07-09-2025 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
31-12-2006 মধুবন
"নতুন বছরের নবীনত্ব - দৃঢ়তা আর পরিবর্তন শক্তির
দ্বারা কারণ এবং সমস্যা শব্দকে বিদায় দিয়ে নিবারণ ও সমাধান স্বরূপ হও"
আজ নবযুগ রচয়িতা বাপদাদা নিজের চতুর্দিকের বাচ্চাদের নতুন বছর আর নবযুগ দুইয়েরই
অভিনন্দন জানাতে এসেছেন। চতুর্দিকের বাচ্চারাও অভিনন্দন জানাতে পৌঁছে গেছে। শুধু কি
নতুন বছরের অভিনন্দন জানাতে এসেছ, নাকি নব যুগেরও অভিনন্দন জানাতে এসেছ? নতুন বছরের
জন্য যেমন খুশি হও এবং খুশি দাও, তেমনই তোমরা সব ব্রাহ্মণ আত্মার নব যুগের স্মৃতি
ততটা আছে? নব যুগ নয়নের সামনে এসে গেছে? নতুন বছরের জন্য যেমন হৃদয়ে আসছে যে এইতো
এসে গেছে প্রায়, ঠিক এভাবেই নিজের নব যুগের জন্য এতটা অনুভব করো কি যে এসে গেছে
প্রায়? সেই নব যুগের স্মৃতি এতটাই কাছে আসে? নিজের শরীর রূপী সেই ঝলমলে ড্রেস সামনে
নজরে আসছে? বাপদাদা ডবল অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বাচ্চাদের মনে, নয়নে নব যুগের সব সীন-
সিনারি ইমার্জ হয়ে আছে, নিজেদের নব যুগের তন- মন-ধন-জন কত শ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রাপ্তির
ভাণ্ডার! খুশি হও যে আজ পুরানো দুনিয়ায় আছি আর পরমুহূর্তে নিজেদের রাজ্যে থাকব!
স্মরণে আছে নিজেদের রাজ্য? যেমন আজ ডবল কার্যের জন্য এসেছ, পুরানোকে বিদায় দিতে আর
নব বর্ষকে স্বাগত জানাতে। তো শুধু পুরানো বছরকে বিদায় দিতে এসেছ, নাকি পুরানো
দুনিয়ার পুরানো সংস্কার, পুরানো স্বভাব, পুরানো আচার-আচরণ সেসবও বিদায় দিতে এসেছো?
পুরানো বছরকে বিদায় দেওয়া তো সহজ, কিন্তু পুরানো সংস্কারকে বিদায় দেওয়াও এতটাই
সহজ লাগে? কী ভাবছো? মায়াকে বিদায় দিতে এসেছ, নাকি বছরকে বিদায় দিতে এসেছ? বিদায়
দিতে হবে তো না! নাকি একটু ভালবাসা আছে মায়ার প্রতি? অল্পস্বল্প রাখতে চাও?
বাপদাদা আজ চতুর্দিকের বাচ্চাদের দ্বারা পুরানো সংস্কার স্বভাব বিদায় দেওয়াতে চান।
দিতে পারো? সাহস আছে নাকি ভাবছ যে বিদায় দিতে চাই কিন্তু পুনরায় মায়া এসে যায়!
আজকের দিনে দৃঢ় সংকল্পের শক্তি দ্বারা পুরানো সংস্কারকে বিদায় দিয়ে নতুন যুগের
সংস্কৃত জীবনকে অভিনন্দিত করার সাহস আছে? আছে সাহস? যাতে মনে করছ হতে পারে; হতে পারে
নাকি হতেই হবে, সাহসী আছ কেউ? যারা ভাবছো সাহস আছে তারা হাত তোলো। সাহস আছে তোমাদের?
আচ্ছা যারা হাত উঠাওনি তারা ভাবছ? ডবল ফরেনার্স হাত উঠিয়েছে, যাদের সাহস আছে তারা
হাত উঠাও, সবাই নয়। আচ্ছা, ডবল ফরেনার্স তো সমঝদার। সেইজন্য ডবল নেশা রয়েছে। দেখবে,
বাপদাদা সব মাস রেজাল্ট দেখবেন। বাপদাদা খুশি হন যে বাচ্চারা সাহসী। যারা চাতুর্যের
সাথে জবাব দেয় সেই বাচ্চারা রয়েছে। কেন? কারণ তোমরা জানো যে, সাহসের এক কদম
তোমাদের আর হাজার হাজার কদম তো বাবার সহায়তার তা'তো পাওয়াই যাবে। অধিকারী তোমরা।
হাজার কদম সহায়তার অধিকারী তোমরা। শুধু মনোবলকে (সাহস) মায়া নাড়ানোর চেষ্টা করে।
বাপদাদা দেখেন যে তাঁর বাচ্চারা মনোবল ভালই রাখে, বাপদাদা হৃদয়ের অভিনন্দনও জানিয়ে
থাকেন, কিন্তু মনোবল বজায় রাখলেও সাথে আবার নিজের ভিতরেই ব্যর্থ সংকল্প উৎপন্ন করে
- করছি তো, হওয়া তো উচিৎ, করবো তো অবশ্যই, জানি না.. জানি না এসবের সংকল্প আসা
মনোবলকে হীনবল করে দেয়। তো তো এসে যায়, তাই না! করছি তো, করতে তো হবে.. উড়তে তো
হবে...। এসব মনের বলকে নাড়িয়ে দেয়। সুতরাং ভেবো না - করতেই হবে। কেন হবে না! যখন
বাবা সাথে আছেন, তখন বাবার সাথে তো তো আসতে পারে না।
তাহলে, এই নতুন বছরে কী নবীনত্ব করবে? মনোবল রূপী পা মজবুত বানাও। মনোবলের পা
এমনভাবে মজবুত বানাও যাতে মায়া নিজেই নড়ে যায়, কিন্তু পা যেন না নড়ে। তো নতুন
বছরে তোমরা নবীনত্ব করবে, বা কখনো কখনো যেমন বিচলিত হও, কখনো বা অবিচল থাকো সেরকম
তো করবে না তাই না! তোমাদের সবার কর্তব্য বা অক্যুপেশন কী? নিজেকে কী বলে থাকো তোমরা?
বিশ্ব কল্যাণী, বিশ্ব পরিবর্তক, এটাই তোমাদের অক্যুপেশন তো না! কখনো কখনো বাপদাদার
মিষ্টি মিষ্টি হাসি আসে। টাইটেল তো বিশ্ব পরিবর্তকের, তাই না! বিশ্ব পরিবর্তক? নাকি
লণ্ডন পরিবর্তক, ইন্ডিয়া পরিবর্তক? সবাই তোমরা বিশ্ব পরিবর্তক তো না? হতে পারে
তোমরা কেউ গ্রামে থাকো, অথবা লণ্ডন কিংবা আমেরিকায় থাকো, কিন্তু বিশ্ব কল্যাণকারী
তোমরা, তাই তো না? যদি তাই হও তবে কাঁধ নাড়াও। নিশ্চিত তোমরা, তাই না! নাকি ৭৫
পার্সেন্ট। ৭৫ পার্সেন্ট বিশ্ব কল্যাণকারী আর ২৫ পার্সেন্ট ছাড় আছে, এরকম? তোমাদের
চ্যালেঞ্জ কী? প্রকৃতিকেও চ্যালেঞ্জ করেছ যে প্রকৃতিকেও পরিবর্তন করতেই হবে। সুতরাং
নিজেদের অক্যুপেশন স্মরণ করো। কখনো কখনো নিজের জন্যও ভেবে থাকো - করা তো উচিত নয়
কিন্তু হয়ে যায়। তো বিশ্ব পরিবর্তক, প্রকৃতি পরিবর্তক, স্ব পরিবর্তক হতে পারো না?
তো শক্তি সেনা কী ভাবছ? এই বছরে নিজের অক্যুপেশন বিশ্ব পরিবর্তক হওয়া - স্ব- এর
জন্য এবং ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্য। কেননা, প্রথমে চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম তাই না!
সুতরাং নিজের অক্যুপেশনের প্র্যাকটিক্যাল স্বরূপ প্রত্যক্ষ করবে তো না! স্ব
পরিবর্তন যা তোমরা নিজেরাও চাও আর বাপদাদাও চান, তোমরা জানো তো, তাই না! বাপদাদা
জিজ্ঞাসা করছেন তোমাদের সবার লক্ষ্য কী? মেজরিটি একই জবাব দেয় যে বাবা সমান হতে হবে।
ঠিক কিনা! বাবা সমান তো হতেই হবে, তাই না, নাকি দেখবে, ভাববে...! তো বাবাও এটাই চান
যে এই নতুন বছরে ৭০ বছর সম্পূর্ণ হচ্ছে, এখন ৭১ তম বছরে কোনো চমৎকার করে দেখাও।
সবাই তোমরা সেবার উৎসাহ-উদ্দীপনায় এত বিভিন্ন প্রোগ্রাম বানাতে থাকো, সফলও হতে থাকে,
বাপদাদা খুশিও হন যে তোমরা যে পরিশ্রম করো তার সফলতা প্রাপ্তি হয়, ব্যর্থ হয় না
কিন্তু কিসের জন্য সেবা করো? তখন তোমরা কী জবাব দাও? বাবাকে প্রত্যক্ষ করানোর জন্য,
তো বাবা আজ বাচ্চাদের প্রশ্ন করছেন - বাবাকে তো প্রত্যক্ষ করাতেই হবে, করবেই। কিন্তু
বাবাকে প্রত্যক্ষ করানোর আগে স্ব-কে প্রত্যক্ষ করো। বলো, শিব শক্তিরা এই বছরে স্ব-কে
প্রত্যক্ষ করবে শিব-শক্তি রূপে। করবে? জনক বলো করবে? (করতেই হবে) সাথী, প্রথম লাইনে
ও দ্বিতীয় লাইনে যে টিচাররা বসে আছ তারা হাত উঠাও। যারা এই বছরে করে দেখাবে। করবে
নয়, করে দেখাতেই হবে। আচ্ছা - টিচাররা সবাই হাত তুলেছে নাকি কেউ কেউ তোলেনি!
আচ্ছা - মধুবনের তোমরা, তোমাদের করতেই হবে, করবেই। তোমরা মধুবনবাসী কেননা, মধুবন
কাছে তো না! তারিখ নোট করে নাও, ৩১ তারিখ। টাইমও নোট করে নেবে (৯ টা বেজে ২০মিনিট)।
আর পাণ্ডব সেনা, পাণ্ডব সেনাকে কী করে দেখাতে হবে! বিজয়ী পাণ্ডব! কখনো কখনোর বিজয়ী
নয়, হয়েই আছ বিজয়ী পাণ্ডব। দেখাতে হবে এই বছরে, নাকি বলবে কী করবো! মায়া এসে
গিয়েছিল তো না, চাইনি, সেটা এসে গেছে! বাপদাদা আগেও বলেছেন লাস্ট টাইম পর্যন্ত মায়া
নিজের আসা বন্ধ করবে না। কিন্তু মায়ার কাজ হলো আসা আর তোমাদের কাজ কী? বিজয়ী হওয়া।
সুতরাং এটা ভেবো না, অল্পই চাই কিন্তু মায়া এসে যায়। হয়ে যায়। এখন, বাপদাদা এই
বছরের সাথে এই সব শব্দ বিদায় দেওয়াতে চান। ১২টার সময় এই বছরকে বিদায় দেবে তো
না। তো যে ঘণ্টাই বাজিয়ে থাকো না কেন, আজ যখন ঘণ্টা বাজবে তখন কিসের ঘণ্টা বাজাবে?
দিনের নাকি বছরের? মায়ার বিদায়ের ঘণ্টা বাজাও। দুটো বিষয় - এক তো পরিবর্তন শক্তি
ও তার দুর্বলতা। খুব ভালো প্ল্যান বানাও তোমরা, এভাবে করবো, ওভাবে করবো, সেভাবে করবো...।
বাপদাদাও খুশি হয়ে যান, খুব ভালো প্ল্যান বানিয়েছে কিন্তু পরিবর্তন শক্তির অভাব
থাকার কারণে কিছু পরিবর্তন হয়, আর কিছু থেকে যায়। আরেক খামতি হলো - দৃঢ়তার। ভালো
ভালো সংকল্প করে থাকো, আজও দেখ কত কার্ড, কত স্থিরসংকল্প, কত প্রতিজ্ঞা বাপদাদা
দেখেছেন! খুব ভালো ভালো পত্র এসেছে। ( কার্ড, পত্র ইত্যাদি সব স্টেজে সাজিয়ে রাখা
হয়েছে) তো করবো, করে দেখাবো, হওয়ারই আছে, হতেই হবে, পদ্ম-পদ্মগুন স্মরণ-স্নেহ, সব
বাপদাদার কাছে পৌঁছেছে, তোমরা যারা সামনে বসে আছ তাদের হৃদয়ের আওয়াজও বাবার কাছে
পৌঁছেছে। কিন্তু এখন বাপদাদা এই দুই শক্তির ওপরে আন্ডারলাইন করাচ্ছেন। এক) দৃঢ়তায়
ঘাটতি থেকে যায়। ঘাটতি থাকার কারণ - গড়িমসি ভাব, অন্যকে দেখা। হয়ে যাবে, করছি
তো, করবো, অবশ্যই করবো...।
বাপদাদা এটাই চান যে এই বছরে একটা শব্দকে বিদায় দাও সদাসর্বদার জন্য। বলি, বলবো?
দিতে হবে। এই বছরে বাপদাদা কারণ শব্দকে বিদায় দিতে চান, নিবারণ হোক, কারণের সমাপ্তি
হোক। সমস্যা শেষ, সমাধান স্বরূপ হও। স্বয়ং-এর কারণ হোক বা সাথীদের কারণ, কিংবা
সংগঠনের কারণ হোক ব্রাহ্মণদের ডিকশনারিতে কারণ শব্দ, সমস্যা শব্দ পরিবর্তন হতে হবে,
সমাধান আর নিবারণ যেন হয়ে যায়। কেননা, আজ অনেকে অমৃত বেলাতেও বাপদাদার সাথে
আত্মিক বার্তালাপ করার সময় এই বিষয়েই বলেছে যে নতুন বছরে কিছু নবীনত্ব করবো। তো
বাপদাদা চান যে এই নতুন বছর এমনভাবে উদযাপন করো যাতে এই দুই শব্দ সমাপ্ত হয়ে যায়।
পরোপকারী হও। নিজে কারণ হও কিম্বা আর কেউ কারণ হোক, যেমনই হোক পরোপকারী আত্মা হয়ে,
সহৃদয় আত্মা হয়ে, শুভ ভাবনা, শুভ কামনার সাথে উদারচিত্ত হয়ে সহযোগ দাও, স্নেহ
নাও।
তো এই নতুন বছরকে কী নাম দেবে? আগে সব বছরের নাম দেওয়া হতো, মনে আছে তো না? তো
বাপদাদা এই বছরকে শ্রেষ্ঠ, শুভ সংকল্প, দৃঢ় সংকল্প, স্নেহ সহযোগ সংকল্পের বছর - এই
নামে নয়, বরং এরকমই দেখতে চান। দৃঢ়তার শক্তি, পরিবর্তনের শক্তিকে সদা সাথী বানাও।
কেউ যদি কিছুমাত্র নেগেটিভ দেয়ও কিন্তু যেভাবে তোমরা অন্যদের কোর্স করানোর সময়
নেগেটিভকে পজিটিভে পরিবর্তন করতে বলো, সেভাবে কি নিজে স্বয়ং নেগেটিভকে পজিটিভে
চেঞ্জ করতে পারো না? অন্যেরা পরবশ হয়, পরবশের প্রতি কৃপা করা হয়ে থাকে। তোমাদের
জড় চিত্রের, তোমাদেরই চিত্র তো না! যা পূজিত হয়? দিলওয়াড়া মন্দিরে নিজেদের
চিত্র দেখেছ তো না! খুব ভালো। যখন তোমাদের জড় চিত্র দয়াবান, যে কোনও কেউ যদি
চিত্রের সামনে যায় তবে কী চায়? দয়া করো, কৃপা করো, করুণা করো, মার্সি, মার্সি..।
তখন সদা প্রথমে নিজের প্রতি দয়া করো তারপরে ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রতি দয়া করো, যদি
কেউ পরবশ হয়, সংস্কারের পরবশ হয়, হীনবল হয়, সেই সময় অবুঝ হয়ে যায়, সুতরাং
ক্রোধ ক'রো না। ক্রোধের রিপোর্ট বেশি আসে।
তো ক্রোধ না হলেও তার বাচ্চা- কাচ্চার সাথে খুব ভালোবাসা থাকে। কর্তৃত্ব, কর্তৃত্ব
ফলানো ক্রোধের বাচ্চা। তো পরিবারে যেমন হয় না, বড় বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা কম হয়ে
যায় আর নাতিপুতিদের প্রতি ভালবাসা বেশি হয়। তো ক্রোধ হলো বাবা আর কর্তৃত্ব আরও
উল্টো নেশা, নেশাও বিভিন্ন রকমের হয়, বুদ্ধির নেশা, ডিউটির নেশা, সেবার কোনো বিশেষ
কর্তব্যের নেশা - এসবই কর্তৃত্ব প্রদর্শন। তো দয়ালু হও, কৃপালু হও। দেখ, নতুন বছরে
একে অপরের মুখ মিষ্টি করায়। তোমরা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করো, তাহলে মুখমিষ্টিও তো করাও,
তাই না! তো সারা বছর রূঢ়ভাব দেখিও না। তারা মুখ মিষ্টি করায়, তোমরা শুধু মুখ
মিষ্টিই করাবে না, বরং তোমাদের মুখে প্রশংসা আর প্রেম সূচক শব্দ থাকবে। সদা নিজেদের
মুখ অধ্যাত্ম স্নেহের হবে, হাস্যোজ্জ্বল হবে। রূঢ়তা নয়। মেজরিটি যখন বাপদাদার সাথে
আত্মিক বার্তালাপ করে, তখন তো নিজের সত্য বিষয় বলে দেয়, কেননা আর তো কেউ শোনে না।
তো মেজরিটির রেজাল্টে অন্যান্য বিকারের থেকে বেশি থাকে ক্রোধ কিংবা ক্রোধের
বাচ্চা-কাচ্চার রিপোর্ট। তো বাপদাদা এই নতুন বছরে এই রূঢ়ত্ব বের করতে চান। অনেকে
নিজের প্রতিজ্ঞাও লিখেছে যে তারা চাইছে না তবুও এসে যায়। সেইজন্য বাপদাদা কারণ
হিসেবে বলেছেন যে দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। বাবার সামনে সঙ্কল্প দ্বারা প্রতিজ্ঞাও করে,
কিন্তু দৃঢ়তা এমন শক্তি যেটা সম্বন্ধে দুনিয়ার লোকেও বলে "প্রাণ যায় কিন্তু বচন
না যায়।" যদি মরতে হয়, অবনত হতে হয়, বদলাতে হয়, সহন করতে হয়, তথাপি প্রতিজ্ঞায়
যে দৃঢ় হয় সে প্রতি কদমে সফলতা মূর্ত হয়, কেননা দৃঢ়তা সফলতার চাবি। চাবি আছে
সবার কাছে কিন্তু সময়কালে হারিয়ে যায়। তাহলে বিচার্য কী?
নতুন বছরে নতুনত্ব করতেই হবে - স্ব-এর, সহযোগীদের এবং বিশ্বের পরিবর্তনের। পিছনে
যারা রয়েছ তারা শুনছো? সুতরাং করতে হবে তো না, এটা ভেবো না আগে বড়রা করবে তো না,
আমরা তো ছোট, তাই না। ছোট সমান বাবা। প্রত্যেক বাচ্চাই বাবার অধিকারী, হতে পারে
প্রথমবারই এসেছ কিন্তু বলেছ 'আমার বাবা' অতএব, অধিকারী। শ্রীমতে চলারও অধিকারী আর
সর্ব প্রাপ্তিরও অধিকারী। টিচার্স, নিজেদের মধ্যে তোমরা প্রোগ্রাম বানাও, ফরেনার্সও
প্রোগ্রাম বানাও, ভারতের তোমরাও সবাই মিলে মিশে বানাও। বাপদাদা প্রাইজ দেবেন, কোন
জোন, ফরেন হোক বা ইন্ডিয়া, যে জোন নম্বর ওয়ান নিতে পারবে তাকে গোল্ডেন কাপ দেবেন।
শুধু নিজেকে বানিও না, সাথীদেরও বানাও। কেননা, বাপদাদা দেখেছেন যে বাচ্চাদের
পরিবর্তন ছাড়া বিশ্বের পরিবর্তনও শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আর আত্মারা নতুন নতুন ধরণের
দুঃখের পাত্র হয়ে উঠছে। দুঃখ অশান্তির নতুন নতুন কারণ তৈরি হচ্ছে। তো বাবা এখন
বাচ্চাদের দুঃখের আর্তি শুনে পরিবর্তন চান। তো হে মাস্টার সুখদাতা বাচ্চারা
দুঃখীদের প্রতি দয়া করো। ভক্তও ভক্তি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। ভক্তদেরও মুক্তির
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করাও। দয়া আসে, নাকি না? নিজেরই সেবাতে, নিজেরই রোজনামচাতে
বিজি আছ? নিমিত্ত তোমরা, এমন নয় বড়রা নিমিত্ত, বাচ্চারা প্রত্যেকে যারা বলেছে
আমার বাবা, স্বীকার করেছে, তারা সবাই নিমিত্ত। তো নতুন বছরে একে অপরকে গিফ্ট দিয়ে
থাকে তো না! সুতরাং তোমরা ভক্তদের আশা পূরণ করো, তাদেরকে গিফ্ট পেতে দাও। দুঃখ থেকে
দুঃখীদের মুক্ত করো, মুক্তি ধামে শান্তি লাভ করাও - এই গিফ্ট দাও। ব্রাহ্মণ পরিবারে
সব আত্মাকে হৃদয়ের স্নেহ আর সহযোগের গিফ্ট দাও। তোমাদের কাছে গিফ্টের স্টক আছে?
স্নেহ আছে? সহযোগ আছে? মুক্তি প্রাপ্ত করানোর শক্তি আছে? যাদের কাছে অনেক স্টক আছে,
তারা হাত উঠাও। আছে স্টক, স্টক কম আছে? প্রথম লাইনের তোমাদের কাছে স্টক কি কম আছে?
এই ব্রিজমোহন হাত তুলছেন না। স্টক আছে তো না! আছে স্টক?সবাই হাত তুলেছে? স্টক আছে?
তাহলে, স্টক রেখে কী করছো? জমা করে রেখেছ? টিচার্স স্টক আছে তো, তাই না? তবে দাও তো
না, দরাজদিল হও। মধুবনের তোমরা কী করবে? আছে স্টক, মধুবনে আছে? মধুবন তো চতুর্দিকের
স্টকে পূর্ণ হয়ে আছে। তো এখন দাতা হও, শুধুই জমা ক'রো না। দাতা হও, নিরন্তর দিয়ে
যাও। ঠিক আছে। আচ্ছা।
এখন প্রত্যেকে নিজেকে মনের মালিক অনুভব করে এক সেকেন্ডে মনকে একাগ্র করতে পারো?
অর্ডার করতে পারো? এক সেকেন্ডে নিজের সুইট হোমে পৌঁছে যাও। এক সেকেন্ডে নিজের রাজ্য
স্বর্গে পৌঁছে যাও। মন তোমাদের অর্ডার মানে নাকি চঞ্চলতা করে? মালিক যদি যোগ্য হয়,
শক্তিমান হয়, তবে মন মানে না সেটা হতেই পারে না। তো এখন অভ্যাস করো এক সেকেন্ডে
সবাই নিজের সুইট হোমে পৌঁছে যাও। এই অভ্যাস সারাদিনের মাঝে মাঝে করার অ্যাটেনশন রাখো।
মনের একাগ্রতা স্বয়ংকেও এবং বায়ুমণ্ডলকেও পাওয়ারফুল বানায়। আচ্ছা।
চতুর্দিকের সকলের অতি স্নেহী, সকলের সহযোগী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, চতুর্দিকের বিজয়ী
বাচ্চাদের, চতুর্দিকের পরিবর্তনকারী শক্তিমান বাচ্চাদের, চতুর্দিকের যারা সদা
স্বয়ংকে প্রত্যক্ষ করে বাবাকে প্রত্যক্ষ করায় এমন বাচ্চাদের, সদা সমাধান স্বরূপ
বিশ্ব পরিবর্তক বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর হৃদয়ের আশীর্বাদ -
স্বীকার করো। সেইসঙ্গে বাচ্চাদের সবাইকে, যারা বাবার শিরোভূষণ সেই শিরোভূষণ
বাচ্চাদের বাপদাদার নমস্কার।
বরদান:-
মুরলীধরের মুরলীর প্রতি ভালোবাসা ও আনন্দ বজায় রেখে
শক্তিশালী আত্মা ভব
যে বাচ্চাদের পঠন পাঠন অর্থাৎ মুরলীর প্রতি ভালবাসা
আছে তাদের সদা শক্তিশালী ভব-র বরদান প্রাপ্ত হয়, তাদের সামনে কোনো বিঘ্ন দাঁড়াতে
পারে না। মুরলীধরের প্রতি ভালবাসা থাকা মানে মুরলীর সাথে ভালবাসা রাখা। যদি কেউ বলে
যে মুরলীধরের প্রতি তো আমার অনেক ভালবাসা আছে কিন্তু পড়ার জন্য টাইম নেই, তো বাবা
সেটা মানেন না, কেননা যেখানে একাগ্রতা থাকে সেখানে কোনও অজুহাত থাকে না। পড়া আর
পরিবারের ভালবাসায় কেল্লা তৈরি হয়ে যায়, যেখানে তারা সেফ থাকে।
স্লোগান:-
সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মোল্ড করে নাও তাহলে রিয়েল
গোল্ড হয়ে যাবে।
অব্যক্ত ইশারা :- এখন লগণের অগ্নিকে প্রজ্বলিত করে
যোগের জ্বালারূপ বানাও যোগের জ্বালারূপ শক্তিশালী বানানোর জন্য যোগে বসার সময়
অন্তর্লীন করার শক্তি ইউজ করো। সেবার সংকল্পও সমাহিত হয়ে যাবে এত শক্তি থাকতে হবে
যাতে স্টপ বলার সাথে সাথেই যেন স্টপ হয়ে যায়। যেন ফুল ব্রেক লাগে, আলগা ব্রেক নয়।
এক সেকেন্ডের পরিবর্তে যদি বেশি সময় লেগে যায় তবে অন্তর্লীন করার শক্তি দুর্বল বলা
হবে।