগতির ফলে কত মৃত্যুও হচ্ছে। ওরা তো এমন সব বোমা তৈরি করে যার গ্যাসের দ্বারাই সবাই শেষ হয়ে যায়। যেন সবার ক্লোরোফর্ম লেগে গেছে। এইসব তো ওরা অবশ্যই বানাবে। বন্ধ হওয়া অসম্ভব। আগের কল্পে যা যা হয়েছিল, সবকিছুই রিপিট হবে। এইসব মুষল (মিসাইল) এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দ্বারা পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ হয়েছিল। সেটাই আবার রিপিট হবে। বিনাশের সময়ে ড্রামার প্ল্যান অনুসারে সবকিছুই ঘটতে থাকবে। ড্রামা অনুসারে বিনাশ অবশ্যই হবে। এখানেই রক্তের নদী বইবে। গৃহযুদ্ধতে একে অপরকে মারতে থাকবে। তোমাদের মধ্যেও খুব কমজনই জানে যে এই দুনিয়ার এখন পরিবর্তন হচ্ছে। এখন আমরা সুখধামে যাব। সুতরাং সর্বদা জ্ঞানের অতীন্দ্রিয় সুখে থাকতে হবে। যত বেশি স্মরণ করবে, তত সুখের পরিমান বাড়বে। এই পতিত শরীরের ওপর থেকে মোহ চলে যাবে। বাবা তো কেবল বলছেন - বাবাকে স্মরণ করলেই বাদশাহীর উত্তরাধিকার তোমার। এক সেকেন্ডের মধ্যে বাদশাহী প্রাপ্ত হয়ে যায়। বাদশার সন্তান হওয়ার অর্থ সেই সন্তানও বাদশা হয়ে গেল, তাই না? তাই বাবা বলছেন - আমাকে এবং চক্রকে স্মরণ করতে থাকলে চক্রবর্তী মহারাজা হয়ে যাবে। তাই এক সেকেন্ডে জীবনমুক্তি কিংবা এক সেকেন্ডে ফকির থেকে প্রিন্স হওয়ার গায়ন রয়েছে। কত দারুন ব্যাপার। কিন্তু শ্রীমৎ অনুসারে ঠিকঠাক চলতে হবে। প্রতি পদক্ষেপে মতামত নিতে হবে। বাবা বোঝাচ্ছেন - মিষ্টি বাচ্চারা, ট্রাস্টি হয়ে জীবন যাপন করলে আমিত্ব ভাব ঘুঁচে যাবে। কিন্তু এই ট্রাস্টি হয়ে থাকা মুখের কথা নয়। ইনি নিজেও ট্রাস্টি হয়েছেন এবং বাচ্চাদেরকেও ট্রাস্টি বানাচ্ছেন। ইনি কি কখনো কিছু গ্রহণ করেন? তোমাদেরকেই ট্রাস্টি হয়ে সামলাতে বলেন। ট্রাস্টি হয়ে থাকলে আমিত্ব ভাব নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ তো এমনিতে বলে যে সব কিছুই ঈশ্বরের দান। কিন্তু যখন একটু লোকসান হয়ে যায় কিংবা কারোর মৃত্যু হয়ে যায়, তখন তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। যখন প্রাপ্তি হয় তখন খুশি হয়। কিন্তু মুখে যখন ঈশ্বরের দান বলে, তাহলে মৃত্যু হলে এতো কান্নাকাটি করার কি দরকার? কিন্তু মায়াও কম শক্তিশালী নয়। তাই ঐরকম হওয়া মুখের কথা নয়। এখন বাবা বলছেন - তোমরা আমাকে এই পতিত দুনিয়াতে আহ্বান করেছ। তোমরা বলেছো - আমরা আর এই পতিত দুনিয়ায় থাকতে চাই না, আমাদেরকে তোমার সাথে পবিত্র দুনিয়ায় নিয়ে চলো। কিন্তু মানুষ এইসব কথার অর্থই বোঝে না। পতিত-পাবন যখন আসবেন তখন অবশ্যই এই শরীরের বিনাশ হবে। তাহলেই তো তিনি আত্মাদেরকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবেন। তাই বুদ্ধিতে এইরকম বাবার প্রতি ভালোবাসা থাকা উচিত। একজনকেই ভালোবাসতে হবে, তাঁকেই স্মরণ করতে হবে। মায়াবী বাধা-বিঘ্ন তো আসবেই। কিন্তু কর্মেন্দ্রিয় দ্বারা কোনো রকমের বিকর্ম যেন না হয়। তাহলেই সেটা নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ হয়ে যাবে। বাবা বলছেন, আমি এসে এই শরীরটাকে আধার করি। এটা আসলে এনার শরীর। তোমাদেরকে তো বাবাকে স্মরণ করতে হবে। তোমরা জানো যে ব্রহ্মাবাবাও বাবা, শিববাবাও বাবা। বিষ্ণু কিংবা শঙ্করকে তো বাবা বলা হয় না। শিববাবা হলেন নিরাকার পিতা আর ব্রহ্মাবাবা হলেন সাকার পিতা। এখন তোমরা সাকার পিতার মাধ্যমে নিরাকার পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করছ। এনার মধ্যে ঠাকুরদাদা এসে প্রবেশ করেন। তাই বলা হয় - আমরা বাবার মাধ্যমে ঠাকুরদাদার উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করছি। ঠাকুরদাদা হলেন নিরাকার আর বাবা হলেন সাকার। এগুলো অত্যন্ত ওয়ান্ডারফুল এবং নতুন কথা। হয়তো ওরাও ত্রিমূর্তির ছবি দেখায় কিন্তু কিছুই বোঝে না। শিববাবাকেই ছবি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। বাবা কত ভালো ভালো কথা বোঝাচ্ছেন। নিজেকে স্টুডেন্ট মনে করে সর্বদা খুশি থাকতে হবে। বাবা হলেন আমাদের বাবা, শিক্ষক এবং সদগুরু। এখন তোমরা অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি জিওগ্রাফি শুনছ। এরপর তোমরা আবার অন্যদেরকে শোনাবে। এই চক্র মোট ৫ হাজার বছরের। কলেজের স্টুডেন্টদেরকে ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি বোঝাতে হবে। ৮৪ জন্মের সিঁড়ি কি, ভারতের উন্নতি এবং অবনতি কিভাবে হয় - এইসব বোঝাতে হবে। এক সেকেন্ডে ভারত স্বর্গে পরিণত হয় এবং তারপর ৮৪ জন্মের পরে নরক হয়ে যায়। এই কথাগুলো খুব সহজেই বোঝা যায়। টিচারদেরকেও বোঝাতে হবে ভারত কিভাবে স্বর্ণযুগ থেকে লৌহযুগে এসেছে। ওটা হলো শারীরিক শিক্ষা আর এটা হলো আত্মিক শিক্ষা। ওই শিক্ষা কোনো মানুষ দিয়ে থাকে আর এই শিক্ষা স্বয়ং গড ফাদার দেন। তিনি হলেন মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ। তাই তাঁর কাছে মনুষ্য সৃষ্টির জ্ঞান অবশ্যই থাকবে। আচ্ছা !

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) এই পতিত শরীরের প্রতি একটুও মোহ না রেখে জ্ঞানের অতীন্দ্রিয় সুখে থাকতে হবে। বুদ্ধিতে যেন থাকে যে এই দুনিয়া এখন পরিবর্তিত হচ্ছে, আমরা এবার সুখধামে যাবো।

২ ) ট্রাস্টি হয়ে সবকিছু সামলে আসক্তিকে দূর করতে হবে। কেবল বাবার সাথেই সত্যিকারের প্রীতি রাখতে হবে। কর্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা যেন কোনো বিকর্ম না হয়।

বরদান:-
ব্রহ্মা বাবা সম শ্রেষ্ঠ-র থেকেও শ্রেষ্ঠ চিত্র অঙ্কনকারী পরোপকারী ভব

শ্রেষ্ঠ স্মৃতি আর শ্রেষ্ঠ কর্মের দ্বারা ভাগ্যের চিত্র তো সকল বাচ্চারাই বানিয়েছো, এখন কেবল লাস্ট টাচিং হলো সম্পূর্ণতার বা ব্রহ্মা বাবার সমান শ্রেষ্ঠ-র থেকেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার, এরজন্য পরোপকারী হও অর্থাৎ স্বার্থ ভাব থেকে সদা মুক্ত থাকো। সকল পরিস্থিতিতে, পসকল কার্যে, সংগঠনে সকল সহযোগীর যতো নিঃস্বার্থ ভাব থাকবে ততই পরোপকারী হতে পারবে। সর্বদা নিজেকে ভরপুর অনুভব করবে। সর্বদা প্রাপ্তি স্বরূপের স্থিতিতে স্থিত থাকবে। নিজের জন্য কোনো কিছু স্বীকার করবে না।

স্লোগান:-
সর্বস্ব ত্যাগী হলে তবেই সরলতা বা সহনশীলতার গুণ আসবে।

নিজের শক্তিশালী মন্সার দ্বারা সাকাশ দেওয়ার সেবা করো -

এই সকাশ দেওয়ার সেবা নিরন্তর করতে পারো, এতে শরীর সুস্থ থাকা বা সময়ের কোনও ব্যাপার নেই। দিনরাত এই অসীমের সেবাতে রত থাকতে পারো। যেরকম ব্রহ্মা বাবাকে দেখেছো, রাতে অর্থাৎ অমৃতবেলায় চোখ খুলতেই অসীম জগতে সকাশ দেওয়ার সেবা শুরু হয়ে যেতো, এইরকম ফলো ফাদার করো। বাচ্চারা, যখন তোমরা অসীম জগতে সাকাশ দেবে তখন নিকটস্থ সবাই অটোমেটিক সকাশ পেতে থাকবে। এই অসীম জগতে সকাশ দেওয়ার ফলে বায়ুমন্ডল অটোমেটিক তৈরী হয়ে যাবে।