05.09.2024
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
এখানে তোমরা প্রবৃত্তি মার্গের লভ পেয়ে থাকো, কেননা বাবা আন্তরিক ভাবে বলেন - আমার
বাচ্চারা, তোমরা বাবার থেকে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করে থাকো, এই লভ দেহধারী গুরু দিতে
পারবে না"
প্রশ্নঃ -
যেসকল বাচ্চার
বুদ্ধিতে জ্ঞানের ধারণা হয়েছে, শ্রুড্ বুদ্ধি তাদের - কেমন লক্ষণ হবে তাদের?
উত্তরঃ
অন্যকে জ্ঞান
শোনানোর খুব শখ থাকবে তাদের । ওদের বুদ্ধি আত্মীয় পরিজনদের দিকে ঘোরাফেরা করবে না।
যারা শ্রুড্ (তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন) বুদ্ধির, পড়াশোনার সময়ে তারা কখনো হাই তুলবে
না। স্কুলে কখনো চোখ বন্ধ করে কেউ বসবে না। যেসব বাচ্চারা এখানে গরম চাটুর মতো এখানে
বসে, তাদের বুদ্ধি এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে, তারা জ্ঞানকে বোঝে না, বাবাকে
স্মরণ করা তাদের কাছে খুব কঠিন ।
ওম্ শান্তি ।
এ হলো বাবা আর
বাচ্চাদের মেলা। গুরু আর চেলা বা শিষ্যদের মেলা নয়। দুনিয়ার গুরুদের দৃষ্টি থাকে
যে, এরা আমার শিষ্য বা ফলোয়ার্স বা জিজ্ঞাসু। হাল্কা দৃষ্টি হয়ে গেল না! তারা সেই
দৃষ্টিতেই দেখবে। আত্মাকে নয় । গুরুরাও শরীরকেই দেখে আর তার চেলারাও দেহ-অভিমানী
হয়ে বসে থাকে। তাকে নিজের গুরু বলে মনে করে এবং সেই দৃষ্টিতেই দেখে। গুরুকে খুব
সম্মান করে। কিন্তু তার সাথে এখানে বিস্তর ফারাক। এখানে তো বাবা স্বয়ং বাচ্চাদের
রিগার্ড রাখেন। তিনি জানেন যে, এই বাচ্চাদেরকে পড়াতে হবে, কিভাবে এই সৃষ্টি চক্র
আবর্তিত হয় এবং অসীম জগতের হিস্ট্রি-জিওগ্রাফি সব এই বাচ্চাদেরকে বোঝাতে হবে। ওইসব
গুরুদের মনে বাচ্চাদের প্রতি লভ থাকবে না। বাবার অন্তরে তো বাচ্চাদের জন্য অনেক লভ
থাকে এবং বাচ্চাদের অন্তরেও বাবার প্রতি লভ থাকে । তোমরা জানো যে, বাবা আমাদেরকে
সৃষ্টিচক্রের জ্ঞান শোনান। ওরা কি শেখায়? অর্ধ কল্প ধরে শাস্ত্র ইত্যাদি শোনায়,
ভক্তিমার্গের ক্রিয়াদি করে, গায়ত্রী, সন্ধ্যা ইত্যাদি শেখাতে থাকে । এখানে তো বাবা
এসেছেন, নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। আমরা তো বাবাকে একেবারেই জানতাম না, সর্বব্যাপী বলে
দিতাম। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে পরমাত্মা কোথায় থাকেন, তো সাথে সাথে বলে দেবে
যে তিনি তো সর্বব্যাপী। তোমাদের কাছে যখন মানুষ আসে তখন তারা প্রশ্ন করে যে, এখানে
কি শেখানো হয়? বলো - আমরা রাজযোগ শেখাই যার দ্বারা আপনি মানুষ থেকে দেবতা অর্থাৎ
রাজা হতে পারবেন । অন্য কোনো সৎসঙ্গে এইরকম বলবে না যে, আমরা দেবতা হওয়ার শিক্ষা
দিই। দেবতারা সত্যযুগে থাকে। কলিযুগে তো হলো মানুষ । আমরা এখন আপনাকে সমগ্র
সৃষ্টিচক্রের রহস্য বোঝাবো, যার দ্বারা আপনি চক্রবর্তী রাজা হয়ে যাবেন এবং তারপর
আপনাকে পবিত্র হওয়ার জন্য খুব ভালো যুক্তি (উপায়) বলা হবে। এইরকম যুক্তি কেউ কখনো
বোঝতে পারবে না। এ হলো সহজ রাজযোগ। বাবা হলেন পতিত পাবন। সর্বশক্তিমানও তিনি, তাই
তাঁকে স্মরণ করলেই পাপ ভস্ম হবে। কারণ যোগ-অগ্নি যে। সুতরাং এখানে নুতন বিষয় শেখানো
হয়।
এ হলো জ্ঞানমার্গ।
জ্ঞানের সাগর একমাত্র বাবা। জ্ঞান আর ভক্তি দুটো সম্পূর্ণ আলাদা । জ্ঞান শেখানোর
জন্য বাবাকে আসতে হয়। কারণ তিনিই হলেন জ্ঞানের সাগর। তিনি নিজে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে
বলেন যে, আমি হলাম সকলের পিতা, আমি ব্রহ্মার দ্বারা সমগ্র সৃষ্টিকে পবিত্র বানাই।
সত্যযুগ হলো পবিত্র দুনিয়া। কলিযুগ হলো পতিত দুনিয়া। এটা হলো সত্যযুগের আদি এবং
কলিযুগের অন্তিমের মধ্যবর্তী সময় বা সঙ্গমযুগ। এটাকে লিপ-যুগ বলা হয়। এই যুগে আমরা
জাম্প (লাফ) দিই। কোথায় ? পুরাতন দুনিয়া থেকে নুতন দুনিয়াতে জাম্প দিই। গোটা দুনিয়া
ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসেছে। এখন আমরা ছিঃ ছিঃ দুনিয়ার থেকে নুতন দুনিয়ায়
একদম জাম্প দিচ্ছি। সরাসরি চলে যাই উপরে । পুরাতন দুনিয়াকে ত্যাগ করে আমরা নুতন
দুনিয়াতে যাচ্ছি। এ'সব হলো অসীমিত জাগতিক কথা। অসীমিত এই পুরাতন দুনিয়াতে অনেক অনেক
মানুষ । নুতন দুনিয়াতে তো খুব কম মানুষ থাকবে, তাকে স্বর্গ বলা হয়। ওখানে সকলেই
পবিত্র থাকে। কলিযুগে তো সকলেই অপবিত্র। রাবণ অপবিত্র বানিয়ে দেয়। সবাইকেই বোঝানো
হয় যে, আমরা এখন রাবণ রাজ্য বা পুরাতন দুনিয়াতে রয়েছি। আসলে আমরা রাম-রাজ্যে ছিলাম,
যেটাকে স্বর্গ বলা হয়। তারপর কিভাবে আমরা ৮৪ বার জন্ম গ্রহণ করে অধঃপতিত হয়েছি, সেটা
আমরা আপনাকে বোঝাবো। যে ভালো বিচক্ষণ ব্যক্তি হবে, সে তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে। যার
বুদ্ধিতে ধারণ হবে না সে গরম চাটুর মতো (গরম চাটুতে জল দিলে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়)
এদিক ওদিক দেখতে থাকবে। অ্যাটেনশন দিয়ে শুনবে না। বলা হয় না যে, তুমি তো একেবারে
গরম তাওয়া। সন্ন্যাসীরাও যখন কথোকথা শোনায় তখন যদি কেউ ঢুলতে থাকে কিংবা অন্যদিকে
অ্যাটেনশন থাকে তখন তাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করা হয় যে কি শোনানো হলো? বাবাও সবাইকে
দেখেন। গরম চাটুতে জল পড়লে বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায় এই রকম কেউ এখানে বসে নেই তো?
শ্রুড্ বুদ্ধি (তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন) যাদের, তারা কখনো পড়ার সময়ে হাই তুলবে না।
স্কুলে তো চোখ বন্ধ করে বসার কোনো নিয়ম থাকে না। জ্ঞান এতটুকুও বোঝে না। তাদের পক্ষে
তো বাবাকে স্মরণ করা খুব কঠিন কাজ। তাই পাপ নাশ কিভাবে হবে? শ্রুড্ বুদ্ধি সম্পন্ন
যে, ভালোভাবে জ্ঞান ধারণ করে অন্যকেও শোনানোর উৎসাহ থাকবে তার। জ্ঞান যদি না থাকে,
তবে আত্মীয় পরিজনদের দিকে বুদ্ধি আবর্তিত হবে। এখানে তো বাবা বলেন, অন্য সবকিছু ভুলে
যেতে হবে। অন্তিম সময়ে যেন কোনোকিছুই স্মরণে না আসে। বাবা তো কয়েকজন সন্ন্যাসীকে
দেখেছেন যারা হলেন পাক্কা ব্রহ্মজ্ঞানী। ভোরবেলা উঠে ব্রহ্ম মহাতত্ত্বকে স্মরণ করতে
করতে শরীর ত্যাগ করে। তখন তার থেকে অনেক শান্তির তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। কিন্তু ওরা তো
ব্রহ্মে লীন হয় না। পুনরায় কোনো মাতৃগর্ভে জন্ম নিতে হয়।
বাবা বুঝিয়েছেন,
বাস্তবে তো কৃষ্ণকেই মহাত্মা বলা হবে। মানুষ তো কোনো অর্থ না বুঝে এমনিই যাহোক বলে
দেয়। বাবা বোঝাচ্ছেন যে কৃষ্ণ হলো সম্পূর্ণ নির্বিকারী। কিন্তু তাঁকে সন্ন্যাসী নয়,
দেবতা বলা হয়। সন্ন্যাসী বলা বা দেবতা বলা তারও অর্থ রয়েছে । কৃষ্ণ কিভাবে দেবতা
হয়েছিল? সন্ন্যাসী থেকে দেবতা হয়েছিল। অসীম জগতের থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিল এবং
নুতন দুনিয়াতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ওই সন্ন্যাসীরা তো সীমিত জাগতিক সন্ন্যাস করে।
অসীম জাগতিক সন্ন্যাস করা ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই সীমিত জগতের মধ্যেই পুনরায়
বিকারের দ্বারা জন্ম নিতে হয়। ওরা অসীম জগতের মালিক হতে পারবে না, রাজা-রানী হবে
না। ওদের ধর্মই হলো আলাদা। সন্ন্যাস ধর্ম আর দেবী-দেবতা ধর্ম এক নয়। বাবা বলেন, আমি
অধর্মের বিনাশ করে দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করছি। বিকারগুলোকেও তো অধর্ম বলা হবে।
তাই বাবা বলছেন যে এই সবকিছু বিনাশ করে এক আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করার
জন্য আমাকেই আসতে হয়। ভারতে যখন সত্যযুগ ছিল তখন একটাই ধর্ম ছিল। সেই ধর্মটাই অধর্মে
পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এখন তোমরা পুনরায় আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করছ। যে যত
বেশি পুরুষার্থ করবে, সে তত উঁচু পদ পাবে। নিজেকে আত্মারূপে অনুভব করতে হবে। ঘর
গৃহস্থে থেকেও উঠতে বসতে যত বেশি সম্ভব অভ্যাস করে এটা রপ্ত করো। যেমন ভক্তরা
ভোরবেলা উঠে নিরিবিলি স্থানে বসে মালা জপ করে, সেইরকম তোমরাও সারাদিনের হিসাব চেক
করো। অমুক সময়ে এতক্ষণ স্মরণ করেছি, সারাদিনে এতক্ষণ স্মরণ করেছি। তাহলে টোটাল (মোট)
কতক্ষণ স্মরণ করছি। ওরা তো ভোরবেলা উঠে মালা জপ করে। হয়তো কেউই সত্যিকারের ভক্ত নয়,
বুদ্ধি বাইরে কোথাও না কোথাও ঘুরতে থাকে। এখন তোমরা বুঝে গেছ যে, ভক্তি করে কোনো
লাভ নেই। এটা হলো জ্ঞানমার্গ। এতে অনেক লাভ। এখন তোমরা ক্রমোন্নতি করছ। প্রতি
মুহূর্তে বাবা বলতে থাকেন - "মন্মনা ভব" । গীতাতেও রয়েছে, কিন্তু এর অর্থ কেউই বলতে
পারবে না। ওদের কাছে কোনো উত্তর নেই। বাস্তবে এর অর্থ তো লেখাও রয়েছে যে, নিজেকে
আত্মা রূপে অনুভব করে, সকল দৈহিক ধর্মকে পরিত্যাগ করে কেবল আমাকে স্মরণ করো। এটা হলো
ভগবানুবাচ। কিন্তু ওদের বুদ্ধিতে রয়েছে কৃষ্ণই ভগবান। কৃষ্ণ তো দেহধারণ করে। অর্থাৎ
পুনর্জন্ম নেয়। তাই তাকে কিভাবে ভগবান বলা যাবে? সুতরাং সন্তানের প্রতি বাবার যেরকম
দৃষ্টি থাকে, সন্ন্যাসী কিংবা অন্য কোনো গুরুর দৃষ্টি সেইরকম হতেই পারে না। হয়তো
গান্ধীজীকে বাপুজী বলা হত কিন্তু সেক্ষেত্রেও যে পিতা এবং সন্তানের সম্বন্ধ ছিল,
সেটা বলা যাবে না। সেও তো একজন সাকার ব্যক্তি ছিল। তোমাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে,
নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। এনার মধ্যে যে বাবা বসে আছেন, তিনি হলেন অসীম জগতের
বাপুজী। লৌকিক এবং পারলৌকিক উভয় পিতার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। কিন্তু
বাপুজীর কাছ থেকে তো কিছুই পাওয়া যায়নি। ঠিক আছে, হয়তো ভারতের রাজধানী ফেরৎ পাওয়া
গিয়েছিল কিন্তু এটাকে তো উত্তরাধিকার বলা যাবে না। সুখের প্রাপ্তি হওয়া উচিত।
উত্তরাধিকার দুই
প্রকারের হয় - এক, জাগতিক পিতার, দুই, অসীম জাগতিক পিতার। ব্রহ্মার কাছ থেকে কোনো
উত্তরাধিকার পাওয়া যায় না। যদিও ইনি হলেন সকল প্রজার পিতা, এনাকে গ্রেট গ্রেট
গ্র্যান্ড ফাদার বলা হয়। ইনি নিজে বলেন, আমার কাছ থেকে তোমরা কোনো উত্তরাধিকার পাবে
না। যখন ইনিও বলছেন যে আমার কাছ থেকে কোনো উত্তরাধিকার পাওয়া যাবে না, তাহলে ঐ
বাপুজী-র কাছ থেকে কি কোনো উত্তরাধিকার পাওয়া যাবে? কিছুই পাওয়া যাবে না। ইংরেজরা
তো চলে গেছে। কিন্তু এখন কি পরিস্থিতি? দারিদ্র, হরতাল, পিকেটিং, স্ট্রাইক ইত্যাদি
হতেই থাকে, কত মারামারি হতে থাকে । কাউকেই ভয় পায় না। বড় বড় অফিসারদেরকেও মেরে ফেলে।
সুখের পরিবর্তে আরও দুঃখ এসেছে। তো এখানে হলো অসীম জাগতিক বিষয়ে । বাবা বলেন - আগে
এটা ভালো ভাবে পাক্কা করো যে, আমি আত্মা, শরীর নয়। বাবা আমাদেরকে দত্তক নিয়েছেন।
আমরা হলাম দত্তক নেওয়া সন্তান। তোমাদেরকে বোঝানো হয় যে, বাবা অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর
এসেছেন এবং তিনি সৃষ্টিচক্রের রহস্য বোঝাচ্ছেন। অন্য কেউ এটা বোঝাতে পারবে না। বাবা
বলছেন, দেহ সহ সকল দৈহিক ধর্মকে ভুলে কেবল আমাকে স্মরণ করো। সতোপ্রধান তো অবশ্যই হতে
হবে। তোমরা এটাও জানো যে পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। নুতন দুনিয়াতে খুব কম
জন থাকবে। কোথায় এত কোটি আত্মা আর কোথায় নয় লক্ষ। বাকি এতজন কোথায় যাবে? তোমাদের
বুদ্ধিতে রয়েছে যে, আমরা আত্মারা সবাই ওপরে ছিলাম। তারপর এখানে এসেছি পার্ট প্লে
করতে। আত্মাকেই অ্যাক্টর বলা হবে। আত্মা অ্যাক্ট করে এই শরীরের দ্বরা। আত্মার তো
অরগ্যান্সের (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের) প্রয়োজন তাই না । আত্মা কতো ছোট্। ৮৪ লক্ষ জন্ম হয়
না। প্রত্যেকে যদি ৮৪ লক্ষ জন্ম নেয়, তবে পার্ট রিপিট করবে কিভাবে? কিছুই তো মনে
থাকবে না। স্মৃতির বাইরে চলে যাবে। ৮৪ টা জন্মই তোমরা মনে রাখতে পারো না, ভুলে যাও।
বাচ্চারা, এখন বাবাকে স্মরণ করে তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। এই যোগ অগ্নির
দ্বারা-ই বিকর্মের বিনাশ হবে। এটাও নিশ্চিত যে, আমরা প্রতি কল্পেই অসীম জগতের বাবার
কাছ থেকে অসীম জাগতিক উত্তরাধিকার নিয়ে থাকি। এখন পুনরায় স্বর্গবাসী হওয়ার জন্য বাবা
বলছেন - কেবল আমাকেই স্মরণ করো। কারণ আমিই হলাম পতিত-পাবন। তোমরাই তো বাবাকে
ব্যাকুল হয়ে ডেকেছিলে। তাই বাবা এখন পবিত্র বানানোর জন্য এসেছেন। দেবতারা পবিত্র হয়
আর মানুষ পতিত হয়। পবিত্র হওয়ার পরে শান্তিধামে যেতে হবে। তোমরা শান্তিধামে যেতে
চাও, নাকি সুখধামে আসতে চাও? সন্ন্যাসীরা তো বলে যে, সুখ আসলে কাক-বিষ্ঠার সমান,
আমরা শান্তি পেতে চাই। তারা কখনো সত্যযুগে আসবে না। সত্যযুগে তো প্রবৃত্তি মার্গের
ধর্ম থাকবে। দেবতারা নির্বিকারী ছিল। তারাই পুনর্জন্ম নিতে নিতে পতিত হয়ে গেছে। এখন
বাবা বলছেন নির্বিকারী হতে হবে। যদি স্বর্গে যেতে চাও, তাহলে আমাকে স্মরণ করলে
তোমাদের পাপ নাশ হয়ে তোমরা পুণ্য আত্মা হয়ে যাবে এবং তারপর শান্তিধামে ও সুখধামে চলে
যাবে। ওখানে শান্তিও ছিল, সুখও ছিল। এখন এটা হলো দুঃখধাম। এখন বাবা এসে সুখধাম
স্থাপন করে দুঃখধামের বিনাশ করছেন। চিত্র তো সামনেই রয়েছে। ওদেরকে জিজ্ঞেস করো যে,
আপনারা এখন কোথায় রয়েছেন ? এটা হলো কলিযুগের অন্তিম সময়। বিনাশ অতি নিকটে। খুব ছোট
টুকরো অবশিষ্ট থাকবে। ওখানে তো এত বড় ভূখন্ড থাকবে না। বাবা-ই বসে থেকে এইসব
ওয়ার্ল্ডের হিস্ট্রি জিওগ্রাফি বোঝাচ্ছেন। এ হলো পাঠশালা। ভগবানুবাচ হলো - আগে
বাবার পরিচয় দিতে হয়। এখন কলিযুগ। এরপর সত্যযুগে যেতে হবে। ওখানে তো কেবল সুখ আর
সুখ থাকবে। কেবল একজনকে স্মরণ করলে সেটাকে অব্যাভিচারী স্মরণ বলা হয়। শরীরকেও ভুলে
যেতে হবে। শান্তিধাম থেকে এসেছি এবং শান্তিধামেই ফিরে যাব। ওখানে কোনো পতিত আত্মা
যেতে পারবে না। বাবাকে স্মরণ করতে করতে পবিত্র হয়ে তোমরা মুক্তিধামে চলে যাবে। এইসব
বিষয়গুলো ভালোভাবে বসে বোঝাতে হয়। আগে তো এত চিত্র ছিল না। ছবি ছাড়াই সংক্ষেপে
বোঝানো হত। এই পাঠশালাতে শিক্ষালাভ করে মানুষ থেকে দেবতা হতে হবে। এই জ্ঞান আসলে
নতুন দুনিয়ার জন্য। এই জ্ঞান তো স্বয়ং বাবা-ই দেবেন, তাই না? বাচ্চাদের ওপরে বাবার
দৃষ্টি থাকে। তিনি আমাদেরকে অর্থাৎ আত্মাদেরকে পড়ান। তোমরাও অন্যদেরকে বোঝাও যে,
অসীম জগতের বাবা আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, তাঁর নাম হলো শিববাবা। কেবল অসীম জগতের পিতা
বললেও সংশয় প্রকাশ করবে। কারণ এখন চারিদিকে অনেক বাবা হয়ে গেছে। মিউনিসিপ্যালিটির
মেয়রকেও বাবা বলা হয় । বাবা বলছেন, আমি এনার (ব্রহ্মা) মধ্যেই আসি এবং আমার নাম হলো
শিব। আমি এই রথের দ্বারা-ই তোমাদেরকে জ্ঞান শোনাই। একে আমি দত্তক নিয়েছি এবং নাম
রেখেছি প্রজাপিতা ব্রহ্মা। ব্রহ্মাও আমার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার পায়। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
এখন হলো পুরাতন দুনিয়ার থেকে নুতন দুনিয়াতে জাম্প (লাফ) দেওয়ার সময়। তাই এই পুরাতন
দুনিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করতে হবে। একে বুদ্ধির দ্বারা ভুলতে হবে।
২ ) পড়াশুনার প্রতি
সম্পূর্ণ অ্যাটেনশন দিতে হবে। স্কুলে চোখ বন্ধ করে বসে থাকার নিয়ম নেই। খেয়াল রাখতে
হবে যাতে পড়ার সময়ে বুদ্ধি এদিকে ওদিকে ধাবিত না হয় এবং হাই না ওঠে। শোনার সঙ্গে
সঙ্গেই যেন সেটা ধারণ হয়ে যায়।
বরদান:-
আত্মিক
নেশার দ্বারা পুরানো দুনিয়াকে ভুলে গিয়ে স্বরাজ্য তথা বিশ্ব রাজ্য অধিকারী ভব
সঙ্গম যুগে যারা
বাবার উত্তরাধিকারের অধিকারী আছে তারাই স্বরাজ্য আর বিশ্ব রাজ্যের অধিকারী হয়। আজ
স্বরাজ্য আছে কাল বিশ্বের রাজ্য হবে। আজ-কালের কথা, এইরকম অধিকারী আত্মারা আত্মিক
নেশাতে থাকে আর নেশা পুরানো দুনিয়াকে সহজেই ভুলিয়ে দেয়। অধিকারী কখনও কোনও বস্তুর,
ব্যক্তির, সংস্কারের অধীন হতে পারে না। তাদেরকে লৌকিক কথা ছাড়তে হয় না, স্বতঃই
ত্যাগ হয়ে যায়।
স্লোগান:-
প্রতিটি
সেকেন্ড, প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি খাজানাকে সফলকারীই সফলতামূর্তি হয়ে ওঠে ।