06.01.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমাদের এক একটি বাণী অত্যন্ত মিষ্টি, ফার্স্টক্লাস হওয়া উচিত, যেমন বাবা
দুঃখহরণকারী, সুখ প্রদানকারী, তেমনি বাবা সম সকলকে সুখ প্রদান করো"
প্রশ্নঃ -
লৌকিক আত্মীয়
পরিজনদের জ্ঞান প্রদান করার যুক্তি কি?
উত্তরঃ
মিত্র-সম্বন্ধীয় ইত্যাদি সকলের সাথেই নম্রভাবে, প্রেমপূর্বক, প্রফুল্লিত হয়ে কথা
বলা উচিত। তাদের বোঝানো উচিত যে, এ হলো সেই মহাভারতের যুদ্ধ। বাবা রুদ্র জ্ঞান-যজ্ঞ
রচনা করেছেন। আমি তোমাদের সত্য বলছি যে, ভক্তি ইত্যাদি তো জন্ম-জন্মান্তর করেছ, এখন
জ্ঞান শুরু হচ্ছে। যখনই সুযোগ পাবে তখনই অত্যন্ত যুক্তিযুক্তভাবে কথা বলো।
আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ ব্যবহার রেখে চলো। কখনও কাউকে দুঃখ দিও
না।
গীতঃ-
অবশেষে সেই
দিন এসেছে আজ......
ওম্ শান্তি ।
যখন কোনো
সংগীত বাজে, তখন বাচ্চাদের নিজেদের অন্তর থেকে এর অর্থাৎ গানের অর্থ বেরিয়ে আসা
উচিত। সেকেন্ডে এর অর্থ বের হতে পারে। এ হলো অসীম জগতের ড্রামার অত্যন্ত বড় ঘড়ি,
তাই না। ভক্তিমার্গে মানুষ ডাকতেই থাকে। যেমন কোর্টে যখন কেস করা হয় তখন বলা হয়
যে, কবে শুনানি হবে? কবে ডাক পড়বে? তখন আমাদের কেস সমাপ্ত হবে। তেমনই বাচ্চাদেরও
কেস হয়, কি কেস? রাবণ তোমাদের অত্যন্ত দুঃখিত করে। তোমাদের কেস পেশ করা হয় বড়
কোর্টএ। মানুষ ডাকতে থাকে - বাবা এসো, এসে আমাদের দুঃখ থেকে মুক্ত করো। একদিন
রায়(শুনানি) তো অবশ্যই বেরোবে। বাবা শোনেও, ড্রামা অনুসারে আসেও সম্পূর্ণ সঠিক সময়ে।
এর মধ্যে এক সেকেন্ডেরও পার্থক্য হতে পারেনা। অসীম জগতের ঘড়ি কত সঠিকভাবে চলে।
এখানে তোমাদের এই ছোট ঘড়িও সঠিকভাবে চলে না। যজ্ঞের প্রতিটি কার্য অ্যাকুরেট হওয়া
উচিত। ঘড়িও অ্যাকুরেট হওয়া উচিত। বাবা অত্যন্ত অ্যাকুরেট। রায়ও অত্যন্ত অ্যাকুরেট
হয়। প্রতি কল্পে, কল্পের সঙ্গমযুগে সঠিক সময়ে তিনি আসেন। এখন বাচ্চাদের শুনানি
হচ্ছে, বাবা এসেছেন। এখন তোমরা সকলকে বোঝাচ্ছ। পূর্বে তোমরাও জানতে না যে, দুঃখ কে
দেয়? এখন বাবা বুঝিয়েছেন যে, রাবণ রাজ্য শুরু হয় দ্বাপর থেকে। বাচ্চারা, তোমরা
জানতে পেরেছো যে - বাবা প্রতি কল্পের সঙ্গমযুগে আসেন। এ হলো অসীম জগতের রাত্রি।
শিববাবা অসীম জগতের রাত্রিকালে আসেন, এখানে কৃষ্ণের কথা নয়, যখন গভীর অন্ধকারের
অজ্ঞানতার নিদ্রায় (সকলে) শায়িত থাকে তখন জ্ঞান-সূর্য পিতা-রূপে আসেন, বাচ্চাদেরকে
দিনের আলোয় নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, আমাকে স্মরণ করো কারণ (তোমাদের) পতিত থেকে
পবিত্র হতে হবে। বাবা-ই হলেন পতিত-পাবন। যখন তিনি আসবেন তখনই তো শুনানি হবে। এখন
তোমাদের শুনানি হয়েছে। বাবা বলেন, আমি এসেছি পতিতদের পবিত্র করতে। তোমাদেরকে পবিত্র
হওয়ার কত সহজ উপায় বলে দিই। আজকাল দেখো সায়েন্সের কত শক্তি, অ্যাটোমিক বোমার
মাধ্যমে কত জোরালো আওয়াজ হয়। বাচ্চারা তোমরা সাইলেন্সের শক্তি দ্বারা এই সাইন্সের
উপর বিজয় প্রাপ্ত করো। একে সাইলেন্সের যোগ বলা যেতে পারে। আত্মা বাবাকে স্মরণ করে
- বাবা, তুমি এসো, আমরা শান্তিধামে গিয়ে বসবাস করি। বাচ্চারা, তোমরা এই যোগবলের
দ্বারা, সাইলেন্সের শক্তির দ্বারা সাইন্সের উপর বিজয়লাভ কর। শান্তির শক্তি প্রাপ্ত
কর। সায়েন্সের দ্বারাই এই সবকিছু বিনাশ হয়ে যাবে। বাচ্চারা, তোমরা সাইলেন্সের
মাধ্যমে বিজয়লাভ কর। বাহুবলীরা কখনও বিশ্বের উপর বিজয়প্রাপ্ত করতে পারে না। এই
পয়েন্টস্ও তোমাদের প্রদর্শনীতে লেখা উচিত।
দিল্লীতে অনেক
সার্ভিস হতে পারে, কারণ দিল্লীই সমগ্র ভারতের রাজধানী। তোমাদের রাজধানীও দিল্লিতে
হবে। দিল্লীকেই পরিস্থান বলা হয়। পান্ডবদের কোনো কেল্লা থাকে না। কেল্লা তৈরি করা
হয় তখন, যখন শত্রু আক্রমণ করে। তোমাদের তো কোনো কেল্লার প্রয়োজনই নেই। তোমরা জানো
যে, আমরা সাইলেন্সের শক্তির দ্বারা নিজেদের রাজ্য স্থাপন করছি, ওদের হলো
আর্টিফিসিয়াল সাইলেন্স। তোমাদের হলো প্রকৃত সাইলেন্স। জ্ঞানের শক্তি, শান্তির শক্তি
বলা হয়। নলেজ হলো পঠন-পাঠন । পঠন-পাঠনের মাধ্যমেই শক্তি প্রাপ্ত হয়। যখন কেউ পুলিশ
সুপারিন্টেন্ডেন্ট হয়, তখন কত শক্তিশালী হয়। ওসব হলো পার্থিব বিষয়, যা দুঃখ প্রদান
করে। তোমাদের সমস্ত কথাই হলো আত্মা-সম্বন্ধীয় (রুহানী)। তোমাদের মুখ দ্বারা যে
বাণীই নির্গত হোক না কেন, তার একেকটি বাণী যেন সর্বোত্তম, মিষ্টি হয়, যাতে
শ্রবনকারী শুনে অত্যন্ত খুশি হয়ে যায়। বাচ্চারা, বাবা যেমন
দুঃখহরণকারী-সুখপ্রদানকারী, তেমন তোমাদেরকেও সকলকে সুখপ্রদান করতে হবে।
আত্মীয়-পরিজন, পরিবারেরও যেন দুঃখাদি না হয়। সকলের সাথে মর্যাদানুসারে (কায়দানুসার)
চলতে হবে। গুরুজনেদের সঙ্গে প্রেমপূর্বক চলতে হবে। যেন মুখ থেকে এমন মিষ্টি,
ফার্স্টক্লাস শব্দ নির্গত হয়, যাতে সকলেই আনন্দিত হয়ে যায়। তোমরা বলো যে - শিববাবা
বলেন "মন্মনাভব"। আমিই সর্বোচ্চ। আমাকে স্মরণ করলেই তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে।
অত্যন্ত স্নেহময়তার সঙ্গে কথা বলা উচিত। মনে করো, বড় ভ্রাতৃ-সম কেউ আছেন, তাকে বলো
দাদাভাই, শিববাবা বলেন - আমাকে স্মরণ করো। শিববাবা যাঁকে রুদ্রও বলা হয়, তিনিই
জ্ঞান-যজ্ঞ রচনা করেন। 'কৃষ্ণ জ্ঞান-যজ্ঞ' শব্দটি শোনা যায় না। যখন 'রুদ্র
জ্ঞান-যজ্ঞ' বলা হয়, তখন রুদ্র শিববাবাই এই যজ্ঞ রচনা করেছেন। রাজ্য প্রাপ্ত করার
জন্য তিনি জ্ঞান আর যোগ শেখাচ্ছেন। বাবা বলেন, ভগবানুবাচ - মামেকম্ স্মরণ কর কারণ
এখন সকলেরই অন্তিম-মুহূর্ত, বাণপ্রস্থ অবস্থা (বাণীর ঊর্ধ্বে)। এখন তোমাদের সকলকেই
ফিরে যেতে হবে। মৃত্যুর সময় মানুষকে বলা হয়, ঈশ্বরকে স্মরণ কর, তাই না! এখানে ঈশ্বর
স্বয়ং বলেন, মৃত্যু সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এর কবল থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। অন্তিম
সময়ে বাবা এসে বলেন, বাছা! আমাকে স্মরণ কর তবেই তোমাদের পাপ ভস্মীভূত হয়ে যাবে, একে
যোগাগ্নি বলা হয়। বাবা গ্যারান্টি করেন যে, এতে তোমাদের পাপ দগ্ধ হয়ে যাবে। বিকর্ম
বিনাশ হওয়ার, পবিত্র হওয়ার আর কোনো উপায় নেই। পাপের বোঝা মাথায় চড়তে-চড়তে, খাদ
পড়তে-পড়তে সোনা ৯ ক্যারেটের হয়ে গেছে। ৯ ক্যারেটের পর অতি নিম্নমানের হয়ে যায়। এখন
পুনরায় ২৪ ক্যারেটের কীভাবে হবে? আত্মা পবিত্র কীভাবে হবে? আত্মা পবিত্র হলে
অলঙ্কারও(শরীর) পবিত্র পাবে। আত্মীয়-পরিজনাদি কেউ থাকলে, তাদের সঙ্গে অত্যন্ত
নম্রভাবে, প্রেমপূর্বক, উৎফুল্ল হয়ে কথা বলা উচিত। তাদের বোঝান উচিত যে, এ হলো সেই
মহাভারতের যুদ্ধ। এ রুদ্র জ্ঞান-যজ্ঞও। বাবার কাছ থেকে আমরা এখন সৃষ্টির
আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান প্রাপ্ত করছি। এই জ্ঞান আর কোথাও পাওয়া যেতে পারে না। আমি
তোমাদের সত্য বলছি যে, এই ভক্তি ইত্যাদি তো জন্ম-জন্মান্তরের, এখন জ্ঞান শুরু হচ্ছে।
ভক্তি হলো রাত, জ্ঞান হলো দিন। সত্যযুগে ভক্তি থাকে না। এমন-এমন যুক্তি সহকারে কথা
বলা উচিত। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তীরবিদ্ধ করতে হবে, তাতে শুধু সময় আর সুযোগ দেখা হয়।
জ্ঞান প্রদানের জন্যও অত্যন্ত যুক্তি চাই। বাবা সকলের জন্যই যুক্তি তো অনেক বলে
থাকেন। পবিত্রতা বড় ভাল (গুণ), আমাদের এই লক্ষ্মী-নারায়ণ অত্যন্ত পূজনীয়, তাই না!
পূজ্য, পবিত্রই পরে পূজারী পতিত হয়ে যায়। পবিত্রের পূজা পতিত বসে করে - এ শোভা পায়
না। অনেকে তো অপবিত্রদের থেকে দূরে পালায়। বল্লভাচারী কখনো পাদ-স্পর্শ করতে দিতেন
না। মনে করতেন, এরা অপবিত্র মানুষ। মন্দিরেও একমাত্র ব্রাহ্মণদেরই মূর্তি স্পর্শ
করার অনুমতি রয়েছে। শূদ্র মানুষ ভিতরে গিয়ে স্পর্শ করতেও পারে না। ওখানে
ব্রাহ্মণেরাই তাদের (দেব-মূর্তি) স্নানাদি করায়, অন্য কাউকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়
না। পার্থক্য তো রয়েছে, তাই না। এখন তারা হলো গর্ভজাত ব্রাহ্মণ, আর তোমরা হলে
মুখ-বংশজাত সত্যিকারের ব্রাহ্মণ। তোমরা ওই ব্রাহ্মণদের ভালভাবে বোঝাতে পারো যে,
ব্রাহ্মণ দুই প্রকারের হয় - এক হয় প্রজাপিতা ব্রহ্মার মুখ-বংশজাত, দ্বিতীয় হলো
গর্ভজাত। মুখ-বংশজাত ব্রাহ্মণ হলো সর্বোচ্চ শিখা(টিকি)। (লৌকিকে) যজ্ঞ রচনা করতেও
ব্রাহ্মণদের নিয়োগ করা হয়। আর এ তো হলো জ্ঞান-যজ্ঞ। ব্রাহ্মণেরা জ্ঞান প্রাপ্ত করে,
যার দ্বারা পুনরায় দেবতা হয়। বর্ণের বিষয়েও বোঝানো হয়েছে। যারা সার্ভিসেবেল বাচ্চা,
তাদের সর্বদা সার্ভিসের শখ থাকবে। কোথাও প্রদর্শনী হলে তৎক্ষনাৎ সেবার উদ্দেশ্য ছুটে
যাবে - আমরা গিয়ে এই-এই পয়েন্টস্ বোঝাবো। প্রদর্শনী হলো প্রজা তৈরীর বিহঙ্গ-মার্গ,
নিজে থেকেই প্রচুর সংখ্যক চলে আসে। তাহলে যিনি বোঝাবেন তাকেও ভাল অর্থাৎ সঠিকভাবে
বোঝান উচিত। যদি কেউ সম্পূর্ণরূপে না বোঝাতে পারে তাহলে বলা হবে যে, বি.কে.-দের কাছে
মাত্র এতটুকু জ্ঞানই রয়েছে ! তখন ডিস-সার্ভিস হয়ে যায়। প্রদর্শনীতে এমন একজন
তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন (চোস্ত) যেন থাকে, যারা বোঝাচ্ছে তারা তাকে গাইডস্-রূপে দেখবে।
যদি কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি হন, তাকে বোঝানোর জন্যও তেমনই তীক্ষ্ণ বা ভাল কাউকে
দেওয়া উচিত। (জ্ঞান) বোঝাবার ক্ষমতা যাদের কম তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সুপারভাইজ করার জন্য একজনের উপযুক্ত হওয়া উচিত। তোমাদের মহাত্মাদেরও ডাকা উচিত।
তোমরা শুধু বলো যে, বাবা এভাবে বলেন - তিনিই সর্বোচ্চ, তিনিই রচয়িতা পিতা। বাকি সব
তারই রচনা। উত্তরাধিকার পিতার থেকেই পাওয়া যায়। ভাই ভাইকে কি উত্তরাধিকার দেবে!
কেউই সুখধামের উত্তরাধিকার(বর্সা) পেতে পারে না। বাবা-ই উত্তরাধিকার দেন। একমাত্র
পিতাই সকলকে সদ্গতি প্রদান করে থাকেন, ওঁনাকে স্মরণ করতে হবে। বাবা স্বয়ং এসে
গোল্ডেন এজ স্থাপন করেন। ব্রহ্মার দ্বারা স্বর্গ স্থাপন করেন। তারা শিব-জয়ন্তী
পালনও করে, কিন্তু তিনি(শিব) কি করেন, সেসবকিছু মানুষ ভুলে গেছে। শিববাবাই এসে
রাজযোগ শিখিয়ে উত্তরাধিকার দেন। ৫ হাজার বছর পূর্বে ভারত স্বর্গ ছিল, লক্ষ-লক্ষ
বছরের কোন কথাই নয়। তিথি-তারিখ সবই রয়েছে, একথা কেউ খন্ডন করতে পারে না। নতুন
দুনিয়া আর পুরনো দুনিয়া আধা-আধা চাই। ওরা সত্যযুগের আয়ু লক্ষ-লক্ষ বছর বলে দেয়,
তাহলে কোন হিসাবই হতে পারেনা। স্বস্তিকাতেও পুরোপুরি চার ভাগ রয়েছে। ১২৫০ বছর করে
প্রতিটি যুগকে বিভক্ত করা হয়েছে। হিসাবও তো করা হয়, তাই না। ওরা হিসাবের কিছুই
জানেনা, তাই তাদের কড়ি-তুল্য বলা হয়। বাবা এখন হীরে-তুল্য বানাচ্ছেন। সকলেই
অপবিত্র, ভগবানকে স্মরণ করে। তাদের ভগবান এসে জ্ঞানের দ্বারা ফুলে পরিণত করেন।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে জ্ঞান-রত্ন দ্বারা সুসজ্জিত করতে থাকেন। তখন দেখো, তোমরা কীসে
পরিনত হও, তোমাদের এইম অবজেক্ট কী? ভারত কত মহিমাসম্পন্ন ছিল, সব ভুলে গেছে।
মুসলমানরাও কত সোমনাথ মন্দিরাদি লুন্ঠন করে হীরে-জহরতাদি মসজিদে লাগিয়েছে। এখন
সেগুলোর মূল্যও কেউ নির্ধারণ করতে পারবে না। এত বড়-বড় মণী-মানিক্য রাজাদের মুকুটে
থাকতো। কোনোটি এক কোটি মূল্যের, কোনোটি ৫ কোটি মূল্যের। আজকাল সব ইমিটেশনের বেরিয়ে
গেছে। এই দুনিয়ায় সব হলো কৃত্রিম পাই-পয়সার (সামান্য) সুখ। বাকি সবই হলো দুঃখ, তাই
সন্ন্যাসীরা বলেন - সুখ হলো কাক-বিষ্ঠা সমান তাই তারা ঘর-পরিবার ত্যাগ করে, কিন্তু
এখন তারাও তমোপ্রধান হয়ে গেছে। তারাও শহরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এখন কাকে
শোনাবে, রাজা-রানী এখন তো আর নেই। কেউই এখন মানবে না। বলবে যে, সকলেরই নিজ-নিজ মত
রয়েছে, যা ইচ্ছা তাই করে। এই সৃষ্টি সঙ্কল্পের দ্বারা রচিত হয়েছে। বাচ্চারা, এখন
বাবা তোমাদের গুপ্ত রীতিতে পুরুষার্থ করান। তোমরা কত সুখ ভোগ কর। যখন পরে অন্যান্য
ধর্মও বৃদ্ধি পায় তখন লড়াই-ঝগড়াদি, মনোমালিন্য হতেই থাকে। তিন-চতুর্থাংশ সময় তোমরা
সুখে থাকো, তাই বাবা বলেন, তোমাদের দেবী-দেবতা ধর্ম অত্যন্ত সুখদায়ী।আমি তোমাদের
বিশ্বের মালিক বানাই। অন্যান্য ধর্ম-স্থাপকেরা কোন রাজ্য স্থাপন করে না। তারা সদ্গতি
প্রদানও করে না। তারা আসে শুধুমাত্র তাদের ধর্ম স্থাপন করতে। তাও তারাও যখন অন্তিম
সময়ে তমোপ্রধান হয়ে যায় তখন বাবাকে আসতে হয় সতোপ্রধান বানানোর জন্য।
তোমাদের কাছে শত-শত
কোটি মানুষ আসে কিন্তু কিছুই বোঝে না। তারা বাবাকে বলে যে, অমুকে অত্যন্ত সঠিকভাবে
বুঝিয়েছে, অত্যন্ত ভালভাবে। বাবা বলেন, কিছুই বোঝে না। যদি বুঝে যেতো যে, বাবা
এসেছেন, বিশ্বের মালিক বানাচ্ছেন, ব্যস্, সেইসময়েই নেশায় মত্ত হয়ে যাবে। আর তৎক্ষনাৎ
টিকিট নিয়ে তারা ছুটবে। কিন্তু ব্রাহ্মণীর চিঠি তো অবশ্যই আনতে হবে - বাবার সঙ্গে
মিলিত হওয়ার জন্য। বাবাকে চিনে গেলে, তখন মিলিত না হয়ে থাকতে পারবে না, একদম নেশায়
মত্ত হয়ে যাবে। যারা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে, তাদের অন্তরে অত্যন্ত খুশী থাকবে। তাদের
বুদ্ধি আত্মীয়-পরিজনেদের দিকে যাবে না। কিন্তু অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যায়। গৃহস্থ
ব্যবহারে থেকে কমলপুষ্প সমান পবিত্র হতে হবে আর বাবাকে স্মরণ করতে হবে। এ তো অতি
সহজ। যতখানি (সময়) পারো, বাবাকে স্মরণ করতে থাকো। যেমন অফিস থেকে ছুটি নাও, তেমনই
কাজ-কর্ম থেকে ছুটি পেয়ে এক-দুদিনের জন্য স্মরণের যাত্রায় বসে পড়ো। আচ্ছা,
প্রতিমুহূর্তে স্মরণে বসার জন্য সারাদিনই ব্রত রেখে নিই - বাবাকে স্মরণ করার। এতে
কত জমা হয়ে যাবে। বিকর্মও বিনাশ হবে। বাবাকে স্মরণ করার মাধ্যমেই সতোপ্রধান হতে হবে।
সারাদিন সম্পূর্ণরূপে কারোর-ই যোগ লাগতে পারে না। মায়া অবশ্যই বিঘ্ন ঘটাবে তথাপি
পুরুষার্থ করতে-করতে বিজয় প্রাপ্ত করে নেবে। ব্যস, আজ সারাদিন বাগিচায় বসে বাবাকে
স্মরণ করি। ব্যস্, ভোজনের সময়েও বসে স্মরণ করি। এতেই পরিশ্রম। অবশ্যই আমাদের পবিত্র
হতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে, অন্যদেরকেও পথ বলে দিতে হবে। ব্যাজ অত্যন্ত ভালো জিনিস।
রাস্তায় পরস্পরের মধ্যে বার্তালাপ করতে থাকলে, অনেকেই এসে শুনবে। বাবা বলেন, আমাকে
স্মরণ কর। ব্যস্, মেসেজ পেয়ে গেছে আর আমরা আমাদের দ্বায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে গেছি।
আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা বসে তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
কাজ-কর্মাদি থেকে ছুটি পেলে তখন স্মরণে থাকার ব্রত নিতে হবে। মায়ার উপর বিজয়লাভ
করার জন্য, স্মরণে থাকার পরিশ্রম করতে হবে।
২ ) অত্যন্ত নম্রভাবে
আর প্রেমপূর্বক প্রফুল্লিত হয়ে আত্মীয়-পরিজনদের সেবা করতে হবে। কিন্তু বুদ্ধি যেন
তাদের দিকে বিচরণ না করে। প্রেমপূর্বক বাবার পরিচয় দিতে হবে।
বরদান:-
চলতে-ফিরতে ফরিস্তা স্বরূপের সাক্ষাৎকার করানো সাক্ষাৎকার মূর্তি ভব
যেরকম শুরুতে
চলতে-ফিরতে ব্রহ্মা গুপ্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ দেখা যেত, এই সাক্ষাৎকারই সবকিছু ত্যাগ
করিয়ে দিয়েছে। এইরকম সাক্ষাৎকার দ্বারা এখনও সেবা করো। যখন সাক্ষাৎকারের দ্বারা
প্রাপ্তি হবে, তখন বাবার বাচ্চা না হয়ে থাকতে পারবে না এইজন্য চলতে-ফিরতে ফরিস্তা
স্বরূপের সাক্ষাৎকার করাও। ভাষণ করার জন্য অনেকে আছে কিন্তু তোমরা ভাসনা দাতা হও -
তখন সবাই বুঝবে যে এরা হল আল্লাহ্-র লোক।
স্লোগান:-
সদা
আত্মিক আনন্দের অনুভব করো তাহলে কখনও বিমর্ষ হবে না।
নিজের শক্তিশালী
মন্সার দ্বারা সকাশ দেওয়ার সেবা করো -
এখন নিজেদের হৃদয়ের
শুভভাবনা অন্য আত্মাদের কাছে পৌঁছে দাও। সাইলেন্সের শক্তিকে প্রত্যক্ষ করো।
প্রত্যেক ব্রাহ্মণ বাচ্চার মধ্যে এই সাইলেন্সের শক্তি আছে। কেবল এই শক্তিকে মন থেকে,
তন থেকে ইমার্জ করো। এক সেকেন্ডে মনের সংকল্পগুলিকে একাগ্র করে নাও তাহলে বায়ুমন্ডলে
সাইলেন্সের শক্তির প্রকম্পন স্বতঃ ছড়িয়ে পড়বে।