16.06.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
সর্বদা এই খুশিতে থাকো যে, আমাদেরকে কোনো দেহধারী পড়াচ্ছেন না, অশরীরী বাবা (ব্রহ্মাবাবার)
শরীরে প্রবেশ করে মুখ্যতঃ আমাদেরকেই পড়াতে এসেছেন”
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা,
তোমাদের জ্ঞানের তৃতীয় নেত্র কেন প্রাপ্ত হয়েছে?
উত্তরঃ
আমাদের
জ্ঞানের তৃতীয় নেত্র প্রাপ্ত হয়েছে নিজেদের শান্তিধাম আর সুখধামকে দেখার জন্য। এই
দুই চোখ দিয়ে যে পুরানো দুনিয়া, মিত্র-সম্বন্ধী আদি দেখা যায় তাদেরকে বুদ্ধির
দ্বারা ভুলে যেতে হবে। বাবা এসেছেন নোংরা আবর্জনা থেকে বের করে তোমাদেরকে ফুলের মত
(দেবতা) বানানোর জন্য, তাই এইরকম বাবাকেও তখন অবশ্যই আমাদের রিগার্ড দিতে হবে।
ওম্ শান্তি ।
বাচ্চাদের
প্রতি শিব ভগবানুবাচ। ভগবানকে সত্য বাবা তো অবশ্যই বলবে। কেননা তিনি তো হলেন রচয়িতা,
তাই না ! এখন তোমরাই হলে সেই বাচ্চা, যাদেরকে স্বয়ং ভগবান পড়াচ্ছেন - ভগবান ভগবতী
বানানোর জন্য। এটা তো প্রত্যেকেই খুব ভাল ভাবে জানে, এইরকম কোনো ছাত্র হয় না, যে
নিজের শিক্ষককে, পড়াকে আর তার রেজাল্টকে জানেনা। যাদেরকে স্বয়ং ভগবান পড়াচ্ছেন,
তাদের মধ্যে কতইনা খুশী হওয়া চাই। এই খুশী স্থায়ী কেন থাকে না? তোমরা জানো যে,
আমাদেরকে কোনো দেহধারী মানুষ পড়াচ্ছেন না। অশরীরী বাবা শরীরে প্রবেশ করে মুখ্যতঃ
বাচ্চারা তোমাদেরকে পড়াতে আসেন, এটা তাে কারোরই জানা নেই যে, ভগবান এসে পড়ান। তোমরা
এখন জেনে গেছ যে, আমরা হলাম ভগবানের সন্তান, তিনি আমাদেরকে পড়াচ্ছেন, তিনিই হলেন
জ্ঞানের সাগর। তোমরা এখন শিব বাবার সামনে বসে আছ। আত্মাদের সাথে পরমাত্মা এখনই মিলন
করতে আসেন, এটা ভুলে যেও না। কিন্তু মায়া এমনই, যে ভুলিয়ে দেয়। নাহলে তো সেই নেশা
থাকা চাই যে - ভগবান আমাদেরকে পড়াচ্ছেন ! তাঁর স্মরণে থাকতে হবে। কিন্তু এখানে তো
এমন কয়েকজন আছে, যারা একদমই ভুলে যায়। কিছুই মনে রাখতে পারে না। ভগবান স্বয়ং বলছেন
যে, অনেক বাচ্চাই এটা ভুলে যায়, নাহলে তো সেই খুশী স্থায়ী থাকবে, তাই না! আমরা হলাম
ভগবানের সন্তান, তিনি আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। মায়া এতটাই শক্তিশালী যে, একদমই সবকিছু
ভুলিয়ে দেয়। এই দু-চোখ দিয়ে এই যে পুরানো দুনিয়া, আত্মীয় পরিজনাদি দেখছো, তাদের
প্রতি বুদ্ধি চলে যায়। বাচ্চারা, এখন বাবা তোমাদেরকে (জ্ঞানের) তৃতীয় নেত্র প্রদান
করছেন। তোমরা কেবলমাত্র শান্তিধাম আর সুখধামকে স্মরণ করো। এটা হল দুঃখধাম, নোংরা
ছিঃ-ছিঃ দুনিয়া। তোমরা জেনেছো যে ভারত একসময় স্বর্গ ছিল, এখন নরক হয়ে গেছে। বাবা এসে
পুনরায় ফুল বানাচ্ছেন। সেখানে তোমরা ২১ জন্মের জন্য সুখ প্রাপ্ত করো। এরজন্যই তোমরা
এখন পড়াশোনা করছো। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে না পড়ার কারণে এখানকার ধন-সম্পত্তি আদির
মধ্যেই বুদ্ধি ফেঁসে যায়। সেসব থেকে বুদ্ধির যোগ সরানো যায় না। বাবা বলছেন যে -
শান্তিধাম আর সুখধামের প্রতি বুদ্ধির যোগ রাখো। কিন্তু বুদ্ধি নোংরা দুনিয়াতে একদম
যেন আঠার মতো আটকে আছে। ছাড়তে চায় না। যদিও এখানে (মধুবনে) বসে আছো, তবুও পুরানো
দুনিয়ার থেকে বুদ্ধির যোগ নষ্ট হয় না। এখন বাবা এসেছেন ফুলের মতো পবিত্র বানানোর
জন্য। তোমরা মুখ্যতঃ পবিত্রতার জন্যই বলো যে - বাবা আমাদেরকে পবিত্র বানিয়ে পবিত্র
দুনিয়াতে নিয়ে যাচ্ছেন, তো এইরকম বাবাকে কতখানি সম্মান দেওয়া উচিত ! এইরকম বাবার
কাছে তো সমর্পণ হয়ে যাওয়া উচিত, যিনি পরমধাম থেকে এসে আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। তিনি
বাচ্চাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেন। একদম নোংরা আবর্জনা থেকে বের করেন। এখন তোমরা
ফুল তৈরী হচ্ছ। জেনে গেছো যে কল্প-কল্প আমরা এইরকম ফুল (দেবতা) হই। মানুষ থেকে
দেবতায় পরিণত করতে ভগবানের বেশী সময় লাগে না। এখন বাবা আমাদেরকে পড়াচ্ছেন। আমরা
এখানে মানুষ থেকে দেবতা হওয়ার জন্য এসেছি। এই সবকিছু এখনই আমাদের বোধগম্য হয়েছে,
জ্ঞানে আসার পূর্বে এটা আমাদের জানা ছিল না যে, আমরাই স্বর্গবাসী ছিলাম। এখন বাবা
বলছেন যে, তোমরাই রাজত্ব করেছিলে। (দ্বাপর যুগে) রাবণ তোমাদের থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে
নেয়। তোমরাই অনেক সুখ ভোগ করেছিলে, পুনরায় ৮৪ জন্ম গ্রহণ করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে
নিচের দিকে নেমে এসেছো। এটা হলই ছিঃ-ছিঃ নোংরা দুনিয়া। এখানে সব মানুষই দুঃখী হয়ে
গেছে। অনেকেই তো অনাহারে থেকে শরীর ত্যাগ করে, এখানে বিন্দুমাত্র সুখ নেই। হয়তো বা
কয়েকজন ধনবান আছে, কিন্তু এই অল্পক্ষণের সুখ হল কাগ্-বিষ্ঠার সমান। এটাকে বলাই হয়
বিষয় বৈতরণী নদী। স্বর্গতে তো তোমরা অনেক সুখে থাকবে। এখন তোমরা শ্যাম থেকে সুন্দর
হচ্ছো।
এখন তোমরা বুঝে গেছো যে, আমরাই দেবতা ছিলাম। তারপর পুনর্জন্ম নিতে নিতে বেশ্যালয়ে
এসে পড়েছি। পুনরায় এখন তোমাদেরকে আমি শিবালয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শিব বাবা স্বর্গের
স্থাপনা করছেন। তোমাদের পড়াচ্ছেন তাই ভালো ভাবে পড়তে হবে, তাই না! পড়াশোনা করে,
বুদ্ধিতে সৃষ্টিচক্রকে রেখে দৈবীগুণ ধারণ করতে হবে। বাচ্চারা, তোমরা হলে রূপ-বসন্ত
(জ্ঞানী-যোগী), তোমাদের মুখ থেকে সর্বদা জ্ঞানরত্নই যেন নির্গত হয়, নোংরা নয়। বাবাও
বলছেন যে - আমিও হলাম রূপ-বসন্ত.... আমিই পরমাত্মা, জ্ঞানের সাগর, এই পড়াশোনা হলো
উপার্জন সোর্স অফ ইনকাম। লৌকিকে পড়াশোনা করে ডাক্তার, ব্যারিস্টার ইত্যাদি হয়, তখন
লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে। এক-একজন ডাক্তার মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে।
খাওয়ার জন্য সময় পায় না। তোমরাও এখন পড়ছো। তোমরা কি হতে চলেছো? বিশ্বের মালিক। তাই
এই পড়ার নেশায় মত্ত থাকতে হবে। বাচ্চারা তোমাদের কথা বলার ধরণও কতখানি রয়্যাল হওয়া
উচিত । তোমরা রয়্যাল হচ্ছো, তাই না! রাজাদের চাল-চলন দেখো, কিরকম হয়ে থাকে । (ব্রহ্মা)
বাবা তো হলেন অনুভাবী, তাই না ! রাজাদের যখন কোনো উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়, তাঁরা
কখনোই স্ব-হস্তে তা গ্রহন করেন না। যদি গ্রহণ করতেই হয় তবে সেক্রেটারীকে দেওয়ার
জন্য ইশারা করে দেন। তাঁদের ব্যবহারে অনেক রয়্যালটি প্রদর্শিত হয়। বুদ্ধিতে এই
চিন্তা থাকে যে, এর কাছ থেকে গ্রহণ করলে একে প্রতিদানও দিতে হবে, তাই রাজারা কখনও
কখনও উপহার গ্রহণও করেন না। কোনো কোনো রাজা প্রজাদের কাছ থেকে তো কিছুই গ্রহণ করে
না। আবার কেউ কেউ তো লুঠে নেয়। রাজাদের মধ্যেও অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এখন
তোমরা সত্যযুগের ডবল মুকুটধারী রাজা হতে চলেছো। ডবল মুকুটধারী হওয়ার জন্য পবিত্রতা
ধারণ করা অত্যাবশ্যক। এই বিকারী দুনিয়াকে ছাড়তে হবে। বাচ্চারা তোমরা বিকারকে ত্যাগ
করেছ, কোনো বিকারী এখানে বসতে পারবে না। আর যদি কোনও বিকারী সত্য গোপন করে এখানে এসে
বসে, তবে সে নিজেরই ক্ষতি করবে। কেউ কেউ চালাকি করে, মনে করে - কেউ বুঝতে পারবে না।
বাবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও সে নিজে পাপ আত্মা হয়ে যায়। তোমরাও পাপাত্মা ছিলে। এখন
পুরুষার্থ করে পুণ্যাত্মা হতে হবে। বাচ্চারা তোমরা অনেক জ্ঞান প্রাপ্ত করেছ। এই
জ্ঞানের আধারেই তোমরা কৃষ্ণপুরীর মালিক হও। বাবা তোমাদেরকে শৃঙ্গার করছেন। উঁচুর
থেকেও উঁচু ভগবান পড়াচ্ছেন, তাই অনেক আনন্দ সহকারে এই পড়া পড়তে হবে। এইরকম পড়া তো
কোনও সৌভাগ্যশালী আত্মাদেরই পড়ার সুযোগ হয়, আবার সার্টিফিকেটও প্রাপ্ত করো। বাবা
বলছেন যে - তোমরা কোথায় পড়ছ। বুদ্ধি এদিকে ওদিকে চলে গেলে তোমরা কি তৈরী হবে! লৌকিক
বাবাও বলেন যে, এরকম অবস্থায় তো তোমরা ফেল হয়ে যাবে। কেউ তো আবার পড়াশোনা করে
লক্ষ-লক্ষ টাকা উপার্জন করে। কেউ তো দেখো ধাক্কা-ই খেতে থাকে। তোমাদেরকে
বাবা-মাম্মাকে অনুসরণ করতে হবে। আর যে ভাই-রা খুব ভালো ভাবে পড়ে আবার অন্যদেরকেও
পড়ায়, কারণ এটাই হল তাদের ব্যবসা, প্রদর্শনীতে অনেক আত্মাদেরকে পড়ায়, তাই না! নিকট
ভবিষ্যতে যত দুঃখ বৃদ্ধি পাবে, ততই মানুষের মধ্যে বৈরাগ্য বৃত্তি আসবে, তখন তারাও
এই পড়া পড়তে শুরু করে দেবে। দুঃখ হলে ভগবানের শরণাপন্ন হয়। দুঃখে মৃত্যুবরণ করার
সময় বলে যে - হে রাম, হায় ভগবান...। তোমাদেরকে তো এসব কিছুই করতে হয় না। তোমরা তো
এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছো। তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, যখন এই পুরানো
শরীর ত্যাগ হয়ে যাবে, তখনই আমরা নিজেদের ঘরে চলে যাব। তারপর তো সেখানে (স্বর্গে)
শরীরও সুন্দর প্রাপ্ত হবে। পুরুষার্থ করে, যিনি পড়াচ্ছেন তাঁর থেকেও উঁচুতে যেতে হবে।
এরকমও হয় যে, যিনি পড়াচ্ছেন, তাঁর থেকে যে পড়ছে তার স্থিতি খুব ভালো থাকে। বাবা তো
প্রত্যেককে জানেন তাই না! বাচ্চারা তোমরাও জানতে পারো, নিজের অন্তরে দেখতে হবে যে -
আমার মধ্যে কি দুর্বলতা আছে? মায়ার বিঘ্ন থেকে দূরে থাকতে হবে, তার মধ্যে ফেঁসে যেও
না।
যে বলে, মায়া খুব শক্তিশালী, আমি কিভাবে জ্ঞান মার্গে চলবো, যদি এইরকম চিন্তা করো
তবে মায়া একদম কাঁচা-ই খেয়ে নেবে। হাতিকে এক বৃহৎ কুমীর গিলে ফেলেছিলো। এটা এখনকারই
কথা, তাই না! ভালো ভালো বাচ্চাদেরকেও মায়া রূপী বৃহৎ কুমীর একদম গিলে খেয়ে নেবে।
নিজেকে তখন রক্ষা করতে পারবে না। নিজেরাও মনে করে যে - আমরা মায়ার আঘাত থেকে মুক্ত
হতে চাই। কিন্তু মায়া ছাড়তে চায় না। তারা বলে যে, বাবা মায়াকে বলো - এইভাবে আমাকে
যেন না ধরে রাখে। আরে, এটা তো যুদ্ধের ময়দান, তাই না! যুদ্ধক্ষেত্রে কি এইরকম ভাবে
প্রতিপক্ষকে বলা যায়, যে, আমাকে হারিয়ে দিও না। কিংবা ম্যাচ খেলার সময় কি বলতে পারবে
যে, আমাকে বল দিও না। তারা সঙ্গে সঙ্গেই বলবে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছ তো লড়াই করো,
তো মায়া তোমাদের সামনে অনেক বিঘ্ন ঘটাবে। তোমরাও অনেক উঁচুপদ প্রাপ্ত করতে পারো।
ভগবান পড়াচ্ছেন, কম কথার বিষয়! এখন তোমরা উন্নতি করছ পুরুষার্থের নম্বর অনুসারে।
প্রতিটি বাচ্চার মধ্যে এই শখ রাখতে হবে যে, আমি আমার ভবিষ্যতের জীবনকে হিরের মতো
তৈরী করবো। বিঘ্নগুলিকে বিনাশ করতে থাকো। যে করেই হোক, বাবার থাকে অবিনাশী
উত্তরাধিকার নিতেই হবে। তা না হলে তো আমি কল্প-কল্পান্তর ধরে ফেল হতেই থাকবো। মনে
করো কোনো ধনী ঘরের বাচ্চা যদি এখানে আসে, তখন তার লৌকিক বাবা যদি তাকে এই পড়াশোনা
করতে বাঁধা দেয়, তখন সেই বাচ্চা তার বাবাকে বলবে যে - আমার এই লক্ষ টাকা দিয়ে কিছুই
হবে না, আমাকে তো অসীম জগতের বাবার থেকে বিশ্বের রাজপদ নিতে হবে। এখানকার এই
লক্ষ-কোটি টাকা তো সব ভষ্মীভূত হয়ে যাবে। কারো ধন মাটিতে মিশে যাবে, আবার কারোর
ধন-সম্পত্তিতে তো আগুন লেগে যাবে। সমগ্র সৃষ্টিরূপী জেলখানাতে আগুন লেগে যাবে। এই
সমগ্র দুনিয়া হল রাবনের লঙ্কা। তোমরা সবাই হলে সীতা। এখন রাম এসেছেন। সমগ্র
পৃথিবীটিই হলো একটি দ্বীপ। এই সময়কেই বলা হয় রাবণ রাজ্য। বাবা এসেছেন রাবণ রাজ্যকে
বিনাশ করে রামরাজ্যের মালিক বানাতে। তোমাদের অন্তরে তো অনেক খুশী থাকা চাই - বলাও
হয় যে, অতীন্দ্রিয় সুখ জানতে চাও তো বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। তোমরা প্রদর্শনীতে
নিজেদের সুখ অনুভাবের কথা বলো, তাই না! আমরা ভারতকে স্বর্গ বানাচ্ছি। বাবার শ্রীমতে
চলে বাবার সেবা করছি। যত-যত শ্রীমতে চলবে ততই তোমরা শ্রেষ্ঠ হবে। তোমাদেরকে মতামত
দেওয়ার জন্য অনেকে আসবে, এইজন্য তাদেরকে চিনতেও হবে আবার সতর্কও থাকতে হবে। কখনও
কখনও মায়া গুপ্ত ভাবে প্রবেশ করে। তোমরা বিশ্বের মালিক হতে চলেছো, এইজন্য অন্তর থেকে
তোমাদের অনেক খুশী হওয়া চাই। তোমরা বলো যে - বাবা আমরা আপনার থেকে স্বর্গের অবিনাশী
উত্তরাধিকার নিতে এসেছি। সত্য-নারায়ণের কথা শুনে আমরা নর থেকে নারায়ণ, নারী থেকে
লক্ষ্মী তৈরী হচ্ছি। তোমরা সবাই হাত ওঠাও আর বলো যে, বাবা আমরা আপনার থেকে সম্পূর্ণ
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করেই ছাড়বো, নাহলে তো আমরা কল্প-কল্প সবকিছু হারাতেই থাকবো। যে
কোনো বিঘ্নই আসুক না কেন, আমরা তাকে উড়িয়ে দেবো, এতটাই বাহাদুরী দেখাতে হবে। (পূর্ব
কল্পেও) তোমরা এরকমই বাহাদুরী দেখিয়েছিলে, তাই না! যাঁর কাছ থেকে এই অবিনাশী
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হচ্ছে, তাকে কি এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া যায়! কেউ তো খুব ভালো
ভাবে স্থিত হয়ে গেছে, কেউ তো আবার ভাগন্তি হয়ে যায় (বাবাকে ছেড়ে চলে যায়)। ভালো ভালো
বাচ্চাদেরকে মায়া খেয়ে নেয়। অজগর সাপ তাদেরকে একদম গিলেই খেয়ে নেয়।
এখন বাবা অনেক ভালোবাসা সহকারে তোমাদেরকে বোঝাচ্ছেন যে - হে বাচ্চারা! আমি এই পতিত
দুনিয়াকে পাবন বানাতে এসেছি। এখন পতিত দুনিয়ার মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমি
তোমাদেরকে রাজাদেরও রাজা বানাচ্ছি। পতিত রাজাদেরও রাজা। সিঙ্গেল মুকুটধারী (কেবল মণি
রত্নের মুকুটধারী) রাজারা, ডবল্ মুকুটধারী (হিরে খচিত মুুকুট আবার পবিত্রতার
প্রকাশের মুকুটধারী) রাজাদের সামনে মাথা নত করে, অর্ধেক কল্প পরে যখন এদেরও পবিত্রতা
উড়ে যায়, তখন রাবন রাজ্যে সবাই বিকারী আর পূজারী হয়ে যায়। তাই এখন বাবা বাচ্চাদেরকে
বোঝাচ্ছেন যে - কোনও ভুল কাজ করো না। বাবাকে ভুলে যেও না, ভালোভাবে পড়াশোনা করো।
প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারলেও বাবা সেটারও ব্যবস্থা করে দেবেন। সাত দিনের
কোর্সটা ভালো করে বুঝতে পারলে মুরলীও সহজে বঝতে পারবে। যদি অন্য কোথাও যেতেও হয়
তথাপি দুটি শব্দ মনে রাখবে। এটাই হল মহামন্ত্র। নিজেকে আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ
করো। দেহ-অভিমানে আসার কারণেই কোনো বিকর্ম বা পাপ কর্ম হয়ে যায়। বিকর্ম থেকে বাঁচার
জন্য বুদ্ধির প্রীতি এক বাবার সাথেই রাখতে হবে। কোনো দেহধারীদের সাথে নয়। একের
সাথেই বুদ্ধির যোগ রাখতে হবে। অন্ত সময় পর্যন্ত বাবাকে স্মরণ করলে, কোনো বিকর্ম হবে
না। এটা হল নষ্ট হয়ে যাওয়া দেহ। এর অভিমান ছেড়ে দাও। নাটক সম্পূর্ণ হতে চলেছে, এখন
আমাদের ৮৪ জন্ম সম্পূর্ণ হয়েছে। এটা হল পুরানো আত্মা, পুরানো শরীর। এখন তমোপ্রধান
থেকে সতোপ্রধান হতে হবে, তারপর তো শরীরও সতোপ্রধান পেয়ে যাবে। আত্মাকে সতোপ্রধান
বানাতে হবে - এই উদ্বেগ যেন সর্বদা থাকে। বাবা শুধু বলছেন যে - "মামেকম্ স্মরণ করো"
। ব্যস্ এটাই মাথায় রাখো। তোমরাও বলো, তাই না - বাবা, আমরা পাশ হয়েই দেখাবো। তোমরা
জানো যে, ক্লাসের সবাই স্কলারশিপ পায় না। তবুও পুরুষার্থ তো সবাই করে, তাই না!
তোমরাও বুঝে গেছো যে আমাদেরকে নর থেকে নারায়ণ হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ পুরুষার্থ করতে
হবে। কম পুরুষার্থ করবো কেন? কোনও বিষয়ে চিন্তা নেই। উত্তরাধিকারীরা কখনও চিন্তা করে
না। কেউ কেউ বলে যে - বাবা, অনেক তুফান, স্বপ্ন ইত্যাদি আসে। এসব তো হবেই। তোমরা
কেবলমাত্র এক বাবাকেই স্মরণ করতে থাকো। এই শত্রুর উপর বিজয়ী হতেই হবে। কোনও সময় এমন
এমন স্বপ্ন আসবে, যেটা তোমাদের চিন্তনেও ছিলো না, এইরকমও বিঘ্ন আসবে। এই সব হল মায়া।
আমরা এখন মায়ার উপর জয় প্রাপ্ত করছি। অর্ধেক কল্পের জন্য শত্রুর থেকে রাজ্য কেড়ে
নিচ্ছি, আমাদের কোনো চিন্তা নেই। বাহাদুর (সাহসী ব্যক্তি) কখনও বাক্ চাতুরী করেনা।
জয় নিশ্চিত জেনে খুশীতে লড়াই করতে যায়। তোমরা তো এখানে অনেক আরামে বাবার থেকে
অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করো। এই ছিঃ-ছিঃ নোংরা শরীরকে ত্যাগ করতে হবে। এখন
তোমরা সুইট সাইলেন্স হোম এ যাচ্ছো। বাবা বলছেন - আমি এসেছি তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার
জন্য। আমাকে স্মরণ করলে তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। অপবিত্র আত্মা সেখানে যেতে পারবে
না। এটাই হলো নতুন কথা। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
বিকর্ম করা থেকে বাঁচার জন্য বুদ্ধির দ্বারা এক বাবার সাথেই ভালোবাসা বজায় রাখতে হবে,
এই নষ্ট হয়ে যাওয়া দেহের অভিমানকে ছেড়ে দিতে হবে।
২) আমরা হলাম বাবার
অবিনাশী সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, এই স্মৃতিতে থেকে মায়া রূপী শত্রুর উপর বিজয়
প্রাপ্ত করতে হবে। মায়াকে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ো না। মায়া গুপ্তরূপে প্রবেশ করে, এই
জন্য তাকে চিনতে হবে আর সতর্কও থাকতে হবে।
বরদান:-
মন্সা,
বাচা আর কর্মণার পবিত্রতাতে সম্পূর্ণ মার্ক্স নেওয়া নম্বর ওয়ান আজ্ঞাকারী ভব
মন্সা পবিত্রতা অর্থাৎ
সংকল্পেও অপবিত্রতার সংস্কার ইমার্জ হবে না। সদা আত্মিক স্বরূপ অর্থাৎ ভাই-ভাইএর
শ্রেষ্ঠ স্মৃতি থাকবে। বাচাতে সদা সত্যতা আর মধুরতা থাকবে, কর্মণাতে সদা নম্রতা,
সন্তুষ্টতা আর হর্ষিতমুখতা থাকবে। এরই আধারে নম্বর প্রাপ্ত হয় আর এইরকম সম্পূর্ণ
পবিত্র আজ্ঞাকারী বাচ্চাদের, বাবাও গুণগান করেন। তারাই হল নিজেদের প্রত্যেক কর্মের
দ্বারা বাবার কর্তব্যগুলিকে প্রমাণকারী সমীপ রত্ন।
স্লোগান:-
সম্বন্ধ-সম্পর্ক আর স্থিতিতে লাইট হও, দিনচর্যায় নয়।
অব্যক্ত ঈশারা :-
আত্মিক স্থিতিতে থাকার অভ্যাস করো, অন্তর্মুখী হও।
অন্তর্মুখী আত্মারা
যেরকমই পরিস্থিতি হোক, ভালো হোক বা দোলাচলে নিয়ে আসার হোক, কিন্তু প্রত্যেক সময়,
প্রত্যেক সারকামস্টেন্সের ভিতরে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নেয়। একলা থাকো বা সংগঠনের
মধ্যে থাকো, দুই ক্ষেত্রেই অ্যাডজাস্ট হওয়া - এটাই হল ব্রাহ্মণ জীবন।