08.11.2024
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমরা রাজযোগের পাঠ পড়ছো রাজত্ব প্রাপ্তির জন্য, এ হলো তোমাদের নুতন পড়াশুনা"
প্রশ্নঃ -
এই পড়াশুনায়
কোনো কোনো বাচ্চা ফেল হয়ে যায় কেন?
উত্তরঃ
কারণ এই
পড়াশুনাতে মায়ার সাথে বক্সিং করতে হয়। মায়ার সাথে বক্সিং হলে বুদ্ধিতে ভীষণ আঘাত
লাগে। আঘাত লাগলে বাচ্চারা বাবার কাছে আন্তরিক ভাবে সৎ থাকে না। যারা আন্তরিক ভাবে
সৎ থাকে, তারা সর্বদাই সেফ থাকে।
ওম্ শান্তি ।
সকল বাচ্চারা
তো অবশ্যই নিশ্চিত যে আমাদেরকে অর্থাৎ আত্মাদেরকে পরমাত্মা পিতা পড়াচ্ছেন। ৫ হাজার
বছর পরে কেবল একবার অসীম জগতের পিতা আসেন এবং অসীম জগতের বাচ্চাদেরকে শিক্ষা প্রদান
করেন। যদি নতুন কেউ এটা শোনে, তাহলে বুঝতে পারবে না। আত্মিক পিতা এবং আত্মিক সন্তান
বলতে কি বোঝায় সেটাও বুঝবে না। তোমরা বাচ্চারা জানো যে আমরা সবাই হলাম ভাই-ভাই। তিনি
হলেন আমাদের বাবা, টিচার এবং সদ্গুরু । বাচ্চারা, এটা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক ভাবেই
তোমাদের মনে থাকে। এখানে বসে থাকার সময়ে নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পারো যে সকল আত্মার
আত্মিক পিতা তো একজনই। যে ধর্মেরই হোক না কেন, সকল আত্মারা তো তাঁকেই স্মরণ করে।
সকল মানুষই তাঁকে স্মরণ করে। বাবা বুঝিয়েছেন যে আত্মা তো সকলের মধ্যেই রয়েছে। এখন
বাবা বলছেন - দেহের সকল ধর্মকে পরিত্যাগ করে নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করো। তোমরা
আত্মারা এখন এখানে নিজেদের পার্ট প্লে করছো। কেমন পার্ট প্লে করছো সেটাও বোঝানো
হয়েছে। তবে বাচ্চারা তাদের পুরুষার্থের ক্রম অনুসারেই বুঝতে পারে। তোমরা হলে রাজযোগী।
আসলে সকল শিক্ষার্থীই যোগী। কারণ যিনি পড়ান, অর্থাৎ শিক্ষকের সাথে তো অবশ্যই যোগ
রাখতে হয়। লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কেও একটা ধারণা থাকে যে এই পড়াশুনার দ্বারা আমরা এইরকম
হব। এটা তো এক ধরনের পড়াশুনা, এটাকে বলা হয় রাজাদের রাজা হওয়ার শিক্ষা। তাই এটা হল
রাজযোগ অথবা রাজত্ব প্রাপ্তির জন্য বাবার সাথে যোগ। কোনো মানুষ কখনোই এই রাজযোগ
শেখাতে পারবে না। তোমাদেরকে কোনো মানুষ এটা শেখাচ্ছে না। তোমাদের মতো আত্মাদেরকে
স্বয়ং পরমাত্মা শেখাচ্ছেন। তারপর তোমরা আবার অন্যদেরকে শেখাও যে তোমরাও নিজেকে আত্মা
রূপে অনুভব করো। আমাদের সকলের আত্মিক পিতা এটা শেখাচ্ছেন। এটা স্মরণে না থাকলে
বুদ্ধি ক্ষুরধার হয় না। তাই এই জ্ঞান অনেকের বুদ্ধিতেই ধারণ হয় না। তাই বাবা
সর্বদাই বলেন - যোগযুক্ত হয়ে, স্মরণের যাত্রাতে থেকে বোঝাও। আমরা নিজ ভাইকে বোঝাচ্ছি
- তোমরাও হলে আত্মা, তিনি হলেন সকল আত্মার পিতা, শিক্ষক এবং সদগুরু। এইভাবে
আত্মাকেই দেখতে হবে। হয়তো এক সেকেন্ডে জীবনমুক্তির গায়ন রয়েছে, কিন্তু এতে অনেক
পরিশ্রম করতে হয়। আত্ম-অভিমানী না হওয়ার জন্য তোমাদের বাণীতে শক্তি থাকে না। কারন
বাবা যেভাবে বোঝান, সেইভাবে অন্য কেউ বোঝায় না। কেউ কেউ খুব ভালো বোঝায়। কে কাঁটা
আর কে ফুল - সবই তো বোঝা যায়। স্কুলে বাচ্চারা ৫-৬টা শ্রেণী পড়ার পরে ট্রান্সফার হয়ে
যায়। যখন ভালো ভালো বাচ্চারা ট্রান্সফার হয়ে যায়, তখন সেই অন্য শ্রেণীর টিচাররাও ঝট
করে বুঝে যায় যে এই বাচ্চা খুব ভালো পুরুষার্থী। এ নিশ্চয়ই ভালো পড়াশুনা করেছে, তাই
ভালো নম্বর পেয়েছে। টিচাররা তো অবশ্যই বুঝতে পারে, তাই না? ওগুলো সব লৌকিক পড়াশুনা।
এখানে ঐরকম কোনো ব্যাপার নেই। এটা হলো পারলৌকিক পড়াশুনা। এখানে তো কেউ এইরকম বলবে
না যে এই স্টুডেন্ট আগের ক্লাসে ভালো পড়াশুনা করে এসেছে বলে এখন ভালো ভাবে পড়ছে।
না। হয়তো ওই পরীক্ষাতে পাশ করলে টিচার বোঝে যে এই স্টুডেন্ট খুব পড়াশুনা করেছে তাই
ভালো নম্বর পেয়েছে। কিন্তু এখানে তো সম্পূর্ণ নুতন পাঠ। আগে থেকে কেউ এটা পড়েনি।
শিক্ষাও নতুন এবং শিক্ষকও নতুন। সবকিছুই নতুন। নুতনদেরকেই শেখানো হয়। যে ভালো ভাবে
পড়াশুনা করে, তাকে বলা হয় ভালো পুরুষার্থী। এটা হলো নতুন দুনিয়ার জন্য নতুন জ্ঞান।
অন্য কেউ এই শিক্ষা দিতে পারবে না। যে যত মনোযোগ দেয়, সে তত ভালো নম্বর পায়। কেউ
কেউ তো খুব মিষ্টি এবং বাধ্য হয়। দেখলেই বোঝা যায় যে এই বাচ্চা খুব ভালো ক্লাস করায়,
এর মধ্যে কোনো খারাপ গুণ নেই। আচরন কিংবা কথাবার্তার কায়দা দেখেই বোঝা যায়। বাবা
সবাইকে জিজ্ঞাসাও করেন যে এই বাচ্চা কেমন ক্লাস করায়, এর মধ্যে কোনো দুর্বলতা রয়েছে
কি না। অনেকেই বলে যে আমাকে জিজ্ঞাসা না করে কখনো বাবাকে কোনো খবর দেবে না। কেউ কেউ
ভালো ক্লাস করায়, আবার কেউ কেউ অতটা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবান হয় না। মায়ার সাথে খুব যুদ্ধ
হয়। বাবাও জানেন যে মায়া এদেরকে অনেক ধোঁকা দেয়। হয়তো কেউ ১০ বছর ধরে ক্লাস করাচ্ছে,
কিন্তু মায়া এতটাই শক্তিশালী যে তারপরেও দেহ-অহংকার এসে যায় এবং বশীভূত হয়ে যায়।
বাবা বোঝাচ্ছেন - যারা পালোয়ান বাচ্চা, তাদের ওপরে অনেক মায়াবী আঘাত আসে। মায়াও
বলবান হয়ে বলবানের সাথে লড়াই করে।
তোমরা নিশ্চয়ই বোঝো
যে বাবা যার মধ্যে প্রবেশ করেছেন, তিনি হলেন প্রথম স্থানাধিকারী। তারপরে ক্রমানুসারে
অনেকেই রয়েছে। বাবা হয়তো এক-দুইজনের উদাহরণ দেন। ক্রমানুসারে তো অনেকেই রয়েছে। যেমন
দিল্লির গীতা খুবই হুঁশিয়ার এবং মিষ্টি সন্তান। বাবা সর্বদাই বলেন যে গীতা হল
সত্যিকারের গীতা। মানুষ তো ওই গীতা পাঠ করে কিন্তু ওরা বোঝে না যে ভগবান কিভাবে
রাজযোগ শিখিয়ে রাজাদের রাজা বানিয়েছিলেন। যখন সত্যযুগ ছিল তখন একটাই ধর্ম ছিল।
গতকালের কথা। বাবা বলেন, কালকেই তোমাদেরকে এত ধনী বানিয়ে দিয়ে গেলাম, তোমরা কত
পদমাপদম্ ভাগ্যবান ছিলে। কিন্তু এখন তোমরা কেমন হয়ে গেছো। তোমরা নিজেরাও নিশ্চয়ই
ফিল করছো। যারা ওই গীতা পাঠ করে, তাদের কাছ থেকে কি কিছু ফিলিং আসে? কিছুই বোঝে না।
সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতার-ই মহিমা রয়েছে। ওরা তো কেবল বসে বসে গীতা পাঠ করে
শোনায়। বাবা কোনো বই পড়েন না। তাই পার্থক্য তো অবশ্যই রয়েছে। ওরা কোনো স্মরণের
যাত্রা করে না। ওদের তো ক্রমশঃ অধঃপতন হয়। সর্বব্যাপীর জ্ঞানের দ্বারা সবকিছু কেমন
হয়ে গেছে দেখো। তোমরা জানো যে প্রত্যেক কল্পেই এইরকম হবে। বাবা বলছেন, আমি তোমাদেরকে
শিক্ষা দিয়ে এই বিষয় সাগর পার করে দিই। কত পার্থক্য। শাস্ত্র অধ্যয়ণ করা তো
ভক্তিমার্গের বিষয়। বাবা বলছেন, এইগুলো পড়লে কেউ আমার সাথে মিলিত হতে পারে না।
দুনিয়ার মানুষ মনে করে - যে পথেই যাও না কেন সবাই শেষে একই স্থানে পৌঁছাবে। আবার
কখনো বলে যে ভগবান কোনো না কোনো রূপ ধারণ করে এসে শিক্ষা দেবেন। যদি সেই বাবাকেই এসে
শিক্ষা দিতে হবে, তাহলে তোমরা কি পড়াচ্ছো? বাবা বোঝাচ্ছেন - আটার মধ্যে নুন সমান
গীতাতেও অতি সামান্যই রাইট কথা লেখা রয়েছে এবং ঐগুলোকেই তোমরা ব্যবহার করতে পারো।
সত্যযুগে কোনো শাস্ত্র ইত্যাদি থাকবে না। এগুলো সব ভক্তিমার্গের শাস্ত্র। এইরকম বলা
যাবে না যে এগুলো সব অনাদি, শুরু থেকেই প্রচলিত রয়েছে। অনাদি কথাটার অর্থই বোঝে না।
বাবা বোঝাচ্ছেন, এই ড্রামাটা হলো অনাদি। বাবা তোমাদেরকে রাজযোগ শেখাচ্ছেন। তিনি
বলছেন - এখন তোমাদেরকে রাজযোগ শেখাচ্ছি, কিন্তু তারপর আবার গুপ্ত হয়ে যাবো। তোমরা
বলতে পারো যে আমাদের রাজত্ব অনাদি। রাজ্য তো সেটাই রয়েছে কেবল পবিত্র থেকে অপবিত্র
হয়ে গেছে বলে নামটা পাল্টে গেছে। দেবতার পরিবর্তে হিন্দু বলে। কিন্তু বাস্তবে তো আদি
সনাতন দেবী দেবতা ধর্মেরই, তাই না? অন্যরাও যেমন সতোপ্রধান থেকে সতঃ, রজঃ এবং তমঃ
অবস্থায় আসে, সেইভাবে তোমরাও নীচে নামো। রজো অবস্থায় আসলে অপবিত্র হয়ে যাও বলে
দেবতার পরিবর্তে হিন্দু বলো। হিন্দু নামটা তো হিন্দুস্থান থেকে এসেছে। তোমরা তো আসলে
দেবী-দেবতা ছিলে। দেবতারা তো সর্বদাই পবিত্র থাকে। এখন তো মানুষ পতিত হয়ে গেছে। তাই
হিন্দু নাম রেখে দিয়েছে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে হিন্দু ধর্ম কে কবে স্থাপন করেছিল
তবে বলতে পারবে না। আগে আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম ছিল, ওটাকেই প্যারাডাইস ইত্যাদি
অনেক ভালো ভালো নাম দিয়েছে। যেটা পূর্বে হয়েছে, সেটা পুনরায় হবে। এখন তোমরা শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু জানো। এইভাবে জানতে থাকলেই বেঁচে থাকবে। কেউ কেউ মরে যায়।
বাবার বাচ্চা হওয়ার পর মায়ার সাথে যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধ হওয়ার ফলে অনেক ট্রেটর (বিশ্বাসঘাতক)
হয়ে যায়। রাবণের ছিল, তারপর রামের হলো। কিন্তু রাবণ পুনরায় রামের সন্তানকে পরাজিত
করে নিজের দিকে নিয়ে চলে যায়। কারোর আবার ব্যাধি হয়ে যায়। তখন সে ওদিকেও থাকে না আর
এদিকেও থাকে না। না থাকে সুখ আর না থাকে দুঃখ। মধ্যিখানে আটকে থাকে। তোমাদের মধ্যে
এইরকম অনেকেই রয়েছে যারা মধ্যিখানে আটকে আছে। পুরোপুরি বাবার হয়না, আবার পুরোপুরি
রাবণেরও হয়না।
তোমরা এখন পুরুষোত্তম
সঙ্গমযুগে রয়েছো। উত্তম পুরুষ হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছো। এই বিষয়গুলো ভালো করে
বুঝতে হবে। বাবা যখন জিজ্ঞাসা করে তখন তো খুব ভালোই হাত তোলে। কিন্তু বুঝতে পারা
যায় যে অতটা বুদ্ধি নেই। যদিও বাবা বলেন যে সর্বদা উত্তম কথা বলো। তাই সকলেই বলে যে
আমি নর থেকে নারায়ণ হবো। নর থেকে নারায়ন হওয়ার কথাই প্রচলিত রয়েছে। যখন জ্ঞান ছিল
না তখন সত্য নারায়নের কথা শুনতে। ওখানে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারে না। এখানে তো বাবা
নিজেই জিজ্ঞাসা করেন - তোমরা কি মনে করো যে তোমাদের অতটা সাহস রয়েছে? তোমাদেরকে
অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। যখন কেউ আসে, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে এই জন্মে কোনো
পাপ কর্ম করেছে কি না। জন্ম-জন্মান্তর ধরে তো পাপী হয়েই রয়েছ। যদি এই জন্মের পাপ
গুলো বলে দাও তবে হাল্কা হয়ে যাবে। নাহলে অন্তরে বিবেক দংশন হবে। সত্য কথা বলে দিলে
হাল্কা হয়ে যাবে। কোনো কোনো বাচ্চা সত্য কথা বলে না বলে মায়া খুব জোরে ঘুঁষি মেরে
দেয়। তোমাদের সাথে বিশাল বড় বক্সিং চলছে। ওই বক্সিং-এ তো শরীরে আঘাত লাগে, কিন্তু
এই বক্সিং-এ বুদ্ধিতে খুব গভীর আঘাত লাগে। বাবাও এটা জানেন। ব্রহ্মাবাবা বলছেন - আমি
এখন অনেক জন্মের অন্তিমে রয়েছি। সবথেকে পবিত্র ছিলাম কিন্তু এখন সবথেকে পতিত হয়ে
গেছি। এরপর আবার পবিত্র হয়ে যাব। আমি কখনোই বলি না যে আমি কোনো মহাত্মা। বাবাও বলেন
যে এখন এ সবথেকে পতিত হয়ে গেছে। বাবা বলেন, আমি পরের দেশে, পরের শরীরে আসি। যে
সম্পূর্ণ ৮৪ জন্ম নিয়েছে, আমি তার মধ্যে অনেক জন্মের অন্তিম জন্মে প্রবেশ করি। এও
এখন পবিত্র হওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছে। খুব হুঁশিয়ার থাকতে হয়। বাবা তো সবই জানেন।
বাবার এই সন্তান তো বাবার অতি নিকটেই থাকে। কখনোই বাবার থেকে আলাদা হয় না। কখনো
বাবাকে ছেড়ে যাওয়ার সংকল্পও আসে না। একদম আমার পাশেই বসে আছেন। ইনি তো আমারই পিতা।
আমার ঘরেই বসে আছেন। বাবা তো জানতে পারেন এবং শিববাবার সাথে হাসি মজাও করেন - বাবা
আজকে আমাকে স্নান করিয়ে দাও, খাইয়ে দাও। আমি ছোট্ট বাচ্চার মতো অনেক রকম ভাবে বাবাকে
স্মরণ করি। বাচ্চারা, তোমাদেরকেও এইরকম ভাবেই স্মরণ করার উপদেশ দিচ্ছি। বাবা, তুমি
কতই না মিষ্টি। আমাদেরকে একেবারে বিশ্বের মালিক বানিয়ে দাও। এইসব বিষয় তো কারোর
চিন্তাতেই আসবে না। বাবা সবাইকে সতেজ করে দেন। সকলেই পুরুষার্থ করছে। কিন্তু তার
সাথে আচরণও সেইরকম হওয়া উচিত। কোনো ভুল হয়ে গেলে বাবাকে পত্র লেখা উচিত - বাবা,
আমার দ্বারা এইরকম ভুল হয়ে যায়। কেউ কেউ পত্রতে লেখে - বাবা, আমি এইরকম ভুল করে
ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিও। কিন্তু আমার সন্তান হওয়ার পরে কোনো ভুল করলে সেটা একশো
গুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়। মায়ার কাছে পরাজিত হয়ে গেলে যেই কে সেই হয়ে যায়। অনেকেই
পরাজিত হয়ে যায়। এটা বিশাল বড় বক্সিং। রাম এবং রাবণের যুদ্ধ। শাস্ত্রে দেখানো হয়েছে
যে বাঁদর সেনা ব্যবহার করেছে। বাবা বলেন - এইসব বাচ্চাদের খেলা তো পূর্ব-নির্মিত।
ছোট শিশু যেমন অবোধ হয়, সেইরকম। বাবা বলেন - এইগুলো এদের তুচ্ছ বুদ্ধির পরিণাম।
প্রত্যেককেই ঈশ্বরের রূপ বলে দেয়। তাহলে তো প্রত্যেকেই ঈশ্বর হয়ে গিয়ে স্থাপন, পালন,
বিনাশ করবে। কিন্তু ঈশ্বর কি কখনো কারোর বিনাশ করতে পারে ? এরা ঘোর অজ্ঞানতার মধ্যে
রয়েছে। তাই পুতুল পূজা বলা হয়। বড়ই ওয়ান্ডার! মানুষের বুদ্ধি কেমন হয়ে যায়। কত
খরচ করে। বাবা বলেন - আমি তোমাদেরকে এত শ্রেষ্ঠ বানিয়ে ছিলাম, আর তোমরা কি করেছ !
তোমরাও জানো যে আমরাই দেবতা ছিলাম, আমরাই চক্র ঘুরিয়ে এখন ব্রাহ্মণ হয়েছি। এরপর আমরা
আবার দেবতা হব। এটা তো ভালো ভাবে বুঝেছ, তাই না? যখন এখানে এসে বসো, তখন বুদ্ধিতে
এইসব জ্ঞান থাকা উচিত। বাবাও তো নলেজফুল। হয়তো শান্তিধামে থাকেন, কিন্তু তা
সত্ত্বেও তাঁকে নলেজফুল বলা হয়। তোমাদের মতো আত্মাদের মধ্যেও সমগ্র জ্ঞান থাকে। তাই
অনেকে বলে এই জ্ঞানের দ্বারা আমার চোখ খুলে গেছে। বাবা তোমাদেরকে জ্ঞানচক্ষু দেন।
আত্মারা সৃষ্টির আদি, মধ্য, অন্তিমের কথাগুলো জেনে গেছে। চক্র ক্রমাগত আবর্তিত হচ্ছে।
ব্রাহ্মনরাই স্ব-দর্শন চক্র পায়। দেবতাদেরকে কেউ এইসব শেখাবে না। দেবতাদের এইসব
শেখার দরকার-ই নেই। তোমাদেরকেই পড়তে হবে কারন তোমরাই দেবতা হবে। বাবা বসে থেকে এইসব
নুতন নুতন কথা বোঝাচ্ছেন। এইসব নুতন পড়া পড়ে তোমরা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাও। ফার্স্ট সো
লাস্ট, লাস্ট সো ফার্স্ট। এটা তো পড়াশুনা। এখন তোমরা বুঝেছ যে প্রত্যেক কল্পেই বাবা
এসে পতিত থেকে পবিত্র বানান। তারপর এই নলেজ আর থাকবে না। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১) অত্যন্ত বাধ্য এবং মিষ্টি হয়ে থাকতে হবে। দেহ-অহংকারের আসবে না। বাবার সন্তান
হওয়ার পরে কোনো ভুল করা যাবে না। মায়ার সাথে এই বক্সিং-এ খুব হুঁশিয়ার থাকতে হবে।
২) নিজের বাণীতে
শক্তি ভরার জন্য আত্ম-অভিমানী হয়ে থাকার অভ্যাস করতে হবে। যদি স্মরণে থাকে যে বাবা
আমাদেরকে যেসব শিখিয়েছেন সেগুলোই আমি শোনাচ্ছি, তবে সেটাতে ধার ভরতে হবে।
বরদান:-
অবিনাশী
নেশায় থেকে আত্মিক বার্তালাপের মজা আর পুলক অনুভবকারী ব্রাহ্মণ তথা ফরিস্তা ভব
তোমরা ব্রাহ্মণ তথা
ফরিস্তা-রা হলে দেবতাদের থেকেও উচ্চ, দেবত্ব জীবনে বাবার জ্ঞান ইমার্জ হবে না।
পরমাত্ম মিলনের অনুভবও হবে না। এইজন্য এখন সদা এই নেশাই যেন থাকে যে আমরা হলাম
দেবতাদের থেকেও উঁচু ব্রাহ্মণ তথা ফরিস্তা। এই অবিনাশী নেশাই আত্মিক মজা আর আনন্দের
অনুভব করায়। আর যদি সদা নেশা না থাকে তাহলে কখনও আনন্দে থাকবে, কখনও নিরাশ হয়ে থাকবে।
স্লোগান:-
নিজের
সেবাকেও বাবার কাছে অর্পণ করে দাও, তখন বলা হবে সমর্পিত আত্মা।