12.02.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমরা হলে অতি বড় জহুরী, তোমাদেরকেই অবিনাশী জ্ঞান-রত্ন প্রদান করে সকলকে বিত্তশালী
বানাতে হবে"
প্রশ্নঃ -
নিজের জীবনকে
হীরে-তুল্য বানানোর জন্য কোন্ বিষয়ে নিজেকে অত্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে হবে?
উত্তরঃ
সঙ্গের।
বাচ্চাদের তাদের সঙ্গ করা উচিত যারা ভালোভাবে (জ্ঞান) বর্ষণ করে। যারা বর্ষণ করে
না, তাদের সাথে সঙ্গ রেখে লাভ কি? সঙ্গদোষ ভীষণভাবে লেগে যায়। কেউ কারোর সঙ্গে থেকে
হীরে-তুল্য হয়ে যায়, কেউ আবার কারোর সঙ্গে থেকে মাটির ঢেলা হয়ে যায়। যে জ্ঞানী হবে
সে নিজের মতন অন্যদেরকেও তৈরী করবে। সঙ্গের (দোষ) থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবে।
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি মিষ্টি
আত্মা রূপী বাচ্চাদের বুদ্ধিতে সমগ্র সৃষ্টি, সম্পূর্ণ ড্রামা ভালভাবে স্মরণে রয়েছে।
এর পার্থক্যও বুদ্ধিতে রয়েছে। এই সবই বুদ্ধিতে পাকাপাকিভাবে থাকা উচিত যে, সত্যযুগে
সকলেই শ্রেষ্ঠাচারী, নির্বিকারী, পবিত্র, সমৃদ্ধশালী ছিল। এখন দুনিয়া ভ্রষ্টাচারী,
বিকারী, অপবিত্র, দেউলিয়া হয়ে গেছে। বাচ্চারা, এখন তোমরা সঙ্গমযুগে রয়েছ। তোমরা
এখন ওই পারে(সত্যযুগে) যাচ্ছো। যেমন নদী আর সাগর যেখানে মিলিত হয়, তাকে সঙ্গম বলা
হয়। একদিকে মিষ্টি জল, একদিকে নোনতা জল। এখন এও এক সঙ্গম। তোমরা জানো যে, অবশ্যই
সত্যযুগে লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্য ছিল, পুনরায় এভাবেই চক্র আবর্তিত হয়। এখন হলো
সঙ্গম। কলিযুগের শেষে সকলেই দুঃখী, একে জঙ্গল বলা হয়। সত্যযুগকে বাগিচা বলা হয়। এখন
তোমরা কাঁটা থেকে ফুলে পরিনত হচ্ছো। বাচ্চারা, এই স্মৃতি তোমাদের থাকা উচিত। আমরা
অসীম জগতের পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার নিচ্ছি। একথা বুদ্ধিতে থাকা উচিত। ৮৪ জন্মের
কাহিনী একদমই সাধারণ। তোমরা জানো -- এখন ৮৪ জন্ম পূর্ণ হয়েছে। তোমাদের বুদ্ধি এই
তথ্যে পরিপুষ্ট যে, আমরা এখন সত্যযুগী বাগিচায় যাচ্ছি। এখন আমাদের জন্ম এই
মৃত্যুলোকে আর হবে না। আমাদের জন্ম হবে অমরলোকে। শিববাবাকে অমরনাথ বলা হয়। তিনি
আমাদের অমর কাহিনী শোনাচ্ছেন। ওখানে আমরা শরীরে থেকেও অমর (অকালে মৃত্যু হবে না)
থাকবো। আমরা (সেখানে) নিজেদের খুশী অনুযায়ী শরীর পরিত্যাগ করবো, তাকে মৃত্যুলোক বলা
হয় না। তোমরা কাউকে বোঝালে তারা বুঝবে যে - অবশ্যই এদের মধ্যে জ্ঞান পূর্ণমাত্রায়
রয়েছে। সৃষ্টির আদি এবং অন্ত তো আছে, তাই না। ছোট বাচ্চাও যুবক এবং বৃদ্ধ হয়, পরে
তার মৃত্যু হয়ে যায়, পুনরায় শিশু হিসেবে জন্ম নেয়। সৃষ্টিও নতুন হয়, পরে কোয়ার্টার
(পৌনে) পুরানো, অর্ধেক পুরানো, তারপর সম্পূর্ণ পুরানো হয়ে যায়। পুনরায় নতুন হবে।
এসব কথা আর কেউ কাউকেই শোনাতে পারবে না। এরকমভাবে চর্চা আর কেউ করতে পারবে না। তোমরা
অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা ব্যতীত অন্য আর কেউই আধ্যাত্মিক নলেজ পেতে পারে না। ব্রাহ্মণ কুলে
যখন আসবে তখন শুনবে। এই জ্ঞান শুধুমাত্র ব্রাহ্মণেরাই জানে। ব্রাহ্মণদের মধ্যেও
নম্বরের ক্রমানুসারে হয়। কেউ যথার্থভাবে শোনাতে পারে, কেউ শোনাতে পারে না, তাই
তাদের কিছু প্রাপ্তি হয় না। দেখবে, জহুরীদের মধ্যেও কারোর কাছে কোটি-কোটি সম্পদ থাকে,
আবার কারোর কাছে ১০ হাজারের সম্পত্তিও থাকে না। তোমাদের মধ্যেও এমন-এমন রয়েছে। দেখো,
ইনি জনক, অতি সুদক্ষ জহুরী (রত্নব্যবসায়ী)। এনার কাছে মূল্যবান রত্ন রয়েছে। কাউকে
তা দান করে অতি ধনবান করে দিতে পারে। কেউ ক্ষুদ্র রত্ন-ব্যবসায়ী, বেশী কাউকে দিতে
পারে না তাই তার পদও কম হয়ে যায়। তোমরাও সকলেই হলে জহুরী, এ হলো অবিনাশী
জ্ঞান-রত্নের জহরত। যার কাছে ভালো রত্ন থাকবে সে ধনবান হবে, আর সে অন্যদেরকেও তৈরী
করবে। এমনও নয় যে, সকলেই ভালো জহুরী হবে। ভালো-ভালো জহুরীদের বড়-বড় সেন্টারে পাঠিয়ে
দেওয়া হয়। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভালো-ভালো (জ্ঞান) রত্ন দেওয়া হয়। বড়-বড় দোকানে
এক্সপার্ট থাকে। বাবাকেও বলা হয় -- সওদাগর-রত্নাকর। (বাবা) রত্নের সওদাগরী করেন,
তিনি আবার জাদুকরও কারণ তাঁর কাছেই দিব্য-দৃষ্টির চাবী রয়েছে। কেউ যদি প্রগাঢ়(নৌধা)
ভক্তি করে, তবে তার সাক্ষাৎকার হয়ে যায়। এখানে তেমন কোনো কথা নেই। এখানে তো ঘরে
বসেও অনায়াসেই অনেকের সাক্ষাৎকার হয়ে যায়। দিনে-দিনে সহজ হতে থাকবে। অনেকেরই
ব্রহ্মার আর কৃষ্ণের সাক্ষাৎকার হয়। তাদেরকে বলা হয় ব্রহ্মার কাছে যাও। (সেখানে)
গিয়ে ওঁনার কাছে প্রিন্স হওয়ার পড়াশোনা করো। এই পবিত্র রাজকুমার-কুমারীরাই তো চলে
আসে, তাই না! প্রিন্স-কে পবিত্রও বলা যেতে পারে। জন্ম তো পবিত্রতার মাধ্যমেই হয়,
তাই না। অপবিত্রকে ভ্রষ্টাচারী বলা হবে। পতিত থেকে পবিত্র হতে হবে, একথা বুদ্ধিতে
থাকা উচিত। যা কাউকে বোঝাতেও পারো। মানুষে মনে করে, এ তো অত্যন্ত সেন্সীবেল। তাদের
বলো - আমাদের কাছে কোনো শাস্ত্রাদির জ্ঞান নেই। এ হলো আধ্যাত্মিক জ্ঞান, যা
আধ্যাত্মিক পিতা বোঝান। এ হলো ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শংকর। এরাও (বাবার) রচনা।
রচয়িতা একজনই। উনি (লৌকিক পিতা) হলেন পার্থিব জগতের অর্থাৎ পার্থিব শরীরের রচয়িতা,
আর ইনি হলেন অসীম জগতের পিতা, অসীম জগতের রচয়িতা। বাবা বসে পড়ান, পরিশ্রম করতে হয়।
বাবা ফুলে পরিনত করেন। তোমরা হলে ঈশ্বরীয় কুলের, তোমাদের-কেই বাবা পবিত্র বানান।
পুনরায় যদি অপবিত্র হও তবে কুলের কলঙ্ক হয়ে যায়। বাবা তো জানে, তাই না! পুনরায় তখন
ধর্মরাজের দ্বারা অত্যন্ত শাস্তি দেওয়াবেন। বাবার সঙ্গে ধর্মরাজও তো রয়েছেন।
ধর্মরাজের কর্তব্যও এখনই সম্পূর্ণ হয়। সত্যযুগে তো থাকবেই না। পুনরায় শুরু হবে
দ্বাপর থেকে। বাবা বসে কর্ম, অকর্ম, বিকর্মের গতি বোঝান। মানুষ বলে থাকে - এ
পূর্বজন্মে এমন কর্ম করেছে, যারজন্যই এই ভোগান্তি (কর্মভোগ)। সত্যযুগে এমনভাবে বলা
হবে না। খারাপ কার্যের কোনো নামই সেখানে থাকে না। এখানে মন্দ-ভালো দুই-ই রয়েছে।
সুখ-দুঃখ দুই-ই রয়েছে। কিন্তু সুখ অতি অল্পমাত্রায় রয়েছে। ওখানে আবার দুঃখের কোনো
নামই নেই। সত্যযুগে দুঃখ কোথা থেকে আসবে! তোমরা বাবার কাছ থেকে নতুন দুনিয়ার
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করো। বাবা-ই দুঃখহরণকারী-সুখপ্রদানকারী। দুঃখ কবে থেকে শুরু হয়,
সেও তোমরাই জানো। শাস্ত্রতে তো কল্পের আয়ুই লম্বা-চওড়া করে লিখে দিয়েছে। এখন তোমরা
জানো যে, আধাকল্পের জন্য আমাদের দুঃখ দূরীভূত হয়ে যাবে, আর আমরা সুখ প্রাপ্ত করবো।
এই সৃষ্টির চক্র কীভাবে আবর্তিত হয়, এর উপর বোঝান অতি সহজ। এইসব কথা তোমরা ব্যতীত
আর কারোর বুদ্ধিতেই থাকতে পারে না। লক্ষ-লক্ষ বছর বলে দেওয়ায় সব কথা বুদ্ধি থেকে
বেরিয়ে যায়।
এখন তোমরা জানো যে -
এই চক্র ৫ হাজার বছরের। যেন কালকেরই কথা, যখন এই সূর্যবংশীয়-চন্দ্রবংশীয়দের রাজ্য
ছিল। বলাও হয় যে, ব্রাহ্মণদের দিন, এমনও নয় যে বলবে, শিববাবার দিন। ব্রাহ্মণদের দিন,
পুনরায় ব্রাহ্মণদের রাত। ব্রাহ্মণ পুনরায় ভক্তিমার্গেও চলে আসে। এখন হলো সঙ্গম। না
দিন, না রাত। তোমরা জানো যে, আমরাই ব্রাহ্মণ, পুনরায় দেবতা হবো, পরে ত্রেতায়
ক্ষত্রিয় হবো। এ কথা বুদ্ধিতে পাকাপাকিভাবে স্মরণ করে নাও। এসমস্ত কথা আর কেউ জানে
না। ওরা তো বলবে যে, শাস্ত্রে এত আয়ু লেখা রয়েছে, তোমরা তবে এই হিসাব কোথা থেকে
এনেছো? এই অনাদি ড্রামা পূর্ব-নির্ধারিত, একথা কেউ জানে না। বাচ্চারা, কেবল তোমাদের
বুদ্ধিতেই রয়েছে যে - আধাকল্প হলো সত্যযুগ-ত্রেতা, পুনরায় আধা থেকে ভক্তি শুরু হয়।
ওটা হয়ে গেলো ত্রেতা আর দ্বাপরের সঙ্গম। দ্বাপর থেকেই এই শাস্ত্রাদি ধীরে-ধীরে তৈরি
করা হয়। ভক্তিমার্গের সামগ্রী অতি দীর্ঘ। যেমন বৃক্ষ(ঝাড়) কত বিস্তারিত (লম্বা-চওড়া)
হয়। এর বীজ হলেন বাবা। এ হলো উল্টো বৃক্ষ। সর্বপ্রথমে আসে আদি সনাতন দেবী-দেবতা
ধর্ম। এসমস্ত কথা যা বাবা শোনান তা সম্পূর্ণ নতুন। এই দেবী-দেবতা ধর্মের (ধর্ম)
স্থাপককে কেউই জানে না। কৃষ্ণ তো শিশু। জ্ঞান শোনান বাবা। বাবার নাম সরিয়ে
বাচ্চার(কৃষ্ণ) নাম দিয়ে দিয়েছে। কৃষ্ণেরই চরিত্রাদি (অ্যাক্টিভিটি) দেখানো হয়েছে।
বাবা বলেন - এতে কৃষ্ণের কোনো লীলা(মহিমা) নেই। গায়নও করে - হে প্রভু, তোমার অপার
মহিমা। লীলা একজনেরই হয়। শিববাবার মহিমা সম্পূর্ণ পৃথক। তিনি হলেন সদা পবিত্র,
কিন্তু তিনি পবিত্র শরীরে তো আসতে পারেন না। ওঁনাকে আহ্বানও করা হয় - পতিত দুনিয়ায়
এসে পবিত্র বানাও। তাই বাবা বলেন - আমাকেও পতিত দুনিয়ায় আসতে হয়। এঁনার (ব্রহ্মার)
অনেক জন্মের অন্তিম লগ্নে এসে প্রবেশ করি। তাই বাবা বলেন, মুখ্য কথা হলো অল্ফ-কে
স্মরণ করো, বাকি সবকিছুই হলো ডিটেইল । সেইসব তো ধারণ করতে পারবে না। যা ধারণ করতে
পারবে, সেসবই তিনি তাদেরকে বোঝান। এছাড়া আমি শুধু বলে দিই - 'মন্মনাভব'। বুদ্ধি তো
নম্বরের ক্রমানুসারেই হয়, তাই না। কোনো মেঘ অতি বর্ষণ করে, কোনো মেঘ আবার অল্প
বর্ষণ করে চলে যায়। তোমরাও তো (জ্ঞানের) মেঘ, তাই না। কেউ আবার একদমই বর্ষণ করে
না। জ্ঞানকে আকর্ষণ বা গ্রহণ করার শক্তিই নেই। মাম্মা-বাবা তো ভালো মেঘ, তাই না।
যারা ভালভাবে বর্ষণ করে, বাচ্চাদেরও তাদের সঙ্গ-ই করা উচিত। যারা বর্ষণ করেই না,
তাদের সাথে সঙ্গ করে কি হবে? সঙ্গদোষও অনেক হয়। কেউ (কারোর) সঙ্গ করে হীরে-তুল্য হয়ে
যায়, কেউ আবার কারোর সঙ্গে থেকে মাটির ঢেলা হয়ে যায়। যে ভালো, তার পিঠ ধরে নেওয়া
উচিত অর্থাৎ তাকে ফলো করা উচিত। যে জ্ঞানী হবে সে (অপরকেও) নিজ-সম ফুলে পরিনত করবে।
সত্য-পিতার মাধ্যমে যারা জ্ঞানবান আর যোগী হয়েছে, তাদের সঙ্গ করা উচিত। এমন মনে করা
উচিত নয় যে, আমরা অমুকের লেজ ধরে পার হয়ে যাবো। এমন অনেকেই বলে। কিন্তু এখানে তো
সেরকম কোনো কথা নেই। স্টুডেন্ট কারোর লেজ ধরলে পাস হয়ে যাবে কী? পড়তে হবে, তাই না।
বাবাও এসে নলেজ দেন। এইসময় তিনি জানেন যে, আমাকে জ্ঞান প্রদান করতে হবে। ভক্তিমার্গে
ওদের (লোকেদের) বুদ্ধিতে একথা থাকে না যে, আমাদের জ্ঞান প্রদান করতে হবে। এ সবই
ড্রামায় নির্ধারিত রয়েছে । বাবা কিছুই করেন না। ড্রামায় দিব্য-দৃষ্টি প্রাপ্ত করার
পার্ট রয়েছে, তাই সাক্ষাৎকার হয়ে যায়। বাবা বলেন, এমনও নয় যে আমি বসে-বসে
সাক্ষাৎকার করাই। এও ড্রামায় পূর্ব-নির্ধারিত। আবার কেউ যদি দেবীর সাক্ষাৎকার করতে
চায়, দেবী তো তা করাবে না, তাই না! তারা বলেও - হে ঈশ্বর, আমাদের সাক্ষাৎকার করাও।
বাবা বলেন, ড্রামায় যদি নির্ধারিত করা থাকে তাহলে হয়ে যাবে। আমিও ড্রামায় বন্ধনে
আবদ্ধ রয়েছি।
বাবা বলেন, আমি এই
সৃষ্টিতে এসেছি। এনার মুখ দ্বারা আমি বলছি, এনার নেত্র দ্বারা আমি দেখছি। যদি এই
শরীর না থাকে তবে কী করে দেখতে পাবো? পতিত দুনিয়াতেই আমাকে আসতে হয়। স্বর্গে তো
আমাকে ডাকাই হয় না। আমাকে ডাকাই হয় সঙ্গমে। যখন সঙ্গমে এসে শরীর ধারণ করি, তখনই দেখি।
নিরাকার-রূপে তো কিছু দেখতে পাই না। অরগ্যান্স ছাড়া আত্মা কিছুই করতে পারে না। বাবা
বলেন, শরীর ছাড়া আমি কীভাবে দেখবো, কীভাবে নড়াচড়া করবো। এ তো অন্ধশ্রদ্ধা যে যারা
বলে, ঈশ্বর সবকিছু দেখেন, সবকিছু তিনিই করেন। কিন্তু দেখবেন কীভাবে? যখন
কর্মেন্দ্রিয় প্রাপ্ত হবে তখনই তো দেখবেন, তাই না। বাবা বলেন - ড্রামানুসারে ভালো
বা খারাপ কার্য প্রত্যেকেই করে। এটাই নির্ধারিত। আমি কী বসে-বসে এত কোটি কোটি
মানুষের হিসাব রাখবো, না তা রাখবো না, আমার (ব্রহ্মার) শরীর আছে, তাই সবকিছু করি।
করন-করাবনহারও তখনই বলা হয়। তা নাহলে বলতে পারবে না। যখন আমি এনার মধ্যে আসবো, তখনই
তো এসে পবিত্র বানাবো। উপরে আত্মা কী করবে? শরীরের সাহায্যেই পার্ট প্লে করবে, তাই
না! আমিও এখানে এসে পার্ট প্লে করি।সত্যযুগে আমার কোনো পার্ট থাকে না। পার্ট না
থাকলে কেউ কিছু করতে পারে না। শরীর ব্যতীত আত্মা কিছুই করতে পারে না। আত্মাকে
আহ্বান করা হয়, সেও তো শরীরে এসেই বলবে, তাই না। কর্মেন্দ্রিয় ব্যতীত কিছুই করতে
পারে না। এটাই হলো ডিটেলে (বিস্তারিত ভাবে) বোঝানো। প্রধানতঃ একথাই বলা হয় যে, বাবা
আর তাঁর উত্তরাধিকারকে স্মরণ করো। অসীম জগতের বাবা এত বড় (মহান, সর্বোচ্চ) তিতি,
ওনার থেকে উত্তরাধিকার কখন প্রাপ্ত হবে - একথা কেউ জানে না। তারা বলে - এসে দুঃখহরণ
করো, সুখ প্রদান করো, কিন্তু কবে? একথা কেউ জানে না। বাচ্চারা, তোমরা এখনই এই নতুন
কথা শুনছো। তোমরা জানো যে, আমরা এখন অমরত্ব লাভ করছি, অমরলোকে যাচ্ছি। তোমরা অমরলোকে
কতবার গেছো? অনেকবার। এর কখনো অন্ত হয় না। অনেকেই বলে মোক্ষ (চির মুক্তি, আর জন্ম
নিতে হবে না) কী প্রাপ্ত হবে না? বলো - না, এ হলো অনাদি অবিনাশী ড্রামা, এর কখনো
বিনাশ হতে পারে না। অনাদিকাল থেকে এই চক্র আবর্তিত হতেই থাকে। বাচ্চারা, তোমরা
এইসময় সত্যিকারের সাহেবকে জেনে গেছো। তোমরা হলে সন্ন্যাসী, তাই না। ওরা ফকির নয়।
সন্ন্যাসীদেরও ফকির বলা হয়। তোমরা হলে রাজঋষি, ঋষিকেও সন্ন্যাসী বলা হয়। এখন তোমরা
পুনরায় ধনবান হচ্ছো। ভারত কত বিত্তশালী ছিল, এখন কেমন ফকির অর্থাৎ কাঙ্গাল হয়ে গেছে।
অসীম জগতের বাবা এসে অসীম জগতের উত্তরাধিকার দেন। গানও রয়েছে - বাবা তুমি যা দাও,
তা আর কেউ দিতে পারে না। তুমি আমাদের বিশ্বের মালিক করে দাও, যা কেউ লুঠ করতে পারে
না। এই রকম এই রকম গান যারা রচনা করেছে, তারা এর অর্থ নিয়েও ভাবেনি। তোমরা জানো যে,
ওখানে পার্টিশন (দেশ ভাগ) ইত্যাদি হয় না, এখানে কত পার্টিশন। ওখানে আকাশ-ধরনী সবকিছু
তোমাদেরই থাকে। তাহলে এতটা খুশী বাচ্চাদের তো থাকা উচিত, তাই না। সর্বদা মনে করবে
শিববাবা শোনাচ্ছেন কারণ তিনি কখনো কোনদিন ছুটি নেন না, কখনো অসুস্থ হন না। স্মরণ সদা
শিববাবারই করা উচিত। ওঁনাকে বলা হয় নিরহংকারী। আমি এটা করি, আমি ওটা করি, এমন
অহংকার আসা উচিত নয়। সেবা করা আমাদের কর্তব্য, এতে অহংকার আসা উচিত নয়। অহংকার
এলেই পতন। সার্ভিস করতে থাকো, এটাই হলো আধ্যাত্মিক সেবা। বাকি সবকিছুই হলো
শরীর-সম্বন্ধীয় (পার্থিব) । আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
বাবা যা পড়ান, তার রিটার্নে ফুলে পরিণত হয়ে দেখাতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। কখনো
ঈশ্বরীয় কুলের নাম কলঙ্কিত করা উচিত নয়। যে জ্ঞানী আর যোগী, কেবল তার সঙ্গই করা
উচিত।
২ ) আমিত্ব-কে
পরিত্যাগ করে নিরহংকারী হয়ে ঈশ্বরীয় সেবা করতে হবে, একে নিজের কর্তব্য মনে করা উচিত।
অহংকারের বশে আসা উচিত নয়।
বরদান:-
ব্যর্থকেও শুভ ভাব আর শ্রেষ্ঠ ভাবনার দ্বারা পরিবর্তন করে সত্যিকারের মরজীবা ভব
বাপদাদার শ্রীমত হল
বাচ্চারা, ব্যর্থ কথা শুনবে না, শোনাবে না আর চিন্তাও করবে না। সদা শুভ ভাবনা নিয়ে
চিন্তা করবে, শুভ কথা বলবে। ব্যর্থকেও শুভ ভাবনা দিয়ে শুনবে। শুভ চিন্তক হয়ে বাণীর
ভাবকে পরিবর্তন করে দেবে। সদা ভাব আর ভাবনা শ্রেষ্ঠ রাখবে। নিজেকে পরিবর্তন করবে
নাকি অন্যের পরিবর্তনের কথা চিন্তা করবে। নিজের পরিবর্তনই হলো অন্যের পরিবর্তন, এতে
প্রথমে আমি - এই মরজীবা হওয়াতেই মজা আছে, একেই মহাবলী বলা হয়। এতে খুশী-খুশীতে
মৃত্যুবরণ করো। এই মৃত্যুই হল জীবিত থাকা, এটাই হল সত্যিকারের জীবনদান।
স্লোগান:-
সংকল্পের একাগ্রতা শ্রেষ্ঠ পরিবর্তনে ফাস্ট গতি নিয়ে আসে।
অব্যক্ত ঈশারা -
একান্তপ্রিয় হও, একতা আর একাগ্রতাকে ধারণ করো
সংগঠনের শক্তি যেটা
চায় সেটা করতে পারে। সংগঠনের নিদর্শন স্বরূপ স্মরণিক হল পঞ্চ পান্ডব। একতার শক্তি,
হ্যাঁ জি, হ্যাঁ জি, নিজের মতামত জানানো, পুনরায় একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া। এই
একতাই হল সফলতার সাধন।