25.07.2024
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
ডিগবাজির খেলাকে স্মরণ করো, এই খেলায় সমগ্র চক্রের, ব্রহ্মা আর ব্রাহ্মণদের গুপ্ত
রহস্য সমাহিত রয়েছে"
প্রশ্নঃ -
সঙ্গমযুগে সব
বাচ্চারা বাবার কাছ থেকে কোন্ উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করে?
উত্তরঃ
ঈশ্বরীয়
বুদ্ধির । ঈশ্বরের মধ্যে যে-যে গুণ রয়েছে, তা তিনি আমাদের উত্তরাধিকারের রূপে দেন।
আমাদের বুদ্ধি হীরে-তুল্য পারস হয়ে উঠছে। আমরা এখন ব্রাহ্মণ হয়ে বাবার কাছ থেকে
অনেক বড় খাজানা নিয়ে চলেছি, সর্বগুণের দ্বারা নিজের ঝুলি পরিপূর্ণ করছি।
ওম্ শান্তি ।
আজ হলো
সদ্গুরুবার, বৃহস্পতিবার। দিনের মধ্যেও কোনো কোনো দিন উত্তম হয়ে থাকে ।
বৃহস্পতিবারকে উচ্চ বলা হয়, তাই না। বাচ্চারা স্কুল, কলেজে ভর্তি হয় ভালো দিন দেখে
আর সেটা হলো বৃহস্পতি অর্থাৎ বৃক্ষপতি বার। বাচ্চারা এখন তোমরা জানো যে, এই মনুষ্য
সৃষ্টি-রূপী বৃক্ষের বীজরূপ হলেন বাবা আর তিনি হলেন অকালমূর্তি। অকালমূর্তি বাবার
অকালমূর্তি সন্তান। কত সহজ। মুশকিল হলো শুধু স্মরণেই। স্মরণের দ্বারাই বিকর্ম বিনাশ
হয়। তোমরা পতিত থেকে পবিত্র হয়ে যাও। বাবা বোঝান যে, বাচ্চারা, তোমাদের উপরে অবিনাশী
অসীম জগতের দশা বসে রয়েছে। এক হয় পার্থিব জগতের দশা আর দ্বিতীয় হয় অসীম জগতের। বাবা
হলেন বৃক্ষপতি। বৃক্ষের থেকে সবার প্রথমে ব্রাহ্মণ(ধর্ম) বেরিয়েছে। বাবা বলেন, আমি
হলাম বৃক্ষপতি সতৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ । এছাড়া মহিমাও গাওয়া হয় জ্ঞানের সাগর,
শান্তির সাগর.....। তোমরা জানো যে, সত্যযুগে দেবী-দেবতারা সকলে শান্তির, পবিত্রতার
সাগর ছিল। ভারত সুখ-শান্তি-পবিত্রতার সাগর ছিল। তাকেই বলা হয় বিশ্বে শান্তি। তোমরা
হলে ব্রাহ্মণ। বাস্তবে তোমরাই হলে অকালমূর্তি, প্রত্যেক আত্মা নিজের সিংহাসনে
বিরাজমান। এই সবই হলো চৈতন্য অকাল- সিংহাসন(তখ্ত)। ভ্রুকুটির মধ্যভাগে অকালমূর্তি
আত্মা বিরাজমান, যাকে নক্ষত্রও বলা হয়। বৃক্ষপতি বীজরূপকে জ্ঞানের সাগর বলা হয়, তাই
অবশ্যই তাঁকে আসতে হয়। সবার প্রথমে চাই ব্রাহ্মণ, প্রজাপিতা ব্রহ্মার অ্যাডপ্টেড
চিল্ড্রেন। তাহলে তো অবশ্যই মা-ও(মাম্মা) চাই। বাচ্চারা, তোমাদেরকে খুব ভালোভাবে
বোঝান হয় যে, যেমন ডিগবাজি খায় না? তারও অর্থ বোঝানো হয়েছে । বীজরূপ হলেন শিববাবা,
তারপরে হলেন ব্রহ্মা। ব্রহ্মার দ্বারা ব্রাহ্মণ রচনা করা হয়েছে। এইসময় তোমরা বলবে
যে, যে ব্রাহ্মণ সে-ই হবে দেবতা....। প্রথমে আমরা শূদ্রবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলাম। এখন
বাবা পুনরায় পুরুষোত্তম বুদ্ধিসম্পন্ন তৈরী করছেন। হীরে-তুল্য দিব্য বুদ্ধি
সম্পন্ন বানান। এই ডিগবাজির রহস্যও বোঝান। শিববাবাও রয়েছেন, প্রজাপিতা ব্রহ্মা আর
তাঁর অ্যাডপ্টেড বাচ্চারা সামনে বসে আছে। এখন তোমরা কত বিশালবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে গেছো।
ব্রাহ্মণ তথা পুনরায় দেবতা হবে। এখন তোমরা ঈশ্বরীয় বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েছো, যা
ঈশ্বরের গুণ সেটাই তোমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পাও। বোঝানোর সময় একথা ভুলো না। বাবা
হলেন নম্বর ওয়ান জ্ঞানের সাগর। ওঁনাকে জ্ঞানেশ্বর বলা হয়। জ্ঞান শোনানোর ঈশ্বর।
জ্ঞানের দ্বারাই সদ্গতি হয়। পতিতকে জ্ঞান ও যোগের দ্বারা পবিত্র করেন। ভারতের
প্রাচীন রাজযোগ বিখ্যাত, আয়রণ এজ থেকে গোল্ডেন এজ হয়েছিল। একথা তো বোঝানো হয়েছে
যে, যোগ দুই প্রকারের হয় -- ওটা হলো হঠযোগ আর এ হলো রাজযোগ। ওটা হলো পার্থিব জগতের
আর এ হলো অসীম জগতের। ওরা হলো পার্থিব জগতের সন্ন্যাসী, তোমরা হলে অসীম জগতের
সন্ন্যাসী। ওরা ঘর-সংসার পরিত্যাগ করে, তোমরা সমগ্র দুনিয়ার থেকে সন্ন্যাস নাও। এখন
তোমরা হলে প্রজাপিতা ব্রহ্মার সন্তান, এ হলো অতি ক্ষুদ্র নতুন বৃক্ষ (চারা)। তোমরা
জানো যে, পুরানো থেকেই নতুন হচ্ছে। চারাগাছ রোপন করা হচ্ছে। বারংবার আমরা ডিগবাজি
খাই। আমরাই ব্রাহ্মণ তথা পুনরায় দেবতা। 'তথা' (সো) শব্দটি অবশ্যই লাগাতে হবে। কেবল
'আমরা' (হম্) শব্দটি নয়। আমরাই শূদ্র ছিলাম তথা আমরাই ব্রাহ্মণ হয়েছি..... এই
ডিগবাজির খেলাকে একদমই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এ তো অতি সহজ ব্যাপার। ছোট-ছোট
বাচ্চারাও বোঝাতে পারে, আমরা ৮৪ জন্ম কিভাবে নিই, সিড়ির থেকে কিভাবে নীচে পতিত হয়েছি
পুনরায় ব্রাহ্মণ হয়ে কিভাবে উপরে চড়ি। ব্রাহ্মণ তথা দেবতা হতে থাকি।
এখন ব্রাহ্মণ হয়ে অনেক বিশাল খাজানা গ্রহণ করছি। ঝুলি পরিপূর্ণ হচ্ছে। জ্ঞান-সাগর
শঙ্করকে বলা হয় না। তিনি ঝুলি পরিপূর্ণ করেন না। এ তো চিত্রকারেরা বানিয়ে দিয়েছে।
শঙ্করের কোনো কথাই নেই। এই বিষ্ণু আর ব্রহ্মা হলো এখানকার। লক্ষ্মী-নারায়ণের যুগল
চিত্র উপরে দেখানো হয়। এ হলো এঁনার(ব্রহ্মার) অন্তিম জন্ম। সর্ব প্রথমে এই বিষ্ণু
ছিল, পুনরায় ৮৪ জন্মের পরে এইরকম(ব্রহ্মা) হয়েছে, এঁনার নাম আমি ব্রহ্মা রেখেছি।
সকলের নাম বদল করে দিয়েছি কারণ তোমরা সন্ন্যাস নিয়েছো, তাই না। শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণ
হয়েছে, তাই নাম বদল করে নিয়েছে। বাবা অতি রমণীয় নাম রেখেছেন। তাহলে এখন তোমরা বোঝো,
দেখো যে, বৃক্ষপতি এই রথে বসে রয়েছেন । ওঁনার তো এটা অকাল সিংহাসন, এঁনারও(ব্রহ্মা)।
এই আসন উনি লোন নিয়েছেন। ওঁনার নিজের তো কোনো আসন থাকে না। তিনি বলেন যে, আমি এই রথে
বিরাজমান হই, আর নিজের পরিচয় দিই। আমি তোমাদের পিতা, শুধু জন্ম-মৃত্যুর চক্র-তে আসি
না, কিন্তু তোমরা পুনর্জন্ম নাও। যদি আমিও আসি, তবে তোমাদের তমোপ্রধান থেকে
সতোপ্রধান কে বানাবে? তৈরী করার মতোও তো কেউ চাই, তাই না, সেইজন্যই আমার এমন পার্ট।
তোমরা আমাকে আহ্বানও কর যে, পতিত-পাবন আসুন। নিরাকার শিববাবাকে আত্মারা ডাকে। কারণ
আত্মারা দুঃখী । ভারতবাসী আত্মারা বিশেষভাবে (তাঁকে) ডাকে যে, এসে পতিতদের পবিত্র
করুন। সত্যযুগে তোমরা অত্যন্ত পবিত্র সুখী ছিলে, আর তখন কখনো ডাকো নি। তাই বাবা
স্বয়ং বলেন, তোমাদের সুখী করে আমি পুনরায় বাণপ্রস্থে চলে যাই। ওখানে(সত্যযুগে)
আমার কোনো প্রয়োজনই নেই। ভক্তিমার্গে আমার ভুমিকা রয়েছে, তারপর আধাকল্পে আমার কোনো
ভুমিকা থাকে না। এ তো অতি সহজ বিষয়। এতে কোনো প্রশ্ন উঠতেই পারে না। গাওয়াও হয়,
দুঃখে স্মরণ সকলেই করে.....। সত্যযুগ-ত্রেতায় ভক্তিমার্গ হয়ই না। জ্ঞান-মার্গও বলা
যাবে না। জ্ঞান তো পাওয়াই যায় সঙ্গমে, যার ফলে তোমরা ২১ জন্মের অবিনাশী উত্তরাধিকার
রূপী প্রালব্ধ প্রাপ্ত করো। নম্বরের ক্রমানুসারে উত্তীর্ণ হয়। আবার ফেলও করে।
তোমাদের এই যুদ্ধ চলছে। তোমরা দেখ, যে রথে(ব্রহ্মা) বাবা বিরাজমান, তিনি তো বিজয়ী
হয়েছেন। আবার অনন্য বাচ্চারাও বিজয়লাভ করে। যেমন কুমারকা (দাদী প্রকাশমণি) রয়েছেন,
অমুকে-অমুকে রয়েছেন, যারা অবশ্যই বিজয়লাভ করবে। তারা অনেককে নিজেদের সমান তৈরী করেন।
তাই বাচ্চাদের একথা বুদ্ধিতে রাখতে হবে - এ হলো ডিগবাজির খেলা। ছোট বাচ্চারাও একথা
বোঝে, তাই বাবা বলেন, বাচ্চাদেরও শেখাও। তাদেরও বাবার কাছ থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার
পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ খুব বেশী বড় কথা তো নয়। এই জ্ঞানকে সামান্যতম জানলেও এই
জ্ঞানের বিনাশ হয় না। তাহলেও স্বর্গে অবশ্যই যাবে। যেমন যীশু খ্রীস্টের স্থাপন করা
খ্রিস্টান ধর্ম কত বড়। এই দেবী-দেবতারা তো সর্বাগ্রে আর এটাই সর্বাপেক্ষা বড় ধর্ম।
যা দুইযুগ (সত্য, ত্রেতা) পর্যন্ত চলে, তাই অবশ্যই তাদের সংখ্যাও অধিক হওয়া উচিত ।
কিন্তু তাদের হিন্দু বলে দেওয়া হয়েছে। বলাও হয় যে, ৩৩ কোটি দেবী-দেবতা। তবে আবার
হিন্দু কেন বলে! মায়া বুদ্ধিকে সম্পূর্ণরূপে ভ্রষ্ট করে দিয়েছে, তাই এমন অবস্থা
হয়েছে। বাবা বলেন, মায়ার উপরে বিজয়লাভ করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। তোমরা প্রতি কল্পে
বিজয়লাভ করো। তোমরা তো সেনা, তাই না। বাবাকে পেয়েছো এই বিকার-রূপী রাবণের উপরে
বিজয়লাভ করার জন্য।
তোমাদের উপরে এখন বৃহস্পতির দশা বসে রয়েছে। ভারতের উপরেই দশা বসে। এখন সকলের উপরেই
রাহুর দশা। বৃক্ষপতি বাবা আসেন, তাই অবশ্যই ভারতের উপর বৃহস্পতির দশা বসে। এরমধ্যেই
সবকিছু চলে আসে। বাচ্চারা, তোমরা জানো যে, আমরা ওখানে নিরোগী কায়া (শরীর) পাই, ওখানে
তো মৃত্যুর কোনো নামই নেই। অমরলোক তো, তাই না। এভাবে ওখানে বলা হবে না যে, অমুকে
মারা গেছে। মৃত্যুর কোন নামই নেই। এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করে। শরীর ধারণ
আর ত্যাগের মুহূর্তেও খুশী বজায় থাকে। দুঃখের কোনো নামই নেই। তোমাদের উপরে এখন
বৃহস্পতির দশা রয়েছে। সকলের উপরেই তো আর বৃহস্পতির দশা থাকবে না। স্কুলে কেউ-কেউ
পাশও করে আবার ফেলও করে। এও হলো পাঠশালা। তোমরা বলবে যে, আমরা রাজযোগ শিখি, শেখায়
কে? অসীম জগতের পিতা। তাহলে কত খুশীতে থাকা উচিত, এর মধ্যে তো আর কোনো কথা নেই।
মুখ্য কথা হলো পবিত্রতা। লেখাও রয়েছে - হে বৎসগণ, দেহ সহ দেহের সর্ব সম্বন্ধকে
পরিত্যাগ করে মামেকম্ স্মরণ করো। এ হলো গীতার শব্দ । এখন গীতা এপিসোড চলছে। তাতেও
মানুষ উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। সত্য যেটুকু তা হল আটার মধ্যে যতটুকু নুন । অতি সহজ
কথা, যা ছোট বাচ্চাও বুঝতে পারে। তাও কেন ভুলে যাও? ভক্তিমার্গেও বলতে যে, বাবা তুমি
যখন আসবে তখন আমরা তোমার হয়ে যাবো। অন্য কেউ নয়। আমরা তোমরা হয়ে তোমার কাছ থেকে
সম্পূর্ণ অবিনাশী উত্তরাধিকার নেবো। আমরা বাবার কাছে আত্মসমর্পণ করিই অবিনাশী
উত্তরাধিকার নেওয়ার জন্য। অ্যাডপ্ট হয়ে যাই, কারণ জানি যে, বাবার কাছ থেকে আমরা কি
পাবো। তোমরাও অ্যাডপ্ট হয়েছো। জানো যে, আমরা বাবার কাছ থেকে বিশ্বের রাজত্ব(বাদশাহী),
অসীম জগতের উত্তরাধিকার নেবো। কারো প্রতিই আর আসক্তি রাখবো না। মনে করো, কারো লৌকিক
পিতা রয়েছে, তাহলে তার কাছে কি থাকে। খুব বেশী হলে লাখ-দেড়েক হবে। এই অসীম জগতের
পিতা তোমাদের অসীম জগতের উত্তরাধিকার দেন।
বাচ্চারা, তোমরা আধাকল্প মিথ্যা-মিথ্যা সব গল্প-গাঁথা শুনে এসেছো। এখন সত্য-সত্য সব
কথা বাবার কাছ থেকে শোনো। তাহলে তো এমন বাবাকে স্মরণ করা উচিত, মনোযোগ সহকারে শোনা
উচিত । 'হাম সো' - কথার অর্থও বোঝানো উচিত । ওরা(লৌকিক) তো বলে যে, আত্মাই পরমাত্মা।
এই ৮৪ জন্মের কাহিনী তো কেউ বলতে পারে না। বাবার ক্ষেত্রে একথাও বলা হয় যে,
কুকুর-বিড়াল ইত্যাদি সবকিছুর মধ্যেই বাবা (ঈশ্বর) রয়েছেন । বাবার তো গ্লানি করে,
তাই না। এও ড্রামায় ফিক্সড হয়ে রয়েছে। তাই কাউকে দোষারোপ করা হয় না। ড্রামাই এভাবে
বানানো রয়েছে। যিনি তোমাদের জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে দেবতায় পরিণত করেন, তোমরাই আবার
তাঁর গ্লানি করতে থাকো। তোমরাই এমনভাবে ডিগবাজি খাও। এই ড্রামাও পূর্ব-নির্ধারিত।
আমি আবার এসে তোমাদের উপকার করি। জানি যে, তোমাদেরও দোষ নেই, এ হলো খেলা। তোমাদেরকে
কাহিনী বোঝাই, এ হলো সত্যিকারের কথা (কাহিনী), যার ফলে তোমরা দেবতা হয়ে যাও।
ভক্তিমার্গে তো আবার অনেক কথা (গল্প) বানিয়ে দিয়েছে। এইম অবজেক্ট কিছুই নেই। ওসব
কিছুই তৈরি হয়েছে পতনের অভিমুখে যাওয়ার জন্য। (লৌকিক) বিদ্যালয়ে তোমাদের শিক্ষা
দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেও শরীর নির্বাহের জন্য কিছু এইম থাকে। পন্ডিত ব্যক্তিরা
নিজেদের শরীর নির্বাহের জন্য বসে-বসে (শাস্ত্র) কথা শোনায়। লোকেরা তাদের সম্মুখে
টাকাপয়সা রাখতে থাকে, কিন্তু তাতে ভক্তদের প্রাপ্তি কিছুই হয় না। তোমরা তো এখন
জ্ঞান-রত্ন পাও, যার ফলে তোমরা নতুন দুনিয়ার মালিক হয়ে যাও। ওখানে সমস্ত জিনিসই
নতুন পাবে। নতুন দুনিয়ায় সবকিছু নতুন হবে। হীরে-জহরত ইত্যাদি সব নতুন হবে। এখন বাবা
বলেন যে, আর সব কথা ছেড়ে এখন তোমরা ডিগবাজির খেলাকে স্মরণ করো। ফকিররা ডিগবাজি
খেতে-খেতে তীর্থ করতে যায়। কেউ-কেউ পদব্রজেও যায়। এখন তো মোটর-গাড়ী, এরোপ্লেনও হয়ে
গেছে। গরীবরা তো তাতে যেতে পারবে না। কোনো কোনো অতি শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি তো পায়ে
হেঁটেও চলে যায়। দিনে-দিনে বিজ্ঞানের দ্বারা সুখ প্রাপ্ত হতেই থাকে। এ হলো
অল্পকালের সুখ। বিমান দুর্ঘটনা হলে তো কত ক্ষতি হয়ে যায়। এইসব জিনিসের দ্বারা যে
সুখ পাওয়া যায় তা অল্পসময়ের জন্য। ফাইনালি তো এসবের দ্বারাই মৃত্যু অবধারিত। ওটা
হলো সায়েন্স। আর তোমাদের হলো সাইলেন্স। বাবাকে স্মরণ করলে সব রোগ সমাপ্ত হয়ে যায়,
নিরোগী হয়ে যায়। এখন তোমরা বুঝতে পারো যে, সত্যযুগে আমরা এভারহেল্দী ছিলাম। এই ৮৪
চক্র আবর্তিত হতেই থাকে। বাবা একবার-ই এসে বোঝান যে, তোমরা আমার গ্লানি করেছো,
নিজেদেরকে চড় মেরেছো। গ্লানি করতে-করতে তোমরা শূদ্রবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে গেছো। শিখরাও
বলে যে, সাহেবের (ঈশ্বরের) জপ করো তবেই সুখ পাবে অর্থাৎ মন্মনাভব। শব্দই হলো দুটো,
বাকি বেশী মাথা চাপড়ানোর তো কোনো প্রয়োজন নেই। এও বাবা এসে বোঝান। এখন তোমরা বোঝো
যে, সাহেবকে (বাবাকে) স্মরণ করলে তোমরা ২১ জন্মের সুখ পাবে। গুরু নানকও তার মতো করে
মার্গদর্শন করায়। কিন্তু সম্পূর্ণ সঠিক রাস্তা তো তাদের জানা নেই। স্মরণ করতে-করতে
সুখ প্রাপ্ত কর। তোমরা বাচ্চারা জানো যে, সত্যযুগে রোগ-ভোগ ইত্যাদি দুঃখের কোনো
কথাই নেই। এ তো অতি সাধারণ কথা। তাকে সত্যযুগ, গোল্ডেন এজ বলা হয়, আর একে কলিযুগ,
আয়রণ এজ বলা হয়। এ হলো ডিগবাজির খেলা। এখন তোমরা ব্রাহ্মণ হয়েছ, পুনরায় দেবতা হবে।
একথা তোমরা ভুলে যাও। ডিগবাজি স্মরণে থাকলে তবেই সম্পূর্ণ এই জ্ঞান স্মরণে থাকবে।
এমন পিতাকে স্মরণ করে রাতে শুতে যাওয়া উচিত । তা সত্ত্বেও বলে যে, বাবা, ভুলে যাই।
মায়া প্রতি মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয়। তোমাদের লড়াই হলো মায়ার সঙ্গে। তখন আবার তোমরা
আধাকল্প তার (মায়া) উপর রাজত্ব করো। বাবা কথা তো অতি সহজ করে বলেন। নামই হলো সহজ
জ্ঞান, সহজ স্মরণ। শুধু বাবাকে স্মরণ করো। বাবা কোনো কষ্ট দেন কি ! ভক্তিমার্গে তো
তোমরা অনেক কষ্ট করেছ । একটু সাক্ষাৎকারের জন্য গলা কেটে ফেলতেও রাজি হয়ে যেতে,
কাশী কলবট খেতে। হ্যাঁ, যারা নিশ্চয়বুদ্ধি হয়ে করে, তাদের বিকর্ম বিনাশ হয়। পুনরায়
নতুন করে হিসেব-নিকেশ শুরু হবে। তারা কেউই আমার কাছে আসে না। আমাকে স্মরণ করলেই
বিকর্ম বিনাশ হয়ে যায়, শরীরকে কষ্ট দিলে হয় না। আমার কাছে তো কেউ আসে না। কত সহজ কথা।
এই ডিগবাজির খেলা তো বৃদ্ধদেরও স্মরণে থাকা উচিত আর বাচ্চাদেরও স্মরণে থাকা উচিত ।
আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর
সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা-রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১)
বৃক্ষপতি বাবার কাছ থেকে সুখ-শান্তি-পবিত্রতার অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করার
জন্য নিজেকে অকালমূর্তি আত্মা মনে করে বাবাকে স্মরণ করতে হবে। ঈশ্বরীয় বুদ্ধি বানাতে
হবে।
২) বাবার কাছ থেকে
সত্য কথা শুনে অন্যদেরও শোনাতে হবে। মায়াজীত হওয়ার জন্য নিজের সমান তৈরী করার সেবা
করতে হবে, বুদ্ধিতে যেন থাকে যে, আমরা প্রতি কল্পের বিজয়ী, বাবা আমাদের সঙ্গে
রয়েছেন ।
বরদান:-
নির্বল
থেকে বলবান হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা হিম্মতবান (সাহসী) আত্মা ভব
“সাহসী বাচ্চা
সহায়তায় বাবা” এই বরদানের আধারে সাহসের প্রথম দৃঢ় সংকল্প করেছো যে আমাকে পবিত্র
হতেই হবে আর বাবা পদমগুণ সহায়তা দিয়েছেন যে তোমরা আত্মারা অনাদি-আদি পবিত্র ছিলে,
অনেকবার পবিত্র হয়েছো আর হতেও থাকবে। অনেকবারের স্মৃতির দ্বারা সমর্থ হয়ে গেছো।
নির্বল থেকে এতটা বলবান হয়ে গেছো যে চ্যালেঞ্জ করেছো - সমগ্র বিশ্বকেও পবিত্র করে
দেখাবে, যে কাজকে ঋষি মুণি মহান আত্মারা মনে করে যে পবিত্র হয়ে থাকা মুশকিল, সেই
কাজকে তোমরা অতি সহজেই করে থাকো।
স্লোগান:-
দৃঢ়
সংকল্প করাই হলো ব্রত পালন করা, সত্যিকারের ভক্তরা কখনও ব্রত ভঙ্গ করে না।