07.02.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমাদেরকে চলতে ফিরতে স্মরণ করার অভ্যাস করতে হবে। জ্ঞান আর যোগ এই দুটো মুখ্য
জিনিস রয়েছে, যোগ মানে হলো স্মরণ করা"
প্রশ্নঃ -
বুদ্ধিমান
বাচ্চারা কোন্ কথাটা কখনো মুখে উচ্চারণ করবে না?
উত্তরঃ
বুদ্ধিমান
বাচ্চারা কখনোই বলবে না যে, আমাকে যোগ শেখাও। বাবাকে স্মরণ করতে কি শিখতে হয়? এই
পাঠশালা তো পড়ার জন্য আর পড়ানোর জন্য। এমন নয় যে, স্মরণ করবার জন্য বিশেষ ভাবে বসতে
হবে। তোমাদেরকে কাজ করতে করতে স্মরণ করার অভ্যাস করতে হবে।
ওম্ শান্তি ।
এখন আত্মাদের
বাবা বসে আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন। বাচ্চারা জানে যে আত্মিক পিতা এই রথের
দ্বারা আমাদেরকে বোঝাচ্ছেন। যেহেতু আমরা তাঁর সন্তান তাই বাবাকে কিংবা কোনো ভাই অথবা
বোনকে যোগ শেখাতে বলা ঠিক নয়। তোমরা তো আর ছোটো বাচ্চা নয়। তোমরা জানো যে মুখ্য হলো
আত্মা, যেটা অবিনাশী। শরীর বিনাশী। সুতরাং আত্মার গুরুত্ব-ই অধিক। যখন মানুষ অজ্ঞান
অবস্থায় থাকে, তখন কারোর এই জ্ঞান থাকে না যে আমরা আসলে আত্মা, এই শরীরের দ্বারা কথা
বলি। দেহ অভিমানের বশীভূত হয়ে বলে যে আমি এটা করছি। তোমরা এখন দেহী অভিমানী হয়েছো।
তোমরা জানো যে আত্মা-ই বলছে - আমি এই শরীরের দ্বারা কথা বলি, কাজ করি। আত্মা হলো
পুরুষ। বাবা বলছেন - এই কথাটা প্রায়ই শোনা যায় যে আমাকে যোগ শেখাও। সামনে একজন বসে
থাকে। আমরাও বাবাকে স্মরণ করছি আর সামনে যে বসে আছে সেও বাবাকে স্মরণ করছে। কিন্তু
এই পাঠশালা তো এইসবের জন্য নয়। এই পাঠশালা কেবল পড়াশুনার জন্য। এমন নয় যে এখানে বসে
থেকেই তোমাদেরকে স্মরণ করতে হবে। বাবা তো বুঝিয়েছেন যে চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে বাবাকে
স্মরণ করো। এর জন্য বিশেষ ভাবে বসার কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন কেউ কেউ বলে রাম নাম জপ
করো। জপ না করে কি স্মরণ করা যায় না? স্মরণ তো চলতে ফিরতেই করা যায়। তোমাদেরকে তো
কর্ম করতে করতে বাবাকে স্মরণ করতে হবে। প্রেমিক-প্রেমিকা তো বিশেষ ভাবে বসে থেকে একে
অপরকে স্মরণ করে না। কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই করতে হবে। সবকিছু করতে করতে
নিজের প্রেমিককে স্মরণ করতে থাকো। এমন নয় যে তাঁকে স্মরণ করার জন্য কোনো স্থানে গিয়ে
বিশেষ ভাবে বসতে হবে।
তোমরা বাচ্চারা যখন
কোনো গান কিংবা কবিতা শোনাও তখন বাবা বলেন, এগুলো তো ভক্তি মার্গের । যখন মানুষ
শান্তি দেবা বলে থাকে তখন তো তারা পরমাত্মা-কেই স্মরণ করে, কৃষ্ণকে নয়। ড্রামা
অনুসারে আত্মা এখন অশান্ত হয়ে গেছে বলে বাবাকে স্মরণ করছে। কারন তিনিই হলেন সুখ,
শান্তি এবং জ্ঞানের সাগর। মুখ্য বিষয় হলো জ্ঞান আর যোগ। যোগ মানে স্মরণ করা। ওদের
হঠযোগ তো একেবারেই আলাদা। তোমাদের এই যোগ হলো রাজযোগ। কেবল বাবাকে স্মরণ করতে হবে।
বাবার দ্বারা তোমরা বাবাকে জেনে যাওয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তকেও জেনে গেছো।
তোমাদের খুশির সবথেকে বড় কারণ হলো স্বয়ং ভগবান তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন। আগে ভগবানের
সম্পূর্ণ পরিচয় জানতে হবে। এইরকম তো কখনোই জানতে না যে আত্মা যেমন তারার মতো,
সেইরকম ভগবানও একটা তারা, একটা আত্মা। কিন্তু তাঁকে পরম আত্মা বা সুপ্রীম সোল বলা
হয়। তিনি কখনো পুনর্জন্ম নেন না। এমন নয় যে তিনি জন্ম-মৃত্যুর চক্রের মধ্যে আসেন।
না, তিনি পুনর্জন্ম নেন না। তিনি নিজে এসে বোঝান যে আমি কিভাবে আসি? ত্রিমূর্তির
গায়ন তো ভারতেই প্রচলিত রয়েছে। ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্করের ছবিও দেখানো হয়।
বলা হয় শিব পরমাত্মায় নমঃ। কিন্তু সেই সর্বশ্রেষ্ঠ পিতাকেই ভুলে গেছে। কেবল এই
ত্রিমূর্তির ছবিটাই দেখিয়েছে। কিন্তু এনাদের ওপরে তো শিববাবার ছবি অবশ্যই থাকা উচিত
যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে এনাদের রচয়িতা স্বয়ং শিববাবা। রচনার কাছ থেকে তো
উত্তরাধিকার পাওয়া সম্ভব নয়। তোমরাও জানো যে ব্রহ্মার কাছ থেকে কোনো উত্তরাধিকার
পাওয়া যায় না। বিষ্ণুর ক্ষেত্রে হীরে মানিকের মুকুট দেখানো হয়। শিববাবার দ্বারা এখন
পুনরায় তুচ্ছ থেকে মূল্যবান হচ্ছো তোমরা । কিন্তু শিববাবার ছবি না রাখা হলে তো সব
কিছুই খন্ডন হয়ে যায়। পরমপিতা পরমাত্মা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। এরা সবাই তাঁর রচনা। এখন
তোমরা বাচ্চারা বাবার কাছ থেকে ২১ জন্মের উত্তরাধিকার পাচ্ছো। হয়তো ওখানে তোমরা
জানবে যে আমরা লৌকিক বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার পাচ্ছি। ওখানে তোমরা জানবে না যে
এইসব আসলে অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার। এইসময়েই তোমরা এটা জানো।
এখন তোমরা যা উপার্জন করো, সেটাই ২১ জন্ম ধরে চলে। ওখানে তো এইসব জানবে না। এই
জ্ঞানের কথাগুলো ওখানে মনে থাকবে না। এই জ্ঞান দেবতাদের মধ্যেও থাকে না, শূদ্রদের
মধ্যেও থাকে না। কেবল তোমাদের মতো ব্রাহ্মণদের মধ্যেই এই জ্ঞান থাকে। এটা হলো
আধ্যাত্মিক জ্ঞান। স্পিরিচুয়াল কথাটার অর্থও বোঝে না। ডক্টর অফ ফিলোসফি বলে থাকে।
ডক্টর অফ স্পিরিচুয়াল নলেজ তো কেবল বাবা। বাবাকে সার্জেনও বলা হয়। সন্নাসীদেরকে তো
সার্জেন বলা যাবে না। যারা বেদ-শাস্ত্র ইত্যাদি অধ্যয়ন করে তাদেরকেও ডক্টর বলা যাবে
না। ওরা হয়তো এইরকম টাইটেল দিয়ে দেয়, কিন্তু বাস্তবে বাবা-ই হলেন একমাত্র আত্মিক
সার্জেন যিনি আত্মাদেরকে ইনজেকশন দেন। ওটা হলো ভক্তিমার্গ। ওদেরকে বলতে হবে যে এই
ডক্টর অফ ভক্তি বা শাস্ত্রের জ্ঞানের দ্বারা কোনো লাভ নেই। কেবলই অধঃপতন হবে। তাই
ওদেরকে কিভাবে ডক্টর বলা যাবে? ডাক্তারের দ্বারা তো মানুষ উপকৃত হয়। এই বাবা হলেন
অবিনাশী সার্জেন। যোগবলের দ্বারা তোমরা এভার হেলদী হয়ে যাও। এইসব কথা কেবল তোমরা
বাচ্চারাই জানো। দুনিয়ার মানুষ তো কিছুই জানে না। ওনাকেই অবিনাশী সার্জেন বলা হয়।
আত্মাদের মধ্যে যত বিকারের খাদ জমেছে সেগুলো পরিষ্কার করে পতিতদেরকে পবিত্র বানানোর
শক্তি তো বাবার মধ্যেই রয়েছে। কেবল বাবা-ই হলেন সর্বশক্তিমান পতিত-পাবন। কোনো
মানুষকে সর্বশক্তিমান বলা যাবে না। বাবা কোন্ শক্তির পরিচয় দেন? সবাইকে নিজের
শক্তির দ্বারা সদগতি দিয়ে দেন। তাঁকেই ডক্টর অফ স্পিরিচুয়াল নলেজ বলা যাবে। অনেক
মানুষই ডক্টর অফ ফিলোসফি হয়। কিন্তু স্পিরিচুয়াল ডক্টর কেবল একজনই। বাবা এখন বলছেন
- নিজেকে আত্মা অনুভব করে কেবল আমাকে অর্থাৎ নিজ পিতাকে স্মরণ করলেই তোমরা পবিত্র
হয়ে যাবে। আমি তো পবিত্র দুনিয়া বানানোর জন্যই এসেছি। এরপরেও তোমরা কেন পতিত হচ্ছো?
পবিত্র হও, পতিত হয়েও না। সকল আত্মাদের প্রতি বাবার নির্দেশ হলো - ঘর গৃহস্থে থেকেও
কমল পুষ্পের মতো পবিত্র হও। বাল ব্রহ্মচারী হলেই পবিত্র দুনিয়ার মালিক হয়ে যাবে।
এতগুলো জন্ম ধরে যত পাপ করেছো, এখন আমাকে স্মরণ করলে সেগুলো সব ভস্ম হয়ে যাবে।
মূলবতনে তো পবিত্র আত্মারা থাকে। সেখানে কোনো পতিত আত্মা যেতে পারবে না। এটা তো
অবশ্যই বুদ্ধিতে রাখতে হবে যে স্বয়ং পিতা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন। স্টুডেন্ট কি
কখনো এইরকম বলবে যে আমাকে শেখাও কিভাবে টিচারকে স্মরণ করতে হয়। স্মরণ করা শেখানোর
কি কোনো প্রয়োজন আছে? এখানে (টিচারের আসনে) যদি কেউ নাও বসে, তাহলেও কোনো সমস্যা
নেই। কেবল নিজের পিতাকে স্মরণ করতে হবে। তোমরা সারাদিন কাজকর্মের মধ্যে থাকো বলে
ভুলে যাও। তাই এখানে এইভাবে বসানো হয়। এইভাবে অন্তত ১০-১৫ মিনিট হলেও স্মরণ করো।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে তো কাজকর্ম করতে করতে স্মরণে থাকার অভ্যাস করতে হবে। অর্ধেক
কল্প পরে প্রিয়তমকে পেয়েছো তোমরা। তিনি এখন বলছেন - আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের (আত্মার)
মধ্যে থেকে খাদ বেরিয়ে যাবে এবং তোমরা বিশ্বের মালিক হয়ে যাবে। তাহো কেন তোমরা
স্মরণ করবে না? বিয়ে করার সময়ে স্ত্রীকে শেখানো হয় পতিই তোমার ঈশ্বর, গুরু সবকিছু।
কিন্তু তারপরেও তো সে তার আত্মীয়, বন্ধু, গুরু ইত্যাদি অনেক জনকেই স্মরণ করে। সে'সব
হলো দেহধারীকে স্মরণ করা। ইনি হলেন সকল পতির পতি। ওনাকেই স্মরণ করতে হবে। অনেকে বলে
- আমাকে যোগ শেখাও। কিন্তু তাতে কি হবে? এখানে যদি কেউ ১০ মিনিটও বসে, তাহলেও মনে
করো না যে সে একরস অবস্থায় বসে আছে। ভক্তিমার্গেও যখন কারোর পূজা করে, তখন বুদ্ধি
খুব বিচলিত থাকে। যারা নবধা (নৌধা, প্রগাঢ় ভক্তি) করে, তাদের কেবল দর্শন পাওয়ার
ইচ্ছা থাকে। তারা ওই আশাতেই বসে থাকে। যখন কেবল একজনের ভালোবাসাতেই লীন হয়ে যায়
তখনই দর্শন পায়। সে হলো নবধা ভক্তি। সেই ভক্তি অনেকটা প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের
মতো। খাওয়া দাওয়া করতে করতেও বুদ্ধিতে স্মরণ থাকে। তাদের মধ্যে বিকারের ভাবনা থাকে
না। ওরা শরীরটাকে ভালোবেসে ফেলে। একে অপরকে না দেখে থাকতেই পারে না।
বাচ্চারা, বাবা এখন
তোমাদেরকে বোঝাচ্ছেন - আমাকে স্মরণ করলে তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হয়ে যাবে। কিভাবে
তোমরা ৮৪ বার জন্মগ্রহণ করেছো। বীজকে স্মরণ করলেই গোটা বৃক্ষ স্মরণে চলে আসে। এটা
হলো বিভিন্ন ধর্মের বৃক্ষ। কেবল তোমাদের বুদ্ধিতেই রয়েছে যে ভারত আগে গোল্ডেন এজেড
ছিল। এখন আয়রন এজেড হয়ে গেছে। এই ইংরেজি শব্দ গুলো যথাযথ। এগুলোর দ্বারা খুব ভালো
অর্থ প্রকাশিত হয়। আত্মা প্রথমে সত্যিকারের সোনা থাকে। পরে তার মধ্যে খাদ জমা হতে
থাকে। এখন একেবারে নকল হয়ে গেছে। এটাকেই বলা হয় আয়রন এজেড। আত্মা আয়রন এজেড হয়ে
যাওয়ার ফলে গয়নাগুলোও (শরীর) সেইরকম হয়ে গেছে। এখন বাবা বলছেন, আমি হলাম পতিত-পাবন,
একমাত্র আমাকেই স্মরণ করো। হে পতিত-পাবন, তুমি এসো - এইভাবে তোমরা আমাকে ডেকে এসেছ।
প্রতি কল্পেই আমি এসে তোমাদেরকে পবিত্র হওয়ার যুক্তি বলে দিই। মন্মনা ভব এবং মধ্যাজী
ভব। অর্থাৎ স্বর্গের মালিক হও। কেউ কেউ বলে আমার কেবল যোগ করতে ভালো লাগে, জ্ঞান
শুনতে অতটা ভালো লাগে না। ওরা যোগ করার পর পালিয়ে যাবে। ওরা বলে - আমার যোগ করতেই
ভালো লাগে, আমি কেবল শান্তি চাই। বাবাকে তো যেখানে খুশি বসেই স্মরণ করা যায়। স্মরণ
করতে করতে তোমরা শান্তিধামে চলে যাবে। এর মধ্যে যোগ শেখানোর কোনো ব্যাপার নেই। কেবল
বাবাকে স্মরণ করতে হবে। এমন অনেকেই আছে যারা সেন্টারে গিয়ে আধ ঘন্টা - পঁয়তাল্লিশ
মিনিট বসে থাকে আর বলে আমাকে যোগ শেখাও অথবা বলবে - বাবা আমাকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে
বলেছেন। কিন্তু বাবা এখানে চলতে ফিরতে স্মরণ করার শিক্ষা দেন। তবে একেবারে না করার
থেকে বসে বসে যোগ করা উত্তম। ইচ্ছে হলে সারা রাত বসে থাকো। বাবা বারণ করছেন না।
কিন্তু এইরকম অভ্যাস করা ঠিক নয় যে কেবল রাত্রিতেই আমি স্মরণ করবো। কাজকর্ম করতে
করতে স্মরণ করার অভ্যাস করতে হবে। কিন্তু এটা খুবই কঠিন কাজ। প্রতি মুহূর্তে বুদ্ধি
অন্যদিকে চলে যায়। ভক্তিমার্গেও বুদ্ধি অন্যদিকে চলে যায়। তখন নিজেকেই চিমটি কাটে,
যারা সত্যিকারের ভক্ত তাদের কথা আলোচনা করে। এখানেও নিজের সাথে কথা বলতে হবে। বাবাকে
কেন স্মরণ করিনি? স্মরণ না করলে বিশ্বের মালিক হব কিভাবে? দুনিয়ার
প্রেমিক-প্রেমিকারা তো একে অন্যের নাম-রূপে ফেঁসে যায়। এখানে তোমরা নিজেকে আত্মা
অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করো। আমরা আত্মারা তো এই শরীরটা থেকে একেবারে আলাদা। শরীর
ধারণ করার জন্য কর্ম করতে হয়। আবার এমনও অনেকে আছে যারা বলে আমি দর্শন করতে চাই।
কিন্তু কিসের দর্শন করবে? উনি তো একটা বিন্দুর মতো। অনেকে আবার বলে আমি কৃষ্ণকে
দর্শন করব। কৃষ্ণের তো ছবিও রয়েছে। এখানে যেটা জড়, সেটাকেই চৈতন্য রূপে দেখবে।
কিন্তু তাতে লাভ কি? দর্শন করলে তো কোনো লাভ হয় না। বাবাকে স্মরণ করলেই তোমরা
আত্মারা পবিত্র হবে। নারায়ণকে দর্শন করলে মোটেও নারায়ণ হয়ে যাবে না। তোমরা জানো যে
আমাদের লক্ষ্য হলো লক্ষ্মী-নারায়ণ হওয়া। কিন্তু পড়াশুনা না করে তো ঐরকম হওয়া সম্ভব
নয়। পড়াশুনা করে হুঁশিয়ার হও, প্রজা তৈরি করো - তবেই লক্ষ্মী-নারায়ণ হতে পারবে।
পরিশ্রম করতে হবে। পাস উইথ ওনার হতে হবে যাতে ধর্মরাজের কাছে শাস্তি পেতে না হয়। এই
বিশেষ বাচ্চাও বাবার সাথে রয়েছেন। ইনিও বলছেন - তোমরা চাইলেই আগে এগিয়ে যেতে পারো।
বাবার ওপরে তো কত দায়িত্ব রয়েছে। সারাদিন কত বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হয়। আমি এত
সময় স্মরণ করতে পারিনা। খাওয়ার সময়ে একটু স্মরণ থাকে, কিন্তু পরে আবার ভুলে যাই। আমি
বুঝতে পারি যে আমি আর একসাথে ঘুরছি। কিন্তু চলতে ফিরতে সেই বাবাকেই ভুলে যাই। খুবই
পিচ্ছিল বিষয়। প্রতি মুহূর্তেই স্মরণ করতে ভুলে যায়। এক্ষেত্রে খুব পরিশ্রম করতে হয়।
স্মরণের দ্বারা-ই আত্মা পবিত্র হবে। অনেককে শিক্ষা দিলে ভালো পদ পাবে। যে ভালো ভাবে
বুঝেছে, সে ভালো পদও পাবে। প্রদর্শনীতে অনেক প্রজা তৈরি হয়। তোমরা প্রত্যেকে
লক্ষ-লক্ষ জনের সেবা করবে। নিজের অবস্থাকে সেইরকম বানাতে হবে। কর্মাতীত অবস্থা হয়ে
গেলে এই শরীরটা আর থাকবে না। ভবিষ্যতে তোমরা বুঝতে পারবে যে এবার ভয়ঙ্কর যুদ্ধ লাগবে
এবং অনেকে তোমাদের কাছে আসবে। মহিমা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অন্তিমে সন্ন্যাসীরাও আসবে,
বাবাকে স্মরণ করতে শুরু করবে। ওদের কেবল মুক্তিধামে যাওয়ার ভূমিকা রয়েছে। তাই জ্ঞান
ধারণ করবে না। তোমাদের বার্তা এখন সকল আত্মাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। খবরের কাগজের
দ্বারাও অনেকে শুনবে। কত গ্রাম রয়েছে, সবাইকে বার্তা শোনাতে হবে। তোমরাই হলে
মেসেঞ্জার বা দূত। বাবা ছাড়া তো পতিত থেকে পবিত্র বানানোর জন্য অন্য কেউ নেই। এমন
নয় যে ধর্ম স্থাপকেরা কাউকে পবিত্র বানিয়ে দেয়। ওদের ধর্ম তো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে
থাকে। ওরা কিভাবে কাউকে ফেরত যাওয়ার রাস্তা বলবে? সকলের সদগতি দাতা তো একজনই।
বাচ্চারা, তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। অনেকেই আছে যারা পবিত্র থাকে না। কাম
বিকার হলো মুখ্য। অনেক ভালো ভালো বাচ্চাও পড়ে যায়। কুদৃষ্টিও এই কাম বিকারেরই অংশ,
এটাও একটা বড় শয়তান। বাবা বলছেন - এর ওপরে জয়লাভ করলেই জগৎজিৎ হতে পারবে। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্নেহ-সুমন স্মরণ-ভালবাসা আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তার আত্মা রূপী বাই জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
কাজকর্ম করতে করতে স্মরণে থাকার অভ্যাস করতে হবে। বাবার সাথে যাওয়ার জন্য কিংবা
নতুন পবিত্র দুনিয়ায় মালিক হওয়ার জন্য অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।
২ ) ভালো পদ পাওয়ার
জন্য অনেকের সেবা করতে হবে। অনেককে পড়াতে হবে। ম্যাসেঞ্জার হয়ে সকলের কাছে এই
ম্যাসেজ পৌঁছে দিতে হবে।
বরদান:-
স্নেহময় কোলে বসে আন্তরিক সুখ বা সর্বশক্তির অনুভবকারী যথার্থ পুরুষার্থী ভব
যে যথার্থ পুরুষার্থী
তারা কখনও পরিশ্রম বা ক্লান্তির অনুভব করে না, সদা প্রেমে মত্ত থাকে। তারা সংকল্পেও
স্যারেন্ডার হওয়ার কারণে অনুভব করে যে আমাকে বাপদাদা পরিচালনা করছেন।পরিশ্রমের পা
দিয়ে নয়, স্নেহময় কোলে বসিয়ে পরিচালনা করছেন। স্নেহময় কোলে সর্বপ্রাপ্তির অনুভূতি
হওয়ার কারণে তারা কেবল চালিত হয় না, কিন্তু সদা খুশীতে, আন্তরিক সুখে, সর্বশক্তির
অনুভবে উড়তে থাকে।
স্লোগান:-
নিশ্চয়রূপী ফাউন্ডেশন পাক্কা থাকলে শ্রেষ্ঠ জীবনের অনুভব স্বতঃ হয়।
অব্যক্ত ঈশারা :-
একান্তপ্রিয় হও, একতা আর একাগ্রতাকে ধারণ করো
‘অনেকের মধ্যে একতা’
তো প্র্যাক্টিক্যালে অনেক দেশ, অনেক ভাষা, অনেক রূপ-রঙ কিন্তু অনেকেরও মধ্যে থেকেও
সকলের হৃদয়ে একতা রয়েছে তাই না! কেননা হৃদয়ে এক বাবা আছেন। এক শ্রীমত অনুসারে চলছো।
অনেক ভাষার মধ্যে থেকেও মনের গীত, মনের ভাষা হলো এক।