16.04.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
নিজের অবস্থা দেখো যে, আমার মন একমাত্র বাবার দিকেই থাকে নাকি কোনও কর্ম সম্বন্ধের
দিকে থাকে"
প্রশ্নঃ -
নিজের কল্যাণ
করার জন্য চার্টে (পোতামেল) কোন্ দুটি বিষয় রোজ দেখা উচিত?
উত্তরঃ
"যোগ এবং
আচার-আচরণ" এর পোতামেল রোজ দেখো। চেক করো কোনও ডিস-সার্ভিস কর'নি তো? সদা নিজেকে
জিজ্ঞাসা করো, আমি বাবাকে কতখানি স্মরণ করি? নিজের সময় কীভাবে সফল করি? অপরকে দেখি
না তো? কোনও নাম-রূপে মন আটকে নেই তো?
গীতঃ-
নিজের চেহারা
দেখে নে রে প্রাণী...
ওম্ শান্তি ।
এই কথাটি কে
বলছে? অসীম জগতের আত্মিক পিতা বলছেন হে আত্মারা । প্রাণী অর্থাৎ আত্মা । বলা হয় না
যে - আত্মা বেরিয়ে গেলো অর্থাৎ প্রাণ বেরিয়ে গেলো। এখন বাবা সামনে বসে বোঝাচ্ছেন,
হে আত্মারা, স্মরণ করে দেখো, কেবল এই জন্মকেই দেখো না, যখন থেকে তোমরা তমোপ্রধান
হয়েছো, অর্থাৎ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে পতিত হয়েছো। সুতরাং নিশ্চয়ই পাপ কর্ম করেছো।
এখন হলো সবই বোঝার মতো বিষয় । জন্ম জন্মান্তরের কত পাপের ভার মাথায় রয়েছে, কীভাবে
জানবে। নিজেকে দেখতে হবে আমরা সহজে যোগযুক্ত হয়ে থাকি কিনা । বাবার সাথে যত যত ভালো
ভাবে যোগ যুক্ত হয়ে থাকবে ততই বিকর্ম বিনাশ হবে। বাবা বলেছেন আমাকে স্মরণ করো তাহলে
গ্যারান্টি যে তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে। নিজের মনের মধ্যে প্রত্যেকে দেখো যে বাবার
সাথে আমাদের যোগ কতক্ষণ থাকে? আমরা যত যোগ যুক্ত হয়ে থাকবো, পবিত্র হবো, পাপ কাটবে,
যোগ বাড়বে। পবিত্র না হলে যোগও লাগবে না। এমনও অনেকে আছে যারা সারা দিনে ১৫ মিনিটও
স্মরণে থাকে না। নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত - আমার মন শিববাবার দিকে আছে নাকি
দেহধারীর দিকে? নাকি কার্মিক রিলেশন্সের দিকে মন যায়? মায়া তো বাচ্চাদের সামনে ঝড়
আনবে তাইনা ! নিজেই বুঝতে পারবে নিজের অবস্থা কেমন? শিববাবার সাথে মন যোগযুক্ত থাকে
নাকি দেহধারীর সঙ্গে? কর্ম সম্বন্ধের আত্মাদের দিকে মন থাকলে (কার্মিক রিলেশন্স)
বুঝতে হবে বিকর্ম অনেক আছে, ফলে মায়া গর্তে ঠেলে দেয়। স্টুডেন্ট মনে মনে বুঝতে পারে,
আমরা পাস করবো, না করবো না? ভালো ভাবে পড়াশোনা করি কি করি না? নম্বর অনুসারে তো হয়
তাইনা। আত্মাকে নিজের কল্যাণ করতে হবে। বাবা নির্দেশ দেন, যদি তোমরা পুণ্য আত্মা হয়ে
উঁচু পদ মর্যাদা পেতে চাও তো তার জন্য প্রথমেই চাই পবিত্রতা । এসেছো পবিত্র ফিরে
যেতেও হবে পবিত্র, পতিত কখনও উঁচু পদ প্রাপ্ত করতে পারে না। সদা নিজের মনকে জিজ্ঞাসা
করা উচিত - আমরা কতক্ষণ বাবার স্মরণে থাকি, আমরা কি করি? এই কথা তো নিশ্চিত যে যারা
পিছনের দিকে বসে আছে সেই স্টুডেন্টদের মনে অনুশোচনা হয়। পুরুষার্থ করে তারা উঁচু পদ
প্রাপ্ত করার জন্য। কিন্তু আচার আচরণও ঠিক থাকা চাই, তাইনা। বাবাকে স্মরণ করে নিজের
মাথা থেকে পাপের বোঝা নামাতে হবে। পাপের বোঝা একমাত্র স্মরণ ছাড়া আমরা নামাতে পারবো
না। অতএব বাবার সঙ্গে কতখানি যোগ যুক্ত হওয়া উচিত। উচ্চ থেকেও উচ্চ হলেন বাবা, তিনি
এসে বলেন আমি তোমাদের বাবা, আমাকে স্মরণ করো তো বিকর্ম বিনাশ হবে। সময় কাছে আসছে।
শরীরের কোনও বিশ্বাস নেই। হঠাৎ কতরকমের অপঘাত হয়ে যায়। অকাল মৃত্যুর তো ফুল সীজন
চলছে। অতএব প্রত্যেককে নিজের চেকিং করে নিজের কল্যাণ করতে হবে। পুরো দিনের কর্মের
চার্ট দেখা উচিত - যোগ ও আচার-আচরণের চার্ট। আমরা পুরো দিন কত পাপ করেছি? মন্সা,
বাচা অর্থাৎ মনের সংকল্পে, মুখের কথায় প্রথমে আসি পরে কর্ম করি। এখন বাচ্চারা সঠিক
বুদ্ধি প্রাপ্ত করেছে যে আমাদের ভালো কর্ম করতে হবে। কাউকে কি ধোঁকা দিয়েছি? শুধু
শুধু মিথ্যা কথা কি বলেছি? কেউ কারও নাম-রূপে আকৃষ্ট হয়ে যজ্ঞ পিতার নিন্দে করায়।
বাবা বলেন কাউকেই
দুঃখ দিও না। একমাত্র বাবার স্মরণে থাকো। এ হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা। যদি আমরা
স্মরণে না থাকি তো কিরূপ গতি হবে! এই সময় গাফিলতি করলে পরে খুব অনুশোচনা করতে হবে।
এই কথাও বোঝা যায় যে যারা হালকা পদ প্রাপ্ত করার তারা হালকা পদ-ই প্রাপ্ত করবে।
বুদ্ধি দ্বারা বুঝতে পারো আমাদের কি করতে হবে। সবাইকে এই মন্ত্র দিতে হবে যে বাবাকে
স্মরণ করো। লক্ষ্য তো বাচ্চারা পেয়েছে। এইসব কথা দুনিয়ার মানুষ বুঝবে না। সর্ব
প্রথম মুখ্য কথা হলো বাবাকে স্মরণ করার। রচয়িতা ও রচনার নলেজ তো পেয়েছো। রোজ কোনো
নতুন পয়েন্টও দেওয়া হয় বোঝানোর জন্য। যেমন বিরাট রূপের চিত্র, এই বিষয়েও তোমরা
বোঝাতে পারো। কীভাবে বর্ণে আসে - এই চিত্রটিও সিঁড়ির পাশে রাখার চিত্র। সারা দিন
বুদ্ধিতে এই চিন্তন যেন থাকে কাকে কীভাবে বোঝানো যায়? সার্ভিস করলেও বাবার স্মরণ
থাকবে। বাবার স্মরণের দ্বারা বিকর্ম বিনাশ হবে। নিজেরও কল্যাণ করতে হবে। বাবা
বুঝিয়েছেন তোমাদের মাথায় ৬৩ জন্মের পাপ জমা আছে। পাপ কর্ম করতে করতে সতোপ্রধান থেকে
তমোপ্রধান হয়েছো। এখন আমার হয়ে আবার কোনও পাপ কর্ম করো না। মিথ্যা, প্রবঞ্চনা (শয়তানী),
ঘর সংসারে ভাঙন ধরানো, শোনা কথায় বিশ্বাস করা - এইসব কুকর্ম খুবই ক্ষতিকারক। বাবার
সাথে যোগযুক্ত হতে দেয় না, সুতরাং কতখানি পাপ হয়ে যায় । গভর্নমেন্টের এমন লোকও থাকে
যারা গভর্নমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় কথা শত্রু দেশ গুলিকে জানিয়ে দিয়ে অনেক ক্ষতি
করে। তখন তাদের কঠিন দন্ড ভোগ করতে হয়। তাই বাচ্চাদের মুখে সর্বদা জ্ঞান রত্ন থাকা
উচিত। ভুল খবর একে অপরকে জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়। জ্ঞানের কথোপকথন করা উচিত। তোমরা
কীভাবে বাবার সাথে যোগ যুক্ত হও? কাউকে কীভাবে বোঝাও? সারাদিন যেন এই চিন্তন থাকে।
চিত্রের সামনে গিয়ে বসা উচিত। তোমাদের বুদ্ধিতে নলেজ তো আছে, তাইনা। ভক্তি মার্গে
তো অনেক প্রকারের চিত্রের পূজা অর্চনা করা হয়। যদিও কিছুই জানে না। ব্লাইন্ড ফেথ (অন্ধ
বিশ্বাস), আইডল ওয়ার্শিপ (মূর্তি পূজা) এইসব কথায় ভারত বিখ্যাত। এখন তোমরা এইসব কথা
বোঝাতে কত পরিশ্রম করো। প্রদর্শনীতে কতো মানুষ আসে। বিভিন্ন প্রকারের মানুষ আসে,
কেউ বোঝে, এই সব দেখে বুঝে নিতে সক্ষম থাকে। আচ্ছা দেখবো, এই বলে আর কখনও সেন্টারে
যায় না। দিন দিন দুনিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ঝগড়া ইত্যাদি হয়, বিদেশে কত
কিছু হচ্ছে - বলার নয়। কত মানুষ মরে যাচ্ছে। দুনিয়া তমোপ্রধান হয়েছে তাইনা। যদিও বলে
বোমা ইত্যাদি তৈরি করা উচিত নয়। কিন্তু তারা বলে তোমাদের কাছে অঢেল বোমা আছে তাহলে
আমরা বানাবো না কেন। নাহলে গোলাম হতে হবে। যা কিছু মতামত প্রকাশ পায় সবই বিনাশের
জন্য। বিনাশ তো হবেই। বলা হয় শঙ্কর হলো অনুপ্রেরক কিন্তু এতে অনুপ্রেরণা ইত্যাদির
কোনও কথা নেই। আমরা তো ড্রামার পটে দাঁড়িয়ে আছি। মায়া খুবই প্রবল। আমার সন্তানদের
বিকার গ্রস্ত করে দেয়। কত বোঝানো হয় দেহের সাথে প্রীতি রেখো না, নাম-রূপের জালে আটকে
যেও না। কিন্তু মায়াও এমনই তমোপ্রধান যে দেহের জালে বন্দী করে। একদম নাক দিয়ে ধরে
নেয় অর্থাৎ শক্ত হাতে ধরে নেয়। কেউ টের পায়না। বাবা কত বোঝান - শ্রীমৎ অনুযায়ী চলো,
কিন্তু চলে না। রাবণের মতামত সহজে বুদ্ধিতে এসে যায়। রাবণ জেল থেকে মুক্তি দেয় না।
বাবা বলেন নিজেকে
আত্মা নিশ্চয় করো, বাবাকে স্মরণ করো। ব্যস্, এবার আমরা আত্মারা ফিরবো। অর্ধকল্পের
অসুখ থেকে মুক্তি পাবো। সেখানে তো থাকে নিরোগী কায়া অর্থাৎ সুন্দর সুস্থ শরীর ।
এখানে কত রুগী রা থাকে। এই হল ঘোর নরক। যদিও তারা গড়ুর পুরাণ পাঠ করে কিন্তু পড়ে বা
শুনে কেউ কিছুই বোঝে না। বাবা নিজে বলেন আগেকার দিনে ভক্তির কত নেশা ছিল। ভক্তি
দ্বারা ভগবান প্রাপ্তি হবে, এই কথা শুনে খুশী হয়ে ভক্তি করা হত। পতিত হয়ে তবেই তো
ডাকা হয় - হে পতিত-পাবন এসো। ভক্তি করো সে তো ভালো কথা তবুও ভগবানকে স্মরণ কেন করো!
তারা ভাবে ভগবান এসে ফল দেবেন। কি ফল দেবেন - সে কথা জানা নেই। বাবা বলেন
গীতাপাঠীদের বোঝানো উচিত, তারা-ই হল আমাদের ধর্মের। প্রথম মুখ্য কথাটি গীতায় আছে
ভগবানুবাচ। এবারে গীতার ভগবান কে? ভগবানের পরিচয় তো চাই তাইনা। তোমরা জেনেছো যে -
আত্মা কি, পরমাত্মা কি? মানুষ জ্ঞানের কথা শুনে কত ভয় পায়। ভক্তি এতই ভালো লাগে।
জ্ঞানের কথা থেকে ৩ ক্রোশ দূরে পালায়। আরে, পবিত্র হওয়া তো ভালো কথা, এখন পবিত্র
দুনিয়া স্থাপন হচ্ছে, পতিত দুনিয়ার বিনাশ হবে। কিন্তু কেউ শোনে না। বাবার ডাইরেকশন
হলো - হিয়ার নো ইভিল (খারাপ কথা শুনো না).... মায়া যদিও বলে হিয়ার নো বাবার কথা।
মায়ার ডাইরেকশন হলো শিববাবার জ্ঞান শুনবে না। এমন জোরে চড় দিয়ে দেয় যে বুদ্ধিতে
জ্ঞান থাকে না। বাবাকে স্মরণ করতেই পারবে না। আত্মীয় পরিজন, দেহধারীর কথা মনে পড়বে।
স্মরণে এলেই পতন হবে। এইসব কথায় ঘৃণা অনুভব হওয়া উচিত। এ হলো একেবারে নোংরা ছিঃ ছিঃ
দুনিয়া। আমাদের জন্য নতুন স্বর্গ স্থাপন হচ্ছে। তোমরা বাচ্চারা বাবা আর সৃষ্টি
চক্রের পরিচয় প্রাপ্ত করেছো তো এই পড়াশোনাতেই ব্যস্ত থাকা উচিত। বাবার বলেন নিজের
মনের ভিতরে দেখো। নারদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়, তাইনা। অতএব বাবা বলেন - নিজেকে দেখো,
আমরা বাবাকে কি স্মরণ করি? স্মরণের দ্বারা পাপ ভস্ম হবে। যে কোনও পরিস্থিতিতে
শিববাবাকে স্মরণ করতে হবে, অন্য কারো সঙ্গে ভালোবাসা রাখবে না। শেষ সময়ে শিববাবার
স্মরণে থেকে যেন প্রাণ বের হয়। যেন শিববাবার স্মরণ থাকে এবং স্বদর্শন চক্রের জ্ঞান
থাকে। স্বদর্শন চক্রধারী কে, সে কথাও কেউ জানে না। ব্রাহ্মণদেরও এই নলেজ কে দিয়েছে?
ব্রাহ্মণদের স্বদর্শন চক্রধারী কে বানিয়েছে? পরম পিতা পরমাত্মা বিন্দু। তাহলে উনিও
কি স্বদর্শন চক্রধারী? হ্যাঁ, সর্ব প্রথমে হলেন তিনি। তা নাহলে আমরা ব্রাহ্মণ
আমাদেরকে কে বানাবে? সম্পূর্ণ রচনার আদি, মধ্য, অন্তের নলেজ আছে তাঁর মধ্যে।
তোমাদের আত্মাও তেমন হয়, সেও হলো আত্মা। ভক্তিমার্গে বিষ্ণুকে চক্রধারী বানিয়েছে।
আমরা বলি পরমাত্মা হলেন ত্রিকালদর্শী, ত্রিমূর্তি, ত্রিনেত্রী। তিনি আমাদের
স্বদর্শন চক্রধারী করেন। তিনি অবশ্যই মানব দেহে প্রবেশ করে জ্ঞান শোনাবেন। রচনার
আদি-মধ্য-অন্তের জ্ঞান অবশ্যই রচয়িতা শোনাবেন তাইনা। রচয়িতার কোনও পরিচয় না থাকার
দরুন রচনার জ্ঞান প্রাপ্ত হয় না। এখন তোমরা বুঝেছো শিববাবা-ই হলেন স্বদর্শন চক্রধারী,
তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর। তিনি জানেন আমরা কীভাবে এই ৮৪-র চক্রে আসি। তিনি নিজে
পুনর্জন্মে আসেন না। তিনি জ্ঞান সম্পন্ন, তিনি আমাদের সেই জ্ঞান প্রদান করেন। সুতরাং
সর্ব প্রথমে শিববাবা হলেন স্বদর্শন চক্রধারী। শিববাবা আমাদের স্বদর্শন চক্রধারী
করেন। পবিত্র করেন কারণ তিনি হলেন পতিত-পাবন। রচয়িতাও তিনি। বাবা নিজের বাচ্চাদের
জীবন সম্পর্কে জানেন তাইনা। শিববাবা ব্রহ্মার দ্বারা স্থাপনা করেন। কর্ম করান তিনি,
তাইনা। তোমরাও শেখো, শেখাও। বাবা পড়ান তারপর বলেন অন্যদের পড়াও। সুতরাং শিববাবা-ই
তোমাদের স্বদর্শন চক্রধারী বানান। তিনি বলেন সৃষ্টির সম্পূর্ণ জ্ঞান আমার আছে তাই
তো তোমাদের জ্ঞান শোনাই। অতএব ৮৪ জন্ম কীভাবে নিয়েছো - এই ৮৪ জন্মের কাহিনী বুদ্ধিতে
থাকা উচিত। এই নলেজ বুদ্ধিতে থাকলেও চক্রবর্তী রাজা হতে পারো। এ হলো জ্ঞান। যদিও
যোগের দ্বারা পাপ বিনষ্ট হয়। সারা দিনের কর্মের চার্ট রাখো। স্মরণ না করলে কর্মের
চার্ট কীভাবে রাখবে! সারা দিন কি কি কর্ম করেছো - সেসব তো স্মরণে থাকে তাইনা। এমনও
মানুষ আছে, নিজের কর্মের চার্ট রাখে - কত গুলি শাস্ত্র পাঠ করেছি, কত পুণ্য কর্ম
করেছি? তোমরা তো বলবে - কতক্ষণ স্মরণ করেছি? কতখানি খুশীর অনুভূতি নিয়ে বাবার পরিচয়
দিয়েছি? বাবার কাছ থেকে যে জ্ঞানের পয়েন্ট প্রাপ্ত হয়েছে, সেসব ক্ষণে ক্ষণে মন্থন
করো। যা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছে সেসব বুদ্ধিতে স্মরণ রাখো, রোজ মুরলী পড়ো। সেও ভালো।
মুরলীতে যে পয়েন্ট দেওয়া আছে সেসব ক্ষণে ক্ষণে মন্থন করা উচিত অর্থাৎ মনন চিন্তন করা
উচিত। এখানকার বসবাসকারী আত্মাদের চেয়েও বিদেশে বাস করা আত্মারা বেশি স্মরণে থাকে।
কত বাঁধেলি (সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ) আত্মারা আছে যারা বাবাকে কখনও চোখে দেখেনি, তবুও
কত স্মরণ করে, নেশায় মত্ত হয়ে থাকে। ঘরে বসে সাক্ষাৎকার হয় বা খুবই সহজভাবে
শুনে-শুনে নিশ্চয় হয়ে যায়।
সেইজন্য বাবা বলেন,
অন্তরে নিজের চেকিং করতে থাকো আমরা কত উঁচু পদ প্রাপ্ত করবো? আমাদের আচার-আচরণ
কিরূপ? কোনও খাবারের প্রতি লোভ নেই তো? কোনও অভ্যাস থাকা উচিত নয়। মূল কথা হলো
অব্যভিচারী স্মরণে থাকা। মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো - আমরা কাকে স্মরণ করি?
কতক্ষণ অন্যদের স্মরণ করি? নলেজও ধারণ করতে হবে, পাপও বিনষ্ট করতে হবে। অনেকে এমন
এমন পাপ কর্ম করেছে যে বলার নয়। ভগবান বলেন এই কর্ম করো কিন্তু তারা বলে দেয় পরের
বশে বশীভূত অর্থাৎ মায়ার বশে বশীভূত আছি। আচ্ছা, মায়ার বশেই থাকো। তোমাদের শ্রীমৎ
অনুযায়ী চলতে হবে নতুবা নিজের মতে। দেখতে হবে এই অবস্থায় আমরা কতটা পাস করবো? কি পদ
প্রাপ্ত করবো? ২১ জন্মের ক্ষতি হয়ে যায়। যখন কর্মাতীত অবস্থা হয়ে যাবে তখন
দেহ-অভিমানের নাম থাকবে না তাই বলা হয় দেহী-অভিমানী হও। আচ্ছা !
মিষ্টি মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত ।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
এমন কোনো কর্তব্য করবে না যার দ্বারা যজ্ঞ পিতার নিন্দা হয়। বাবা যে রাইটিয়াস (সঠিক)
বুদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছে, সেই বুদ্ধির দ্বারা সুকর্ম করতে হবে। কাউকে দুঃখ দেবে না।
২ ) একে অপরকে উল্টো
পাল্টা সমাচার জিজ্ঞাসা করবে না, নিজেদের মধ্যে জ্ঞানের চর্চা-ই করতে হবে। মিথ্যা,
প্রবঞ্চনা (শয়তানী), সংসারে ভাঙন ধরানো ইত্যাদি সব কথা ছেড়ে মুখে সর্বদা রত্ন
উচ্চারণ করবে। ইভিল কথা শুনবেও না, শোনাবেও না।
বরদান:-
৫
বিকার রূপী শত্রুকে পরিবর্তন করে সহযোগী বানানো মায়াজীৎ জগতজীৎ ভব
বিজয়ী, শত্রুর রূপ
পরিবর্তন অবশ্যই করে। তো তোমরা বিকাররূপী শত্রুকে পরিবর্তন করে সহযোগী স্বরূপ বানিয়ে
দাও যার দ্বারা তারা সদা তোমাদেরকে সেলাম করতে থাকবে। কাম বিকারকে শুভ কামনার রূপে,
ক্রোধকে আত্মিক নেশার রূপে, লোভকে অনাসক্ত বৃত্তির রূপে, মোহকে স্নেহের রূপে আর দেহ
অভিমানকে স্বাভিমানের রূপে পরিবর্তিত করে দাও, তাহলে মায়াজিৎ জগৎজিত হয়ে যাবে।
স্লোগান:-
রিয়েল
গোল্ডে 'আমার' ভাব-ই হলো অ্যালয় (খাদ), যা ভ্যালু কম করে দেয়, এইজন্য আমার ভাবকে
সমাপ্ত করো।
অব্যক্ত ঈশারা :-
“কম্বাইন্ড রূপের স্মৃতির দ্বারা সদা বিজয়ী হও”
যখন কোনও কাজ বা সেবা
করার সময় নিজেকে একা মনে করো তখন ক্লান্ত হয়ে পড়ো। তখন দুই ভুজ বিশিষ্ট কাউকে সাথী
বানিয়ে নাও আর হাজার বাহু বিশিষ্ট বাবাকে ভুলে যাও। যখন হাজার ভুজ বিশিষ্ট বাবা
নিজের ঘর পরমধাম ত্যাগ করে তোমাদেরকে সাথ দেওয়ার জন্য এসেছেন তাহলে তাঁকে নিজের সাথে
কম্বাইন্ড করে কেন রাখো না! সদা বুদ্ধি দ্বারা কম্বাইন্ড থাকো তাহলে সহযোগ প্রাপ্ত
হতে থাকবে।