04.12.2024 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - সবকিছুই স্মরণের উপর নির্ভরশীল, স্মরণ করলেই তোমরা মিষ্টি হয়ে যাবে, এই স্মরণের ক্ষেত্রেই তোমাদেরকে মায়ার সাথে যুদ্ধ চলে"

প্রশ্নঃ -
এই নাটকে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা তোমাদের কাছে অত্যন্ত বিচার্য বিষয়? যেটা কেবলমাত্র বাচ্চারা, তোমরাই জানো?

উত্তরঃ  
তোমরা জানো যে ড্রামাতে যে ঘটনা একটি পার্ট দ্বিতীয়বার প্লে হয় না। সমগ্র বিশ্বে যা কিছু পার্ট প্লে হচ্ছে তা একের থেকে অপরটি নতুন, তোমরা বিচার করে থাকো যে, সত্যযুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কিভাবে একের পর এক দিন বদলে যায়, সমস্ত অ্যাক্টিভিটি বদলে যায়। আত্মার মধ্যে ৫ হাজার বছরের অ্যাক্টিভিটি রেকর্ড হয়ে আছে, যেটা কখনোই বদলাতে পারে না। এই ছোট কথাটিও বাচ্চারা, তোমরা ছাড়া আর কারোর বুদ্ধিতে আসতেই পারবে না।

ওম্ শান্তি ।
আত্মিক বাবা আত্মিক বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করছেন যে, "মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা নিজেদের ভবিষ্যতের পুরুষোত্তম মুখ, পুরুষোত্তম শরীর (চোলা) দেখতে পাচ্ছো? এটা হলো পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগ, তাইনা! তোমরা ফীল করে থাকো যে, আমরা পুনরায় নতুন জগৎ সত্যযুগে এদের বংশে যাবো, যাকে সুখধাম বলা হয়। সেখানে যাওয়ার জন্যই তোমরা এখন পুরুষোত্তম তৈরি হচ্ছো। বসে বসে এই সব চিন্তন চলা উচিত । স্টুডেন্ট যখন পড়ালেখা করে, তাদের বুদ্ধিতে এটা অবশ্যই থাকে যে, কাল আমরা এটা হবো। সেইরকম তোমরাও যখন যোগে বসো, তখন এই বিষয়ে চিন্তা করো যে, এই পড়াশোনা করে আমরা বিষ্ণুর রাজ্যে জন্মগ্রহণ করবো। তোমাদের বুদ্ধি এখন অলৌকিক হয়ে গেছে। আর কোনো মানুষেরই বুদ্ধিতে এইসব বিষয় কখনোই রমন করবে না । এটা কোনো কমন সৎসঙ্গ নয়। যখন যোগে বসো তখন এটাই মনে করো যে, যাঁকে সমগ্র জগৎবাসী শিব বলে, আমি তাঁর সাথে বসে আছি। শিব বাবা হলেন রচয়িতা। তিনি এই রচনার আদি-মধ্য-অন্ত জানেন। তিনি আমাদের এই নলেজ প্রদান করেন। যেন মনে হয়, আগামীকালের কথা শোনাচ্ছেন। এখন এখানে বসে আছো, কিন্তু বুদ্ধিতে তো এটাই স্মরণে আছে না, যে, আমরা এখানে এসেছি রিজুভিনেট (নবরূপে জন্ম নিতে) হতে অর্থাৎ এই পুরনো শরীরকে পরিবর্তন করে দিব্য শরীর ধারণ করতে। আত্মা-ই বলে যে, এটা হলো আমাদের পুরনো তমোপ্রধান শরীর। এই পুরনো শরীরকে বদল করে নতুন শরীর নিতে হবে । কত সহজ এইম অব্জেক্ট। যিনি পড়াবেন তিনি নিশ্চয়ই যারা পড়বে তাদের থেকে অধিক জ্ঞান সম্পন্ন হবেন, তাই না। তিনি পড়ান, আবার ভালো কর্মও শেখান। এখন তোমরা বুঝে গেছো যে আমাদেরকে উচ্চ থেকেও উচ্চ ভগবান পড়াচ্ছেন, তবে তো অবশ্যই দেবী দেবতা বানাবেন, তাই না! এই পড়াশোনাই হলো নতুন দুনিয়ার জন্য। আর কারোরই এই নতুন দুনিয়ার বিষয়ে কিছুমাত্রও জানা নেই । এই লক্ষী-নারায়ণ নতুন দুনিয়ার মালিক ছিলেন। দেবী-দেবতারাও পুরুষার্থ অনুসারে নম্বরক্রমে তৈরি হবেন, তাইনা! সবাই একরকম তো হবে না, কেননা রাজধানী স্থাপন হচ্ছে। তোমাদের বুদ্ধিতে এ সমস্ত বিষয়ে চিন্তন যেন সর্বদা চলতে থাকে। আমি আত্মা এখন পতিত থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য বাবাকে স্মরণ করছি। আত্মা তার নিজের অতি প্রিয় মিষ্টি বাবাকে স্মরণ করে। বাবা স্বয়ং বলেন যে তোমরা আমাকে স্মরণ করলে পবিত্র সতোপ্রধান অবশ্যই হয়ে যাবে। সবকিছুই নির্ভর করছে স্মরণের উপরে। বাবা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবেন যে, "বাচ্চারা সারাদিনের মধ্যে আমাকে কতটা সময় স্মরণ করো?" স্মরণের যাত্রাতেই মায়ার সাথে যুদ্ধ চলে। তোমরা এখন জানো যে যুদ্ধটা কেমন। এটা কেবল যাত্রা নয়, এটা (সূক্ষ্ম) যুদ্ধও । তাই যোগে বসে খুব সতর্ক থাকতে হবে। জ্ঞান শোনা বা বোঝার সময় যেন কোনো প্রকারের মায়ার ঝঞ্ঝাট না আসে। বাচ্চারাও বলে যে, বাবা আমি তোমাকে স্মরণ করি, কিন্তু মায়ার একটা তুফানই আমাকে নিচে ফেলে দেয়। সর্বপ্রথম তুফান হলো দেহ-অভিমানের। তারপর যথাক্রমে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ আসে। বাচ্চারা বলে যে বাবা আমি অনেক চেষ্টা করি যাতে তোমাকে স্মরণ করার সময় কোনো বিঘ্ন না আসে, কিন্তু তবুও মায়া বিঘ্ন ঘটিয়ে দেয়। কখনো কখনো লোভের তুফান এসে যায়। আবার বাচ্চারা কখনো বলে যে, বাবা আজ আমার স্থিতি খুব ভালো ছিল, সারাদিন কোনো তুফান আমায় বিঘ্নিত করতে পারেনি, আজ সারাদিন খুব খুশিতে ছিলাম, বাবাকে খুব ভালোবাসার সাথে স্মরণ করেছি, প্রেমের অশ্রুও আসে। বাবার স্মরণে থাকলে খুব মিষ্টি হয়ে যাবে।

তোমরা এটা বুঝে গেছো যে, মায়ার কাছে পরাজিত হতে হতে আজ তোমরা কোথায় এসে পৌঁছেছো। অন্য কেউ এসব কথা বুঝবে না। তারা তো কল্পের আয়ু লক্ষ বছর বলে দিয়েছে আর তারা এটাও মনে করে যে, এসব পরম্পরা ক্রমে চলে আসছে..। তোমরা বলো যে, আমরা এখন পুনরায় মানব থেকে দেবতা তৈরি হচ্ছি। এই নলেজ বাবাই এসে প্রদান করেন। বিচিত্র বাবাই বিচিত্র নলেজ দেন। বিচিত্র নিরাকারকে বলা হয়। নিরাকার কীভাবে এই নলেজ দেন, বাবা নিজেই বুঝিয়ে বলেন যে, কিভাবে এই তনে আসি। তবুও মানুষ বিভ্রান্ত হয় যে, তিনি কি একমাত্র এই তনেই আসবেন? কিন্তু ড্রামাতে এই তনই নিমিত্ত হয়। এতটুকুও চেঞ্জ হতে পারে না। এ সমস্ত কথা তোমরা ভালোভাবে বুঝে অন্যদেরকে বোঝাও। আত্মাই পড়াশোনা করে। আত্মাই কিছু শেখে বা শেখায়। আত্মাই হলো মোস্ট ভ্যালুয়েবল । আত্মা হলো অবিনাশী। শরীর হলো বিনাশী। আমরা আত্মারা নিজের পরমপিতা পরমাত্মার থেকে রচয়িতা আর রচনার আদি-মধ্য-অন্তের, ৮৪ জন্মের জ্ঞান গ্রহণ করছি। নলেজ কে গ্রহণ করে? আমরা আত্মারা। তোমরা আত্মারই জ্ঞান সাগর বাবার থেকে মূলবতন, সূক্ষ্মবতনকে জেনেছো। মানুষ এটা জানেই না যে, আমাদের নিজেদেরকে আত্মা মনে করতে হয়। তারা তো নিজেদেরকে 'শরীর' ভেবে উল্টো ঝুলে রয়েছে । গাওয়াও হয়ে থাকে - আত্মা হলো সৎ, চিৎ, আনন্দ স্বরূপ। পরমাত্মারই হলো সব থেকে বড় মহিমা। এক বাবার কতো মহিমা । তিনি হলেন দুঃখ হর্তা, সুখ কর্তা। তোমরা মশা-মাছি প্রভৃতির তো এত মহিমা করবে না যে তারা দুঃখহর্তা-সুখকর্তা, জ্ঞানের সাগর তারা। না, এই বাবার-ই মহিমা রয়েছে । তোমরা বাচ্চারাও হলে মাস্টার দুঃখহর্তা, সুখকর্তা। তোমাদের মধ্যেও এই নলেজ ছিল না, যেন বেবী বুদ্ধির ছিলে। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে নলেজ থাকে না আর না কোনো অবগুণ থাকে। সেইজন্য তাদেরকে মহাত্মা বলা হয়, কেননা তারা পবিত্র হয়। যত ছোট বাচ্চা ততই তারা ফুলের মতো। একেবারেই যেন কর্মাতীত অবস্থায় থাকে। কর্ম-অকর্ম-বিকর্ম সম্বন্ধে তাদের কোনো জ্ঞান থাকেনা। সেইজন্যই তারা হলো ফুল। সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে, যেরকম এক বাবা সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বাবা এসেছেন সবাইকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে সুগন্ধি ফুল তৈরি করতে। কেউ কেউ আবার দুঃখদায়ী কন্টক-ই থেকে যায়। পাঁচ বিকারে বশীভূত আত্মাদেরকে দুঃখদায়ী কন্টক বলা হয়। প্রথম নম্বরের কন্টক হলো দেহ-অভিমানের। যার থেকে অন্যান্য কন্টকের জন্ম নেয়। কন্টকময় জঙ্গল খুব দুঃখ প্রদান করে। জঙ্গলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কন্টক থাকে, তাই না! সেইজন্য একে দুঃখধাম বলা হয়। নতুন দুনিয়ায় কন্টক থাকে না, সেইজন্য তাকে সুখধাম বলা হয়। শিববাবা ফুলের বাগান তৈরি করেন, আর রাবণ সেই বাগানকে কন্টকময় জঙ্গলে পরিণত করে দেয়। সেইজন্য রাবণকে কন্টকের ঝাড়ের মধ্যে জ্বালানো হয়, আর বাবাকে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়া হয়। এসব কথা বাবা জানে আর বাচ্চারা জানে, আর কেউ জানেনা।

বাচ্চারা, তোমরা জানো যে, ড্রামাতে একই পার্ট দুই বার প্লে হতে পারে না। তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, সমগ্র দুনিয়ায় যে পার্ট চলছে, তা একে অপরের থেকে নতুন। । তোমরা ভেবে দেখো, সত্যযুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কিভাবে একের পর এক দিন বদলে যায় । সমস্ত অ্যাক্টিভিটিই বদলে যায়। ৫ হাজার বছরের এই অ্যাক্টিভিটির রেকর্ড আত্মার মধ্যেই ভরা রয়েছে । সেটা কখনোই পরিবর্তিত হয় না। প্রত্যেক আত্মার মধ্যে নিজের নিজের পার্ট ভরা রয়েছে । এই ছোটো কথাটিও কারোর বুদ্ধিতে আসে না। এই ড্রামার পাস্ট, প্রেজেন্ট, ফিউচারকে তোমরা জানো। এটা হলো স্কুল, তাই না! পবিত্র হয়ে বাবাকে স্মরণ করার পড়া বাবা পড়াচ্ছেন। এই কথাটি কোনোদিন ভেবেছিলে যে, বাবা এসে এইরকম পতিত থেকে পবিত্র করার পড়া আমাদের পড়াবেন! এই পড়াশোনার দ্বারাই আমরা বিশ্বের মালিক তৈরি হবো! ভক্তিমার্গের গ্রন্থগুলিই হলো আলাদা, সেগুলোকে কখনোই পড়াশোনা বলা যায় না। জ্ঞান ছাড়া সদ্গতি কিভাবে হবে? বাবা ছাড়া জ্ঞান কোথা থেকে আসবে, যার দ্বারা তোমাদের সদ্গতি হবে? যখন তোমাদের সদ্গতি হবে, তখন কি তোমরা ভক্তি করবে? না। সেখানে থাকবেই অপার সুখ। তাই ভক্তি কি জন্য করবে! এখানকার জ্ঞান এখনই তোমরা প্রাপ্ত করো। সমস্ত জ্ঞান আত্মার মধ্যে থাকে। আত্মার কোনো ধর্ম হয় না। আত্মা যখন শরীর ধারণ করে তখন বলে অমুক ব্যক্তি এই ধর্মের। আত্মার ধর্ম কি? এক তো, আত্মা হলো বিন্দুর মতো আর হলো শান্ত স্বরূপ, শান্তিধামে থাকে।

এখন বাবা তোমাদের বোঝাচ্ছেন যে, সকল বাচ্চাদের-ই বাবার উপরে সমান অধিকার রয়েছে । অনেক বাচ্চা আছে, যারা অন্য অন্য ধর্মে কনভার্ট হয়ে গেছে, তারাও আবার সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তাদের নিজের আসল ধর্মে কনভার্ট হয়ে যাবে। যারা দেবী-দেবতা ধর্মকে ছেড়ে অন্য ধর্মে চলে গেছে, তারা পুনরায় তাদের নিজেদের আসল ধর্মে ফিরে আসবে। তোমরা প্রথমে প্রথমে বাবার পরিচয় দাও। এই কথাটিতেই সবাই বিভ্রান্ত হয়ে আছে। বাচ্চারা, তোমরা বোঝাও যে, এখন আমাদেরকে কে পড়াচ্ছেন? অসীম জগতের বাবা। কৃষ্ণ তো হলো দেহধারী। এনাকে অর্থাৎ ব্রহ্মা বাবাকে দাদা বলা হয়। তোমরা সবাই হলে ভাই-ভাই, তাইনা! বাকি সবকিছুই নির্ভর করছে তোমাদের স্থিতির উপরে, ভাইয়ের শরীর কেমন, বোনের শরীর কেমন তাতে কাজ কি । আত্মা হলো একটা ছোট্ট তারার মতো। এত সব জ্ঞান একটা ছোট্ট তারার মধ্যেই আছে। তারা(star), শরীর ছাড়া কথা বলতে পারে না। তারা-কে (আত্মা) নিজের পার্ট প্লে করার জন্য অনেক অরগ্যান্স প্রাপ্ত হয়েছে । তোমাদের, অর্থাৎ তারাদের (stars) জগৎ হলো একদম আলাদা। আত্মা এখানে এসে পুনরায় শরীর ধারণ করে। শরীর ছোট কিংবা বড় হয়। আত্মাই নিজের বাবাকে স্মরণ করতে থাকে। তাও আবার, যতক্ষণ শরীরের মধ্যে থাকে। ঘরের (পরমধাম) মধ্যে কি আত্মা বাবাকে স্মরণ করবে? না। সেখানে কিছুই মনে থাকবেনা। আমি কোথায় আছি? আত্মা আর পরমাত্মা দুই-ই যখন শরীরে থাকে তখনই আত্মাদের সঙ্গে পরমাত্মার মিলন মেলা হয়ে থাকে। গীতও আছে যে, আত্মা আর পরমাত্মা আলাদা ছিল বহু কাল.....। কত সময় আলাদা ছিল? স্মরণে আছে কতটা সময় তোমরা পরস্পরের থেকে আলাদা ছিলে? এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড করে ৫ হাজার বছর অতীত হয়ে গেছে। আবার পুনরায় ওয়ান নম্বর থেকে শুরু হবে। এটা হলো একদম নির্ভুল হিসাব। এখন যদি তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে যে তিনি কবে জন্ম নিয়েছেন, তাহলে তোমরা নির্ভুল উত্তর দিতে পারবে। শ্রীকৃষ্ণই প্রথম নম্বরে জন্ম নেয়। শিববাবার তো কোনো মিনিট, সেকেন্ড বের করা যায় না। কৃষ্ণের জন্মতিথি, তারিখ, মিনিট, সেকেন্ড বের করা সম্ভব। মানুষের ঘড়িতে হয়তো কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়ের আগুপিছু হতে পারে, কিন্তু শিব বাবার অবতরণের সময় কাল একদম নির্ভুল হয়। জানা যায় না যে তিনি কখন এসেছেন? এইরকম নয় যে, সাক্ষাৎকার হয়েছে, তবেই তিনি এসেছেন। না। অনুমান করা যেতে পারে। মিনিট, সেকেন্ডের হিসাব বলা সম্ভব নয়। তার অবতরণ হলো অলৌকিক ঘটনা। তিনি আসেনই অসীম জগতের রাত্রিকালে। বাকি অন্য যাদের অবতরণ হয়, তাদের বিষয়ে সমস্ত তথ্য জানা সম্ভব। আত্মা শরীরে প্রবেশ করে। প্রথমে ছোট শরীর ধারণ করে। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শরীরের সাথে সাথে আত্মাও বেরিয়ে আসে। এই সমস্ত কথাগুলিকে বিচার সাগর মন্থন করে পুনরায় অন্যদেরকে বোঝাতে হবে। এই জগতে কতো কতো মানুষ, কিন্তু একের সাথে অপরের কোনোই মিল নেই। কতো বড় রঙ্গমঞ্চ এটা । যেন বিশাল বড় হলঘর, যেখানে অসীম জগতের নাটক চলতে থাকে ।

বাচ্চারা, তোমরা এখানে এসেছো নর থেকে নারায়ণ হওয়ার জন্য। বাবা যে নতুন সৃষ্টি রচনা করেন, সেখানে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ নেওয়ার জন্য। বাকি এই যে পুরনো দুনিয়া রয়েছে, সেটা তো বিনাশ হয়ে যাবে। বাবার দ্বারা নতুন দুনিয়ার স্থাপনা হচ্ছে। বাবাকে পুনরায় তার প্রতিপালনাও করতে হয়। যখন এই শরীর ছেড়ে সত্যযুগের নতুন শরীর ধারণ করবে তখনই তোমাদের পালনা দেবেন। তার আগে এই পুরনো দুনিয়ার বিনাশ তো অবশ্যই হতে হবে। খড়ের গাদায় আগুন তো লাগবেই। কেবলমাত্র এই ভারতই থাকবে, বাকি তো শেষ হয়ে যাবে। ভারতেও খুব অল্পই বাঁচবে। তোমরা এখন খুব পরিশ্রম করছো, যেন বিনাশের পর তোমাদের শাস্তি না খেতে হয়। আর যদি বিকর্ম বিনাশ না হয়, তাহলে শাস্তি তো খেতেই হবে আর পদও পাবে না। তোমাদেরকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, তোমরা কার কাছে যাও? তখন বলবে, শিব বাবার কাছে, যিনি ব্রহ্মার শরীরে এসেছেন। এই ব্রহ্মা কোনো শিব নয়। যত যত বাবাকে জানবে বাবার প্রতি ভালবাসাও থাকবে। বাবা বলেন, বাচ্চারা - তোমরা কারো প্রতি ভালোবাসা রেখো না, সব সঙ্গের প্রতি ভালোবাসা ছেড়ে এক এর সঙ্গে জোড়ো। যেরকম প্রেমিক-প্রেমিকা হয়, এও সেই রকম। ১০৮ সত্যিকারের প্রেমিকা হয়ে ওঠে, তার মধ্যেও ৮ জন হলো একেবারে সত্যিকারের । ৮ দানারও মালা হয় তাই না । ৯ রত্নের গায়ন রয়েছে । ৮ রত্ন আর নয় নম্বর হলেন বাবা। মুখ্য হলো আট দেবতারা। তারপর ১৬১০৮ শাহজাদা- শাহজাদিদের কুটুম্ব হয়ে থাকে, ত্রেতার অন্ত পর্যন্ত। বাবা তো হাতের উপর স্বর্গ দেখান। বাচ্চারা তোমাদের এই কারণে নেশা হওয়া উচিত যে, আমরা তো সৃষ্টির মালিক হতে চলেছি। বাবার সাথে এইরকম সওদা করতে হবে। বলা হয় কোনো বিরল ব্যবসায়ীই এই সওদা করতে পারে। এইরকম ব্যাপারী থোড়াই কেউ আছে? তাই বাচ্চারা, তোমরা এখন উৎসাহ-উদ্দীপনাতে থাকো যে আমরা বাবার কাছে যাচ্ছি । উপর ওয়ালা হলেন বাবা। দুনিয়ার মানুষের জানা নেই। তারা বলবে যে, তিনি তো অন্তিম সময়ে আসবেন। এখন এটাই হলো কলিযুগের অন্তিম সময়, সেই গীতা, মহাভারতের সময়, সেই যাদব যারা মিসাইল বের করছে। সেই কৌরবদের রাজ্য আর তোমরা পাণ্ডবরা উপস্থিত রয়েছো।

তোমরা এখন ঘরে বসে নিজের উপার্জন করছো। ঘরে বসেই ভগবানকে পেয়ে গেছো। এজন্য বাবা বলেন যে যতটা সম্ভব নিজে উপার্জন করে নাও। এই জীবন হলো হীরার মত মূল্যবান, এখন একে কড়িতে বদলে হারিয়ে ফেলো না। এখন তোমরা এই সমগ্র জগতকে রামরাজ্য তৈরি করছো। তোমরা এখন শিব বাবার থেকে শক্তি প্রাপ্ত করছো। এখন তো অনেকের অকালে মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে। বাবা বুদ্ধির তালা খুলে দেন, আর মায়া বুদ্ধির তালা বন্ধ করে দেয়। এখন মাতারা, তোমরাই জ্ঞানের কলস প্রাপ্ত করেছো। অবলাদের শক্তি প্রদানকারী হলেন তিনি। এটাই হল জ্ঞান অমৃত। শাস্ত্রের জ্ঞানকে কোনো অমৃত বলা হয়না। আচ্ছা!

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) কেবলমাত্র এক বাবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সুগন্ধি ফুল হতে হবে। নিজের মিষ্টি বাবাকে স্মরণ করে দেহ-অভিমানের কন্টককে পুড়িয়ে দিতে হবে।

২ ) এই হিরে সম জন্মে অবিনাশী উপার্জন জমা করতে হবে। কড়িতে রূপান্তরিত করে একে হারিয়ে ফেলো না। এক বাবাকেই স্বচ্ছ হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে। এক এর সঙ্গ-তেই থাকতে হবে।

বরদান:-
ব্রাহ্মণ জীবনে সদা খুশীর খোরাক ভোগকারী এবং খুশী বিতরণকারী খুশনসীব (ভাগ্যবান) ভব

এই জগতে তোমাদের ব্রাহ্মণদের মতো সৌভাগ্যবান আর কেউ হতে পারবে না, কেননা এই জীবনেই তোমাদের সকলের বাপদাদার হৃদয় সিংহাসন প্রাপ্ত হয়। সদা খুশীর পুষ্টিকর আহার করো আর খুশী বিতরণ করো। এইসময় তোমরা হলে নিশ্চিন্তপুরের বাদশাহ্। এইরকম নিশ্চিন্ত জীবন সমগ্র কল্পে আর কোনও যুগে পাবে না। সত্যযুগে নিশ্চিন্ত থাকবে কিন্তু সেখানে জ্ঞান থাকবে না। এখন তোমাদের মধ্যে জ্ঞান আছে, এইজন্য হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসছে - আমার মতো ভাগ্যবান আর কেউ নেই।

স্লোগান:-
সঙ্গম যুগের স্বরাজ্য অধিকারীই ভবিষ্যতে বিশ্বরাজ্য অধিকারী হয়।