20.03.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
এই পুরানো দুনিয়ার সুখ তো হলো অল্পকালের ক্ষণ-ভঙ্গুর, এ সাথে যাবে না, সাথে তো
জ্ঞান-রত্ন যাবে, সেইজন্য অবিনাশী উপার্জন জমা করো"
প্রশ্নঃ -
বাবার
পড়াশুনাতে তোমাদেরকে কোন্ বিদ্যা শেখানো হয় না?
উত্তরঃ
ভূত বিদ্যা
(Occult power) । কারোর সংকল্পকে রীড করা, এ হলো ভূত বিদ্যা, তোমাদেরকে এই বিদ্যা
শেখানো হয় না। বাবা কোনো থট-রিডার নন। তিনি হলেন জানি-জাননহার অর্থাৎ নলেজফুল। বাবা
তোমাদেরকে আধ্যাত্মিক পড়াশুনা পড়ানোর জন্য আসেন। এই পড়ার দ্বারা তোমরা ২১ জন্মের
জন্য বিশ্বের রাজত্ব পেয়ে যাও।
ওম্ শান্তি ।
ভারতে
ভারতবাসীরা গান গায় - আত্মা এবং পরমাত্মা আলাদা থেকেছে বহুকাল.... । এখন বাচ্চারা
জেনেছে যে, আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পিতা পরমপিতা পরমাত্মা আমাদেরকে রাজযোগ
শেখাচ্ছেন। তিনি নিজের পরিচয়ের সাথে সাথে সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তিমের পরিচয়ও দিচ্ছেন।
কেউ কেউ পাকাপাকি ভাবে নিশ্চিত হয়েছে, কেউ হয়তো একটু কম বুঝেছে। বিভিন্ন ক্রম রয়েছে।
বাচ্চারা জানে যে আমরা জীব আত্মারা পরমপিতা পরমাত্মার সম্মুখে বসে আছি। গাওয়া হয়ে
থাকে - আত্মা এবং পরমাত্মা অনেক দিন আলাদা থেকেছে। কিন্তু আত্মা যখন মূলবতনে থাকে
তখন তো আলাদা থাকার প্রশ্নই আসে না। এখানে এসে যখন জীব-আত্মা হয়ে যায়, তখনই পরমাত্মা
পিতার থেকে আত্মারা আলাদা হয়ে যায়। পরমপিতা পরমাত্মার কাছ থেকে আলাদা হয়ে এখানে
পার্ট প্লে করতে আসে। আগে তো কোনো অর্থ না বুঝে এমনিই গান করতে। এখন স্বয়ং বাবা বসে
থেকে বোঝাচ্ছেন। বাচ্চারা জানে যে আমরা পরমপিতা পরমাত্মার কাছ থেকে আলাদা হয়ে এখানে
পার্ট প্লে করতে আসি। তোমরাই সবার আগে শিববাবার কাছ থেকে আলাদা হয়েছো, তাই সবার আগে
তোমাদের সাথেই শিববাবা সাক্ষাৎ করছেন। খাস তোমাদের জন্যই বাবাকে আসতে হয়। আগের
কল্পেও এই বাচ্চাদেরকেই পড়িয়েছিলাম যারা পরবর্তী কালে স্বর্গের মালিক হয়েছিল। তখন
অন্য কোনো ভূখন্ড ছিল না। বাচ্চারা জানে যে আমরা আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের
অন্তর্গত ছিলাম যাকে ডিটি রিলিজিয়ন (দেবধর্ম) কিংবা ডিটি ডিনায়িস্টী (দেব সাম্রাজ্য)
বলা হয়। প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব ধর্ম থাকে। বলা হয় রিলিজিয়ন ইজ মাইট বা ধর্মই শক্তি।
ধর্মের মধ্যেই শক্তি থাকে। তোমরা বাচ্চারা জানো যে এই লক্ষ্মী-নারায়নের মধ্যে কতোই
না শক্তি ছিল। কিন্তু ভারতবাসীরা তো নিজের ধর্মকেই জানে না। কারোর বুদ্ধিতেই আসেনা
যে ভারতে বরাবর এনাদেরই ধর্ম ছিল। ধর্মকে না জানার কারণে ভারতবাসীরা ইরিলিজিয়াস (অধার্মিক)
হয়ে গেছে। রিলিজিয়নে ফেরত আসার ফলে তোমাদের মধ্যে অনেক শক্তি চলে আসে। তোমরা
লৌহযুগের পাহাড়কে সরিয়ে স্বর্ণযুগী বানিয়ে দাও। ভারতকে সোনার পাহাড় বানিয়ে দাও।
ওখানে খনিগুলো সোনায় ভরপুর থাকবে। সোনার পাহাড় থাকবে যেগুলো ওখানে উন্মুক্ত হবে।
সোনা গলিয়ে ইট বানানো হবে। ওইরকম বড় বড় ইঁট দিয়েই ঘর-বাড়িগুলো বানানো হবে। মায়া
বিল্লির খেলাও দেখানো হয়। ওগুলো সব গল্প কাহিনী। বাবা বলছেন - আমি এখন তোমাদেরকে
এসবের সার শোনাচ্ছি। দেখানো হয়েছে - কেউ ধ্যানে বসে দেখলো যে সে ঝুলি ভর্তি করে নিয়ে
আসছে, অথচ ধ্যান ভাঙার পরে দেখলো কিছুই নেই। তোমাদের ক্ষেত্রেও এইরকম হয়। এটাকে
দিব্যদৃষ্টি বলা হয়। এতে কিছুই লাভ হয় না। অনেকেই নবধা (প্রগাঢ়) ভক্তি করে থাকে।
ওদের ওই ভক্তমালা আলাদা আর এই জ্ঞানমালা আলাদা। রুদ্রমালা আর বিষ্ণুমালা বলা হয়।
ঐগুলো সব ভক্তিমার্গের মালা। এখন তোমরা রাজত্ব প্রাপ্তির জন্য পড়ছ। তোমাদের বুদ্ধি
টিচার এবং রাজত্বের সাথেই যুক্ত আছে। কলেজেও পড়াশুনার সময়ে বুদ্ধি টিচারের সাথে
যুক্ত থাকে। যে ব্যারিস্টার, সে শিক্ষা দিয়ে তার মতোই তৈরি করে। এই বাবা তো নিজে তা
হন না। এই ওয়ান্ডার এখানেই হয় । এটাই হলো তোমাদের আধ্যাত্মিক পড়াশুনা। তোমাদের
বুদ্ধি শিববাবার সাথে যুক্ত রয়েছে। ওনাকেই নলেজফুল বা জ্ঞানের সাগর বলা হয়।
জানি-জাননহার শব্দের অর্থ এটা নয় যে তিনি বসে বসে সকলের মনের কথা জানবেন, কার মনে
কি চলছে সেইসব জানবেন। যারা থট-রিডার, তারা এইসব শোনায়। ওটাকে ভূত বিদ্যা বলা হয়।
এখানে তো বাবা মানুষ থেকে দেবতা বানানোর শিক্ষা দেন। মানুষ থেকে দেবতা বানানোর
গায়নও রয়েছে। তোমরা বাচ্চারা বুঝেছো যে আমরা এখন ব্রাহ্মণ হয়েছি এবং পরের জন্মে
দেবতা হব। আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মেরই গায়ন করা হয়। শাস্ত্রগুলোতে অনেক গল্প
কাহিনী লিখে দিয়েছে। এখানে তো স্বয়ং বাবা বসে ডায়রেক্ট পড়াচ্ছেন।
ভগবানুবাচ - ভগবান-ই
হলেন জ্ঞানের সাগর, সুখের সাগর, শান্তির সাগর। তোমাদের মতো বাচ্চাদেরকে তিনি
উত্তারাধিকার দেন। তোমাদের এই পড়াশুনা পুরো ২১ জন্মের জন্য। তাই কতোই না ভালো করে
পড়তে হবে। নুতন দুনিয়া স্থাপন করার জন্য বাবা কেবল একবার এসে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের
শিক্ষা দেন। নুতন দুনিয়াতে তো এই দেবী-দেবতাদের রাজত্ব ছিল। বাবা বলেন, আমি
ব্রহ্মার দ্বারা আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম স্থাপন করছি। যখন এই ধর্ম ছিল তখন অন্য
কোনো ধর্ম ছিল না। এখন অন্য সকল ধর্ম রয়েছে। ত্রিমূর্তির ছবি দেখিয়েও তোমরা বোঝাও
যে ব্রহ্মার দ্বারা এক ধর্মের স্থাপন হয়। এখন এখানে ওই ধর্ম নেই। গায়ন করা হয় -
আমার মতো নির্গুনের মধ্যে কোনো গুন নেই, তুমিই স্বয়ং দয়া করো…। যখন এইরকম বলা হয়
তখন বুদ্ধি গড ফাদারের দিকেই চলে যায়। তাঁকেই মার্সিফুল বা দয়ার সাগর বলা হয়। বাবা
তো বাচ্চাদের সকল দুঃখ দূর করে ১০০ শতাংশ সুখ দেওয়ার জন্যই আসেন। তিনি কতোই না দয়া
করেন। তোমরা এখন বুঝেছ যে আমরা যেহেতু বাবার কাছে এসেছি তাই বাবার কাছ থেকে
সম্পূর্ণ সুখ নিতে হবে। ওটাকে বলা-ই হয় সুখধাম। এটা হলো দুঃখধাম। এই চক্রটাকে ভালো
ভাবে বুঝতে হবে। শান্তিধাম এবং সুখধামকে স্মরণ করলে অন্তিম কালে যেমন মতি, তেমনই গতি
লাভ হবে ('অন্ত মতি সো গতি') । শান্তিধামকে স্মরণ করলে তো অবশ্যই শরীরকে ছাড়তে হবে।
তাহলেই তো আত্মা শান্তিধামে যেতে পারবে। কেবল বাবা ছাড়া অন্য কারোর কথা যেন মনে না
আসে। লাইন একেবারে ক্লিয়ার থাকতে হবে। কেবল বাবাকে স্মরণ করলে অন্তরে খুশির পারদ
ঊর্ধগামী হয়। এই পুরাতন দুনিয়ার সুখ তো ক্ষণস্থায়ী এবং ক্ষণভঙ্গুর। এগুলো কিছুই
সঙ্গে যাবে না। সঙ্গে যাবে কেবল এই অবিনাশী জ্ঞান রত্ন। অর্থাৎ এই জ্ঞান রত্নের
দ্বারা যা উপার্জন হবে, সেগুলোই তোমাদের সঙ্গে যাবে, যার প্রাপ্তি তোমরা ২১ জন্ম
ভোগ করবে। তবে হ্যাঁ, বিনাশী ধন-সম্পত্তিও তাদের সঙ্গেই যাবে যারা বাবাকে সহযোগ করবে।
বাবা, তুমি আমাদের এই কড়ির বিনিময়ে ওখানে আমাদেরকে মহল বানিয়ে দিও। বাবা এই কড়ির
বিনিময়ে কতো রত্ন দান করেন। আমেরিকার লোকেরা এইরকম অনেক অর্থ খরচ করে পুরাতন জিনিস
কেনে। মানুষ ওইসব পুরাতন জিনিসগুলো চড়া দামে বিক্রি করে। আমেরিকার লোকেদের কাছ থেকে
পাই পয়সার জিনিসের বিনিময়ে হাজার হাজার টাকা নিয়ে নেয়। বাবাও কতো ভালো গ্রাহক।
ভোলানাথের গায়ন রয়েছে। মানুষ তো এইসব কিছুই জানে না। ওরা শিব আর শঙ্করকে অভিন্ন বলে
দেয়। তাঁর উদ্দেশ্যে বলে - ঝুলি ভরে দাও। তোমরা বাচ্চারা এখন বুঝেছ যে আমরা যেসব
জ্ঞান রত্ন পাচ্ছি, সেগুলোর দ্বারা-ই আমাদের ঝুলি ভরপুর হয়ে যাচ্ছে। ইনি হলেন অসীম
জগতের পিতা। ওরা তো শঙ্করকে দেখিয়ে বলে - ধুতরা খায়, ভাঙ খায়। যতসব আজগুবি কথা বসে
বসে বানিয়েছে। তোমরা বাচ্চারা এখন সদগতি প্রাপ্তির জন্য পড়াশুনা করছ। এটা হলো একদম
শান্ত থাকার পড়াশুনা। এইরকম আলো জ্বালানো হয় এবং জাঁকজমক করা হয় যাতে মানুষ এসে
জিজ্ঞেস করে যে তোমরা এতো ধুমধাম করে কেন শিব জয়ন্তী পালন করো? শিববাবা-ই তো ভারতকে
বিত্তবান বানায়। লক্ষ্মী-নারায়নকে স্বর্গের মালিক কে বানিয়েছে সেটা কি তোমরা জানো?
আগের জন্মে লক্ষ্মী-নারায়ণ কি ছিলেন? আগের জন্মে ইনি জগৎ আম্বা জ্ঞান-জ্ঞানেশ্বরী
ছিলেন। পরের জন্মে তিনি রাজ-রাজেশ্বরী হয়েছিলেন। তাহলে পদ মর্যাদার দিক দিয়ে বড়ো
কে? হয়তো ইনি স্বর্গের মালিক ছিলেন, কিন্তু জগৎ অম্বা কোথাকার মালিক ছিলেন? তাঁর
কাছে মানুষ কেন যায়? ব্রহ্মারও ১০০ হাত, ২০০ হাত, ১ হাজার হাত দেখানো হয়। সন্তানের
সংখ্যা যত বৃদ্ধি পায়, হাতের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। জগৎ অম্বার ক্ষেত্রেও লক্ষ্মীর
থেকে বেশি হাত দেখানো হয়েছে। ওনার কাছে গিয়েই সবকিছু প্রার্থনা করে। সন্তান হওয়ার
কিংবা অন্য অনেক আশা নিয়ে যায়। কিন্তু লক্ষ্মীর কাছে কখনো এইরকম প্রার্থনা করে না।
তিনি তো কেবল বিত্তবান ছিলেন। কিন্তু জগৎ আম্বার কাছ থেকে স্বর্গের রাজত্ব প্রাপ্ত
হয়। মানুষ এটাও জানে না যে জগৎ আম্বার কাছ থেকে কি প্রার্থনা করা উচিত। এটা তো
পড়াশুনা। জগদম্বা কোন বিষয় নিয়ে পড়ছেন? রাজযোগ। এটাকে আবার বুদ্ধিযোগও বলা হয়। অন্য
সবকিছু থেকে তোমাদের বুদ্ধির যোগ সরে গিয়ে কেবল বাবার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। বুদ্ধি
তো অনেক দিকে ছুটে বেড়ায়। বাবা এখন বলছেন - আমার সাথেই বুদ্ধি যুক্ত করো, নাহলে
বিকর্ম বিনাশ হবে না। তাই বাবা ফটো তুলতেও বারণ করেন। এই শরীরটা তো এনার।
বাবা স্বয়ং দালাল রূপে
বলছেন - তোমাদের ওই গাঁটছড়ার বন্ধন ক্যানসেল হয়ে গেছে। এখন কাম বাসনার চিতা থেকে
নেমে এসে জ্ঞানের চিতায় বসো। কাম বিকারের চিতা থেকে নেমে এসো। নিজেকে আত্মা রূপে
অনুভব করে আমাকে অর্থাৎ নিজের পিতাকে স্মরণ করলেই বিকর্ম বিনষ্ট হবে। কোনো মানুষ
কখনো এইরকম বলতে পারবে না। মানুষকে কখনো ভগবান বলা যাবে না। তোমরা বাচ্চারা জানো যে
বাবা-ই হলেন পতিত-পাবন। তিনি এসেই কাম বিকারের চিতা থেকে নামিয়ে জ্ঞানের চিতায় বসিয়ে
দেন। তিনি হলেন আত্মিক পিতা। এনার মধ্যে বসে থেকে তিনি বলছেন - তোমরাও আত্মা।
অন্যদেরকেও এটা বোঝাও। বাবা বলছেন - "মন্মনা ভব" । মন্মনা শব্দটা উচ্চারণ করলেই
তাঁর স্মরণ চলে আসবে। এই পুরাতন দুনিয়ার বিনাশও অতি নিকটে। বাবা বোঝাচ্ছেন, এটা হলো
ভয়ঙ্কর মহাভারতের লড়াই। কেউ হয়তো বলবে - লড়াই তো বিদেশেও হয়, তাহলে এটাকে মহাভারতের
যুদ্ধ বলা হয় কেন? ভারতেই তো যজ্ঞের রচনা হয়েছে। এখান থেকেই তো বিনাশের অগ্নি
নির্গত হয়েছিল। মিষ্টি বাচ্চারা, তোমাদের জন্য যদি নুতন দুনিয়ার প্রয়োজন হয়, তবে এই
পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ তো অবশ্যই হবে। এখান থেকেই মূল লড়াই আরম্ভ হয়। এই রুদ্র জ্ঞান
যজ্ঞ থেকেই ভয়ঙ্কর লড়াই এবং বিনাশের অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। হয়তো শাস্ত্রতে লেখা
আছে, কিন্তু কে বলেছে সেটা কেউ জানে না। বাবা এখন নুতন দুনিয়ার জন্য এইসব বোঝাচ্ছেন।
তোমরা এখন রাজত্ব নিচ্ছ, দেবী-দেবতা হচ্ছ। তোমাদের রাজত্বে অন্য কেউ থাকবে না।
আসুরিক দুনিয়ার বিনাশ হয়ে যাবে। বুদ্ধিতে রাখতে হবে যে আমরা তো কালকেই রাজত্ব করতাম।
বাবা আমাদেরকে রাজত্ব দিয়েছিলেন। তারপর ৮৪ জন্ম নিয়েছি। এখন পুনরায় বাবা এসেছেন।
তোমাদের মতো বাচ্চাদের মধ্যে এইসব জ্ঞান রয়েছে। বাবা স্বয়ং এই জ্ঞান দিয়েছেন। যখন
দেবতা ধর্ম স্থাপন হয় তখন সমগ্র আসুরিক জগতের বিনাশ হয়ে যায়। বাবা নিজে বসে থেকে
ব্রহ্মার দ্বারা এইসব বিষয় বোঝাচ্ছেন। ব্রহ্মাও শিববাবার সন্তান। বিষ্ণুর বিষয়েও
বোঝানো হয়েছে - ব্রহ্মা থেকে বিষ্ণু এবং বিষ্ণু থেকেই ব্রহ্মা হয়। তোমরা এখন বুঝে
গেছ যে আমরা বর্তমানে ব্রাহ্মণ জন্মে রয়েছি, এরপর দেবতা হব, তারপরে আবার ৮৪ জন্ম
নেব। যেহেতু কেবল বাবা-ই এই জ্ঞান দান করেন, সুতরাং অন্য কোনো মানুষের কাছ থেকে
কিভাবে এই জ্ঞান পাওয়া সম্ভব ? গোটাটাই বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করার বিষয়। বাবা বলছেন,
অন্য সবদিক থেকে বুদ্ধিযোগ ছিন্ন করো। বুদ্ধিটাই বিগড়ে যায়। বাবা উপদেশ দিচ্ছেন -
আমাকে স্মরণ করলেই বিকর্ম বিনষ্ট হবে। গৃহস্থ জীবনে থাকতে চাইলে থাকো। এম অবজেক্ট
তো সামনেই রয়েছে। তোমরা জানো যে আমরা পড়াশুনা করে এইরকম হবো। তোমাদের এই পড়াশুনা
কেবল সঙ্গমযুগের জন্য। এখন তোমরা ওদিকেও নেই, এদিকেও নেই। তোমরা এখন বাইরে আছ।
বাবাকে তো মাঝিও বলা হয়। গান করে - আমাদের নৌকা তীরে নিয়ে চলো…। এটা নিয়ে একটা
গল্পও আছে। কেউ কেউ চলতে শুরু করে দেয়, কেউ আবার থেমে যায়। বাবা এখন বলছেন - আমি
নিজে বসে থেকে এই ব্রহ্মার মুখ দ্বারা জ্ঞান শোনাই। ব্রহ্মা এলো কোথা থেকে? যিনি
প্রজাপিতা, তাঁকে তো অবশ্যই এখানে থাকতে হবে। আমি এনাকে দত্তক নিই এবং একটা নামও
রাখি। তোমরাই হলে ব্রহ্মার মুখ বংশাবলী ব্রাহ্মণ। তোমরা কলিযুগের অন্তিমেও রয়েছ এবং
তোমরাই আবার সত্যযুগের শুরুতেও আসবে। সবার আগে তোমরাই বাবার থেকে আলাদা হয়ে পার্ট
প্লে করতে এসেছো। তবে আমাদের মধ্যেও তো সবাই এইরকম নয়। এটাও বুঝতে পারা যাবে যে কারা
কারা পুরো ৮৪ জন্ম নেয়। এই লক্ষ্মী-নারায়ণের ক্ষেত্রে তো গ্যারেন্টি রয়েছে। এনাদের
জন্যই শ্যাম-সুন্দরের গায়ন করা হয়। দেবী দেবতারা সুন্দর ছিলেন। ওনারা শ্যাম থেকে
সুন্দর হয়েছিলেন। গ্রামের বেয়াদব ছেলে থেকে পরিবর্তিত হয়ে সুন্দর হয়ে যায়। আজকাল সব
ছেলে মেয়েই বেয়াদব হয়ে গেছে। এগুলো সব অসীম জগতের বিষয়, যেটা কেউই জানে না। কতো
ভালোভাবে বোঝানো হয়। সার্জেন তো সকলের জন্যই এক। ইনি হলেন অবিনাশী সার্জেন। যোগকে
অগ্নি বলা হয়। কারন যোগের দ্বারা-ই আত্মার খাদ নির্গত হয়। যোগ-অগ্নির দ্বারা-ই
তমোপ্রধান আত্মা সতোপ্রধান হয়ে যায়। আগুন কম থাকলে খাদ নির্গত হবে না। স্মরণ করাকেই
যোগ-অগ্নি বলা হয়। এর দ্বারা-ই বিকর্মের বিনাশ হয়। বাবা বলছেন, আমি তোমাদেরকে কতো
করে বোঝাই। এগুলো তো ধারণ করতে হবে। ঠিক আছে, "মন্মনা ভব" । এই বিষয়ে ক্লান্ত হলে
চলবে না। বাবাকে স্মরণ করতেই ভুলে যায়। ইনি হলেন সকল পতির পতি, যিনি জ্ঞানের দ্বারা
তোমাদেরকে সাজাচ্ছেন। নিরাকার পিতা বলছেন - অন্য সবকিছু থেকে বুদ্ধিযোগ ছিন্ন করে
আমাকে অর্থাৎ নিজ পিতাকে স্মরণ করো। বাবা তো সকলের অভিন্ন। তোমাদের এখন উন্নতি হচ্ছে।
বলা হয়, তোমাদের কল্যাণেই সকলের কল্যাণ। বাবা তো সকলের কল্যাণ করার জন্যই এসেছেন।
রাবন সবাইকে দুর্গতিতে নিয়ে যায়, রাম সবাইকে সদগতিতে নিয়ে যায়। আচ্ছা।
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
বাবার স্মরণের দ্বারা অসীম সুখের অনুভব করার জন্য বুদ্ধির লাইন ক্লিয়ার থাকতে হবে।
স্মরণ অগ্নিরূপ হলেই আত্মা সতোপ্রধান হবে।
২ ) বাবা কড়ির বদলে
রত্ন দেন। এইরকম ভোলানাথ বাবার কাছে নিজের ঝুলি ভর্তি করতে হবে। শান্ত থাকার পাঠ পড়ে
সদগতি প্রাপ্ত করতে হবে।
বরদান:-
মায়ার
বন্ধনগুলির থেকে সদা নির্বন্ধন থেকে যোগযুক্ত, বন্ধনমুক্ত ভব
বন্ধনমুক্তের লক্ষণ
হলো সদা যোগযুক্ত। যোগযুক্ত বাচ্চারা দায়িত্বের বন্ধন বা মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়।
মনেরও বন্ধন থাকবে না। লৌকিক দায়িত্ব তো হল খেলা, এইজন্য ডায়রেকশন অনুসারে খেলার
রীতির দ্বারা হাসতে হাসতে খেলো তাহলে ছোটো ছোটো বিষয়ে কখনও ক্লান্ত হবে না। যদি
বন্ধন মনে করো তাহলে বিরক্ত হয়ে যাবে। কি, কেন-র প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু দায়িত্ব হল
বাবার আর তোমরা হলে নিমিত্ত। এই স্মৃতিতে থেকে বন্ধনমুক্ত হও তাহলে যোগযুক্ত হয়ে
যাবে।
স্লোগান:-
করণকরাবনহারের স্মৃতিতে থেকে ভান (ইগো) আর অভিমানকে সমাপ্ত করো।
অব্যক্ত ঈশারা :-
সত্যতা আর সভ্যতারূপী কালচারকে ধারণ করো
অপবিত্রতা কেবল কাউকে
দুঃখ দেওয়া বা পাপ কর্ম করাই নয়, কিন্তু নিজের মধ্যে সত্যতা, স্বচ্ছতা বিধিপূর্বক
যদি অনুভব করে থাকো তাহলে সেটাই হল পবিত্রতা। যেরকম কথিত আছে সত্যের নৌকা ডুবে যায়
না কিন্তু দোলাচলে আসে। তো বিশ্বাসের নৌকা হল সত্যতা, অনেস্টী, যা দোলাচলে আসবে
কিন্তু ডুববে না এইজন্য সত্যতার সাহসের দ্বারা পরমাত্ম প্রত্যক্ষতার নিমিত্ত হও।