07.03.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা - এ
হলো অনাদি অবিনাশী পূর্ব-নির্মিত ড্রামা, এতে যে সীন পাস হয়ে গেছে, তা পুনরায় পরের
কল্পে রিপিট হবে, সেইজন্য সদাই নিশ্চিন্ত থাকো"
প্রশ্নঃ -
এই দুনিয়া যে
তার তমোপ্রধান অবস্থায় পৌঁছে গেছে, তার চিহ্ন গুলি কী?
উত্তরঃ
দিন দিন
উপদ্রব হতেই থাকে, কতো কতো বিশৃঙ্খলা হয়েই চলেছে। চোর কীভাবে মারপিট করে সব লুটে
নিয়ে যায়। অসময়ে বৃষ্টিপাত হতে থাকে। ফলে কত ক্ষতি হয়ে যায়। এ সবই হলো
তমোপ্রধানতার চিহ্ন। তমোপ্রধান প্রকৃতি দুঃখ দিতেই থাকে। বাচ্চারা, তোমরা ড্রামার
রহস্যকে জানো, তাই তোমরা বলো যে, নাথিং-নিউ।
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা, এখন
তোমাদের উপর জ্ঞানের বর্ষণ হচ্ছে। তোমরা হলে সঙ্গমযুগী আর বাকি যেসকল মানুষ রয়েছে
তারা হলো কলিযুগী। এইসময় দুনিয়ায় অনেক মত-মতান্তর রয়েছে। বাচ্চারা, তোমাদের মত হলো
এক। যে অদ্বৈত-মত ভগবানের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। ওরা (অজ্ঞানীরা) ভক্তিমার্গে জপ-তপ,
তীর্থাদি যা কিছুই করে তাতে তারা মনে করে যে, এসবই হলো ভগবানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার
মার্গ। তারা বলে, ভক্তি করলেই ভগবানকে পাওয়া যাবে। কিন্তু তাদের জানা নেই যে, ভক্তি
কবে থেকে শুরু হয় এবং কতটা সময় পর্যন্ত চলে। তাই তারা বলে যে, ভক্তিতেই ভগবানকে
পাওয়া যাবে সেইজন্য অনেক প্রকারের ভক্তি করতে থাকে। স্বয়ং একথাও মনে করে যে, আমরা
পরম্পরাগত ভাবে ভক্তি করে আসছি। একদিন ভগবানকে অবশ্যই পাওয়া যাবে। কোন-না-কোন রূপে
ঈশ্বরকে পাওয়া যাবেই। তিনি কী করবেন? অবশ্যই সদ্গতি করবেন কারণ তিনিই তো হলেন
সদ্গতিদাতা। ভগবান কে, কবে আসবেন, তাও জানে না। যদিও বিভিন্নরকমের মহিমা কীর্তন করে,
বলে - ভগবান পতিত-পাবন, জ্ঞানের সাগর। জ্ঞানের দ্বারাই সদ্গতি হয়। একথাও জানে যে,
ভগবান নিরাকার। যেমন আমরা আত্মারাও নিরাকার, পরে শরীর ধারণ করি। আমরা অর্থাৎ
আত্মারাও বাবার সাথে পরমধামে নিবাস করি। আমরা এখানকার অধিবাসী নই। কোথাকার অধিবাসী,
সেকথাও যথার্থভাবে বলতে পারে না। কেউ কেউ তো মনে করে - আমরা স্বর্গে চলে যাবো। এখন
সরাসরি তো কেউই স্বর্গে যাবে না। কেউ আবার বলে যে, জ্যোতি মহাজ্যোতিতে বিলীন হয়ে
যাবে, এও ভুল। আত্মাকে বিনাশী করে দেয়। মোক্ষও কারোর হতে পারে না। যখন বলা হয়েছে,
পূর্ব-নির্ধারিত.... এই চক্র আবর্তিত হতেই থাকে। হিস্ট্রী-জিওগ্রাফী রিপিট হতেই থাকে।
কিন্তু চক্র কিভাবে আবর্তিত হয় সেকথা জানে না। না চক্রকে জানে, না ঈশ্বরকে জানে।
ভক্তিমার্গে কত উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ঈশ্বর কে? তা তোমরা জানো। ভগবানকে
ফাদারও বলা হয়, তাহলে বুদ্ধিতে তো আসা উচিত, তাই না! লৌকিক পিতাও তো রয়েছে, তথাপি
আমরা ওনাকে স্মরণ করি, তাহলে দু'জন পিতা হলো - লৌকিক ও পারলৌকিক। সেই পারলৌকিক
পিতার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এত ভক্তি করে। তিনি পরলোকে থাকেন। তা অবশ্যই নিরাকারী
দুনিয়া।
তোমরা ভালো মতোই জানো
যে, মানুষ যাকিছুই করে সেসবই হলো ভক্তিমার্গ। রাবণ-রাজ্যে সদা ভক্তিই হয়ে এসেছে।
জ্ঞান তো হতে পারে না। ভক্তির মাধ্যমে কখনো সদ্গতি হতে পারে না। সদ্গতিদাতা পিতাকে
স্মরণ করে তাহলে অবশ্যই তিনি কখনো এসে সদ্গতি করবেন। তোমরা জানো যে, এ হলো সম্পূর্ণ
তমোপ্রধান দুনিয়া। সতোপ্রধান ছিল এখন তমোপ্রধান, কত বিপর্যয় হতেই থাকে। অত্যন্ত
বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। চোরও লুন্ঠন করতে থাকে। কিভাবে না চোর মারপিট করে টাকা-পয়সা
লুঠ করে নিয়ে যায়। এমন-এমন ওষুধ আছে, যা শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। এ হলো রাবণ-রাজ্য।
এ হলো অতি বৃহৎ অসীম জগতের খেলা। এ রিপিট হতে ৫ হাজার বছর লাগে। খেলাও ড্রামার মতনই
হয়।নাটক বলা যাবে না। মনে করো, নাটকে কোনো অ্যাক্টর অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন অদল-বদল
করে নেয়। এমন কিছু তো এখানে হতে পারে না। এ তো অনাদি ড্রামা, তাই না! মনে করো, কেউ
অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন বলা হবে যে, এমন অসুস্থ হওয়ার পার্টও ড্রামাতে রয়েছে। এ (ড্রামা)
হলো অনাদি পূর্বনির্মিত। আর কাউকে তোমরা এই ড্রামা বললে তখন তারা বিভ্রান্ত হয়ে
যাবে। তোমরা জানো যে, এ হলো অসীম জগতের ড্রামা। কল্প পরবর্তীকালেও পুনরায় এই
অভিনেতারাই থাকবে। যেমন এখন বৃষ্টি ইত্যাদি পড়ে, কল্প পরবর্তীকালেও পুনরায় তেমনই
পড়বে। এমনই বিপর্যয় (উপদ্রব) হবে। বাচ্চারা, তোমরা জানো যে জ্ঞানের বৃষ্টি তো সকলের
উপর পড়তে পারে না কিন্তু তার শব্দ সকলের কান পর্যন্ত অবশ্যই যাবে যে, জ্ঞান সাগর
ভগবান এসেছেন। তোমাদের মুখ্য হলো যোগ। জ্ঞানও তোমরাই শোনো তাছাড়া বৃষ্টি তো সমগ্র
দুনিয়াতেই পড়ে। তোমাদের যোগের ফলে (বিশ্বে) স্থায়ী শান্তি স্থাপিত হয়ে যায়। তোমরা
সকলকে শোনাও যে, স্বর্গের স্থাপনা করতে ভগবান এসেছেন, কিন্তু এমনও অনেকে আছে যারা
নিজেদের ভগবান মনে করে, তোমাদের তাহলে কে আর মানবে তাই বাবা বোঝান যে, কোটির মধ্যে
কেউ বেরোবে। তোমাদের মধ্যেও নম্বরের ক্রমানুসারেই জানে যে, ঈশ্বর-পিতা এসেছেন।
বাবার থেকে তো উত্তরাধিকার চাই, তাই না। কীভাবে বাবাকে স্মরণ করবে সেটাও বুঝিয়েছেন।
নিজেকে আত্মা মনে করো। মানুষ তো দেহ-অভিমানী হয়ে গেছে। বাবা বলেন - আমি আসিই তখন,
যখন সমস্ত মনুষ্যাত্মারা অপবিত্র হয়ে যায়। তোমরা কত তমোপ্রধান হয়ে গেছো। এখন আমি
এসেছি তোমাদের সতোপ্রধান করতে। কল্প-পূর্বেও আমি তোমাদের এমনভাবে বুঝিয়েছিলাম। তোমরা
তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান কীভাবে হবে? শুধুমাত্র আমাকে স্মরণ করো। আমি এসেছি
তোমাদেরকে নিজের এবং রচনার পরিচয় দিতে। রাবণ-রাজ্যে সেই বাবাকে সকলেই স্মরণ করে।
আত্মা নিজের পিতাকে স্মরণ করে। বাবা হলেনই অশরীরী, বিন্দু, তাই না! পরে তাঁর নাম
রাখা হয়েছে। তোমাদের বলা হয় শালগ্রাম আর বাবাকে বলা হয় শিব। বাচ্চারা, তোমাদের
শরীরের নামকরণ হয়। বাবা তো হলেনই পরম আত্মা। ওঁনাকে শরীর ধারণ করতে হয় না। উনি
এনার মধ্যে প্রবেশ করেছেন। এ হলো ব্রহ্মার শরীর, এনাকে শিব বলা যাবে না। আত্মা নাম
তো তোমাদেরই, পরে তোমরা শরীরে আসো। তিনি পরম আত্মা সকল আত্মাদের পিতা। তাহলে সকলেরই
দুজন পিতা হয়ে গেল। এক নিরাকারী, এক সাকারী। এনাকে আবার অলৌকিক ওয়ান্ডারফুল বাবা বলা
হয়। কত অসংখ্য বাচ্চা। একথা মানুষেরা বুঝতে পারে না - প্রজাপিতা
ব্রহ্মাকুমার-কুমারীরা এত অসংখ্য, এ কী ব্যাপার! এ কেমনপ্রকারের ধর্ম। বুঝতে পারে
না। তোমরা জানো যে, এই কুমার-কুমারী শব্দটি প্রবৃত্তি মার্গের, তাই না! মা, বাবা,
কুমারী আর কুমার। ভক্তিমার্গে তোমরা স্মরণ করো যে, তুমি মাতা-পিতা... এখন তোমরা
মাতা-পিতা পেয়েছো, তোমাদের দত্তক নিয়েছেন। সত্যযুগে অ্যাডপ্ট করা হয় না। ওখানে
দত্তকের কোনো নামই নেই। এখানে তবুও নাম রয়েছে। তিনি হলেন পার্থিব জগতের পিতা, ইনি
হলেন অসীম জগতের পিতা। এ হলো অসীম জগতের অ্যাডপশন। এই রহস্য অতি গুপ্ত, বোঝার মতন
বিষয়। তোমরা সম্পূর্ণ নিয়মানুসারে কাউকে বোঝাও না। যখন প্রথম-প্রথম কেউ ভিতরে আসে,
আর বলে গুরুকে দর্শন করতে এসেছি তখন তোমরা বলো যে, এটা কোনো মন্দির নয়। বোর্ডে দেখো
কি লেখা আছে। ব্রহ্মাকুমার-কুমারীরা তো অগণিত। এরা সকলেই হলো প্রজাপিতা ব্রহ্মার
সন্তান। প্রজা তো তোমরাও। ভগবান সৃষ্টি রচনা করেন, ব্রহ্মার মুখ-কমল দ্বারা আমাদের
রচনা করেছেন। আমরা হলাম নতুন সৃষ্টির, তোমরা হলে পুরানো সৃষ্টির। নতুন সৃষ্টি
স্থাপিত হয় সঙ্গমযুগে। এ হলো পুরুষোত্তম হওয়ার যুগ। তোমরা সঙ্গমযুগে দাঁড়িয়ে রয়েছো,
ওরা কলিযুগে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেন পার্টিশন হয়ে গেছে। দেখো, আজকাল কত ভাগাভাগি হয়ে
গেছে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরা জানে যে, আমরা নিজেদের প্রজাদের রক্ষা করবো, নিজেদের
ধর্মকে, স্ব-গোত্রীয়দের (হামজিন্স) সুখে রাখবো তাই প্রত্যেকেই বলে - আমাদের রাজ্য
থেকে এসব জিনিস যেন বাইরে না যায়। পূর্বে সকল প্রজারাই রাজার আদেশ পালন করতো। রাজাকে
মা-বাবা, অন্নদাতা মনে করতো। এখন কোনো রাজা-রানী নেই। পৃথক-পৃথকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে।
কত বিপর্যয় হতে থাকে। হঠাৎ বন্যা এসে যায়, ভুমিকম্প হতে থাকে, এইসব হলো দুঃখজনক
মৃত্যু।
এখন তোমরা ব্রাহ্মণরা
জানো যে, আমরা হলাম পরস্পর ভাই-ভাই। তাই আমাদের একে অপরকে অত্যন্ত ভালোবেসে
ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকতে হবে। আমরা এক পিতার সন্তান, তাই পরস্পরের মধ্যে অত্যন্ত
ভালোবাসা থাকা উচিত। রাম-রাজ্যে 'বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়' অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে
পরস্পরের শত্রুও একত্রিত হয়ে থাকে। দেখো, এখানে তো ঘরে-ঘরে কত লড়াই-ঝগড়া। দেশে-দেশে
ঝগড়া, একে অপরকে আক্রমণ করে। অনেক মত-মতান্তর রয়েছে। এখন তোমরা জানো যে, আমরা বাবার
কাছ থেকে অনেকবার উত্তরাধিকার নিয়েছি এবং পুনরায় তা হারিয়েও ফেলেছি অর্থাৎ রাবণের
উপর বিজয়প্রাপ্ত করেছি ও পুনরায় হেরেওছি। অদ্বিতীয় পিতার শ্রীমতের দ্বারা আমরা
বিশ্বের মালিক হয়ে যাই, সেইজন্য ওঁনাকে সর্বোচ্চ ভগবান বলা হয়। সকলের দুঃখহরণকারী,
সুখ প্রদানকারী বলা হয়। এখন তোমাদের সুখের রাস্তা বলে দিচ্ছেন। বাচ্চারা, তোমাদের
এখন ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকা উচিত। দুনিয়ায় সকলেই হলো নুন-জল (পরস্পরের বিরোধী । পরস্পরকে
মারতে দেরী করে না। তোমাদের অর্থাৎ ঈশ্বরীয় সন্তানদের ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকা উচিত।
তোমরা হলে ঈশ্বরীয় সন্তান, দেবতাদের থেকেও উচ্চ। তোমরা কত বাবার সহযোগী হয়ে যাও। (আত্মাদের)
পুরুষোত্তম বানানোর ক্ষেত্রে সহযোগী, তাই হৃদয়ে(মনে) একথা আসা উচিত যে - আমরা
পুরুষোত্তম, আমাদের মধ্যে কি সেই দৈব-গুণ রয়েছে? যদি আসুরীয়-গুণ থাকে তাহলে তাকে
বাবার বাচ্চা তো বলা যাবে না, তাই বলা হয় 'সদ্গুরুর নিন্দাকারী ঠাঁই পেতে পারে না'।
কলিযুগীয় সেই গুরুরা আবার নিজেদের উদ্দেশ্যে একথা বলে মানুষকে ভীত করে দেয়। তাই বাবা
বোঝান - সুপুত্র তারাই, যারা বাবার নাম উজ্জ্বল করে, মিলেমিশে ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকে।
বাবা সর্বদা বলেন - ক্ষীরখন্ড হও । পরস্পর বিরোধী হয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই-ঝগড়া ক'রো
না। তোমাদের এখানেই ক্ষীরখন্ড হতে হবে। পরস্পরের মধ্যে অত্যন্ত প্রেম থাকা উচিত
কারণ তোমরা হলে ঈশ্বরীয় সন্তান, তাই না! ঈশ্বর সর্বাপেক্ষা সুন্দর তবেই তো সকলে
ওঁনাকে স্মরণ করে। তাই তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও অত্যন্ত প্রেম থাকা উচিত। তা নাহলে
বাবার সম্মান হানি করে দেবে। ঈশ্বরের সন্তান নুন-জল কী করে হতে পারে? তাহলে পদ
কীভাবে পাবে? বাবা বোঝান পরস্পর ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকো। পরস্পর-বিরোধী হলে কোনো ধারণাই
হবে না। যদি বাবার ডায়রেক্শন অনুযায়ী না চলো তাহলে পুনরায় উচ্চপদ কীভাবে প্রাপ্ত
করবে! দেহ-অভিমানে আসার কারণেই পুনরায় পরস্পর লড়াই করে। দেহী-অভিমানী হলে কোন
খিট-খিট হবে না। ঈশ্বর-পিতাকে পেয়েছো তাই পুনরায় দৈবী-গুণ ধারণ করতে হবে। আত্মাকে
তার পিতার অনুরূপ হতে হবে। যেমন বাবার মধ্যে পবিত্রতা, সুখ, প্রম ইত্যাদি সবকিছুই
রয়েছে, তোমাদেরকেও তেমনই হতে হবে। তা নাহলে উচ্চপদ প্রাপ্ত করতে পারবে না। পড়াশোনা
করে বাবার থেকে উচ্চ উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করতে হবে, যারা অনেকের কল্যাণ করে তারাই
রাজা-রানী হতে পারে। বাকিরা গিয়ে দাস-দাসী হবে। বুঝতে তো পারে, তাই না যে - কে কে
কী হবে (পদপ্রাপ্ত করবে)? যারা পড়ে তারা নিজেরাও বুঝতে পারে যে - এই হিসেবে আমরা
বাবার নাম-কে কীভাবে গৌরবান্বিত করতে পারি। তোমরা হলে ঈশ্বরের সন্তান, তাহলে তো
সর্বাপেক্ষা সুন্দর হওয়া উচিত, যাতে যেকেউ দেখে যেন খুশি হয়ে যায়। তখন বাবাও তাদের
মিষ্টি লাগবে। প্রথমে নিজের ঘরকে ঠিক করো। প্রথমে ঘরকে তারপর অপরকে ঠিক করো।
গৃহস্থ-জীবনে কমলফুল-সম পবিত্র এবং মিলেমিশে ক্ষীরখন্ড হয়ে থাকো। কেউ দেখলে যেন বলে
- আহা! এখানেই তো স্বর্গ। অজ্ঞানী অবস্থাতেও বাবা(ব্রহ্মা) স্বয়ং এমন ঘর দেখেছেন।
৬-৭জন বাচ্চার বিয়ে হয়ে গেছে তথাপি সকলে একত্রে বসবাস করে। সকলেই সকালে উঠে ভক্তি (পূজা)
করে। ঘরে সদা শান্তি বিরাজমান। আর এ তো তোমাদের ঈশ্বরীয়-কুটুম (আত্মীয়)। হংস আর বক
তো একত্রে থাকতে পারে না। তোমাদের হংস হতে হবে। পরস্পর-বিরোধী হলে বাবা রাজী হবেন
না। বাবা বলেন, তোমরা কত নাম বদনাম করে দিয়েছো। যদি মিলেমিশে ক্ষীরখন্ড হয়ে না থাকো
তাহলে স্বর্গে উচ্চপদ প্রাপ্ত করতে পারবে না, অত্যন্ত সাজাভোগ করতে হবে। বাবার হয়ে
গিয়ে যদি পরস্পর-বিরোধী হয়ে থাকো তাহলে শতগুণ শাস্তিভোগ করতে হবে। পুনরায় তোমাদের
সাক্ষাৎকারও হতে থাকবে যে, আমরা কেমন পদ প্রাপ্ত করবো। আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আধ্যাত্মিক পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) সদা
যেন খেয়াল থাকে - আমরা হলাম ঈশ্বরীয় সন্তান, তোমাদের সর্বাপেক্ষা লভলী হয়ে থাকতে হবে।
পরস্পরের মধ্যে কখনো তিক্ত সম্পর্ক হওয়া উচিত নয়। প্রথমে নিজেকে শুধরাতে (ঠিক) হবে,
পরে অপরকে শুধরানোর শিক্ষা দিতে হবে।
২ ) যেমন বাবার মধ্যে
পবিত্রতা, সুখ, প্রেম ইত্যাদি সর্বগুণ রয়েছে, তেমনই বাবার অনুরূপ হতে হবে। এমন কোনো
কর্ম করা উচিত নয় যাতে সতগুরুর নিন্দাকারী হয়ে যাও। নিজের আচার-আচরণের মাধ্যমে
বাবার নাম উজ্জ্বল করতে হবে।
বরদান:-
বাবা
আর প্রাপ্তির স্মৃতি দ্বারা সদা সাহস আর আনন্দে থেকে একরস, অচল ভব
বাবার দ্বারা জন্ম
হতেই যাকিছু প্রাপ্তি হয়েছে তার লিস্ট সদা সামনে রাখো। যখন প্রাপ্তি অটল, অচল তখন
সাহস আর আনন্দও অচল হওয়া চাই। অচলের পরিবর্তে যদি মন কখনও চঞ্চল হয়ে যায় বা স্থিতি
চঞ্চল হয়ে যায় তো এর কারণ হল বাবা আর প্রাপ্তিকে সর্বদা সামনে রাখো না। সর্ব
প্রাপ্তির অনুভব সদা সামনে বা স্মৃতিতে থাকলে সব বিঘ্ন সমাপ্ত হয়ে যাবে, সদা নতুন
উৎসাহ, নতুন আনন্দে থাকবে। স্থিতি একরস অচল থাকবে।
স্লোগান:-
যেকোনও
প্রকারের সেবাতে সদা সন্তুষ্ট থাকাই হল ভালো মার্কস নিয়ে আসা।
অব্যক্ত ঈশারা :-
সত্যতা আর সভ্যতা রূপী কালচারকে ধারণ করো
তোমরা ব্রাহ্মণ
বাচ্চারা হলে অত্যন্ত রয়্যাল। তোমাদের চেহারা আর চলন দুটোই সত্যতার সভ্যতা অনুভব
করাবে। সেভাবে বলতে গেলে রয়্যাল আত্মাদেরকে সভ্যতার দেবী বলা হয়। তাদের কথা বলা,
দেখা, চলাফেরা, খাদ্য-পানীয়, ওঠা বসা, প্রত্যেক কর্মে সভ্যতা, সত্যতা স্বতঃই দেখা
যায়। এমন নয় যে আমি তো সত্যকে প্রমাণ করছি আর সভ্যতা থাকলোই না। তাহলে এটা রাইট নয়।