20.07.2024
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
মায়া রাবণের সঙ্গে এসে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে গেছো, পবিত্র চারা গাছ অপবিত্র হয়ে
গেছে, এখন আবার পবিত্র হও"
প্রশ্নঃ -
প্রত্যেক
বাচ্চার নিজের প্রতি কোন্ ওয়ান্ডার (আশ্চর্য) মনে হয়? বাবার বাচ্চাদের প্রতি কোন্
ওয়ান্ডার লাগে?
উত্তরঃ
বাচ্চাদের
ওয়ান্ডার লাগে যে, আমরা কি ছিলাম, কার বাচ্চা ছিলাম, এমন বাবার উত্তরাধিকার আমরা
প্রাপ্ত করেছিলাম, সেই বাবাকেই আমরা ভুলে গেছি । রাবণ আসাতে জীবনে এমন কুয়াশা নিয়ে
এসেছিলো যে আমরা রচয়িতা আর রচনা, সব ভুলে গিয়েছিলাম। বাবার বাচ্চাদের প্রতি
ওয়ান্ডার লাগে যে, যে বাচ্চাদের আমি এতটা উচ্চ বানিয়েছিলাম, রাজ্য - ভাগ্য
দিয়েছিলাম, সেই বাচ্চারাই আমার গ্লানি করতে শুরু করেছিলো । রাবণের সঙ্গে এসে
সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছে ।
ওম্ শান্তি ।
তোমরা কি
চিন্তা করছো? পুরুষার্থের নম্বর অনুসারে প্রত্যেকের জীবাত্মাই এখন নিজের উপর
ওয়ান্ডার হচ্ছে যে, আমরা কি ছিলাম, কার বাচ্চা ছিলাম, আর বরাবর আমরা বাবার কাছ থেকে
উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করেছিলাম, তারপর কিভাবে আমরা ভুলে গেছি! আমরা সতোপ্রধান
দুনিয়াতে সম্পূর্ণ বিশ্বের মালিক ছিলাম, খুব সুখী ছিলাম। তারপর আমরা সিঁড়ি দিয়ে
নেমে এসেছি । রাবণ এলো যেন এতো কুয়াশা এসে গেলো যে, আমরা রচয়িতা এবং রচনাকে ভুলে
গেলাম। কুয়াশাতে মানুষ তো রাস্তা ইত্যাদি ভুলে যায়, তাই না । তাই আমরাও ভুলে
গিয়েছিলাম যে - আমাদের ঘর কোথায়, আমরা কোথাকার অধিবাসী ছিলাম। বাবা এখন দেখছেন
যে, আমার বাচ্চারা,যাদের আমি আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে রাজ্য-ভাগ্য দিয়ে
গিয়েছিলাম, তারা বড় আনন্দ এবং মজায় ছিলো, এই ভূমি আবার কি হয়ে গেলো ! কিভাবে তারা
রাবণের রাজ্যে এসে গেলো! পরের রাজ্যে তো অবশ্যই দুঃখই পাওয়া যাবে । তোমরা কতো
বিভ্রান্ত হয়ে গেছো! অন্ধশ্রদ্ধায় তোমরা বাবাকে খুঁজতে থেকেছো কিন্তু কোথায়
পেয়েছো? যাঁকে তোমরা নুড়ি - পাথরে বলে দিয়েছো, তাহলে তাঁকে কিভাবে পাবে । অর্ধেক
কল্প ধরে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে যেন আশা হারিয়ে ফেলেছো । নিজেরই অজ্ঞানতার কারণে
রাবণ রাজ্যে তোমরা কতো দুঃখ ভোগ করেছো । ভারত ভক্তি মার্গে কতো গরীব হয়ে গেছে ।
অর্ধেক কল্প ভক্তি করেছে, কিসের জন্য? ভগবানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। ভক্তির
পরেই ভগবান ফল প্রদান করেন। তিনি কি দেন? তা তো কেউ জানেই না, সম্পূর্ণ বুদ্ধু হয়ে
গেছে । এই সব কথা বুদ্ধিতে আসা চাই যে - আমরা কি ছিলাম, কিভাবে রাজ্য-ভাগ্য ভোগ
করতাম, তারপর কিভাবে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে রাবণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে গেছে
। এখানে অপরমপার দুঃখ। প্রথম প্রথম তোমরা অপরমঅপার সুখে ছিলে । তাই এই কথা মনে আসা
উচিত যে, আমাদের নিজের রাজ্যে কতো সুখ ছিলো তারপর পরের রাজ্যে কতো দুঃখ ভোগ করেছি ।
ওরা যেমন মনে করে ইংরেজ রাজত্বকালে আমরা অনেক দুঃখ ভোগ করেছিলাম। তোমরা এখন বসে আছো,
তোমাদের অন্তরে এই খেয়াল আসা উচিত যে, আমরা কে ছিলাম, কার বাচ্চা ছিলাম? বাবা
আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বের রাজত্ব দিয়েছিলেন তারপর কিভাবে রাবণ রাজ্যে গিয়ে আটকে
গেছি । আমরা কতো দুঃখ দেখেছি, কতো মন্দ কর্ম করেছি । সৃষ্টি দিনে দিনে নামতেই থেকেছে
। মানুষের সংস্কার দিনে দিনে ক্রিমিনাল হয়ে গেছে । তাই বাচ্চাদের এই কথা স্মৃতিতে
আসা উচিত। বাবা দেখেন যে, এরা পবিত্র চারা গাছ ছিলো, যাদের আমি রাজ্য-ভাগ্য প্রদান
করেছিলাম, তারাই আবার আমার অক্যুপেশনকে ভুলে গেলো । তোমরা এখন আবার তমোপ্রধান থেকে
সতোপ্রধান হতে চাও, তাই আমি তোমাদের বাবা, আমাকে স্মরণ করো তাহলে পাপ কেটে যাবে,
কিন্তু স্মরণও করতে পারে না, প্রতি মুহূর্তে বলে, বাবা আমরা ভুলে যাই। আরে, তোমরা
স্মরণ না করলে কিভাবে পাপ মুক্ত হবে? এক তো তোমরা বিকারে চলে গিয়ে পতিত হয়ে গেছো,
আর দ্বিতীয় হলো তোমরা বাবাকে গালি দিতে শুরু করেছো । মায়ার সঙ্গে তোমরা এতটাই নীচে
নেমে গেছো যে, যিনি তোমাদের আকাশে চড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁকেই তোমরা নুড়ি - পাথরের
মধ্যে বলে দিয়েছো । মায়ার সঙ্গে থেকে তোমরা এমন কাজ করেছো! বুদ্ধিতে তো আসা চাই,
তাই না । একদম পাথর বুদ্ধি তো হওয়া উচিত নয় । বাবা রোজ রোজ বলেন যে, আমি তোমাদের
ফার্স্টক্লাস পয়েন্ট শোনাই।
বম্বেতে যেমন সংগঠন হচ্ছে, সেখানে তোমরা বলতে পারো যে, বাবা বলছেন - হে ভারতবাসী,
তোমাদের আমি রাজ্য-ভাগ্য প্রদান করেছিলাম। তোমরা দেবতারা হেভেনে ছিলে, তারপর তোমরা
রাবণ রাজ্যে কিভাবে এলে, এও ড্রামাতে পার্ট আছে । তোমরা রচয়িতা এবং রচনার আদি -
মধ্য এবং অন্তকে বোঝো, তাহলেই উচ্চ পদ অর্জন করতে পারবে । আর আমাকে স্মরণ করলে
তোমাদের বিকর্ম বিনাশ হবে । এখানে যদিও সবাই বসে আছে, তবুও কারোর বুদ্ধি কোথাও,
আবার কারোর বুদ্ধি অন্য কোথাও আছে । বুদ্ধিতে আসা চাই - আমরা কোথায় ছিলাম, এখন আমরা
পরের রাবণ রাজ্যে এসে পড়েছি, তাই কতো দুঃখী হয়েছি । আমরা তো শিবালয়ে খুব সুখী
ছিলাম। বাবা এখন এসেছেন আমাদের বেশ্যালয় থেকে নির্গত করতে, তবুও কেউ নির্গত হতেই
চায় না । বাবা বলেন, তোমরা শিবালয় যাবে, তখন ওখানে এই বিষ পাবে না । এখানকার
খারাপ খাবারদাবার ওখানে পাওয়া যাবে না । ইনি তো বিশ্বের মালিক ছিলেন, তাই না ।
তারপর ইনি কোথায় গেলেন? আবার ইনি নিজের রাজ্য - ভাগ্য গ্রহণ করছেন। এ কতো সহজ। বাবা
তো একথা বুঝিয়েছেন যে, সবাই সার্ভিসেবেল হবে না । নম্বরের ক্রমানুসারে রাজধানী
স্থাপন করতে হবে, যেমন পাঁচ হাজার বছর পূর্বে করা হয়েছিলো । তোমাদের সতোপ্রধান হতে
হবে, বাবা বলেন, এ হলো পুরানো তমোপ্রধান দুনিয়া । অ্যাক্যুরেট পুরানো যখন হবে,
তখনই তো বাবা আসবেন, তাই না । বাবা ছাড়া তো আর কেউই বোঝাতে পারবে না । ভগবান এই
রথের দ্বারা আমাদের পড়াচ্ছেন, এই কথা স্মরণে থাকলেও বুদ্ধিতে জ্ঞান থাকবে । তারপর
অন্যদেরও বলে নিজের সমান তৈরী করবে । বাবা বোঝান, তোমাদের তো প্রথমে ক্রিমিনাল
ক্যারেক্টার ছিলো, যা খুব কষ্ট করে শুধরানো যেতো । চোখের ক্রিমিনালিটি দূর হয় না ।
এক তো কামের ক্রিমিনালিটি, তা খুব মুশকিলের সঙ্গেই দূর হয়, এর সাথে আবার পাঁচ
বিকার। ক্রোধের ক্রিমিনালিটিও কতো আছে । বসে বসে ভূত এসে যায় । এও ক্রিমিনালিটি হলো
। সিভিলাইজড্ তো হলো না । এর ফল কি হবে? শত গুণ পাপ চড়ে যাবে । প্রতি মুহূর্তে
ক্রোধ করতে থাকবে । বাবা বোঝান যে, তোমরা তো এখন আর রাবণ রাজ্যে নেই, তাই না । তোমরা
তো ঈশ্বরের কাছে বসে আছো । তাই তোমাদের এই বিকার দূর করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে । বাবা
বলেন, এখন আমাকে স্মরণ করো । তোমরা ক্রোধ করো না । পাঁচ বিকার তোমাদের অর্ধেক কল্প
ধরে নীচে নামিয়ে এনেছে । তোমরাই সবথেকে উচ্চ ছিলে । তোমারই সবথেকে বেশী নীচে নেমে
এসেছো । এই পাঁচ ভূত তোমাদের নামিয়ে দিয়েছে । এখন শিবালয়ে যাওয়ার জন্য তোমাদের
এই বিকার দূর করতে হবে । এই বেশ্যালয় থেকে মন সরাতে থাকো । বাবাকে স্মরণ করো তাহলে
অন্ত মতি তেমন গতি হয়ে যাবে । তোমরা ঘরে পৌঁছে যাবে, আর কেউই এই রাস্তা বলে দিতে
পারবে না । ভগবান উবাচঃ, আমি তো কখনো বলি নি যে, আমি সর্বব্যাপী । আমি তো রাজযোগ
শিখিয়েছি আর বলেছি, তোমাদের আমি এই বিশ্বের মালিক বানাই, এরপর ওখানে তো এই নলেজের
দরকারই থাকে না । তখন মনুষ্য থেকে দেবতা হয়ে যায়, তোমরা উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করে
ফেলো । এখানে হঠযোগ ইত্যাদির কোনো কথা নেই। নিজেকে আত্মা মনে করো, নিজেকে শরীর কেন
মনে করো । শরীর মনে করলে এই জ্ঞান ধারণ করতে পারবে না । এও ভবিতব্য। তোমরা বুঝতে
পারো যে, আমরা রাবণ রাজ্যে ছিলাম, এখন রামরাজ্যে যাওয়ার জন্য পুরুষার্থ করছি ।এখন
আমরা পুরুষোত্তম সঙ্গমযুগ নিবাসী ।
তোমরা গৃহস্থ জীবনেই থাকো । এতো সবাই এখানে কোথায় থাকবে । ব্রাহ্মণ হয়ে সবাই এখানে
ব্রহ্মা বাবার কাছেও থাকতে পারবে না । তোমাদের ঘরেই থাকতে হবে আর বুদ্ধির দ্বারা
বুঝতে হবে যে - আমরা শূদ্র নয়, আমরা ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণদের শিখা কতো ছোটো । তো
গৃহস্থ জীবনে থেকে শরীর নির্বাহের জন্য কাজ-কারবার করতে করতেও কেবল বাবাকে স্মরণ করো
। আমরা কি ছিলাম, এখন আমরা পরের রাজ্যে বসে আছি । আমরা কতো দুঃখী ছিলাম। বাবা এখন
আমাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান, তাই গৃহস্থ জীবনে থেকেই সেই অবস্থা তৈরী করতে হবে ।
শুরুতে কতো বড় - বড় ঝাড় (পরিবার) এসেছিলো, তারপর তাদের মধ্যে কেউ থেকে গিয়েছিলো,
বাকিরা আবার চলেও গিয়েছিলো । তোমাদের বুদ্ধিতে আছে যে, আমরা নিজেদের রাজ্যে ছিলাম,
এখন আবার কোথায় এসে পড়েছি । আবার আমাদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যেতে হবে । তোমরা
লিখতে থাকো, বলোও যে - বাবা অমুকে খুব রেগুলার ছিলো, তারপর আর আসে না । না আসলে তখন
বিকারে গিয়ে পড়বে । তখন আর জ্ঞানের ধারণা হতে পারবে না । উন্নতির পরিবর্তে নামতে
নামতে পাই পয়সার পদ প্রাপ্ত করবে । কোথায় রাজার পদ, আর কোথায় নীচু পদ। যদিও সুখ
ওই পদেও আছে, তবুও পুরুষার্থ করা হয় উচ্চ পদ প্রাপ্তি করার জন্য। উচ্চ পদ কে
প্রাপ্ত করতে পারে? এ তো সবাই বুঝতে পারে, এখন সবাই পুরুষার্থ করছে । কিং মহেন্দ্রও
(ভূপালের রাজা) পুরুষার্থ করছেন। ওরা তো পাই পয়সার কিং, ইনি তো সূর্যবংশী রাজধানীতে
যাবেন। এমন পুরুষার্থ হোক, যাতে বিজয় মালাতে যেতে পারো । বাবা বাচ্চাদের বোঝান -
নিজের মনকে পর্যবেক্ষণ করো - আমাদের ক্রিমিনাল দৃষ্টি হয় না তো? যদি সিভিলাইজ হয়ে
যাও, তাহলে আর কি চাই। যদিও বিকারে না যাও, তবুও দৃষ্টি কিছু না কিছু ধোঁকা দিতেই
থাকে । নাম্বার ওয়ান হলো কাম, এই ক্রিমিনাল দৃষ্টি খুবই খারাপ, তাই নামই হলো
ক্রিমিনাল আই, সিভিল আই। অসীম জগতের পিতা তো বাচ্চাদের জানেন, তাই না - এরা কি কর্ম
করে, কতটা সার্ভিস করে? অমুকের ক্রিমিনাল আই এখনো পর্যন্ত যায় নি, এখনো এমন গুপ্ত
খবর আসতে থাকে । ভবিষ্যতে আরো এক্যুরেট লিখবে । নিজেরাই ফিল করবে যে, আমরা এতটা সময়
মিথ্যা বলেছি, নেমে এসেছি । তাই জ্ঞানও বুদ্ধিতে সম্পূর্ণ বসেছিলো না । আমাদের
অবস্থা তৈরী না হওয়ার এই ছিলো একমাত্র কারণ। আমরা বাবার কাছে লুকাতাম। এমন অনেকেই
অনেককিছু লুকায় । সার্জনের কাছে পাঁচ বিকারের অসুস্থতা লুকিও না, সত্যিকথা বলা
উচিত - আমাদের বুদ্ধি অন্যদিকে যায়, শিব বাবার দিকে যায় না । বাবাকে বলে না, তাই
এই বিকার বৃদ্ধি পেতে থাকে । বাবা এখন বোঝান - বাচ্চারা, তোমরা দেহী অভিমানী হও,
নিজেকে আত্মা মনে করো । আত্মারা হলো ভাই - ভাই। তোমরা কতো সুখী ছিলে, যখন তোমরা
পূজ্য ছিলে । এখন তোমরা পূজারী হয়ে দুঃখী হয়ে গেছো । তোমাদের কি হয়ে গিয়েছে !
সবাই বলে যে, এই গৃহস্থ আশ্রম পরম্পরা ধরে চলে আসছে । রাম - সীতার কি সন্তান ছিলো
না? কিন্তু ওখানে বিকারের দ্বারা সন্তানের জন্ম হতো না । আরে, সেটা তো হলো সম্পূর্ণ
নির্বিকারী দুনিয়া । ওখানে ভ্রষ্টাচারের দ্বারা জন্ম হয় না, ওখানে বিকার থাকে না
। ওখানে এই রাবণ রাজ্য থাকে না, ওখানে তো রাম রাজ্য। ওখানে রাবণ কোথা থেকে আসবে?
মানুষের বুদ্ধি একদম নষ্ট হয়ে গেছে । কে এমন করেছে? আমি তোমাদের সতোপ্রধান তৈরী
করেছিলাম, তোমাদের তরী পার করে দিয়েছিলাম, এরপর তোমাদের তমোপ্রধান কে করলো? রাবণ।
তোমরা এও ভুলে গেছো । মানুষ বলে থাকে, এ তো পরম্পরা ধরে চলে আসছে, আরে, পরম্পরা কবে
থেকে? কোনো হিসাব তো বলো? মানুষ কিছুই বুঝতে পারে না । বাবা বোঝান যে - আমি তোমাদের
কতো রাজ্য-ভাগ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। তোমরা ভারতবাসীরা খুবই খুশীতে ছিলে আর কেউই এখানে
ছিলো না । খ্রীস্টানরাও বলে যে, প্যারাডাইজ ছিলো, চিত্রও দেবতাদের ছিলো, এঁদের থেকে
আর পুরানো কিছুই তো নেই। পুরানোর থেকেও পুরানো এই লক্ষ্মী - নারায়ণই হবেন, বা
এঁদের সম্পর্কিত কেউ হবেন। সবথেকে পুরানো ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। নতুনের থেকেও নতুনও
ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। পুরানো কেন বলা হয় ? কেননা পাস্টে বা অতীতে হয়ে গিয়েছে, তাই না
। তোমারই গৌর অর্থাৎ সুন্দর ছিলে তারপর কালো হয়ে গেছো । কালো কৃষ্ণকে দেখেও মানুষ
কতো খুশী হয় । দোলনাতেও কালো কৃষ্ণকে দোলায় । ওরা কি জানে যে, গৌর বর্ণের কবে ছিলো?
কৃষ্ণকে মানুষ কতো ভালোবাসে । রাধা কি করেছে যে তাঁকে ততটা ভালবাসে না।
বাবা বলেন, তোমরা এখানে সত্যের সঙ্গে বসে আছো, বাইরে কুসঙ্গে গেলে আবার ভুলে যাও।
মায়া খুবই প্রবল যেন গজ-কে (হাতি) বড় কুমীরের গিলে ফেলার মতো । এমনও আছে যে - যারা
এখনই পালিয়ে যেতে চায় । নিজের যদি সামান্যতম অহংকারও আসে তাহলে নিজের সর্বনাশ করে
ফেলে । অসীম জগতের বাবা তো বোঝাতেই থাকবেন। এতে আশাহত হলে চলবে না যে, বাবা এমন কেন
বললেন, আমাদের ইজ্জত চলে গেলো ! আরে ইজ্জত তো রাবণ রাজ্যে একদমই নষ্ট হয়ে গেছে ।
দেহ অভিমানে এলে নিজেরই ক্ষতি করে দেবে । পদও ভ্রষ্ট হয়ে যাবে । ক্রোধ আর লোভও হলো
ক্রিমিনাল দৃষ্টি । চোখ দিয়ে যখন কোনো জিনিস দেখে, তখন লোভ এসে যায় ।
বাবা এসে নিজের বাগিচা দেখেন - কতো কতো রকমের ফুল। এখান থেকে গিয়ে আবার ওই বাগিচাতে
ফুলদের দেখেন। শিব বাবাকে অবশ্যই ফুলও চড়ানো হয় । তিনি তো হলেন নিরাকার, চৈতন্য
ফুল। তোমরা এখন পুরুষার্থ করে এমন ফুল তৈরী হও। বাবা বলেন - মিষ্টি - মিষ্টি
বাচ্চারা, যা কিছু অতীত হয়ে গেছে, তাকে ড্রামা মনে করো । চিন্তা করো না । কতো
পরিশ্রম করে, অথচ কিছুই হয় না, টিকতে পারে না । আরে, প্রজাও তো চাই, তাই না ।
অল্পকিছু শুনলেও সে প্রজাতে চলে যাবে । প্রজা তো অনেক তৈরী হয় । জ্ঞান কখনোই বিনাশ
হয় না । একবার শুনলে - শিব বাবা আছেন, ব্যস প্রজাতে চলে আসবে । তোমাদের অন্তরে এই
স্মৃতি আসা চাই, আমরা যেই রাজ্যে ছিলাম, তা আবারও ফিরে পাচ্ছি । এরজন্য সম্পূর্ণ
পুরুষার্থ করা উচিত। সম্পূর্ণ অ্যাক্যুরেট সার্ভিস চলছে । আচ্ছা ।
মিষ্টি - মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা - পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন
আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
শিবালয়ে যাওয়ার জন্য এই বিকারকে দূর করতে হবে । এই বেশ্যালয় থেকে মনকে সারিয়ে
নিতে হবে । শূদ্রের সঙ্গ থেকে পৃথক থাকতে হবে ।
২) যা কিছুই অতীত
হয়েছে, তাকে ড্রামা মনে করো, অহেতুক চিন্তাভাবনা করো না । কখনো মনে অহংকার আনবে না
। বাবা যখন কোনো শিক্ষা প্রদান করেন (সংশোধন করেন) তাতে আশাহত হবে না ।
বরদান:-
খুশীর
সম্পদে সম্পন্ন হয়ে দুঃখী আত্মাদের খুশীর দান করে পুণ্য আত্মা ভব
এই সময় দুনিয়াতে
প্রতি মুহূর্তে দুঃখ, আর তোমাদের কাছে প্রতি মুহূর্তে খুশী । তাই দুঃখী আত্মাদের
খুশীর দান দেওয়া - এ হলো সবথেকে বড় পুণ্য। দুনিয়ার মানুষ খুশীর জন্য কতো সময়,
সম্পত্তি খরচ করে, আর তোমরা সহজ অবিনাশী খুশীর সম্পদ পেয়ে গেছো । এখন কেবল যা
পেয়েছো তা বিলিয়ে দিতে থাকো । বিলিয়ে দেওয়া অর্থাৎ বৃদ্ধি পাওয়া । যেই সম্বন্ধে
আসুক না কেন, সে যেন এই অনুভব করে যে, এর কোনো শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি হয়েছে, যার জন্য
এতো খুশী ।
স্লোগান:-
অনুভাবী
আত্মা কখনোই কোনো বিষয়ে ধোঁকা খেতে পারে না, সে সদা বিজয়ী হয় ।