05.03.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
খুশির মতো পুষ্টিকর আহার নেই, তোমরা খুশিতে থেকে চলতে ফিরতে হাটাচলা করতে করতেও
বাবাকে স্মরণ করলে তবে পবিত্র হয়ে যাবে"
প্রশ্নঃ -
কোনো কর্মই
যাতে বিকর্ম না হয় তার যুকি (উপায়) কি?
উত্তরঃ
বিকর্মের থেকে
বাঁচার উপায় (সাধন) হলো শ্রীমৎ। বাবার প্রথম শ্রীমৎ হলো নিজেকে আত্মা মনে করে
বাবাকে স্মরণ করো, এই শ্রীমৎ অনুসারে চললেই তোমরা বিকর্মাজিৎ হয়ে যাবে।
ওম্ শান্তি ।
আত্মিক
বাচ্চারা যেমন এখানে বসে আছে, সেইরকম সকল সেন্টারেও রয়েছে। সকল বাচ্চারাই জানে যে
এখন আমাদের আত্মিক পিতা এসেছেন। তিনি এখন আমাদেরকে এই পুরাতন নোংরা পতিত দুনিয়ার
থেকে পুনরায় ঘরে নিয়ে যাবেন। বাবা তো আমাদেরকে পবিত্র বানানোর জন্যই এসেছেন। তিনি
আত্মাদের সাথেই কথা বলেন। আত্মাই কানের দ্বারা শোনে। কারন বাবার তো নিজস্ব কোনো
শরীর নেই। তাই বাবা বলেন - আমি এই শরীরটাকে আধার করে নিজের পরিচয় দিই। বাচ্চারা, আমি
এই সাধারণ শরীরের মধ্যে এসেই তোমাদেরকে পবিত্র হওয়ার উপায় বলি। প্রতি কল্পেই এসে
তোমাদেরকে এর উপায় বলে দিই। এই রাবণের রাজত্বে তোমরা আজ কতোই না দুঃখী হয়ে গেছো।
তোমরা এখন রাবণের রাজত্ব অথবা শোক-বাটীকাতে রয়েছো। গোটা কলিযুগটাকেই দুঃখধাম বলা হয়।
সুখধাম হলো কৃষ্ণপুরী বা স্বর্গ, যেটা এখানে নেই। বাচ্চারা ভালোভাবেই জানে যে এখন
স্বয়ং বাবা আমাদেরকে পড়াতে এসেছেন।
বাবা বলেন - তোমরা
বাড়িতেও স্কুল বানাতে পারো। পবিত্র হতে হবে আর অন্যকেও বানাতে হবে। তোমরা পবিত্র হয়ে
গেলে এই দুনিয়াটাও পবিত্র হয়ে যাবে। এখন তো গোটা দুনিয়াটাই পতিত - দুর্নীতিগ্রস্ত
হয়ে গেছে। এটা হলো রাবণের রাজধানী। যারা এই কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে, তারা আবার
অন্যকেও বোঝায়। বাবা কেবল এটাই বলেন - বাচ্চারা, নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে আমাকে
অর্থাৎ নিজের পিতাকে স্মরণ করো। অন্যদেরকেও এইরকম বোঝাও। বাবা এখন এসে গেছেন। তিনি
বলছেন - আমাকে স্মরণ করলেই তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। কোনো আসুরিক কর্ম করো না। মায়া
তোমাদের দ্বারা যেসব নোংরা কর্ম করাবে সেগুলো তো অবশ্যই বিকর্ম হবে। তোমরা যে
ঈশ্বরকে সর্বব্যাপী বলে দিয়েছিলে, সেটাও তো মায়া-ই বলিয়েছিল। তোমাদেরকে কর্ম-অকর্ম
এবং বিকর্মের রহস্যও বুঝিয়েছি। শ্রীমৎ অনুসারে চলার ফলে তোমরা অর্ধেক কল্প সুখ ভোগ
করো। তারপর রাবণের মতামত অনুসারে চলে অর্ধেক কল্প দুঃখ পাও। এই রাবণের রাজত্বে তোমরা
যতই ভক্তি করে থাকো না কেন, ক্রমশই অধঃপতন হয়েছে। এইসব কথা তোমরা জানতেই না। বুদ্ধি
একেবারে পাথর হয়ে গেছিল। প্রস্তর-বুদ্ধি এবং পরশ-বুদ্ধির কথা প্রচলিত রয়েছে।
ভক্তিমার্গে বলে থাকে - হে ঈশ্বর, এদের সুবুদ্ধি দাও যাতে এইসব লড়াই ঝগড়া বন্ধ করে।
তোমরা বাচ্চারা জানো যে বাবা এখন খুব সুন্দর বুদ্ধি দিচ্ছেন। বাবা বলছেন - মিষ্টি
বাচ্চারা, তোমরা আত্মারা এখন পতিত হয়ে গেছ, তাই স্মরণের যাত্রার দ্বারা আত্মাকেই
পবিত্র বানাতে হবে। ঘুরতে যেতে চাইলে যাও, কিন্তু বাবার স্মরণে থেকে তোমরা যত দূরই
হাঁটো না কেন, শরীরের কথা মনেই আসবে না। বলা হয় - খুশি হলো সর্বোত্তম পুষ্টিকর
খাবার। মানুষ একটু উপার্জনের জন্য কত দূরে দূরে খুশি মনে যায়। আর তোমরা তো কতো ধনী,
সম্পত্ত্বিবান হয়ে যাও। বাবা বলছেন - প্রতি কল্পেই আমি এসে তোমাদের মতো আত্মাদেরকে
আমার পরিচয় দিই। এখন সকলেই পতিত হয়ে গেছে। তাই পবিত্র বানানোর জন্য ডাকছে। আত্মাই
তো বাবাকে আহ্বান করে। এই রাবণের রাজত্বে শোক বাটীকাতে এখন সকলেই দুঃখী। গোটা
দুনিয়াটাই হলো রাবণ রাজ্য। এখন এই সৃষ্টিটাই তমোপ্রধান হয়ে গেছে। সতোপ্রধান
দেবতাদের কেবল চিত্রই অবশিষ্ট আছে। ওদেরই গুনগান করা হয়। শান্তিধাম কিংবা সুখধামে
যাওয়ার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে। ওরা তো জানেই না কিভাবে ভগবান এসে আমাদেরকে
ভক্তির ফল দেবেন। তোমরা এখন বুঝতে পারছো যে আমরা ভগবানের কাছ থেকে ফল পাচ্ছি।
ভক্তির ফল দুই রকমের হয় - এক, হলো মুক্তি, দুই হলো জীবন মুক্তি। এটা খুবই সূক্ষ্ম
বিষয় যা ভালোভাবে বুঝতে হবে। যারা প্রথম থেকে শুরু করে অনেক ভক্তি করেছে, তারা
জ্ঞানটাও ভালো ভাবে বুঝবে এবং সেইজন্য ভালো ফলও পাবে। যদি কম ভক্তি করেছে তো জ্ঞানটা
অল্প বুঝবে এবং অল্প ফল পাবে। সবই তো হিসাব অনুসারে হয়। ক্রমানুসারে বিভিন্ন পদ
থাকবে। বাবা বলেন যে আমার বাচ্চা হওয়ার পরেও বিকারের বশীভূত হওয়ার অর্থ আমার হাত
ছেড়ে দেওয়া। একেবারে নীচে পড়ে যাবে। অনেকে পড়ে গিয়েও আবার উঠে যায়। কেউ কেউ একেবারে
গর্তের মধ্যে পড়ে যায়, বুদ্ধি কখনোই শোধরায় না। অনেকের বিবেক দংশন হয়, দুঃখ পায়,
ভাবে - আমরা ভগবানের কাছে প্রতিজ্ঞা করার পরেও তাঁকে ঠকিয়েছি, বিকারের বশীভূত হয়েছি।
বাবার হাত ছেড়ে মায়ার সঙ্গ নিয়েছি। ওরা পুরো পরিবেশটাকেই খারাপ করে দেয়। অভিশপ্ত হয়ে
যায়। বাবার সঙ্গে তো ধর্মরাজও রয়েছেন। ওই সময়ে তো বুঝতেই পারে না যে আমি কি করছি।
পরে অনুশোচনা হয়। এইরকম অনেকেই আছে যারা কাউকে খুন করে জেলে যায় এবং পরে অনুশোচনা
হয় যে আমি বিনা কারণে ওকে মেরে ফেললাম। রাগের বশে অনেককে মেরে ফেলে। খবরের কাগজে
এইরকম অনেক খবর থাকে। তোমরা তো খবরের কাগজ পড়ো না। দুনিয়ায় যে কি না কি হচ্ছে তা
তোমরা জানতেও পারো না। দিনে দিনে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। ক্রমশ সিঁড়ি দিয়ে নীচে
নামছে। তোমরা এই ড্রামার রহস্য জেনে গেছ। বুদ্ধিতে রয়েছে যে আমরা কেবল বাবাকেই
স্মরণ করব। এমন কোনো খারাপ কাজ করব না যাতে রেজিস্টার খারাপ হয়ে যায়। বাবা বলছেন -
আমি তোমাদের টিচার। টিচারের কাছে তো স্টুডেন্টের পড়াশুনা এবং চাল-চলনের পুরো রেকর্ড
থাকে। কারোর আচরণ খুব ভালো, কারোর কম ভালো, কারোর আবার খুবই খারাপ। বিভিন্ন ক্রম
থাকে। এখানে সুপ্রিম বাবা কতোই না শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনিও প্রত্যেকের চাল
চলন সম্পর্কে অবহিত। তোমরা নিজেরাও জানতে পারো যে আমার মধ্যে এই খারাপ গুনগুলো রয়েছে
যার জন্য আমি ফেল করতে পারি। বাবা প্রতিটা বিষয় স্পষ্ট করে বোঝাচ্ছেন। যদি পুরো পড়া
না পড়ো, কাউকে দুঃখ দাও, তবে তুমিও দুঃখী হয়েই মরবে। নিচু পদ পাবে। অনেক শাস্তিও
খাবে।
মিষ্টি বাচ্চারা,
নিজের এবং অন্যের ভাগ্যের দ্বার খোলার জন্য দয়ার সংস্কার ধারণ করো। যেমন বাবা কতো
দয়াময়, তাই তো তিনি টিচার রূপে তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন। অনেক বাচ্চা নিজে ভালো করে পড়ে
এবং অন্যকেও পড়ায়। এক্ষেত্রে অনেক দয়াময় হতে হয়। টিচাররা এইরকম দয়াময় হয়, উপার্জনের
রাস্তা দেখায়, কিভাবে তোমরা ভালো পজিশন পাবে তা বলে দেয়। ওই পড়াশুনায় তো অনেক রকমের
টিচার থাকে। এখানে তো কেবল একজন টিচার। পড়াশুনার বিষয়ও একটাই - মানুষ থেকে দেবতা
হওয়া। এক্ষেত্রে মুখ্য হলো পবিত্রতা। সকলেই পবিত্র হতে চায়। বাবা তো রাস্তা
দেখাচ্ছেন কিন্তু যার ভাগ্যেই নেই সে আর কি পরিশ্রম করবে ! বেশি নম্বর পাওয়া যদি
ভাগ্যেই না থাকে তবে টিচার আর কতই বা পরিশ্রম করবে ! ইনি হলেন অসীম জগতের শিক্ষক।
বাবা বলছেন - অন্য কেউ তোমাদেরকে সৃষ্টির আদি, মধ্য, অন্তিমের হিস্ট্রি জিওগ্রাফি
বোঝাতে পারবে না। প্রত্যেকটা বিষয় তোমাদেরকে সীমাহীন ভাবে বোঝানো হয়। তোমাদের অসীম
জগতের প্রতি বৈরাগ্য রয়েছে। যখন পতিত দুনিয়ার বিনাশ এবং পবিত্র দুনিয়ার স্থাপন হয়,
তখনই তোমাদেরকে এইসব বোঝানো হয়। সন্ন্যাসীরা তো নিবৃত্তি মার্গের পথিক। ওরা তো
জঙ্গলে থাকে। আগে সব ঋষি-মুনিরাই জঙ্গলে থাকত। তখন তাদের মধ্যে সতো-প্রধান শক্তি
ছিল। মানুষদেরকে আকর্ষণ করতো। অনেক দূরে কুটিরে গিয়ে তাদেরকে খাবার দিয়ে আসা হতো।
কিন্তু সন্ন্যাসীদের কোনো মন্দির বানানো হয় না। মন্দির সবসময় দেবতাদের-ই হয়। তোমরা
ঐরকম ভক্তি করো না। তোমরা যোগযুক্ত থাকো। ওদের কাছে তো ব্রহ্মতত্ত্বকে স্মরণ করাটাই
হলো জ্ঞান। কেবল ব্রহ্মতত্ত্বেই বিলীন হওয়ার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু বাবা ছাড়া তো অন্য
কেউ ওখানে নিয়ে যেতে পারবে না। বাবা কেবল সঙ্গমযুগেই আসেন। এসে দেবী-দেবতা ধর্ম
স্থাপন করেন। বাকি সকল আত্মারা ফিরে যায়। কারন তোমাদের জন্য তো নুতন দুনিয়া প্রয়োজন।
পুরাতন দুনিয়াতে তো কেউ থাকতে চাইবে না। তোমরা গোটা বিশ্বের মালিক হয়ে যাও। কেবল
তোমরাই জানো যে যখন আমাদের রাজত্ব ছিল তখন গোটা বিশ্বে কেবল আমরাই ছিলাম। অন্য কোনো
ভূখন্ড ছিল না। ওখানে অনেক জমি-জায়গা ছিল। এখানে এতো জমি জায়গা থাকা সত্ত্বেও
সমুদ্রকে শুকিয়ে জমি বার করে। কারন মানুষের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশিদের
কাছ থেকেই এইরকম সমুদ্র শুকানোর পদ্ধতি শিখেছে। বম্বে (মুম্বাই) আগে কেমন ছিল। এটাও
আর ক'দিন পরে থাকবে না। বাবার তো অনুভব রয়েছে। মনে করো আর্থকোয়েক (ভূমিকম্প) হলো
কিংবা মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। তখন কে কি করবে ! বাইরে যাওয়ার উপায় থাকবে না।
এইরকম অনেক ধরনের ন্যাচারাল ক্যালামিটিস আসবে। নয়তো এতো কিছুর বিনাশ কিভাবে হবে।
সত্যযুগে তো কেবল কয়েকজন ভারতবাসীই থাকবে। আজকে কি আছে আর কাল কি হবে। তোমরা
বাচ্চারাই এইসব জানো। অন্য কেউই এই জ্ঞান দিতে পারবে না। বাবা বলছেন, তোমরা এখন
পতিত হয়ে গেছো বলে আমাকে ডাকছো - তুমি এসে আমাদেরকে পবিত্র করে দাও। সুতরাং আমি আসলে
তবেই পবিত্র দুনিয়া স্থাপিত হবে। তোমরা বাচ্চারা এখন জেনে গেছো যে বাবা এসে গেছেন।
কতো ভালো ভালো উপায় বলে দিচ্ছেন। ভগবানুবাচ - মন্মনা ভব। শরীর এবং সকল শারীরিক
সম্বন্ধকে ভুলে কেবল আমাকেই স্মরণ করো। এটাই পরিশ্রমের কাজ। জ্ঞান তো খুবই সহজ। ছোট
বাচ্চাও সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করে নেবে। কিন্তু নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে বাবাকে
স্মরণ করা - এটাই ইম্পসিবল। বড়দের বুদ্ধিতেই ধারণ হয় না তো ছোটরা কিভাবে স্মরণ করবে?
হয়তো মুখে শিববাবা শিববাবা বলতে থাকে, কিন্তু আসলে তো ওরা অবোধ, তাই নয় কি? আমিও
বিন্দু, বাবাও বিন্দু - এইরকম স্মৃতি আসা খুবই কঠিন। এটাই হলো যথাযথ ভাবে স্মরণ করা।
এটা কোনো স্থূল বিষয় নয়। বাবা বলছেন - আমার প্রকৃত রূপ বিন্দু, তাই আমি আসলে যে এবং
যেমন সেইভাবেই স্মরণ করা খুবই পরিশ্রমের বিষয়।
ওরা তো বলে দেয়
পরমাত্মা-ই হলো ব্রহ্ম তত্ত্ব। আর আমরা বলি পরমাত্মা হলেন একেবারে বিন্দু। রাত এর
পার্থক্য তাই না। যে ব্রহ্ম তত্ত্বে আমরা আত্মারা থাকি সেটাকেই পরমাত্মা বলে দেয়।
বুদ্ধিতে সর্বদা থাকা উচিত - আমি হলাম আত্মা, বাবার বাচ্চা, আমি এই কান দিয়ে শুনি,
বাবা এই মুখের সাহায্যে বলেন যে - আমি পরমাত্মা, সবথেকে ওপরে থাকি। তোমরাও সবথেকে
ওপরে থাকো কিন্তু জন্ম-মৃত্যুর মধ্যে আসো, আমি আসি না। তোমরা এখন নিজেদের ৮৪ জন্মকে
বুঝতে পেরেছো। বাবার ভূমিকাও বুঝতে পেরেছো। আত্মা কখনো বড় কিংবা ছোট হয় না। কেবল
আয়রন এজেড হয়ে যাওয়ার জন্য ময়লা হয়ে যায়। এতো ছোট আত্মার মধ্যে সমস্ত জ্ঞান রয়েছে।
বাবাও তো এতটাই ছোট। কিন্তু ওনাকে পরম আত্মা বলা হয়। তিনি অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর এসে
তোমাদেরকে বোঝাচ্ছেন। এখন তোমরা যা কিছু পড়ছো, সেগুলো আগের কল্পেও পড়েছিলে এবং তার
দ্বারা দেবতা হয়ে ছিলে। তোমাদের মধ্যে সবথেকে খারাপ ভাগ্য তার, যে পতিত হয়ে নিজের
বুদ্ধিকে মলিন করে দেয়। কারন সে কিছুই ধারণ করতে পারে না।* তার সর্বদাই বিবেক দংশন
হবে। অন্যকেও পবিত্র হওয়ার উপদেশ দিতে পারবে না। নিজেও আন্তরিক ভাবে বুঝতে পারবে যে
পবিত্র হতে হতে আমি হেরে গেছি, যা কিছু উপার্জন করেছিলাম সব হারিয়ে ফেলেছি। তারপর
অনেকটা সময় লেগে যায়। একটা আঘাতেই ঘায়েল করে দেয়। রেজিস্টার খারাপ হয়ে যায়। বাবা
তখন বলে দেবেন - তুমি মায়ার কাছে পরাজিত হয়েছ, তোমার ভাগ্যই খারাপ। মায়াজিৎ জগৎজিৎ
হতে হবে। জগৎজিৎ তো মহারাজা-মহারানীকেই বলা হয়। প্রজাকে তো বলা হয় না। এখন দৈব
স্বরাজ্য স্থাপন হচ্ছে। যে নিজের জন্য করবে, সে-ই ফল পাবে। যে যত পবিত্র হবে এবং
অন্যকেও বানাবে, অনেক দান করবে, সে তো ফল অবশ্যই পাবে। ভক্তিতে যে বেশি দান করে তার
অনেক নামও হয়। পরের জন্মে ক্ষণিকের সুখও পেয়ে যায়। এখানে তো ২১ জন্মের বিষয়। পবিত্র
দুনিয়ার মালিক হতে হবে। যে পবিত্র হয়েছিল, সে-ই পুনরায় হবে। চলতে চলতে মায়া থাপ্পড়
মেরে ফেলে দেয়। মায়াও কম বড় শত্রু নয়। ৮-১০ বছর ধরে পবিত্র থাকলো, পবিত্র থাকার
জন্য কতো ঝগড়া করলো, অন্যকেও পতিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলো, তারপর একদিন নিজেই পড়ে
গেল। বলতে হবে তার ভাগ্যই এইরকম। বাবার বাচ্চা হওয়ার পরেও যদি মায়ার সঙ্গী হয়ে যায়
তাহলে তো সে শত্রু হয়ে গেল। ‛খুদা দোস্ত’-এর একটা গল্প রয়েছে। বাবা এসে বাচ্চাদেরকে
কতোই না ভালোবাসেন, দর্শন করান। কোনো ভক্তি না করেই বাচ্চাদের দর্শন হয়ে যায়। অতএব
তিনি তো বন্ধুত্বই করেছেন, তাই না? আগে কতো রকমের দর্শন হতো। কিন্তু লোকে জাদু মনে
করে ঝামেলা শুরু করলো। তাই সে’সব বন্ধ করে দিয়েছি। পরে অন্তিমেও তোমরা অনেক কিছু
দেখবে। আগে কতো মজাই না হতো। ওগুলো দেখার পরেও কতজন চলে গেল। ভাট্টি (ভাটা) থেকে
কিছু ইট একেবারে শক্তপোক্ত হয়ে বেরিয়ে এলো, কিছু ইট আবার একটু কাঁচাও থেকে গেল।
কয়েকজন তো একেবারে ভেঙেই গেল। কতজন চলে গিয়েছিল। এখন ওরা লাখপতি কিংবা কোটিপতি হয়ে
গেছে। ওরা ভাবে আমরা তো স্বর্গেই রয়েছি। কিন্তু এখানে কিভাবে স্বর্গ আসবে ? স্বর্গ
তো কেবল নুতন দুনিয়াতেই হয়। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
নিজের শ্রেষ্ঠ ভাগ্য নির্মাণের জন্য দয়াময় (রহমদিল) হয়ে পড়তে হবে এবং পড়াতে হবে।
কখনোই কোনো সংস্কারের বশীভূত হয়ে নিজ রেজিস্টার খারাপ করা উচিত নয়।
২ ) মানুষ থেকে দেবতা
হওয়ার জন্য মুখ্য বিষয় হলো পবিত্রতা। তাই কখনোই পতিত হয়ে নিজের বুদ্ধিকে মলিন করা
উচিত নয়। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যাতে পরে বিবেক দংশন হয় এবং প্রায়শ্চিত্ত করতে
হয়।
বরদান:-
বীজরূপ
স্থিতির দ্বারা সমগ্র বিশ্বকে লাইটের বর্ষণকারী বিশ্ব কল্যাণকারী ভব
বীজরূপ স্টেজ হল
সবথেকে পাওয়ারফুল স্টেজ, এই স্টেজ লাইট হাউসের কাজ করে, এর দ্বারা সমগ্র বিশ্বে
লাইট ছড়িয়ে দেওয়ার নিমিত্ত হও। যেরকম বীজ দ্বারা স্বতঃই সমগ্র বৃক্ষে জল প্রাপ্ত হয়,
এইরকম যখন বীজরূপ স্টেজের উপর স্থিত থাকো তখন বিশ্বে লাইটের বর্ষণ প্রাপ্ত হয়।
কিন্তু সমগ্র বিশ্বে লাইট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ব কল্যাণকারীর পাওয়ারফুল স্টেজ চাই।
এরজন্য লাইট হাউস হবে নাকি বাল্ব। প্রত্যেক সংকল্পে এই স্মৃতি যেন থাকে যে সমগ্র
বিশ্বের কল্যাণ হোক।
স্লোগান:-
অ্যাডজাস্ট হওয়ার শক্তি বিপরীত সময়ে পাশ উইথ অনার বানিয়ে দেবে।
অব্যক্ত ঈশারা -
সত্যতা আর সভ্যতা রূপী কালচারকে ধারণ করো
পরমাত্ম প্রত্যক্ষতার
আধার হলো সত্যতা। সত্যতার দ্বারাই প্রত্যক্ষতা হবে - এক হল নিজের স্থিতির সত্যতা,
দ্বিতীয় হলো সেবার সত্যতা। সত্যতার আধার হলো - স্বচ্ছতা আর নির্ভয়তা। এই দুই ধারণার
আধারে সত্যতা দ্বারা পরমাত্ম প্রত্যক্ষতার নিমিত্ত হও। কোনও প্রকারের অস্বচ্ছতা
অর্থাৎ অল্প একটুও সত্যতা বা স্বচ্ছতা কম থাকলে কর্তব্যের সিদ্ধি হতে পারবে না।