09-03-2025 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
20-03-2004 মধুবন
"এই বছরকে জীবনমুক্ত বিশেষ বছর রূপে উদযাপন করো, একতা
এবং একাগ্রতার দ্বারা বাবার প্রত্যক্ষতা করাও"
আজ, স্নেহের সাগর চতুর্দিকের স্নেহী বাচ্চাদের দেখছেন। বাবারও বাচ্চাদের প্রতি তাঁর
হৃদয়ের অবিনাশী স্নেহ রয়েছে এবং বাচ্চাদেরও দিলারাম বাবার প্রতি হৃদয়ের স্নেহ
রয়েছে। এই পরমাত্ম স্নেহ, হৃদয়ের স্নেহ শুধু বাবা আর বাচ্চারাই জানে। তোমরা শুধু
ব্রাহ্মণ বাচ্চারাই পরমাত্ম স্নেহের যোগ্য। ভক্ত আত্মারা পরমাত্ম ভালোবাসার জন্য
পিপাসার্ত, তারা আর্তস্বরে আহ্বান করে। তোমরা ভাগ্যবান ব্রাহ্মণ আত্মারা সেই
ভালোবাসার প্রাপ্তির যোগ্য। বাপদাদা জানেন যে বাচ্চাদের ভালোবাসা বিশেষ কেন, কারণ
এই সময়ই সর্ব ভান্ডারের মালিক দ্বারা সমুদয় ভান্ডার প্রাপ্ত হয়। যে ভান্ডার শুধু
এখনের এক জন্ম সাথে চলে না, বরং অনেক জন্ম পর্যন্ত এই অবিনাশী ভান্ডার তোমাদের সাথে
চলে। তোমরা সব ব্রাহ্মণ আত্মা দুনিয়ার অন্য আত্মাদের মতো হাত খালি করে যাবে না,
সর্ব ভান্ডার সাথে থাকবে। তো এমন অবিনাশী ভান্ডারের প্রাপ্তির নেশা থাকে তো না! আর
সব বাচ্চা অবিনাশী ভান্ডার সঞ্চয় করেছো তো, তাই না! সঞ্চয়ের নেশা, সঞ্চয়ের খুশিও
সদা থাকে। প্রত্যেকের মুখমন্ডলে ভান্ডার সঞ্চয়ের ঝলকানি দৃষ্টিগোচর হয়। তোমরা জানো
তো না, কোন ভান্ডার বাবার থেকে প্রাপ্ত হয়? কখনো নিজের সঞ্চয়ের খাতা চেক করো তোমরা?
বাবা তো সব বাচ্চাকে প্রতিটা ভান্ডার অফুরান দিয়ে থাকেন। কাউকে অল্প, কাউকে বেশি
দেন না। প্রত্যেক বাচ্চা অফুরান, অখন্ড, অবিনাশী ভান্ডারের মালিক। বালক হওয়া অর্থাৎ
ভান্ডারের মালিক হওয়া। সুতরাং ইমার্জ করো। কত ভান্ডার বাপদাদা দিয়েছেন!
সবচাইতে প্রথম ভান্ডার হলো - জ্ঞান ধন, তো তোমাদের সকলের জ্ঞান ধন প্রাপ্ত হয়েছে?
প্রাপ্ত হয়েছে, নাকি প্রাপ্ত হবে? আচ্ছা - জমাও হয়েছে? নাকি অল্প জমা হয়েছে আর
অল্প ব্যয় হয়ে গেছে? জ্ঞান ধন অর্থাৎ বিচক্ষণ হয়ে, ত্রিকালদর্শী হয়ে কর্ম করা।
নলেজফুল হওয়া। ফুল নলেজ আর তিন কালের নলেজ বুঝে জ্ঞান ধন কার্যে প্রয়োগ করো। এই
জ্ঞানের ভান্ডার দ্বারা প্রত্যক্ষ জীবনে, সব কার্যে বিধি দ্বারা ইউজ করাতে সিদ্ধি
লাভ হয় - যা অনেক বন্ধন থেকে মুক্তি আর জীবনমুক্তি প্রাপ্ত হয়। অনুভব করো? এইরকম
নয় যে সত্য যুগে জীবন্মুক্তি প্রাপ্ত হবে, এখনো এই সঙ্গমের জীবনেও সীমিত অনেক
বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জীবন বন্ধনমুক্ত হয়ে যায়। জানো তো না! কত বন্ধন
থেকে তোমরা ফ্রী হয়ে গেছো! কত রকমের হায় হায় থেকে মুক্ত হয়ে গেছো! এছাড়া সদা
হায় হায় শেষ হয়ে বাঃ! বাঃ!-এর গীত গাওয়া হয়ে থাকে। কোনও ব্যাপারে মুখ থেকে না
হোক, কিন্তু সংকল্প মাত্রও, স্বপ্ন মাত্রও সামান্যতম যদি 'হায়' মনে আসে তো জীবন
মুক্ত নয়। বাঃ! বাঃ! বাঃ! এমন হয়? মাতারা, হায় হায় তো করো না? না? কখনো কখনো করো?
পান্ডব করে? যদি বা মুখ দ্বারা নাও করো কিন্তু মনে সংকল্প মাত্রও যদি কোনও বিষয়ে
হায় থাকে তবে ফ্লাই করতে পারবে না। হায় অর্থাৎ বন্ধন, আর ফ্লাই - উড়তি কলা অর্থাৎ
জীবন মুক্ত, বন্ধন মুক্ত। অতএব, চেক করো কেননা, ব্রাহ্মণ আত্মারা যতক্ষণ নিজেরা
বন্ধনমুক্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ সোনার, হীরের কোনো না কোনো রয়্যাল বন্ধনের রস্যি বাঁধা
থাকবে, সুতরাং সর্ব আত্মার জন্য মুক্তির গেট খুলতে পারবে না। তোমাদের বন্ধন মুক্ত
হওয়ার মাধ্যমে সর্ব আত্মার জন্য মুক্তির গেট খুলবে। তো গেট খোলার কিংবা সর্ব
আত্মার দুঃখ, অশান্তি থেকে মুক্ত হওয়ার দায়িত্ব তোমাদের ওপরে।
তো চেক করো - নিজের দায়িত্ব কতটা পালন করেছো? তোমরা সবাই বাপদাদার সাথে বিশ্ব
পরিবর্তনের কার্য করার ঠেকা (দায়িত্ব) নিয়েছো। তোমরা চুক্তিবদ্ধ, দায়বদ্ধ। বাবা
যদি চান তো তিনি কিছু করতে পারেন, কিন্তু বাচ্চাদের প্রতি বাবার ভালবাসা রয়েছে,
তিনি একলা করতে চান না, তিনি অবতরিত হওয়া মাত্রই তাঁর সাথে তোমরা সব বাচ্চার অবতরণ
করিয়েছেন। শিবরাত্রি উদযাপন করেছিলে, তাই না! তো কা'র রাত্রি উদযাপন করেছিলে? শুধু
বাপদাদার? তোমাদের সকলেরও উদযাপন করেছ তো না! আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত তোমরা বাবার
সাথী। এই নেশা আছে তোমাদের - আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত বাবার সাথী? ভগবানের সাথী।
তো এই বছরের সিজনের অন্তের পার্ট প্লে করায় বাচ্চাদের কাছে বাপদাদা এটাই চান, বলবো
তোমাদের তিনি কি চান? করতে হবে। শুধু শুনলে হবে না, করতেই হবে। টিচার্স ঠিক আছে?
টিচার্স হাত তোলো। টিচার্স পাখাও নাড়াচ্ছে, গরম লাগে। আচ্ছা, সব টিচার্স করবে আর
করাবে? করাবে, করবে? আচ্ছা। হাওয়াও লাগছে, হাতও নাড়াচ্ছে। সীন ভালো লাগে। খুব ভালো।
তো বাপদাদা এই সিজনের সমাপ্তি সমারোহতে এক নতুন ধরনের দীপমালা উদযাপন করতে চান।
বুঝেছো! নতুন ধরনের দীপমালা উদযাপন করতে চান। তো সবাই তোমরা দীপমালা উদযাপন করার
জন্য তৈরি? যারা তৈরি আছ তারা হাত তোলো। অহেতুক হ্যাঁ ক'রো না। বাপদাদাকে খুশি করার
জন্য হাত তুলো না, অন্তর থেকে তুলো। আচ্ছা। বাপদাদা নিজের হৃদয়ের আশা সম্পন্ন করার
দীপ দেদীপ্যমান দেখতে চান। তো বাপদাদা তাঁর আশার দীপকের দীপমালা উদযাপন করতে চান।
বুঝেছ, কোন দীপাবলি? স্পষ্ট হয়েছে?
তো বাপদাদার আশার দীপক কে? গত বছর থেকে শুরু করে এই বছরেরও সিজন শেষ হয়ে গেছে।
বাপদাদা বলেছিলেন - তোমরাও সবাই সংকল্প করেছিলে, স্মরণে আছে? কেউ কেউ সেই সংকল্প
শুধু সংকল্পের স্তর পর্যন্তই পূর্ণ করেছ, কেউ কেউ সংকল্প অর্ধেক পূর্ণ করেছ আর কেউ
কেউ এখনো ভাবছে, কিন্তু তাদের ভাবনা, ভাবনা পর্যন্তই আছে। সেই সংকল্প কী? কোনো নতুন
বিষয় নয়, পুরানো ব্যাপার - স্ব পরিবর্তন দ্বারা সর্ব পরিবর্তন। বিশ্বের ব্যাপার
তো ছেড়েই দাও, কিন্তু বাপদাদা স্ব পরিবর্তন দ্বারা ব্রাহ্মণ পরিবারের পরিবর্তন
দেখতে চান। এখন এটা শুনতে চান না যে এভাবে হ'লে এটা হবে। এ' যদি বদলায় তবে আমি
বদলাবো, এ' যদি করে তবে আমি করবো... এক্ষেত্রে, প্রত্যেক বাচ্চাকে ব্রহ্মা বাবা
বিশেষভাবে বলছেন যে, 'হে অর্জুন' হও, আমার মতো। এই ব্যাপারে প্রথমে 'আমি'। প্রথমে 'তুমি'
নয়, প্রথমে আমি। এই 'আমি' কল্যাণকারী আমি। আর সীমাবদ্ধতার আমি আমি নিচে নামিয়ে
দেয়। এই বিষয়ে বলা হয়ে থাকে - যে দায়িত্ব পালনের উদ্যোগ নেয় সে অর্জুন, তো
অর্জুন অর্থাৎ নম্বর ওয়ান। নম্বরক্রম নয়, নম্বর ওয়ান। সুতরাং, তোমরা নম্বর দুই
হতে চাও, নাকি নম্বর ওয়ান হ'তে চাও? বাপদাদা অনেক কার্যে হাসির ব্যাপার দেখেছেন,
বাবা পরিবারের ব্যাপার বলেন, পরিবার এখানে বসে আছে তো না! এমন অনেক কাজ হয়, তখন
বাপদাদার কাছে সমাচার আসে, কিছু কার্য এমন হয়, কিছু প্রোগ্রাম এমন হয় যা বিশেষ
আত্মাদের জন্য হয়। তো বাপদাদার কাছে, দাদিদের কাছে সমাচার আসে, কেননা, সাকারে তো
দাদিরা নিমিত্ত। বাপদাদার কাছে সংকল্প তো পৌঁছে যায়। তো কোন সংকল্প পৌঁছায়? আমার
নামও এতে হওয়া উচিত, আমি কী কিছু কম আছি! আমার নাম নেই কেন! তো বাবা বলেন - 'হে
অর্জুন'-এ তোমার নাম নেই কেন! থাকা উচিত তো না! নাকি থাকা উচিত নয়? সামনে মহারথীরা
ব'সে আছে, থাকা তো উচিত, তাই না? থাকা উচিত? তো ব্রহ্মা বাবা সেটা ক'রে দেখিয়েছেন,
তিনি কখনো কারও দিকে দেখেননি, কে করে না করে, কীভাবে করে, না। প্রথমে আমি। এই আমি
বিষয়ে তোমাদের আগে বলা হয়েছিল অনেক প্রকারের রয়্যাল রূপে আমি রয়েছে, বলা
হয়েছিল না! সেই সব আমি এই 'আমি'-র সাথে সমাপ্ত হয়ে যায়। তো এই সিজনের সমাপ্তিতে
এটাই বাপদাদার আশা - প্রত্যেক বাচ্চা যে নিজেকে ব্রহ্মাকুমার, ব্রহ্মাকুমারী বলে,
মানে, জানে, সেই প্রত্যেক ব্রাহ্মণ আত্মা সেই সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হোক,
সীমাবদ্ধতার যে সব বন্ধন সংকল্প রূপে রয়ে গেছে। ব্রহ্মা বাবার মতো বন্ধনমুক্ত,
জীবন্মুক্ত হও। ব্রাহ্মণ জীবনে মুক্ত হও, সাধারণ জীবনে মুক্ত হওয়া নয়। শ্রেষ্ঠ
ব্রাহ্মণ জীবনে মুক্ত হওয়ার এই বর্ষ বিশেষভাবে উদযাপন করো। প্রত্যেক আত্মা যতটা
নিজের সূক্ষ্ম বন্ধনের ব্যাপারে জানে, সেরকম আর কেউ জানতে পারে না। বাপদাদা তো
জানেন, কেননা বাপদাদার কাছে তো টি ভি আছে, মনের টি. ভি., বডির নয়, মনের টি. ভি. আছে।
তাহলে, এখন যে আবার সিজন হবে, সিজন হবে তো না, নাকি বিরতি নেওয়া দরকার? এক বছরের
জন্য অবকাশ নেবে? না? এক বছরের তো অবকাশ হওয়া উচিত? হওয়া উচিত নয়? পান্ডব, এক
বছরের বিরতি হবে? (দাদিজী বলছেন, মাসে ১৫ দিনের অবকাশ) আচ্ছা। খুব ভালো, সবাই বলছো?
যারা বলছো অবকাশের দরকার নেই তারা হাত তোলো। করার দরকার নেই? আচ্ছা। যারা উপরের
গ্যালারিতে তারা হাত নাড়াচ্ছে না। ( সমগ্র সভা হাত নাড়িয়েছে) খুব ভালো। বাবা তো
বাচ্চাদের কাছে সদা হাঁ জী, হাঁ জী করেন, সেটা ঠিক আছে। এখন বাবাকে বাচ্চারা কবে
হাঁ জী করবে! বাবাকে দিয়ে তো হাঁ জী করিয়ে নিয়েছ, তো বাবা বলেন, এখন বাবাও একটা
শর্ত রাখছেন, শর্ত মঞ্জুর হবে? সবাই হাঁ জী তো করো। পাক্কা? তোমরা সামান্য অজুহাতও
দেবে না তো? এখন সবার মুখ টিভিতে দেখাও। এটা ভালো। বাবাও খুশি হন যে সব বাচ্চা হাঁ
জী, হাঁ জী করে।
তো বাপদাদা এটাই চান যে, কোনো কারণ বলবেন না, এই কারণ, এই কারণ ... সেইজন্য এটা
বন্ধন! সমস্যা নয়, সমাধান স্বরূপ হতে হবে এবং সাথীদেরও প্রস্তুত করতে হবে, কারণ
সময়ের অবস্থা তো দেখছো। ভ্রষ্টাচারের বোল কত বাড়ছে! ভ্রষ্টাচার, অত্যাচার অতির
দিকে যাচ্ছে। সুতরাং শ্রেষ্ঠাচারের পতাকা প্রথমে তোমরা সব ব্রাহ্মণ আত্মার মধ্যে
আন্দোলিত হতে দাও, তবে বিশ্বে আন্দোলিত হবে। কত শিবরাত্রি উদযাপন করেছ! প্রতি
শিবরাত্রিতে তোমরা এই সংকল্প ক'রে থাকো যে বিশ্বে বাবার পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
বিশ্বে এই প্রত্যক্ষতার পতাকা উড়ানোর আগে প্রত্যেক ব্রাহ্মণকে নিজের মনের মধ্যে সদা
হৃদয় সিংহাসনে বাবার পতাকার হিল্লোল তুলতে হবে। এই পতাকা আন্দোলিত করার জন্য শুধু
দুটো শব্দ সব কর্মে ব্যবহার করতে হবে। কর্মে ব্যবহার করতে হবে, সংকল্পে নয়,
বুদ্ধিতে নয়। হৃদয়ে, কর্মে, সম্বন্ধে, সম্পর্কে আনতে হবে। কঠিন শব্দ নয়, কমন
শব্দ। সেটা হলো - এক, সর্ব সম্বন্ধ, সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে একতা। বৈচিত্র্যময়
সংস্কার বিদ্যমান, বৈচিত্র্যের মধ্যে একতা আনতে হবে। আর দুই - শ্রেষ্ঠ সংকল্প যেটাই
করো, বাপদাদার খুব ভালো লাগে, যখন সংকল্প করো, তখন সেই সংকল্প দেখে, শুনে বাপদাদা
খুব খুশি হন, বাঃ! বাঃ বাচ্চারা! বাঃ! বাঃ! শ্রেষ্ঠ সংকল্প বাঃ! কিন্তু, একটা কিন্তু
এসে যায়। আসা উচিত নয়, তবুও এসে যায়। তোমাদের মধ্যে অনেক বাচ্চার মেজরিটি সংকল্প,
মেজরিটি অর্থাৎ ৯০% সংকল্প খুব ভালো ভালো হয়। বাপদাদা মনে করেন, আজ এই বাচ্চার
সংকল্প খুব ভালো, প্রগ্রেস হবে কিন্তু সেটা যখন তোমাদের বোলে আসে তখন অর্ধেক কম হয়ে
যায়, কর্মে আবার পৌনে এক ভাগ কম হয়ে যায়, মিক্স হয়ে যায়। কারণ কী? তোমাদের
সংকল্পে একাগ্রতা, দৃঢ়তা নেই। সংকল্পে একাগ্রতা থাকলে তখন একাগ্রতা হতো সফলতার
সাধন, দৃঢ়তা হতো সফলতার সাধন। এতেই ফারাক হয়ে যায়। কারণ কী? রেজাল্টে বাপদাদা
একটা বিষয়ই দেখেন। তোমাদের অন্যের দিকে বেশি নজর থাকে। অন্যের দিকে অঙ্গুলি
নির্দেশ করে তোমরা ব'লে থাকো তো না, (বাপদাদা একটা আঙুল সামনে করে দেখালেন) - এইরকম
করো, তো এক আঙুল অন্যের দিকে, তো চার আঙুল নিজের দিকে থাকে। তো চারকে দেখ না তোমরা,
একটাকে বেশি দেখ। সেইজন্য দৃঢ়তা আর একাগ্রতা, একতা নড়ে যায়। এ' করলে আমি করবো,
এই ব্যাপারে তোমরা উদ্যোগী অর্জুন হয়ে যাও, তা'তে দু' নম্বর হয়ে যাও। নয়তো,
নিজের স্লোগান বদল করো। স্ব পরিবর্তন দ্বারা বিশ্ব পরিবর্তনের পরিবর্তে এটা করো -
বিশ্ব পরিবর্তন দ্বারা স্ব পরিবর্তন। অন্যের পরিবর্তন দ্বারা স্ব পরিবর্তন। বদল করবে?
করবে বদল? করবে না? তাহলে বাপদাদাও একটা শর্ত রাখছেন, মঞ্জুর, বলবো? বাপদাদা ছয়
মাসে রেজাল্ট দেখবেন, আবার আসবেন, তা' নয়তো আসবেন না। বাবা যখন হাঁ জী করেছেন তখন
বাচ্চাদেরও তো হাঁ জী করা উচিত, তাই না! যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, বাপদাদা তো বলেন,
স্ব পরিবর্তনের জন্য সীমাবদ্ধতার আমিত্ব ভাব থেকে মরতে হবে, আমিত্ব ভাব থেকে মরতে
হবে, শরীরের মরণ নয়। শরীরের মরণ নয়, আমিত্ব ভাবের মরণ হতে হবে। আমি রাইট, আমি এই,
আমি কী কম কিছু, আমিই সবকিছু, এই আমিত্ব ভাব থেকে মরতে হবে। তো যদি মরতেও হয় তবে
এই মৃত্যু খুব মধুর মৃত্যু। এটা মরণ নয়, ২১ জন্ম রাজ্য ভাগ্যে বাঁচা। তাহলে মঞ্জুর?
টিচার্স, মঞ্জুর? ডবল ফরেনার্স? ডবল ফরেনার্স যে সংকল্প করে, সেটা করতে মনোবল বজায়
রাখে, এটা বিশেষত্ব। আর ভারতবাসী ট্রিপল মনোবলের, তারা ডবল তো এরা ট্রিপল। তো
বাপদাদা এটাই দেখতে চান। বুঝেছ! এটাই বাপদাদার শ্রেষ্ঠ আশার দীপক, সব বাচ্চার ভিতরে
প্রজ্জ্বলিত এই দীপক দেখতে চান। এখন, এইবার এই দীপাবলি উদযাপন করো। তা সেটা ৬ মাস
পরেই উদযাপন করো না কেন! পরে যখন বাপদাদা দীপাবলির সমারোহ দেখবেন তখন আবার নিজের
প্রোগ্রাম দেবেন। করতে তো হবেই। তোমরা করবে না তো কি যারা আরও পরে এসেছে তারা করবে!
মালা তোমাদের তো না! ১৬,১০৮- এ তো পুরানো তোমাদেরই আসার আছে, তাই না! নতুনরা তো
পিছনে পিছনে আসবে। হ্যাঁ কেউ কেউ লাস্ট সো ফাস্ট আসবে। কেউ কেউ দৃষ্টান্ত হবে, সে
লাস্ট সো ফাস্ট যাবে, ফার্স্ট আসবে। কিন্তু সংখ্যায় অল্প। বাকি তো তোমরাই, প্রতি
কল্পে তোমরাই হয়েছ, তোমাদেরই হতে হবে। যেখানেই বসে থাকো, বিদেশে বসে থাকো, দেশে বসে
থাকো কিন্তু তোমরা যারা বহুকালের পাক্কা নিশ্চয়বুদ্ধির, তারা অবশ্যই অধিকারী।
বাপদাদার ভালবাসা আছে তো না! তো যারা বহুকালের ভালো পুরুষার্থী, সম্পূর্ণ পুরুষার্থী
নয়, কিন্তু ভালো পুরুষার্থী ছিল তাদেরকে বাপদাদা ছেড়ে যাবেন না, সাথেই নিয়ে
চলবেন। সেইজন্য পাক্কা নিশ্চয় করো আমরাই ছিলাম, আমরাই আছি, আমরাই সাথে থাকব। ঠিক
আছে তো না! পাক্কা তো না? ব্যস শুধু শুভচিন্তক, শুভচিন্তন, শুভ ভাবনা, পরিবর্তনের
ভাবনা, সহযোগ দেওয়ার ভাবনা, ক্ষমাসুন্দরের ভাবনা ইমার্জ করো। এখন মার্জ ক'রে রেখেছ।
ইমার্জ করো। শিক্ষা বেশি দিও না, ক্ষমা করো। এক অপরকে শিক্ষা দেওয়ায় সবাই পারদর্শী
কিন্তু ক্ষমার সাথে শিক্ষা দাও। মুরলী শোনানোর সময়, কোর্স করানোর সময়, কিংবা যে
প্রোগ্রামই তোমরা উপস্থাপনা করে থাকো, তা'তে যদি বা তোমরা শিক্ষা দাও কিন্তু
নিজেদের মধ্যে যখন ব্যবসায়িক কর্মে আসো তখন ক্ষমার সাথে শিক্ষা দাও। শুধু শিক্ষা
দিও না, করুণাকর হয়ে যদি শিক্ষা দাও তবে তোমাদের ক্ষমাসুন্দরদৃষ্টি এমন কাজ করবে
যা অন্যের দুর্বলতার ক্ষমা হয়ে যাবে। বুঝেছ।
এখন এক সেকেন্ডে মনের মালিক হয়ে যতটা সময় চাইবে ততটা সময় মনকে একাগ্র করতে পারবে?
করতে পারবে? তো এখন এই অধ্যাত্ম এক্সারসাইজ করো। সম্পূর্ণ ভাবে মনের একাগ্রতা যেন
থাকে। সংকল্পেও চঞ্চলতা নয়। অনড়। আচ্ছা। চতুর্দিকের অবিনাশী সর্ব অখন্ড ভান্ডারের
মালিক, যারা সদা বন্ধনমুক্ত, সঙ্গমযুগী জীবনমুক্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ স্থিতিতে স্থিত
থাকে, সদা বাপদাদার সব আশা সম্পন্ন করে, সদা একতা আর একাগ্রতার শক্তি সম্পন্ন সেই
মাস্টার সর্বশক্তিমান আত্মাদের বাপদাদার স্মরণ-স্নেহ আর নমস্কার।
চতুর্দিকে দূরে ব'সে থাকা বাচ্চাদের, যারা স্মরণ স্নেহ পাঠিয়েছে, পত্র পাঠিয়েছে,
তাদেরও বাপদাদা হৃদয়ের অনেক অনেক ভালবাসা সহ স্মরণের স্নেহ সুমন দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে
অনেক বাচ্চা মধুবনের রিফ্রেশমেন্টের খুব ভালো ভালো পত্র পাঠিয়েছে, সেই বাচ্চাদেরও
বিশেষ স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার।
বরদান:-
অতীতকে চিন্তনে না এনে ফুলস্টপ লাগিয়ে তীব্র
পুরুষার্থী ভব
এখনও পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে - তা'তে ফুলস্টপ লাগাও।
ঘটে যাওয়া অতীত চিন্তনে না আনা - এটাই হলো তীব্র পুরুষার্থ। যদি কোনো অতীত নিয়ে
চিন্তা করো তবে সময়, শক্তি, সংকল্প সব ওয়েস্ট হয়ে যায়। এখন ওয়েস্ট করার সময়
নেই, যদি সঙ্গম যুগের দু'টো মুহূর্ত অর্থাৎ দু'সেকেন্ডও ওয়েস্ট করো তবে অনেক বছর
ওয়েস্ট করে দিলে। সেইজন্য সময়ের গুরুত্বকে জেনে অতীতকে ফুলস্টপ লাগাও। ফুলস্টপ
লাগানো অর্থাৎ সর্ব ভান্ডারে ফুল (পরিপূর্ণ) হওয়া।
স্লোগান:-
যখন সব সংকল্প শ্রেষ্ঠ হবে তখন স্ব এর এবং বিশ্বের
কল্যাণ হবে।
অব্যক্ত ইশারা - একান্তপ্রিয় হও, সত্যতা এবং সভ্যতা
রূপী কালচারকে ধারণ করো জ্ঞানের যে কোনও বিষয়কে সত্যতা আর সভ্যতার অথরিটির সাথে বলো,
সংকোচের সাথে নয়। প্রত্যক্ষতা করানোর জন্য আগে নিজেকে প্রত্যক্ষ করাও, নির্ভীক হও।
ভাষণে শব্দ থাকুক, কিন্তু এমন শক্তিশালী যেন হয় যাতে বাবার পরিচয় এবং স্নেহ
সমাহিত থাকে, যে স্নেহরূপী চুম্বক আত্মাদেরকে পরমাত্মার দিকে আকর্ষণ করে।