19.06.2024
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
সর্বাপেক্ষা মূল সেবা হলো বাবার স্মরণে থাকা আর অন্যদেরও স্মরণ করানো, তোমরা যেকোনো
ব্যক্তিকেই বাবার পরিচয় দিয়ে তাদের কল্যাণ সাধন করতে পারো"
প্রশ্নঃ -
একটি এমন কোন্
ছোট অভ্যাসও অনেক বড় অবজ্ঞা করিয়ে দেয়? তার থেকে বাঁচার যুক্তি বা উপায় কি?
উত্তরঃ
যদি কারোর
মধ্যে কিছু লুকানোর বা চুরি করার অভ্যাস থাকে তাহলেও অনেক বড় অবজ্ঞা হয়ে যায়। কথায়
আছে -- খড়কুটো (তুচ্ছবস্তু) চুরি করে যে আর লক্ষ টাকা চুরি করে যে, দুই-ই চোর।
লোভের বশীভূত হয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করে লুকিয়ে খেয়ে নেওয়া,
চুরি করে নেওয়া - এ'সব হলো খুবই খারাপ অভ্যাস। এই অভ্যাস থেকে বাঁচার জন্য
ব্রহ্মাবাবার মতো ট্রাস্টী হয়ে যাও। এমন ধরনের যা কিছু অভ্যাস আছে, তা সত্য-সত্য
ভাবে বলে দাও।
ওম্ শান্তি ।
আত্মাদের পিতা
বসে তাঁর আত্মা-রূপী সন্তানদের বোঝান। বাচ্চারা জানে যে, আমরা অসীম জগতের পিতার
সম্মুখে বসে রয়েছি। আমরা ঈশ্বরীয় পরিবারের। ঈশ্বর নিরাকার। এও জানে, তোমরা
আত্ম-অভিমানী হয়ে বসেছো। এখন এরমধ্যে তো কোনো বিজ্ঞানের অহংকার বা হঠযোগ ইত্যাদি
করার কথা নেই। এ হলো বুদ্ধির কাজ। এই শরীরের কোনো কাজ নেই। হঠযোগে শরীরের কার্য
রয়েছে। এখানে (আমরা নিজেকে) বাচ্চা মনে করে বাবার সম্মুখে বসে রয়েছি। আমরা জানি যে,
বাবা আমাদের পড়াচ্ছেন। এক তো তিনি বলেন যে, মিষ্টি বাচ্চারা, নিজেদের আত্মা নিশ্চয়
করে বাবাকে স্মরণ করো, তবেই তোমাদের পাপ-স্খলন হবে। আর চক্রকে ঘোরাও, অন্যদেরও
সেবার মাধ্যমে নিজের সমান তৈরী করো। বাবা এক-একজনকে বসে দেখেন। এরা সকলকে বাবার
পরিচয় কি দেয়? এটাই হলো মূল বিষয়। এক একজন বাচ্চাকে কি বাবার পরিচয় দেওয়া হয়,
অন্যদের বোঝায় যে, বাবা বলেন, আমাকে স্মরণ করো তবেই তোমাদের জন্ম-জন্মান্তরের
পাপ-স্খলন হবে। এমন সার্ভিসে কতখানি সময় থাকা হয়? নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে যে,
সর্বাপেক্ষা অধিক সেবা কে করে? কেন আমি এদের থেকেও বেশী সেবা করবো না। এদের থেকেও
অধিকমাত্রায় স্মরণের যাত্রায় দৌড় লাগাতে পারি কি পারি না? প্রত্যেককে বাবা দেখেন।
বাবা প্রত্যেকের কাছ থেকে খবর নেন - কি কি সেবা করা হয়? কাউকে বাবার পরিচয় দিয়ে
তাদের কল্যাণ করো কি? সময় নষ্ট হয়ে যায় না তো? মূল বিষয়ই হলো এই - এইসময় সবাই হলো
অরফ্যান (অনাথ) । অসীম জগতের পিতাকে কেউ জানেই না। বাবার থেকে উত্তরাধিকার তো
অবশ্যই পাওয়া যায়। বাচ্চারা, তোমাদের বুদ্ধিতে মুক্তি-জীবনমুক্তিধাম দুই-ই রয়েছে।
বাচ্চাদের এও বোঝাতে হবে যে আমরা এখন পড়ছি। পুনরায় স্বর্গ-তে এসে জীবনমুক্তির
রাজ্য-ভাগ্য নেব। এছাড়া যেসকল প্রচুর সংখ্যক অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আত্মারা রয়েছে,
তারা কেউ-ই তো থাকবে না। ভারতে শুধুমাত্র আমরাই থাকবো। বাবা বসে বাচ্চাদেরকে শেখান
- বুদ্ধিতে কি কি থাকা উচিত ! এখানে তোমরা সঙ্গমযুগে বসে রয়েছো তাই ভোজনও অবশ্যই
শুদ্ধ পবিত্র হওয়া উচিত । তোমরা জানো যে, ভবিষ্যতে আমরা সর্বগুণসম্পন্ন, ১৬ কলা
সম্পূর্ণ, সম্পূর্ণ নির্বিকারী হয়ে যাই। এই মহিমা শরীরধারী আত্মাদের, শুধু আত্মার
মহিমা-কীর্তন তো হয় না। প্রত্যেক আত্মার নিজের নিজের পার্ট রয়েছে, যা এখানে এসে (তারা)
পালন করে। তোমাদের বুদ্ধিতে এইম-অবজেক্ট রয়েছে, আমাদের এঁনাদের মতন হতে হবে। বাবার
আজ্ঞা হলো - বাচ্চারা, পবিত্র হও। জিজ্ঞাসা করে যে, কিভাবে পবিত্র থাকবো? কারণ
মায়ার তুফান তো অনেক আসে। বুদ্ধি কোথায়-কোথায় চলে যায়। সেগুলোকে কিভাবে ছাড়বো?
বাচ্চাদের বুদ্ধি তো চলে, তাই না। আর কারও বুদ্ধি এমন চলে না। বাবা, শিক্ষক, গুরু-ও
তোমরা পেয়েছো। তোমরা এও জানো - উচ্চ থেকে উচ্চতম হলেন ভগবান। তিনিই বাবা, শিক্ষক,
জ্ঞানের সাগর। বাবা এসেছেন আত্মাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে। সত্যযুগে অতি অল্পসংখ্যক
দেবী-দেবতা থাকে। এইসব কথা তোমরা ছাড়া আর কারোর বুদ্ধিতে থাকবে না। তোমাদের বুদ্ধিতে
রয়েছে যে বিনাশের পর আমরাই অতি অল্পসংখ্যক থাকব। আর এতসব ধর্ম, খন্ড ইত্যাদি থাকবে
না। আমরাই বিশ্বের মালিক হব। এক রাজ্য আমাদেরই হবে। অত্যন্ত সুখের রাজ্য হবে,
এছাড়াও তাতে ভ্যারাইটি পদাধিকারীরা থাকবে। আমাদের পদ কি হবে? আমরা কতটা আধ্যাত্মিক
সেবা করি? বাবাও জিজ্ঞাসা করেন। এমন নয় যে, বাবা অন্তর্যামী। প্রত্যেক বাচ্চাই স্বয়ং
বুঝতে পারে - আমরা কি করছি? অবশ্যই বুঝতে পারবে যে, শ্রীমৎ অনুসারে প্রথম
স্থানাধিকারের মতন সেবা তো এই দাদা-ই করছেন। প্রতি ক্ষণে-ক্ষণে বাবা বোঝান - মিষ্টি
মিষ্টি বাচ্চারা, নিজেদের আত্মা নিশ্চয় করো, দেহ-অভিমান পরিত্যাগ করো। কতটা সময় (নিজেকে)
আত্মা মনে করো? এটাই পাকা করতে হবে যে - আমরা আত্মা। বাবাকে স্মরণ করতে হবে। (স্মরণ)
এর দ্বারাই (তোমাদের) তরী পার হয়ে যাবে। স্মরণ করতে-করতেই পুরানো দুনিয়া থেকে নতুন
দুনিয়ায় চলে যাবে। এছাড়া এখন সময় অতি অল্প। পুনরায় আমরা নিজেদের সুখধামে চলে যাবো।
মুখ্য আধ্যাত্মিক সেবা হলো -- সকলকে বাবার পরিচয় দেওয়া, এটাই হলো সর্বাপেক্ষা সহজ
বিষয় । স্থূল সেবা করার সময়, খাবার প্রস্তুত করার সময়, খাবার খেতেও পরিশ্রম করতে
হয়। (স্মরণ) এতে তো পরিশ্রমের কোন কথা নেই। শুধু নিজেকে আত্মা নিশ্চয় করো। আত্মা
অবিনাশী, শরীর বিনাশী। আত্মাই সমস্ত ভুমিকা পালন করে। এই শিক্ষা বাবা একবার-ই এসে
দেন যখন বিনাশের সময় হয়। নতুন দুনিয়া হলো দেবী-দেবতাদের। ওখানে অবশ্যই যেতে হবে।
বাকি সমগ্র দুনিয়াকে যেতে হবে শান্তিধামে, এই পুরনো দুনিয়া থাকবে না। তোমরা যখন
নতুন দুনিয়ায় থাকবে তখন পুরনো দুনিয়া স্মরণে কি থাকবে? কিছুই (স্মরণে) থাকবে না।
তোমরা স্বর্গেই থাকবে, রাজত্ব করবে। একথা বুদ্ধিতে থাকলে আনন্দ হয়। স্বর্গের তো
অনেক নাম দেওয়া হয়েছে। নরকেরও অনেক নাম দিয়ে রেখেছে - পাপাত্মাদের দুনিয়া, হেল,
দুঃখধাম। বাচ্চারা, এখন তোমরা জেনেছ যে, অসীম জগতের পিতা একজনই। আমরা হলাম ওঁনার
হারানিধি (অনেককালের হারিয়ে যাওয়া) বাচ্চা, তাই এমন বাবার সঙ্গে প্রেমও অত্যধিক হওয়া
উচিত । বাবারও বাচ্চাদের প্রতি অনেক ভালবাসা রয়েছে, তাই অনেক সেবা করেন, কাঁটার থেকে
ফুল বানান। মনুষ্য থেকে দেবতা হতে হবে, তাই না। বাবা স্বয়ং হন না, আমাদের তৈরী করতে
এসেছেন। তাই ভিতরে অত্যন্ত খুশী থাকা উচিত । স্বর্গে আমরা কিরকম পদ পাবো? আমরা
কিরকম সেবা করি? ঘরে কাজের লোক থাকলে, তাদেরও (বাবার) পরিচয় দেওয়া উচিত । যারা স্বয়ং
তোমাদের সংযোগে আসে, তাদেরকেও শিক্ষা প্রদান করা উচিত । সকলের সেবা করতে হবে, তাই
না! অবলাদের, দরিদ্রদের, ভীল অর্থাৎ (আদিবাসীদের) । দরিদ্র তো অনেক রয়েছে, তারা
শুধরে যাবে, কোনো পাপ ইত্যাদি করবে না। তা নাহলে পাপ কর্ম করতেই থাকবে। তোমরা দেখতে
পাচ্ছো যে মিথ্যা, চুরিও কত হয়। ভৃত্যরা চুরি করে নেয়। তা নাহলে ঘরে বাচ্চারা রয়েছে,
তবুও তালা কেন লাগায়। কিন্তু আজকালকার বাচ্চারাও চোর হয়ে যায়। কিছু না কিছু গোপনে
তুলে নেয়। কারোর ক্ষিদে পেলে লোভের কারণে খেয়ে নেয়। লোভীরা অবশ্যই কিছু চুরি করে
খাবে। এ হলো শিববাবার ভান্ডারা, এখানে তো এক পয়সা চুরি করাও উচিত নয়। ব্রহ্মা তো
ট্রাস্টী। অসীম জগতের ভগবান তোমাদের কাছে এসেছেন। ভগবানের ঘরে কখনো কি কেউ চুরি করে?
স্বপ্নেও করে না। তোমরা জানো যে, সর্বাপেক্ষা উচ্চ হলেন শিব ভগবান। আমরা ওঁনার
সন্তান। তাহলে আমাদেরও তো দৈবী-কর্মই করা উচিত ।
যারা চুরি করে, তোমরা
জেলে গিয়ে তাদেরও জ্ঞান প্রদান করো। এখানে কি চুরি করবে? কখনো আম তুলে নিলো, কোনো
জিনিস তুলে নিয়ে খাচ্ছে - এও তো চুরি, তাই না। কোনো জিনিস জিজ্ঞাসা না করে ওঠানো
উচিত নয়, হাতও লাগানো উচিত নয়। শিববাবা আমাদের পিতা, তিনি শোনেন, দেখেন। তিনি
জিজ্ঞাসা করেন যে, বাচ্চাদের মধ্যে কোনো অবগুণ নেই তো? যদি কোনো অবগুণ থেকে থাকে তবে
তা (বাবাকে) শুনিয়ে দাও। দান করে দাও। দান করে দিয়ে যদি কেউ তা অবজ্ঞা (অমান্য) করে
তখন অনেক সাজা খেতে হবে। চুরি করা অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস। মনে করো, কেউ সাইকেল চুরি
করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেল। কেউ দোকানে গিয়ে বিস্কুটের কৌটৌ লুকিয়ে ফেলে বা কোনো
ছোট-ছোট জিনিস লুকিয়ে ফেলে। দোকানদার অনেক সামলে রাখে। এও তো অনেক বড় গভর্নমেন্ট,
পান্ডব গভর্নমেন্ট নিজেদের দৈবী রাজ্য স্থাপন করছে। বাবা বলেন, আমি তো রাজত্ব করি
না। তোমরা পান্ডবরাই রাজত্ব করো। লোকেরা তো কৃষ্ণকে পান্ডবপতি বলে থাকে। তাহলে
পান্ডবপিতা কে? তোমরা জানো - (তিনি) সামনে বসে রয়েছেন। প্রত্যেকেই ভিতরে-ভিতরে বুঝতে
পারে - আমরা বাবার কেমন সেবা করছি। বাবা আমাদের বিশ্বের রাজত্ব দিয়ে স্বয়ং
বাণপ্রস্থে চলে যান। কত নিষ্কাম সেবা করেন। সকলেই সুখী আর শান্ত হয়ে যায়। ওরা তো
শুধু বলে যে, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। শান্তির জন্য পুরস্কার দিয়ে থাকে।
বাচ্চারা, তোমরা এখন জানো যে, আমরা তো অনেক বড় পুরস্কার প্রাপ্ত করি। যারা ভালো
সার্ভিস করে, তারা বড় পুরস্কার পায়। সর্বাপেক্ষা উচ্চ সেবা হলো - বাবার পরিচয় দেওয়া,
এ তো যে কেউ করতে পারে। বাচ্চাদের এমন (দেবতা) হতে হবে, তাহলে, সেবাও তো করতে হবে,
তাই না। এঁনাকে দেখো, ইনিও গৃহস্থীও (লৌকিক পরিবারে) ছিলেন, তাই না। এঁনার দ্বারা
বাবা করিয়েছেন। এঁনার মধ্যে প্রবেশ করে এঁনাকেও বলেছেন আর তোমাদেরকেও বলছেন যে, এটা
করো। আমাকে কিভাবে বলবে? আমার মধ্যে প্রবেশ করে (আমাকে দিয়ে) করিয়ে নেন। তিনি
করন-করাবনহার (সর্বময় কর্মকর্তা), তাই না। বসে বসে বলেন, একে ছাড়ো, এ তো ছিঃ ছিঃ
দুনিয়া, চলো বৈকুন্ঠে। এখন বৈকুন্ঠের মালিক হতে হবে। ব্যস্, বৈরাগ্য চলে এসেছে।
সবাই মনে করতো - এঁনার কি হয়েছে। এত ভালো প্রতিষ্ঠিত লাভবান ব্যবসায়ী, ইনি কি করছেন!
জানা ছিল কি, না জানা ছিল না যে ইনি গিয়ে কি করবেন। ছেড়ে দেওয়া বড় কথা কি, না বড় কথা
নয়। ব্যস্, সবকিছু পরিত্যাগ করে দিয়েছেন। আর সবাইকেও ত্যাগ করিয়েছেন। এমনকি নিজের
কন্যাকেও ত্যাগ করিয়েছেন। এখন এই আধ্যাত্মিক সেবা করতে হবে, সবাইকে পবিত্র বানাতে
হবে। সকলেই বলতো - আমরা জ্ঞান অমৃত পান করতে যাই। নাম মাতার নেওয়া হতো। 'ওঁম্ রাধের'
কাছে জ্ঞান অমৃত পান করতে যাই। কে এই যুক্তি রচনা করেছিলেন? শিববাবা এঁনার মধ্যে
প্রবেশ করে কত ভালো ভালো যুক্তি রচনা করেছিলেন। যে কেউ-ই আসবে, জ্ঞান অমৃত পান করবে।
এমন গায়নও রয়েছে যে, অমৃত ছেড়ে বিষ কেন খাবো। বিষ ছেড়ে জ্ঞান অমৃত পান করে পবিত্র
দেবতা হতে হবে। শুরুতে এমন কথাই বলা হতো। কেউ যদি আসতো তাহলে তাদের বলা হতো, পবিত্র
হও। অমৃত পান করতে হলে তো বিষকে ছাড়তে হবে। পবিত্র বৈকুন্ঠের মালিক হতে হলে তো
একজনকেই স্মরণ করতে হবে। তখন অবশ্যই ঝগড়া হবে, তাই না। শুরু থেকে সেই বিবাদ এখনও
পর্যন্ত চলে আসছে। অবলাদের উপরে কত অত্যাচার হয়। যত তোমরা অধিকমাত্রায় পরিপক্ক হতে
থাকবে তখন বুঝতে পারবে যে, পবিত্রতা তো ভালো। এরজন্যই আহ্বান করা হয় - বাবা, এসে
আমাদের পবিত্র বানাও। আগে তোমাদেরও ক্যারেক্টার কেমন ছিল? এখন কি হচ্ছো? পূর্বে তো
দেবতাদের সম্মুখে গিয়ে বলতে যে, আমরা পাপী। এখন তো এমন বলবে না, কারণ তোমরা জানো,
আমরা এমন তৈরী হচ্ছি।
বাচ্চাদের, নিজেকে
প্রশ্ন করা উচিত -- আমরা কতখানি সেবা করি? যেমন ভান্ডারী যে, সে তোমাদের কতো সেবা
করে! সে কতো পুণ্য অর্জন করে। অনেকের সেবা করে, তাই সে সকলের আশীর্ব্বাদ লাভ করে।
অনেক মহিমা লেখা হয়। ভান্ডারী তো কামাল করে থাকে, সে সকলের জন্য ভোজনের ব্যবস্থা করে।
এ হলো স্থূল সেবা। সূক্ষ্মও করা উচিত । বাচ্চারা বলে - বাবা, এই ৫ ভূত অত্যন্ত কড়া,
যা স্মরণে থাকতে দেয় না। বাবা বলেন, শিববাবাকে স্মরণ করে খাবার প্রস্তুত করো।
একমাত্র শিববাবা ব্যতীত আর কেউ নেই। তিনিই সহায়তা করেন। গায়নও রয়েছে, তাই না, শরণ
নিয়েছি আমি তোমার....। সত্যযুগে কি এমন করে বলবে, না বলবে না। এখন তোমরা শরণাপন্ন
হয়েছো। কাউকে যখন ভূতে ধরে, তখন সে অনেক কষ্ট পায়। সেই অশুদ্ধ আত্মা তখন আসে।
তোমাদের তো কতগুলো ভূতে (বিকার) ধরেছে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ....এইসমস্ত ভূতেরা
তোমাদের নিপীড়ন (দুঃখ) করে। সেই অশুদ্ধ সোল তো অনেক লোকজনকে বিরক্ত করে। তোমরা জানো
- এই ৫ ভূত তো ২৫০০ বছর ধরে চলে আসছে। তোমরা কতো বিরক্ত হয়ে গেছো। এই ৫ ভূতেরা
তোমাদের কাঙ্গাল বানিয়ে দিয়েছে। দেহ-অভিমানের ভূত হলো প্রথম স্থানে। কামবিকারের
ভূতও হলো অনেক বড়। এরা তোমাদের কতো বিরক্ত করেছে, এও বাবা-ই বলেছেন। প্রতি কল্পে
এইসব ভূত তোমাদের ধরে। যথা রাজা-রানী তথা প্রজা, সকলকেই ভূতে ধরেছে। তাই একে
ভূতেদের দুনিয়া বলবে। রাবণ-রাজ্য মানে আসুরী রাজ্য। সত্যযুগ-ত্রেতায় ভূত থাকে না।
একটা ভূতও অনেক বিরক্ত করে। এই (বিকার-রূপী) ভূতকে কেউ-ই জানে না। ৫ বিকার-রূপী
রাবণের ভূত রয়েছে, যার থেকে বাবা এসে মুক্ত করেন। তোমাদের মধ্যেও সেন্সীবেল কেউ কেউ
রয়েছে, যাদের বুদ্ধিতে বসে যায়। এই জন্মে তো এমন কোনো কর্ম করবো না। চুরি করলে,
দেহ-অভিমান এলে তখন রেজাল্ট কেমন হবে? পদভ্রষ্ট হয়ে যাবে। কিছু না কিছু তুলে নেয় (চুরি
করে)। তাই কথায় বলে -- খড়কুটো চুরি করে যে আর লক্ষ টাকা চুরি যে, দুজনেই চোর।
যজ্ঞতে এমন কর্ম তো কখনই করা উচিত নয়। অভ্যাস হয়ে গেলে তখন পুনরায় কখনো তা ছাড়তে
চায় না। কত মাথা কুটতে থাকে। আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাত-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মিক পিতা তাঁর আত্মা-রূপী সন্তানদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
স্থূল-রূপের সেবার সাথে - সাথে সূক্ষ্ম এবং মূল সেবাও করতে হবে। সকলকে বাবার পরিচয়
দেওয়া, আত্মাদের কল্যাণ করা, স্মরণের যাত্রায় থাকা - এইসব হলো সত্যিকারের সেবা। এই
সেবাতেই ব্যস্ত থাকতে হবে, নিজের সময় নষ্ট করবে না।
২ ) সচেতন হয়ে ৫
বিকার-রূপী ভূতের উপর বিজয়লাভ করতে হবে। চুরি করা বা মিথ্যা বলার অভ্যাস পরিত্যাগ
করতে হবে। দানে অর্পণ করে দেওয়া কোনো বস্তুকে পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়।
বরদান:-
শারীরিক অসুস্থতার চিন্তন থেকে মুক্ত, জ্ঞান চিন্তন বা স্বচিন্তন করা শুভচিন্তক ভব
এক হলো শরীর অসুস্থ
হওয়া, আর এক হলো সেই অসুস্থতার কারণে শ্রেষ্ঠ স্থিতির পতন ঘটা। শরীর অসুস্থ হবে এটা
ভবিতব্য, কিন্তু শ্রেষ্ঠ স্থিতির পতন - এটা হলো বন্ধনযুক্ত থাকার লক্ষণ। যারা
শারীরিক অসুস্থতার চিন্তনের থেকে মুক্ত হয়ে স্বচিন্তন, জ্ঞান চিন্তন করে তারাই হলো
শুভ চিন্তক। প্রকৃতির চিন্তন বেশী করার ফলে তখন চিন্তার রূপ হয়ে যায়। সেই বন্ধনের
থেকে মুক্ত হওয়াকেই কর্মাতীত স্থিতি বলা হয়ে থাকে।
স্লোগান:-
স্নেহের শক্তি সমস্যা রূপী পাহাড়কে জলের মতো হাল্কা বানিয়ে দেয়।