24.06.2024 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"পবিত্রতা রূপী গুণকে ধারণ করে ডায়রেক্টরের ডায়রেকশনে চলতে থাকো, তাহলে দেবতাদের কিংডমে (রাজধানীতে) চলে আসবে"

(প্রাতঃ ক্লাসে শোনানোর জন্য জগদম্বা মায়ের মধুর মহাবাক্য)

ওম্ শান্তি ।
এই দুনিয়াকে নাটকও বলা হয়, ড্রামাই বলো, নাটকই বলো আর খেলাই বলো, কথা তো একই। নাটক যা হয় তা একই কাহিনী হয় । তাতে অনেক বাইপ্লটস্ মাঝে দেখানো হয়, কিন্তু গল্প তো একই হয় । ঠিক তেমনই এও হলো অসীম জগতের এই ওয়ার্ল্ডের ড্রামা, একে নাটকও বলা হয়, যাতে আমরা সবাই হলাম অ্যাক্টরস্ । আমরা এখন অ্যাক্টর্স, তাই অ্যাক্টরদের এই নাটককে সম্পূর্ণ জানা উচিত যে, কোন্ স্টোরিতে এই নাটক শুরু হয়, আমাদের এই পার্ট কোথা থেকে শুরু হয় আর কোথায় তা সম্পূর্ণ হয় আর তাতে সময় সময় কোন্ কোন্ অ্যাক্টরের কেমন পার্ট হয় আর তার ডায়রেক্টর - ক্রিয়েটর কে আর এই নাটকে হিরো - হিরোইনের পার্ট কাদের, এইসব বিষয়ের নলেজ থাকা চাই। কেবল নাটক বললে তো আর কাজ চলবে না । নাটক যেমন আছে, তেমনই আমাদের মতো নাটকের অ্যাক্টররাও আছে । কেউ যদি ড্রামার অ্যাক্টর হয় আর আমরা যদি তাকে জিজ্ঞাসা করি যে, এর স্টোরি কি, এ কোথা থেকে শুরু হয়, কোথায় গিয়ে সম্পূর্ণ হয় ! সে যদি বলে যে, আমি জানি না, তাহলে একে কি বলা হবে? তখন বলবে, এ এটাও জানে না, অথচ বলে যে, আমি অ্যাক্টর। অ্যাক্টরের তো সব বিষয়ই জানা উচিত, তাই না । নাটক যখন শুরু হয়েছে, তখন তার অন্তও অবশ্যই হবে । এমন নয় যে, শুরু হয়েছে আর তা চলতেই থাকবে । তাই এইসব কথা হলো বোঝার মতো । অসীম জগতের এই নাটকের যিনি রচয়িতা, তিনি জানেন যে, কিভাবে এই নাটকের শুরু হয়েছে, এতে মুখ্য মুখ্য অ্যাক্টর কে কে আর সব অ্যাক্টরদের মধ্যে হিরো - হিরোইনের পার্ট কাদের, এইসব কথা বাবা বোঝাচ্ছেন।

এইসব নলেজ যারা ক্লাসে এসে শোনে আর বোঝে, তারাই জানে যে, এর প্রথম ডায়রেক্টর এবং ক্রিয়েটর কে? ক্রিয়েটর বলা হবে সুপ্রীম সোলকে (পরমপিতা পরমাত্মা), কিন্তু তিনিও অ্যাক্টর, তাঁর অ্যাক্টিং কোনটি? ডায়রেকশান দেওয়ার। তিনি একবারই এসে অ্যাক্টর হন। এখন তিনি ডায়রেক্টর হয়ে অ্যাক্ট করছেন। তিনি বলেন, এই নাটকের শুরু আমি করি, তা কিভাবে? যে পিউরিফাইড (পবিত্র) সত্যযুগী দুনিয়া, যাকে নতুন দুনিয়া বলা হয়, সেই নিউ ওয়ার্ল্ড আমি ক্রিয়েট করি । এখন তোমরা সবাই, যারাই পবিত্রতাকে ধারণ করে ডায়রেক্টরের ডায়রেকশান অনুযায়ী চলছো, সেই সমস্ত অ্যাক্টর এখন পিউরিফাইড (পবিত্র) তৈরী হচ্ছে, এরপর এই অ্যাক্টরদের দ্বারা এই অনেক জন্মের চক্র চলবে । একথা বাবাই বোঝান যে, এখন পবিত্র হওয়া মানুষরা পরবর্তী জন্মে দেবতাদের কিংডমে যাবে । সেই কিংডম দুই যুগ অর্থাৎ সূর্যবংশী এবং চন্দ্রবংশী রূপে চলতে থাকে, তারপর সূর্যবংশী - চন্দ্রবংশী অ্যাক্টরদের পার্ট যখন সম্পূর্ণ হয় তখন তারা অল্প নীচে নেমে যায় বা বাম মার্গে চলে যায় । এরপর অন্য ধর্মের টার্ন (সময়) আসে, ইব্রাহিম, বুদ্ধ তারপর খ্রীষ্টান, এইসব ধর্মের ধর্মস্থাপকরা নম্বরের ক্রমানুসারে এসে তাঁদের নিজের - নিজের ধর্ম স্থাপন করে।

তাই দেখো, এই নাটকের স্টোরি কোথা থেকে শুরু হয়েছিলো, কোথায় গিয়ে সম্পূর্ণ হয় । এর মাঝে অন্য - অন্য বাইপ্লটস্ কিভাবে চলে, এইসব বৃত্তান্ত বাবা বসে বোঝান। এখন এই নাটক সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে, ওই নাটক তো তিন ঘণ্টায় শেষ হয়, এই নাটক শেষ হতে পাঁচ হাজার বছর লাগে । এখন এই নাটকের অল্প বছর বাকি আছে, ব্যস্, এখন তার প্রস্তুতি চলছে । এখন এই নাটক সম্পূর্ণ হয়ে আবারও রিপিট হবে । তাই এই সমস্ত বৃত্তান্ত বুদ্ধিতে থাকা উচিত, একেই জ্ঞান বলা হয় । এখন দেখো, বাবা এসে নতুন ভারত, নতুন দুনিয়া তৈরী করছেন। ভারত যখন নতুন ছিলো তখন এতো বড় দুনিয়া ছিলো না । এখন ভারত পুরানো তাই দুনিয়াও পুরানো । এখন বাবা এসে এই ভারতকে তৈরী করেন, যা আমাদের প্রাচীন দেশের অবিনাশী খণ্ড। এখন একে দেশ বলা হয়, কেননা অন্যান্য দেশের মতো এও এক টুকরো হয়ে গেছে, কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ ওয়ার্ল্ডে, সারা পৃথিবীতে এক ভারতের রাজ্য ছিলো, যাকে বলা হতো প্রাচীন ভারত। সেই সময়ের ভারতের গায়ন আছে -- সোনার চড়ুই পাখি । সম্পূর্ণ পৃথিবীতে কেবল ভারতেরই কন্ট্রোল ছিলো, এক রাজ্য ছিলো, এক ধর্ম ছিলো । সেই সময়ে সুখ ছিলো, এখন আর কোথায় ! তাই বাবা বলেন, এর ডিসট্রাক্শন (ধংস) করে আবার এক রাজ্য, এক ধর্ম আর প্রাচীন সেই নতুন ভারত, নতুন দুনিয়া বানাই। বুঝতে পেরেছো । ওই দুনিয়াতে কোনো দুঃখ নেই, কোনো রোগ নেই, কখনো কোনো অকালমৃত্যু নেই। তাই এমন জীবন পাওয়ার জন্য পুরুষার্থ করো । বিনামূল্যে তো পাওয়াই যাবে না । কিছু তো পরিশ্রম করতে হবে । বীজ বপন করলে তবেই প্রাপ্ত করবে । বপন না করলে কিভাবে পাবে? তাই এ হলো কর্মক্ষেত্র, এই ক্ষেত্রতে কর্মের দ্বারা বপন করতে হবে । আমরা যে কর্মের বীজ বপন করি, সেই ফলই প্রাপ্ত করি । বাবা কর্মের বীজ বপন করতে শেখাচ্ছেন। চাষবাস করা যেমন শেখানো হয়, তাই না, কিভাবে বীজ বপন করবে, কিভাবে তার দেখাশোনা করবে, তার ট্রেনিংও দেওয়া হয় । তাই বাবা এসে আমাদের কর্মের ক্ষেতের জন্য, কর্মের বীজ কিভাবে বপন করা হবে তার ট্রেনিং দিচ্ছেন যে, নিজের কর্মকে উচ্চ বানাও, ভালো বীজ বপন করো তাহলে ভালো ফল প্রাপ্ত করবে । কর্ম যখন ভালো হবে তখন যা বপন করবে তার ফলও ভালো প্রাপ্ত করবে । কর্ম রূপী বীজে যদি শক্তি না থাকে, মন্দ কর্মের বীজ যদি বপন করো তাহলে ফল কি প্রাপ্ত করবে? এই যা খাচ্ছো তাতেই তোমরা কান্নাকাটি করছো। যা খাও তাতেই তোমাদের দুঃখ রয়েছে, দুঃখ আর অশান্তি । কিছু না কিছু রোগ ইত্যাদি খিটমিট চলতেই থাকে । সমস্ত বিষয়ই মানুষকে দুঃখী করে, তাই বাবা বলেন, এখন তোমাদের কর্মকে আমি উচ্চ কোয়ালিটির বানাই, যাতে বীজও সেই কোয়ালিটির হবে, তাহলে সেই কোয়ালিটির বপন করবে, তাহলে তার থেকে ভালো ফল আসবে । বীজ যদি ভালো কোয়ালিটির না হয়, তাহলে ভালো কোয়ালিটির ফল প্রাপ্ত করা যাবে না । তাহলে আমাদের কর্মও ভালো কোয়ালিটির হওয়া চাই, তাই না । তাই বাবা এখন আমাদের কর্ম রূপী বীজকে ভালো কোয়ালিটির বানান। । তাহলে সেই শ্রেষ্ঠ কোয়ালিটির বীজ যদি বপন করো তাহলে শ্রেষ্ঠ ফল প্রাপ্ত করবে । তাই নিজের কর্মের যে বীজ আছে, তা ভালো বানাও, আর তারপর ভালো বপন করতে শেখো । তাই এই সব জিনিস বুঝে এখন নিজের পুরুষার্থ করো ।

আচ্ছা, এখন দুই মিনিট সাইলেন্স। সাইলেন্সের অর্থ হলো, আই এম সোল, প্রথমে সাইলেন্স তারপর টকিতে আসে । বাবা এখন বলছেন, এরপর সাইলেন্স ওয়ার্ল্ডে চলো, যেখানে সাইলেন্স, শান্তি, শান্তি হলো তোমাদের স্বধর্ম। সেই সাইলেন্সে যাওয়ার জন্য বলা হয় - এই দেহের আর দেহ সহ দেহের সম্বন্ধের অ্যাটাচমেন্ট এখন ত্যাগ করো, এর থেকে ডিটাচ্ হয়ে যাও। সন অফ সুপ্রীম সোল, এখন আমাকে স্মরণ করো আর আমার ধামে চলে এসো । তাই এখন এমন চলার খেয়াল রাখো, এখন আসার কথা ভেবো না । অন্তিম কালে যেমন মতি তেমনই গতি ।এখন কারোর প্রতি কোনো অ্যাটাচমেন্ট নেই। এখন তো শরীরের অ্যাটাচমেন্টও ত্যাগ করো । বুঝেছো । এমন ধারণা তৈরী করতে হবে, আচ্ছা, এখন সাইলেন্সে বসো । চলতে - ফিরতেও সাইলেন্স, বলার সময়ও সাইলেন্স। বলার সময় কিভাবে সাইলেন্স হবে? জানো কি? বলার সময় আমাদের বুদ্ধিযোগ আমাদের সেই 'আই এম সোল' ফার্স্ট পিওর সোল অথবা সাইলেন্স সোল, এই কথা স্মরণে রেখো । বলার সময় আমাদের মধ্যে এই নলেজ থাকা চাই যে, আই এম সোল, এই অর্গ্যান্সের দ্বারা বলি । তাই আমাদের এমন প্র্যাকটিস হওয়া চাই, যেন আমি এর আধার নিয়ে বলছি । চলো, এখন চোখের আধার নিই, দেখি । যার প্রয়োজন তার আধার নিয়ে কাজ করো । এমন আধার নিয়ে কাজ করলে খুব খুশীতে থাকবে, তখন কোনো মন্দ কাজও আর হবে না । আচ্ছা ।

বাপদাদা আর মায়ের এমন মিষ্টি - মিষ্টি খুব সুন্দর, সদা সাইলেন্সের অনুভূতিকারী বাচ্চাদের প্রতি স্মরণের স্নেহ-সুমন সুমন আর সুপ্রভাত । আচ্ছা ।

সন্দেশীর তন দ্বারা অলমাইটি পিতার উচ্চারিত মহাবাক্য (মাতেশ্বরী জীর প্রতি) :-

হে শিরোমণি রাধে বেটি, তুমি নিশিদিন আমার সমান দিব্য কার্যে তৎপর অর্থাৎ বৈষ্ণব শুদ্ধ স্বরূপ, শুদ্ধ সেবা করো, তাই তুমি হলে সাক্ষাৎ আমার স্বরূপ। যে বাচ্চারা নিজের পিতার ফুটস্টেপে চলে না, তাদের থেকে আমি সম্পূর্ণ দূরে, কেননা বাচ্চা তো পিতার সমান অবশ্যই হওয়া চাই। এই নিয়ম এখন স্থাপন হয়, যা সত্যযুগ এবং ত্রেতা পর্যন্ত চলতে থাকে, ওখানে বাবা যেমন, ছেলেও তেমন। দ্বাপর এবং কলিযুগে কিন্তু বাবা যেমন ছেলে তেমন হয় না । এখন বাচ্চাদের বাবার সমান হওয়ার পরিশ্রম করতে হয়, কিন্তু ওখানে তো ন্যাচারাল এমন নিয়ম তৈরী আছে, বাবা যেমন, ছেলেও তেমন। যে অনাদি নিয়ম এই সঙ্গম যুগে ঈশ্বর পিতা প্রত্যক্ষ হয়ে স্থাপন করছেন।

২ ) মধুর মালির মধুর মিষ্টি দিব্য পুরুষার্থী বেটি, এখন তোমাকে অনেক রমণীয় সুইটনেস হতে হবে আর অন্যদেরও তৈরী করতে হবে । এখন ওয়ার্ল্ডের সার্বভৌমত্বের চাবি সেকেন্ডে প্রাপ্ত করা আর করানো তোমার হাতে । অলমাইটি, যিনি প্রত্যেক জীব - প্রাণীর মালিক, তিনি এখন প্র্যাকটিক্যালে এই কর্মক্ষেত্রে এসেছেন তাই এখন সম্পূর্ণ সৃষ্টি হ্যাপি হাউস হয়ে যায় । এই সময় সেইসব জীব - প্রাণীদের মালিক অব্যক্ত রীতিতে এই সৃষ্টিকে চালাচ্ছেন। কিন্তু যখন তিনি প্রত্যক্ষ রূপে দেহধারী হয়ে মালিক ভাবের দ্বারা কর্মক্ষেত্রে আসেন, তখন সত্যযুগ এবং ত্রেতার সময় সমস্ত প্রাণী সুখী হয়ে যায় । ওখানে সত্যের দরবার খোলা থাকে । যারা ঈশ্বরীয় সুখ প্রাপ্ত করার কারণে পুরুষার্থ করেছেন, তারা সেখানে সর্বদার জন্য সুখ প্রাপ্ত করেন। এই সময় সমস্ত জীব - প্রাণীরা সুখের দান প্রাপ্ত করে না, পুরুষার্থই প্রালব্ধকে আকর্ষণ করে । যাদের ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগ আছে, তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সুখের দান প্রাপ্ত করে।

৩ ) আহা ! তোমরা হলে সেই শক্তি, যারা নিজেদের ঈশ্বরীয় শক্তির রং দেখিয়ে এই আসুরী দুনিয়ার বিনাশ করে দৈবী দুনিয়ার স্থাপনা করছো, এরপর ভবিষ্যতে সমস্ত শক্তিদের মহিমা নির্গত হয় । এখন তোমরা সেই শক্তিতে ভরপুর হচ্ছো । তোমরা সদা তোমাদের ঈশ্বরীয় শক্তিতে এবং বিজয়ীর পদে থাকো, তাহলে সদা অপার খুশীতে থাকবে । নিত্য হর্ষিত মুখ। তোমাদের নেশা থাকা উচিত যে, আমি কে? আমি কার? আমার কতখানি সৌভাগ্য? আমার কতো বড় পদ? এখন তোমরা প্রথমে নিজস্ব স্বরাজ্য প্রাপ্ত করো তারপর সত্যযুগে যুবরাজ হবে । তাহলে কতো নেশা থাকার প্রয়োজন। নিজের এই ভাগ্যকে দেখে খুশীতে থাকো, নিজের লাক্-কে দেখো, এর থেকে কতো লটারী প্রাপ্ত হয় । আহা ! কতো শ্রেষ্ঠ তোমার ভাগ্য, যে ভাগ্যের দ্বারা বৈকুণ্ঠের লটারী প্রাপ্ত হয় । বুঝেছো, লাকিয়েস্ট দৈবী ফুল বাচ্চি ।

৪ ) এই সুন্দর সঙ্গম সময়ে স্বয়ং নিরাকার পরমাত্মা সাকারে এসে এই ঈশ্বরীয় ফ্যাক্টরি খুলেছেন, যেখান থেকে যে কোনো মনুষ্য নিজের বিনাশী খড়কুটো দিয়ে অবিনাশী জ্ঞান রত্ন নিতে পারে । এই অবিনাশী জ্ঞান রত্নের কেনাকাটা অতি সূক্ষ্ম, যাকে বুদ্ধির দ্বারা ক্রয় করতে হয় । এ কোনো স্থূল বস্তু নয় যা এই নয়নের দ্বারা দৃশ্যমান হবে, কিন্তু অতি সূক্ষ্ম গুপ্ত লুকানো হওয়ার কারণে একে কেউই লুণ্ঠন করতে পারে না । এমন সর্বোত্তম জ্ঞান সম্পদ প্রাপ্ত করলে অতি নিঃসঙ্কল্প, সুখদায়ক অবস্থা হয়ে থাকে । যতক্ষণ না কেউ এই অবিনাশী জ্ঞান রত্ন ক্রয় করছে, ততক্ষণ সে নিশ্চিন্ত, নিঃসঙ্কল্প থাকতে পারবে না, তাই এই অবিনাশী জ্ঞান রত্ন উপার্জন করে নিজের বুদ্ধি রূপী সূক্ষ্ম সিন্দুকে ধারণ করে নিত্য নিশ্চিন্ত থাকতে হবে । বিনাশী ধনে তো দুঃখ লুকিয়ে থাকে আর অবিনাশী জ্ঞান ধনে সুখ নিহিত থাকে ।

৫ ) সূর্য যেমন সাগরের জলে টানে, যা আবার পাহাড়ের উপর বর্ষণ করে, তেমনই এও ডায়রেক্ট ঈশ্বরের দ্বারা বর্ষণ হচ্ছে । বলা হয়, শিবের জটা থেকে গঙ্গা নির্গত হয় । এখন এনার মুখ কমল দ্বারা জ্ঞানের অমৃতধারার বর্ষণ হচ্ছে, যাকে অবিনাশী ঈশ্বরীয় ধারা বলা হয়, যাতে তোমরা ভগীরথ পুত্ররা পাবন হচ্ছো, অমর হয়ে যাচ্ছো । এ হলো মুকুটধারী বানানোর ওয়ান্ডারফুল মন্ডলী, এখানে যে নর - নারীই আসবে, তারা মুকুটধারী হয়ে যাবে । দুনিয়াকেও মন্ডলী বলা হয় । মন্ডল অর্থাৎ স্থান, এখন এই মন্ডলী কোথায় টিকে আছে? 'ওম্' আকারে অর্থাৎ অহম্ স্বধর্মে আর সম্পূর্ণ দুনিয়া স্বধর্মকে ভুলে প্রকৃতির ধর্মে টিকে আছে । তোমরা শক্তিরা আবার প্রকৃতিকে ভুলে নিজের স্বধর্মে টিকে আছো ।

৬ ) এই দুনিয়াতে সমস্ত মনুষ্য নিরাকার ঈশ্বরকে স্মরণ করে, যাকে কখনো নয়নের দ্বারা দর্শনও করেনি, সেই নিরাকারের প্রতি তাদের এতো প্রেম থাকে যে বলে, হে ঈশ্বর, তোমার মধ্যে আমাকে লীন করে দাও, কিন্তু কেমন ওয়ান্ডার, ঈশ্বর যখন সাকারে প্রত্যক্ষ হয়েছেন তখন তাঁকে চিনতে পারে না । ঈশ্বরের খুব প্রিয় ভক্ত এমন বলে থাকে যে, যেখানেই দেখি, সেখানেই তুমি আর তুমি, যদিও সে দেখে না কিন্তু বুদ্ধিযোগের দ্বারা অনুভব করে যে, ঈশ্বর সর্বত্র। তোমরা কিন্তু অনুভবের দ্বারা বলতে পারো যে, স্বয়ং নিরাকার ঈশ্বর প্র্যাক্টিকাল সাকার রূপে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। এখন তোমরা সহজেই আমার সঙ্গে এসে মিলিত হতে পারো, কিন্তু আমার কোনো বাচ্চাও সাকারে প্রভু পিতাকে চিনতে পারে না । তাদের নিরাকার অতি মিষ্টি লাগে, কিন্তু সেই নিরাকার, যিনি এখন সাকারে প্রত্যক্ষ, তাঁকে যদি চিনে নিতে পারে তাহলে কতো না প্রাপ্তি করতে পারবে, কেননা প্রাপ্তি তো সেই সাকার থেকেই হবে । বাকি যারা ঈশ্বরকে দূরে এবং নিরাকার মনে করে আর দেখেও, যাদের কিছু প্রাপ্তি নেই, তারা হলো ভক্ত, তাদের কোনো জ্ঞান নেই। এখন সাকার প্রভু পিতাকে জানতে পারা জ্ঞানী বাচ্চারা, সর্ব দৈবী গুণের সুগন্ধে ভরপুর সুইট ফ্লাওয়ার, নিজের প্রভু পিতার কাছে নিজের জীবনই উৎসর্গ করে দেয়, যাতে তারা জন্ম - জন্মান্তর দেবতাদের সম্পূর্ণ দিব্য শোভনীয় তন প্রাপ্ত করে ।

৭ ) সেল্ফ-কে (নিজেকে) জানার কারণেই তোমাদের রাইট - রং, সত্য - অসত্যের প্রভেদ বুঝতে পারার শক্তি (পরখ) এসে গেছে । এই ঈশ্বরীয় জ্ঞানের দ্বারা মুখের বাণী ট্রুথ (সত্য) হয়ে যায়, তখন তাতে কোনো সঙ্গদোষ চড়তে পারে না । সঙ্গদোষের ছায়া তার উপর পড়ে, যে নিজে অজ্ঞানতার বশীভূত হয়ে আছে । এই সময় সত্যের দুনিয়া আর নেই, তাই কারোর মুখের কথার উপর ভরসা না করে মানুষ তাদের দিয়ে লিখিয়ে নেয় । এখন মানুষের বাণী আনট্রুথ (অসত্য), যদি ট্রুথ হতো তাহলে তাদের মহাবাক্যের পূজন হতো । যেমন দেখো, ডিভাইন ফাদার এর ট্রুথ মহাবাক্যের শাস্ত্র তৈরী হয়েছে, যার গায়ন এবং পূজন চলতে থাকে । তাঁর ট্রুথ (সত্য) মহাবাক্য গুলির ধারণা করার ফলে ঈশ্বরীয় কোয়ালিটি এসে যায় । কেবল এটাই নয়, কেউ তো পড়তে - পড়তে শ্রীকৃষ্ণের, ব্রহ্মার সাক্ষাৎকারও করে ফেলে ।

৮ ) আহা ! হোলি হৃদয় কমল, হোলি হস্ত কমল, হোলি নয়ন কমল বেটি রাধে, তোমার সম্পূর্ণ কায়া পরিবর্তন হয়ে কমলফুল সমান কোমল কাঞ্চন হয়ে গেছে কিন্তু প্রথমে যখন সোল কাঞ্চন হয়, তখন সম্পূর্ণ তন কাঞ্চন পিওর হয়ে যায় এবং সেই হোলি কোমল তনই গভীর আকর্ষণে ভরপুর। তোমরা তোমাদের পরমেশ্বর পিতার দ্বারা অজ্ঞানতার তাপকে নিভিয়ে জ্ঞান তেজকে প্রজ্জ্বলিত করে অতি শীতল রূপ হয়ে গেছো । তোমাদের জড় চিত্রের দ্বারাও সম্পূর্ণ দুনিয়া শীতলতা আর শান্তির দান প্রাপ্ত করতে থাকে । এখন তোমরা সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে পরিত্রাণ করে অন্তে নিজের দিব্য তেজ প্রত্যক্ষ করিয়ে নতুন বৈকুন্ঠের গোল্ডেন ফুলের বাগানে গিয়ে বিশ্রাম করবে । আচ্ছা !

বরদান:-
"বাবা" শব্দের চাবির দ্বারা সর্ব সম্পদ প্রাপ্ত কারী ভাগ্যবান আত্মা ভব

জ্ঞানের বিস্তারকে যদি এতটুকুও জানতে নাও পারো বা শোনাতেও না পারো, কিন্তু এক শব্দ "বাবা" হৃদয় থেকে মানা আর হৃদয় থেকে অন্যদের শুনিয়ে বিশেষ আত্মা হয়ে গেছো, দুনিয়ার সামনে মহান আত্মার স্বরূপে মহিমা যোগ্য হয়ে গেছো কেননা এক "বাবা" শব্দ সর্ব সম্পদের বা ভাগ্যের চাবিকাঠি । চাবি লাগানোর বিধি হলো, হৃদয় থেকে জানা এবং মানা । হৃদয় থেকে বলো "বাবা", তো সম্পদ সদা হাজির।

স্লোগান:-
বাপদাদার প্রতি স্নেহ থাকলে সেই স্নেহতে পুরানো দুনিয়াকে বলিদান দিয়ে দাও।