25-05-2025 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
04-09-2005 মধুবন
"শিক্ষার সাথে ক্ষমা আর দয়া আপন করে নাও। আশীর্বাদ
দাও, আশীর্বাদ নাও, তোমাদের গার্হস্থ্য সংসার আশ্রম হয়ে যাবে"
আজ বাপদাদা সর্ব বাচ্চার মস্তকে পিওরিটির রেখা দেখছেন, কেননা ব্রাহ্মণ জীবনের
ফাউন্ডেশনই হলো পবিত্রতা। পবিত্রতার রেখা কী জানো তোমরা? পবিত্রতা সকলের প্রিয়।
পবিত্রতা সুখ, শান্তি, প্রেম, আনন্দের জননী। পবিত্রতা মানবের প্রকৃত রূপসজ্জা।
পবিত্রতা যদি না থাকে তবে জীবনের মূল্য নেই। যেমন তোমরা দেখে থাকো, দেবতাগণ পবিত্র,
সেইজন্যই তারা মাননীয় এবং পূজনীয়। বিনা পবিত্রতার মানব জীবন তো আজকাল দেখছই।
বাপদাদা তোমরা সব বাচ্চাকে ব্রাহ্মণ জন্মের বরদান এটাই দিয়েছেন - পবিত্র ভব, যোগী
ভব। যে আত্মার মধ্যে পবিত্রতা রয়েছে, তাদের আচার আচরণ, মুখমণ্ডল ঝলমল করে, সেইজন্য
পবিত্রতাই জীবনকে শ্রেষ্ঠ বানায়। বাস্তবে, তোমরা সব বাচ্চার আদি স্বরূপই পবিত্রতা।
অনাদি স্বরূপও পবিত্রতা। এমন পবিত্র আত্মাদের বিশেষত্ব তাদের জীবনে সদা পবিত্রতার
পার্সোনালিটি প্রতীয়মান হয়। পবিত্রতার রিয়ালিটি, পবিত্রতার রয়্যালটি মুখমণ্ডল
আর আচরণে প্রতীয়মান হয়। এই রেখাসমূহ জীবনের রূপসজ্জা। রিয়ালিটি হলো - "আমার
অনাদি-আদি স্বরূপ পবিত্র", এই স্মৃতি কুশলী বানায়। রয়্যালটি হলো - যে নিজেও
স্বমানে এবং প্রত্যেককে সম্মান দিয়ে চলে। পার্সোনালিটি হলো - "সদা সন্তুষ্টতা আর
প্রসন্নতা।" যে নিজেও সন্তুষ্ট এবং অন্যকেও সন্তুষ্ট করে। পবিত্রতার দ্বারা অনেক
প্রাপ্তিও হয়। বাপদাদা তোমরা সব বাচ্চাকে কি কি প্রাপ্তি করিয়েছেন, তা' তোমরা জানো
তো না! কত অবিনাশী ভাণ্ডারে তোমাদের পরিপূর্ণ করেছেন। যদি সমূহ প্রাপ্তি স্মৃতিতে
বজায় রাখো তবে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
সর্বাপেক্ষা প্রথম ভাণ্ডার দিয়েছেন - জ্ঞানের ভাণ্ডার। যার দ্বারা জীবনে থেকে দুঃখ
অশান্তি হতে মুক্ত হয়ে যাও তোমরা। ব্যর্থ সংকল্প, নেগেটিভ সংকল্প, বিকল্প, বিকর্ম
থেকে মুক্ত হয়ে যাও। যদি কোনও ব্যর্থ সংকল্প এবং বিকল্পও আসে, তো জ্ঞানের বল দ্বারা
বিজয়ী হয়ে যাও। দ্বিতীয় ভাণ্ডার হলো - স্মরণ ও যোগ, যার দ্বারা শক্তির প্রাপ্তি
হয় এবং শক্তির আধারে সর্ব সমস্যা, সর্ব বিঘ্নকে সহজে তোমরা পার করে দাও। তৃতীয়
ভাণ্ডার - ধারণার। যার দ্বারা তোমাদের সর্বগুণের প্রাপ্তি হয়। আর চতুর্থ ভাণ্ডার
হলো - সেবার। সেবা করায়, যার সেবা করো তার থেকে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়, খুশি
প্রাপ্ত হয়।
এই অবিনাশী ভাণ্ডার বাবার থেকে তোমরা সব বাচ্চার প্রাপ্ত হয়। বাবা সবাইকে একরকমই
ভাণ্ডার দিয়ে থাকেন। কাউকে কম কাউকে বেশি দেন না। কিন্তু যারা নেবে তাদের মধ্যে
প্রভেদ হয়ে থাকে। কিছু বাচ্চা তো অবিনাশী ভাণ্ডার প্রাপ্ত করে খায়-দায়, হৈ-হুল্লোড়
করে আর তার পর হৈ হুল্লোড়ে শেষ করে দেয়। আর কিছু বাচ্চা খায়-দায়, আনন্দ করে
আবার জমাও করে। আর কিছু বাচ্চা কার্যেও প্রয়োগ করে এবং বৃদ্ধিও করে চলে। বৃদ্ধির
চাবি হলো - ভাণ্ডার নিজের প্রতি এবং অন্যদের প্রতি ইউজ করা। যে ইউজ করে সে বৃদ্ধি
করে। তো নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করো এই বিশেষ ভাণ্ডার জমা হয়েছে? জমা হয়েছে? কী বলবে?
হ্যাঁ নাকি অল্প অল্প? যার কাছে এই ভাণ্ডার জমা থাকে সে সদা পরিপূর্ণ থাকে। দেখ, যে
কোনও জিনিস যদি পরিপূর্ণ থাকে তবে নড়াচড়া করে না। যদি পরিপূর্ণ না হয় তবে টলমল
করে, নড়ে- চড়ে, যে কোনও জিনিস যদি পূর্ণ রীতিতে ভরে না দাও তাহলে তা' নড়াচড়া
করবে, তো এখানেও যদি সর্ব ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ না হয় তবে অস্থিরতা হয়। সদা তোমাদের
যেন এই নেশা থাকে যে বাবার অবিনাশী ভাণ্ডার আমার জন্মসিদ্ধ অধিকার। বাবা দিয়েছেন,
তোমরা নিয়েছ, তাহলে ভাণ্ডার কা'র হলো? তোমাদের হয়ে গেছে তো না! তো যার কাছে
ভাণ্ডার আছে, সে কত নেশাতে থাকে! যেমন রাজার ছোট্ট পুত্র রাজকুমার হয়ে থাকে, তার
জানাও থাকে না যে বাবার কাছে কি কি ভাণ্ডার রয়েছে, কিন্তু নেশা থাকে বাবার ভাণ্ডার
আমার ভাণ্ডার আর ভাণ্ডারের খুশিতে থাকে। যদি খুশি কম থাকে তবে তার কারণ কী হতে পারে?
বাবা তো ভাণ্ডার দিয়েছেন, শুনেছ। কিন্তু এক হলো যারা শোনে, আরেক হলো যারা
অন্তর্লীন করে। যারা অন্তর্লীন করে তারা নেশাতে থাকে।
আজ নতুন নতুন বাচ্চারাও এসেছে। বাপদাদা তোমরা সব লাকি বাচ্চাকে তোমাদের ভাগ্যের
অভিনন্দন জানাচ্ছে। নিজেদের ভাগ্যকে চিনেছো। চিনেছো? পরমাত্ম-ভালবাসা, অবিনাশী
ভালবাসা যা শুধু এক জন্ম চলে না, অনেক জন্ম সদাই ভালবাসা কায়েম থাকে। কেননা, এই যে
সময় চলছে, এই সঙ্গমযুগ সময়ই ভাগ্যবান যুগ। সত্যযুগকেও ভাগ্যবান বলা হয় কিন্তু
বর্তমানে সঙ্গম যুগের এই সময় তার থেকেও ভাগ্যবান। কেন? এই সঙ্গম যুগেই বাবার দ্বারা
অখণ্ড ভাগ্যের বরদান, অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়। তো এমন সঙ্গম যুগের
ভাগ্যবান সময়তে তোমরা সবাই নিজের ভাগ্য নেওয়ার জন্য পৌঁছে গেছ। বাপদাদা বাচ্চাদের
খুব সহজ এক পুরুষার্থের বিধি বলে থাকেন - সহজ চাও তো না! কঠিন তো চাও না, তাই না!
এই বাচ্চারা তো ভাগ্যের সহজ বিধি পেয়ে গেছে। পেয়ে গেছ তো না? সবচাইতে সহজ, আর কিছু
নাই করো, শুধু একটা জিনিস করো। একটা জিনিস তো করতে পারো, তাই না! করো বা না করো, বলো
হ্যাঁ জী। তো সবচাইতে সহজ বিধি হলো - অমৃতবেলা থেকে শুরু করে তোমরা সবাই যা কিছুই
প্রাপ্ত করো, তা' থেকে আশীর্বাদ নাও আর আশীর্বাদ দাও। এমনকি যদি ক্রোধীও আসে, তবু
তোমরা তাকেও আশীর্বাদ দাও এবং আশীর্বাদ নাও। কেননা, তীব্র পুরুষার্থের খুব সহজ
যন্ত্র হলো আশীর্বাদ। সায়েন্সে যেমন রকেট আছে না, তো কত তাড়াতাড়ি কার্য সম্পাদন
করে! তেমনই আশীর্বাদ দেওয়া আর আশীর্বাদ নেওয়া, এটাও সামনে এগিয়ে যাওয়ার খুব সহজ
একটা সাধন। অমৃতবেলায় সহজ স্মরণে বাবার থেকে আশীর্বাদ নাও আর সারাদিন আশীর্বাদ দাও
আর আশীর্বাদ নাও। এটা করতে পারো তোমরা? যদি করতে পারো তো হাত তোলো। যদি কেউ অভিশাপ
দেয় তবে কী করবে? তোমাদের যদি বারবার বিরক্ত করে তাহলে? দেখো, তোমরা পরমাত্ম
বাচ্চারা দাতার বাচ্চা দাতা তো না? তোমরা তো মাস্টার দাতা। সুতরাং দাতার কাজ কী?
দেওয়া। তো সবথেকে ভালো জিনিস হলো আশীর্বাদ দেওয়া। যেমনই ব্যক্তি হোক না কেন,
কিন্তু তারা তো হয়ই তোমাদের ভাইবোন। পরমাত্মার বাচ্চারা তোমরা ভাইবোন তো না! সুতরাং
পরমাত্মার বাচ্চা, আমার ঈশ্বরীয়-ভাই, ঈশ্বরীয়-বোন, তাদেরকে কী দেবে? অভিশাপ দেবে
কি? বাবা কখনো অভিশাপ দেন? দেবেন? দেন তিনি? হ্যাঁ কি না? বলো হ্যাঁ অথবা না। তোমরা
অনেক খুশি থাকবে। কেন? যারা অভিশাপ দেয় তাদেরও যদি তোমরা আশীর্বাদ দাও, তারা দিক
বা না দিক, কিন্তু তোমরা আশীর্বাদ নেবে, তাহলে দুঃখ কেন হবে! বাপদাদা আগত তোমরা সব
বাচ্চাকে এক বরদান দেন - বরদান স্মরণে রাখলে তাহলে সদা খুশিতে থাকবে। বরদান শুনবে?
শুনবে তোমরা?
*বরদানঃ-* হলো - যদি তোমাকে
কেউ দুঃখ দেয় তুমি তবুও দুঃখ নিও না। সে দিক কিন্তু তুমি নিও না। কেননা, যে
দেওয়ার সে দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু যে নেবে সে তো তুমি, তাই না! যে দেয়, সে নেয়
না। যদি সে খারাপ জিনিস দেয়, দুঃখ দেয়, অশান্তি দেয়, তাহলে সেটা খারাপ জিনিস তো
না! দুঃখ তোমাদের পছন্দ? পছন্দ নয় তো না! তাহলে খারাপ জিনিসই তো হলো, তাই না। তো
খারাপ জিনিস নেওয়া যায় কি? কেউ তোমাকে খারাপ জিনিস দিলে তুমি নিয়ে নেবে?নেবে?
নেবে না। তাহলে নাও কেন? নিয়ে নাও তো না।যদি দুঃখ নিয়ে নাও তো দুঃখী কে হয়? তুমি
হও নাকি সে হয়? যে নেয় সে বেশি দুঃখী হয়। যদি এখন থেকে দুঃখ না নাও তবে অর্ধেক
দুঃখ তো তোমার দূর হয়ে গেল। নেবেই না, তাই না? আর তোমরা দুঃখের পরিবর্তে তাকে সুখ
দেবে, সুতরাং আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে তো না! তো সুখীও থাকবে আর আশীর্বাদের ভাণ্ডারও
পরিপূর্ণ হতে থাকবে। সব আত্মার থেকে, তারা যেমনই হোক তোমরা আশীর্বাদ নাও। শুভ ভাবনা,
শুভ কামনা রাখো। কখনো কখনো কি হয়, কেউ এমন কোনো কাজ করলো যেটা ঠিক নয়, তোমরা
চেষ্টা করো তাকে শিক্ষা দেওয়ার - একে ঠিক করে দেবো, শিক্ষা দাও তাকে। শিক্ষা দাও
কিন্তু শিক্ষা দেওয়ার শ্রেষ্ঠ বিধি হলো, ক্ষমারূপ হয়ে শিক্ষা দান। শুধু শিক্ষা
দিও না, দয়া করো, ক্ষমাও করো এবং তারপরে শিক্ষাও দাও। দুটো শব্দ স্মরণে রাখো -
শিক্ষা এবং ক্ষমা-দয়া। হৃদয়বান হয়ে তাকে যদি শিক্ষা দাও তবে তোমাদের শিক্ষা কাজ
করবে। যদি হৃদয়বান না হয়ে শিক্ষা দাও তাহলে সেই শিক্ষা এক কান দিয়ে শুনবে, আরেক
কান দিয়ে বেরিয়ে যাবে। শিক্ষা ধারণ হবে না। সেরকমই তো না? তোমাদের এই অনুভব আছে?
তোমরাও কারও শিক্ষক হয়ে যাও না তো? তোমরা জানো কীভাবে তাড়াতাড়ি শিক্ষক হওয়া যায়,
কিন্তু তোমাদের ক্ষমাও করতে হবে - উভয়ই একসাথে হওয়া দরকার। এখন থেকে দয়া করো। দয়া
করার বিধি হলো শুভ ভাবনা শুভ কামনা। যেমন, তোমরা বলো তো না প্রকৃত ভালোবাসা পাথরকেও
জল করে দেয়, তেমনই ক্ষমাস্বরূপ দ্বারা শিক্ষা দেওয়ায় তোমরা যে কার্য সম্পন্ন হওয়া
দেখতে চাও, এটা যেন না করে, এটা যেন যেন না হয়, সেসব প্রত্যক্ষরূপে দেখা যাবে।
হৃদয়বান হয়ে তোমাদের শিক্ষা দেওয়ার প্রভাবে তার কঠিন হৃদয়ও পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সুতরাং কী বরদান তোমাদের প্রাপ্ত হলো? না দুঃখ দাও, না দুঃখ নাও। পছন্দ হয়েছে? যদি
পছন্দ হয় তবে এখন নিও না। ভুল ক'রো না। যখন বাবা দুঃখ দেন না তখন ফলো ফাদার করতে
হবে তো না? তোমরা করছ। কখনো কখনো অল্পস্বল্প ধমক দিয়ে থাকো। ধমক দিও না। দয়া করো।
দয়ার সাথে শিক্ষা দাও। বারবার কাউকে বকাবকি করলে আরো যে আত্মারা আছে না, তারা শত্রু
হয়ে যায়। ঘৃণার উদ্রেক হয়। তোমরা পরমাত্ম বাচ্চা তো না। তো বাবা যেমন পতিতকে
পবিত্র বানান, তোমরা দুঃখীকে সুখ দিতে পারো না? এখন গিয়ে ট্রায়াল করবে, ট্রায়াল
করবে তো না! তাহলে, প্রথমে চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। পরিবারে কেউ যদি দুঃখ দেয়
তুমি তবুও দুঃখ নেবে না। আশীর্বাদ দাও, হৃদয়বান হও। প্রথমে ঘর-পরিবার দিয়ে শুরু
করো। তোমাদের পরিবারের প্রভাব এলাকায় পড়বে, এলাকার প্রভাব দেশে পড়বে, এক দেশের
প্রভাব বিশ্বে পড়বে। এটা সহজ তো না! নিজের পরিবারের মধ্যে শুরু করো। কারণ, দেখো,
একজনও যদি ক্রোধ করে তবে পরিবারের বাতাবরণ কেমন হয়ে যায়? পরিবার ব'লে মনে হয়,
নাকি যুদ্ধের ময়দান লাগে? সেই সময় ভালো লাগে? ভালো লাগে না, তাইতো না?
এটা তোমাদের জন্যও (আজ ভি.আই.পি. র সাথে মধুবনের সমর্পিত
ভাই-বোনেরাও সামনে বসে আছে) নিজের নিজের সাথীদের থেকে, নিজের নিজের কর্ম-কর্তাদের
থেকে না দুঃখ নেবে, না দুঃখ দেবে। আশীর্বাদ দাও আর আশীর্বাদ নাও। যদি তোমরা
অধিকারের সাথে তেমন সময়ও হৃদয় থেকে আমার বাবা বলো, পরমাত্মা বাবা আমার বাবা, তো
কথিত আছে যে ভগবান সদা হাজির। যদি তুমি হৃদয় থেকে অধিকারের সাথে তেমন সময় আমার
বাবা বলো, তখন বাবা অবশ্যই হাজির হয়ে যাবেন। বাবা কিসের জন্য আছেন, বাচ্চাদের জন্য
তো! তাছাড়া, অধিকারী বাচ্চাদের বাবা সহযোগ দেবেন না তা' তো হতেই পারে না। এটা
অসম্ভব! সুতরাং এই পরিবর্তন করে ফিরে যেও। যেমন এসেছিলে শুধু তেমনই ফিরে যেও না,
পরিবর্তন করেই যেও। দেখ, কেননা, এত খরচ করে এসেছ, টিকিট লেগেছে তো না! খরচও করেছ,
সময়ও দিয়েছো, তো তার ভ্যাল্যু তো রাখবে, তাই না। ভ্যাল্যু হলো - স্ব-পরিবর্তন
দ্বারা প্রথমে ঘরের পরিবর্তন, তারপর বিশ্বের, দেশের পরিবর্তন। তোমাদের গার্হস্থ্য
সংসার আশ্রম হয়ে যাবে। গার্হস্থ্য সংসার নয়, আশ্রম। বাস্তবিকপক্ষে, আশ্রমই বলা হয়ে
থাকে, গৃহস্থ আশ্রম, কিন্তু আজ আশ্রম নেই। আশ্রম আলাদা, গৃহস্থ ঘর আলাদা। সুতরাং
গৃহস্থ ঘরকে আশ্রম বানাতে হবে। আশীর্বাদ দেওয়া আর নেওয়া, এটা আশ্রমের কাজ।
তোমাদের ঘর মন্দির হয়ে যাবে। মন্দিরে মূর্তি কী করে? আশীর্বাদ দেয় তো না! মূর্তির
সামনে গিয়ে তারা কী বলে? আশীর্বাদ দাও। মার্সি, মার্সি ব'লে আকুতি জানায়। তাহলে,
তোমাদের কী দিতে হবে? আশীর্বাদ। ঈশ্বরীয় ভালোবাসা দাও, আত্মিক ভালবাসা। শারীরিক
ভালোবাসা নয়, আত্মিক ভালোবাসা। আজ যে ভালোবাসা আছে তা' স্বার্থের ভালবাসা। প্রকৃত
হৃদয়ের ভালবাসা নেই। যদি স্বার্থ থাকে তবে ভালবাসা দেবে, স্বার্থ না থাকলে তো
ডোন্ট কেয়ার। তাহলে, তোমরা কী করবে? আত্মিক ভালবাসা দাও, আশীর্বাদ দাও, দুঃখ না
নাও, না দুঃখ দাও। দেখ, তোমরা চান্স পেয়েছ, বাপদাদাও খুশি। এত সবাই যারা এসেছে, (ভারত
থেকে আনুমানিক ২৫০ ভি.আই.পি রিট্রিটে এসেছে) এত গৃহস্থ ঘর আশ্রম হবে, তাই তো না!
তোমরা বানাবে তো তাই না? পাক্কা? নাকি অল্প অল্প কাঁচা? যারা মনে করো যা কিছুই হয়ে
যাক একটু সহ্য তো করতেই হবে, অন্তর্লীন করার শক্তি কার্যে প্রয়োগ করতে হবে, যতই
হোক, সহনশক্তির ফল বড়ই মিষ্টি। সহন করতে হয়, কিন্তু ফল বড়ই মিষ্টি হয়। তো তোমরা
যারা পাক্কা প্রতিজ্ঞা করো, প্রতিটা ঘরকে স্বর্গ বানাবে, মন্দির বানাবে, আশ্রম
বানাবে, তারা হাত তোলো। দেখা-দেখি করে হাত তুলো না। কেননা, পরে বাপদাদা হিসেব নেবেন
তো না। অন্যকে দেখে হাত উঠিও না। সত্যি সত্যি মনের হাত, মন থেকে উঠাও। আচ্ছা। দাদিরা
এর জন্য এদেরকে কী প্রাইজ দেবে, হ্যাঁ? বলো, দাদি এত মন্দির তো হয়ে যাবে তুমি তার
জন্য কী প্রাইজ দেবে? (তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসবে)। এটা তো প্রাইজ
দিলে না, এটা তো তাদের জন্য কাজ শুনিয়েছো। (বাবা যা আজ্ঞা দেবেন)। দেখো, প্রাইজ তো
তোমরা পেয়েই যাবে, সেটা কোনো বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু... একটা কিন্তু আছে। তোমরা
ফিরে যাওয়ার পর নিজের ধারণা দ্বারা পরিবর্তন ক'রো এবং ১৫ দিন বাদে বা ১মাস বাদে
নিজের রেজাল্ট লিখো। যে একমাস দুঃখ নেবে না, দেবে না, তাকে খুব ভালো প্রাইজ দেওয়া
হবে। যদি তোমরা আসতে পারো তো অভিনন্দন। যদি না পারো তো সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আচ্ছা।
চতুর্দিকের দেশ বিদেশের বাচ্চাদের স্মরণ বাপদাদা গ্রহণ
করেছেন। হয় তারা তা' ফোন দ্বারা পাঠিয়েছে, নতুবা পত্র দ্বারা, কিংবা হৃদয়ে স্মরণ
করেছে, তো ভারতের হোক বা বা বিদেশের, বাপদাদা সব বাচ্চাকে রিটার্নে পদ্মগুন
কল্যাণকারী ভাবনা এবং স্মরণের স্নেহ-সুমন দিচ্ছেন। চতুর্দিকের পরমাত্ম-ভালবাসার
অধিকারী বাচ্চাদের, চতুর্দিকের সর্ব ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ, নির্বিঘ্ন, নির্বিকল্প,
ব্যর্থ সংকল্প থেকে মুক্ত এমন শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, সেইসঙ্গে যারা সর্ব পরিবর্তন করার
এবং করানোর উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওড়ে এমন বাচ্চাদের, সেইসঙ্গে যারা বাপদাদাকে সত্য
হৃদয়ের সমাচার দেয় এমন প্রকৃত হৃদয়বান বাচ্চাদের বিশেষভাবে দিলারাম রূপে, বাবা
রূপে, শিক্ষক রূপে, সদগুরু রূপে পদ্মগুন স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার।
বরদান:-
লক্ষ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো আত্মাদের যথার্থ লক্ষ্য
দেখিয়ে চৈতন্য লাইট মাইট ভব
যে কোনও দিশাহীন আত্মাদের যথার্থ লক্ষ্য দেখানোর
জন্য চৈতন্য লাইট মাইট হাউজ হও। এর জন্য দুটো বিষয়ে যেন তোমাদের খেয়াল থাকে। ১)
সব আত্মার চাহিদাকে পরখ করা। যেমন, যোগ্য ডাক্তার যাকে বলা হয়ে থাকে নাড়ি সম্বন্ধে
অবহিত, পরখ করার এমন শক্তি সদা ইউজ করা। ২) সদা নিজের কাছে সর্ব ভাণ্ডারের অনুভব
কায়েম রাখা। সদা এই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কেবল শোনানো নয় বরং সর্ব সম্বন্ধের,
সর্ব শক্তির অনুভব করাতে হবে।
স্লোগান:-
অন্যের সঙ্গে কানেকশন করার পরিবর্তে এক বাবার সাথে
কানেকশন রাখো।
অব্যক্ত ইশারা - আত্মিক রয়্যালটি আর পিওরিটির
পার্সোনালিটি ধারণ করো নিজের স্ব-স্বরূপ ও বরদানী স্বরূপ যদি সদা স্মৃতিতে থাকে তবে
অপবিত্রতা এবং বিস্মৃতির চিহ্নমাত্রও সমাপ্ত হয়ে যাবে। বিস্মৃতি এবং অপবিত্রতা কী!
এখন এর অবিদ্যা হওয়া উচিত। কেননা, এই সংস্কার এবং স্বরূপ তোমার নয়, বরং তোমার
পূর্ব জন্মের ছিল। এখন তোমরা হলে ব্রাহ্মণ, ওসব তো শূদ্রের সংস্কার এবং স্বরূপ । এই
রকম সংস্কার আর স্বরূপের থেকে আলাদা অর্থাৎ সে'গুলিকে অন্যের সংস্কার অনুভব হওয়া,
একে বলা হয়ে থাকে ডিট্যাচ এবং প্রিয় হওয়া।