27.06.2024 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


"মিষ্টি বাচ্চারা - তোমাদের শরীর থেকে আলাদা হয়ে বাবার কাছে যেতে হবে, শরীর সহ বাবা নিয়ে যাবেন না, সুতরাং শরীরকে ভুলে গিয়ে আত্মাকে দেখো"

প্রশ্নঃ -
তোমরা বাচ্চারা নিজেদের আয়ু যোগবলের দ্বারা বৃদ্ধি করার পুরুষার্থ কেন করছো?

উত্তরঃ  
কেননা তোমাদের এটাই ইচ্ছে যে এই জন্মেই আমরা বাবার কাছ থেকে সব কিছু শিখবো, সব কিছু জানবো, সেইজন্যই তোমরা যোগবলের দ্বারা নিজেদের আয়ু বৃদ্ধি করার পুরুষার্থ করছো । শুধুমাত্র এই সময়ই তোমরা বাবার কাছ থেকে স্নেহ পাও। এমন স্নেহ সারা কল্পেও আর প্রাপ্ত হবে না । যারা শরীর ত্যাগ করে চলে গেছে, তাদের জন্য বলা হবে ড্রামা, তাদের পার্ট এইটুকুই ছিল ।

ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা জন্ম-জন্মান্তর ধরে অন্যান্য সৎসঙ্গে গেছো এখন এখানেও এসেছো, বাস্তবে একেই বলা হয় প্রকৃত সৎসঙ্গ । এই সৎসঙ্গই তোমাদের পার করবে ( বিষয় সাগর থেকে)। বাচ্চাদের অন্তরে আসে ‐ আমরা ভক্তি মার্গেও সৎসঙ্গে গিয়েছিলাম আবার এখানেও বসে আছি । এর মধ্যে রাত-দিনের পার্থক্য অনুভব করতে পারে। এখানে সর্বপ্রথম তো বাবার স্নেহ প্রাপ্ত হয়, তারপর বাবাও বাচ্চাদের ভালোবাসা পান । এখন এই জন্মে তোমরা পরিবর্তন হচ্ছো । এখন তোমরা বাচ্চারা বুঝতে পেরেছো আমরা আত্মা, শরীর নই । শরীর বলতে পারে না যে, আমার আত্মা, আত্মা বলতে পারে আমার শরীর। এখন বাচ্চারা বুঝেছে যে ‐ জন্ম-জন্মান্তর সাধু, সন্ত, মহাত্মা ইত্যাদিদের সঙ্গ করে এসেছি । আজকাল তো ফ্যাশন হয়ে গেছে ‐ সাঁই বাবা, মেহর বাবা....ওরা তো সব শরীরধারী । শরীরধারীর ভালোবাসায় কোনও সুখ প্রাপ্তি হয় না । এখ বাচ্চারা তোমাদের হলো আত্মিক. ভালোবাসা। রাত-দিনের পার্থক্য । এখানে তোমরা বুঝতে পারছো, যেখানে ভক্তি মার্গে সম্পূর্ণ অজ্ঞানতা ছিল। তোমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে, বাবা এসে আমাদেরকে (ঈশ্বরীয় পাঠ) পড়াচ্ছেন । উনি হলেন সকলের পিতা । তোমরা সব নারী এবং পুরুষ নিজেদের আত্মা বলে স্বীকার করেছো । বাবা ডেকে বলেন ‐ ওহে বাচ্চারা, বাচ্চারাও প্রত্যুত্তর করে । এ হলো বাবা আর আর তাঁর বাচ্চাদের মিলন । বাচ্চারা জানে বাবা আর বাচ্চাদের, আত্মা আর পরমাত্মার মিলন একবারই হয়ে থাকে । বাচ্চারা বাবা-বাবা করতে থাকে । "বাবা" শব্দটি খুব মিষ্টি । বাবা বলার সাথে সাথেই অবিনাশী উত্তরাধিকারের কথা স্মরণে আসে । তোমরা তো ছোট নও । বাচ্চারা তাদের বাবাকে দ্রুত বুঝতে পারে, বাবার কাছ থেকে কোন্ অবিনাশী উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয় । সেটা তো ছোট বাচ্চারা বুঝতে পারবে না । এখানে তোমরা জানো যে আমরা বাবার কাছে এসেছি। বাবা ডেকে বলেন - ওহে বাচ্চারা, সুতরাং এর মধ্যে সব বাচ্চারাই এসে যায় । সব আত্মারাই পরমধাম গৃহ থেকে এখানে আসে পার্ট প্লে করতে । কে কখন পার্ট প্লে করতে আসে তাও বুদ্ধিতে আছে । সবার সেকশন (বিভাগ) আলাদা-আলাদা, যেখান থেকে আত্মারা আসে । তারপর একদম অন্তিমে সবাই নিজ নিজ সেকশনে চলে যায় । এটাও ড্রামাতে নির্ধারিত । বাবা কাউকে পাঠান না । স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এই ড্রামা তৈরি হয়েছে । প্রত্যেকেই নিজের নিজের ধর্মে প্রবেশ করতে থাকে । বুদ্ধের ধর্ম স্থাপনা না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঐ ধর্মে প্রবেশ করতে পারবে না । সর্বপ্রথম সূর্য বংশী-চন্দ্রবংশীরাই আসে । যারা বাবার কাছ থেকে ভালোভাবে ঈশ্বরীয় পড়াশোনা রপ্ত করতে পারবে, তারাই নম্বরানুসারে সূর্যবংশী, চন্দ্রবংশীয়তে শরীর ধারণ করবে । ওখানে বিকারের কোনও প্রশ্নই নেই । যোগবল দ্বারা আত্মা এসে গর্ভে প্রবেশ করে । যোগ দ্বারাই বুঝতে পারবে যে আমার আত্মা ঐ শরীরে প্রবেশ করবে । বৃদ্ধরাও বুঝতে পারবে - আমার আত্মা যোগবলের দ্বারা এই শরীর ধারণ করবে, আমার আত্মা এখন পুনর্জন্ম নেবে । সেই পিতাও বুঝতে পারেন - আমাদের কাছে সন্তান এসেছে । বাচ্চার আত্মা আসছে, যার সাক্ষাৎকারও হয়। আত্মা বুঝতে পারে এবার সে অন্য শরীরে প্রবেশ করবে । এই চিন্তন মনে জাগে, তাইনা ! নিশ্চয়ই ওখানকার নিয়মানুযায়ী হবে যে সন্তান কোন্ বয়সে তাদের জীবনে আসবে । ওখানে সবকিছুই নিয়মানুসারে চলে । তোমরাও যেমন-যেমন অগ্রসর হবে, সেভাবেই সবকিছু অনুভব হতে থাকবে । সব বুঝতে পারবে, এমন নয় যে ১৫-২০ বছর বয়সেই সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, যেমনটা এখানে হয়ে থাকে । তা নয়, ওখানে আয়ু হয় ১৫০ বছরের, সুতরাং জীবনের অর্ধেক পথ অতিক্রম করার কিছু সময় আগে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে । ঐ সময়ই পুত্র সন্তান আসে কেননা ওখানে আয়ু দীর্ঘ হয় । একটি পুত্র সন্তানই জন্ম গ্রহণ করে, তারপর কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, এটাই নিয়ম । প্রথমে পুত্রের আত্মা আসে তারপর কন্যার আত্মা আসে । বিবেক বলে প্রথম সন্তান আসা উচিত । প্রথমে মেল, তারপর ফিমেল, ১০-১২ বছর পরে (কন্যা সন্তান) আসবে । তোমরা বাচ্চারা যেমন-যেমন অগ্রসর হবে তেমনই সব সাক্ষাৎকার হবে । ওখানে নিয়ম-কানুন কেমন, সব বিষয়ই নতুন দুনিয়ার স্থাপনাকারী বাবা বসে সব ব্যাখ্যা করে থাকেন । বাবা-ই নতুন দুনিয়া স্থাপন করে থাকেন, নিয়ম-কানুনও নিশ্চয়ই শোনাবেন, যে নতুন জগতের রীতিনীতি কেমন হবে । তোমাদের অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে তিনি আরও অনেক কিছু শোনাবেন আর তোমাদেরও সাক্ষাৎকার হতে থাকবে । সন্তান কিভাবে জন্ম গ্রহণ করে, এ কোনও নতুন বিষয় নয় ।

তোমরা তো এমনই জায়গায় যাও যেখানে কল্পে-কল্পে যেতে হয় । বৈকুন্ঠ তো এখন সামনেই অপেক্ষা করছে । তোমরা তার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছো । যোগবল দ্বারা যত শক্তি অর্জন করবে ততই প্রতিটি বিষয় খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারবে। অনেক বার তোমরা তোমাদের রোল প্লে করেছো, এখন তোমরা বুঝতে পারছো, যা তোমরা সঙ্গে করে নিয়ে যাবে । ওখানকার রীতিনীতি কেমন হবে, সব জানতে পারবে । প্রারম্ভিক অবস্থায় তোমাদের সব সাক্ষাৎকার হয়েছিল । ঐ সময় তোমরা অল্ফ আর বে (আল্লাহ্-বাদশাহী = পরমপিতা আর উত্তরাধিকার) বিষয়েই পড়তে । শেষ অবস্থায় তোমাদের অবশ্যই সাক্ষাত্কার হওয়া উচিত । সুতরাং বাবা বসে সব শোনান। ঐ সব প্রত্যক্ষ করার বাসনা তোমাদের এখানেই হবে । অন্তর্মনে এই অনুভব হবে যে, শরীর ত্যাগ করার আগেই সব কিছু দেখে যেতে হবে । আয়ু বৃদ্ধি করার জন্যই প্রয়োজন যোগবল । যার দ্বারা তোমরা বাবার কাছ থেকে সব কিছু শুনতে এবং সাক্ষাত্কার করতে পারবে । যারা ইতিমধ্যে চলে গেছে সে সম্পর্কে মনন করা উচিত নয় । এটাও ড্রামার অংশ যেখানে তাদের এটুকুই পার্ট ছিল । ভাগ্যে ছিল না - বাবার কাছে স্নেহ পাওয়ার কারণ যত তোমরা সেবাধারী হয়ে উঠবে ততই বাবার স্নেহশীল হয়ে উঠবে। তোমরা বাচ্চারা যত বেশি সেবা করবে, যত বাবাকে স্মরণ করবে ততই স্মরণে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তোমরা সেই আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবে । এখনই তোমরা ঈশ্বরীয় সন্তান হও । বাবা বলেন, তোমরা আত্মারা আমার কাছেই ছিলে, তাই না ! ভক্তি মার্গে মুক্তির জন্য অনেক প্রচেষ্টা করে । জীবনমুক্তি তো জানেই না। এই নলেজ অতি রমণীয় । এর প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকে । তিনি একাধারে পিতা, শিক্ষক এবং সদ্গুরু । তিনিই প্রকৃত সত্য সুপ্রিম পিতা যিনি আমাদের ২১ জন্মের জন্য সুখধামে নিয়ে যান । আত্মাই দুঃখী হয় । দুঃখ, সুখ আত্মাই ভোগ করে থাকে । বলাও হয়ে থাকে পাপাত্মা, পুণ্যাত্মা । এখন বাবা এসেছেন আমাদের সর্ব দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে । এখন তোমরা বাচ্চাদের অসীম জগতে যেতে হবে । সেখানে গিয়ে সবাই সুখী হবে । সম্পূর্ণ দুনিয়া সুখে ভরে উঠবে । তোমরা এখন বুঝতে পেরেছ ড্রামায় প্রত্যেকের পার্ট আছে । তোমরা এখন কত খুশি অনুভব কর । বাবা এসেছেন আমাদের স্বর্গে নিয়ে যেতে । আমাদের সব আত্মাদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন । বাবা তোমাদের ধৈর্য্য দেন - মিষ্টি-মিষ্টি বাচ্চারা আমি তোমাদের সব দুঃখ দূর করতে এসেছি । এমন বাবার প্রতি কতখানি ভালোবাসা থাকা উচিত । সমস্ত সম্পর্ক তোমাদের দুঃখ দিয়েছে । সন্তানরা এখানে সমসময়ই দুঃখের কারণ । তোমরা দুঃখী হয়েছো, দুঃখের কথাই শুনে এসেছো । এখন বাবা সবকিছুই বুঝিয়ে বলছেন । অনেক বার বুঝিয়েছেন আর চক্রবর্তী রাজা বানিয়েছেন । সুতরাং যে বাবা আমাদের এমন স্বর্গের মালিক করে তুলছেন, তাঁর প্রতি কতখানি ভালোবাসা থাকা উচিত । একমাত্র বাবাকেই তোমরা স্মরণ করো । বাবা ছাড়া আর কোনও সম্পর্ক নয় । আত্মাকেই বোঝান হয় । আমরা সুপ্রিম পিতার সন্তান । এখন ঠিক যেভাবে আমরা পথের হদিশ পেয়েছি, ঠিক সেভাবেই অন্যদেরও সুখের পথ বলে দিতে হবে । তোমাদের সুখ শুধুমাত্র অর্ধকল্পের জন্য নয় । কল্পের তিন চতুর্থাংশ সময়কালের জন্য। তোমাদের কাছেও কেউ কেউ আত্ম সমর্পণ করবে, কেননা তোমরা তাদের কাছে বাবার বার্তা পৌছে দিয়ে তাদের দুঃখ দূর করে থাক । তোমরা বুঝতে পেরেছ ব্রহ্মা বাবাও এই নলেজ সুপ্রিম পিতার কাছ থেকেই প্রাপ্ত করেছেন । তারপর ব্রহ্মা বাবাই আমাদের কাছে সেই বার্তা পৌছে দিয়ে থাকেন, আমরাও তারপর অন্যদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিই । বাবার পরিচয় দিয়ে সব বাচ্চাদের অজ্ঞানতার নিদ্রা থেকে জাগিয়ে তুলি । ভক্তিকেই অজ্ঞানতা বলা হয় । জ্ঞান আর ভক্তি আলাদা-আলাদা । জ্ঞানের সাগর বাবা এখন তোমরা বাচ্চাদের জ্ঞান প্রদান করছেন । তোমাদের অন্তর্মনে অনুভব হয়, বাবা প্রতি ৫ হাজার বছর পরে এসে আমাদের জাগান । আমাদের দীপ (আত্মা) যার মধ্যে সামান্য ঘৃত এখনও অবশিষ্ট আছে, বাবা এসে পুনরায় তার মধ্যে জ্ঞানের ঘৃত অর্পণ করে তাকে আবার প্রজ্জ্বলিত করে তোলেন । যখন বাবাকে স্মরণ করো তখনই সেই দীপ প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে । আত্মার মধ্যে যে মরচে পড়েছে, তা বাবাকে স্মরণের মাধ্যমেই মিটবে। এর মধ্যেও মায়ার লড়াই চলে (বিঘ্ন দেখা দেয়) । মায়া প্রতি মুহূর্তে ভুল করিয়ে দেয়, যার ফলে মরচে সরে যাওয়ার পরিবর্তে আরও চেপে বসে । যতটুকু মরচে যাওবা মিটেছিল মায়ার প্রভাবে আরও চেপে বসে । বাবা বলেন ‐ বাচ্চারা, আমাকে স্মরণ করলে মরচে কেটে যাবে । এতেই পরিশ্রম আছে । শরীরের প্রতি আকর্ষণ যেন না থাকে, দেহী -অভিমানী হও । আমরা আত্মা, বাবার কাছে শরীর সমেত তো যেতে পারব না । শরীর থেকে আলাদা হয়েই যেতে হবে । আত্মাকে দেখলেই মরচে সরে যাবে, শরীর দেখলে মরচে জমবে । কখনও উত্তরণ, কখনও বা অবতরণ ‐ এই চলতে থাকে । কখনও নীচে, কখনও উপরে ‐- পথ বড় সূক্ষ্ম । এমনই উপর -নীচে হতে হতে অন্তিমে কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্তি হবে । প্রধান হল এই চোখ, যা তোমাদের সাথে প্রতারণা করে, সুতরাং এই শরীরকে দেখ না । আমাদের বুদ্ধি শান্তিধাম, সুখধামে যুক্ত হয়ে আছে এবং আমাদের দৈবীগুণও ধারণ করতে হবে । শুদ্ধ আহার গ্রহণ করতে হবে । দেবতাদের আহার পবিত্র হয় । বৈষ্ণব শব্দটি বিষ্ণু থেকেই এসেছে । দেবতারা কখনও অপবিত্র জিনিস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না । বিষ্ণু মন্দির আছে ‐- যাকে নর - নারায়ণও বলা হয় । এখন লক্ষ্মী-নারায়ণ তো দেহধারী মানুষ, তাদের ৪ বাহু হওয়া উচিত নয়, কিন্তু ভক্তি মার্গে তাদের ৪ বাহু দেখানো হয়েছে । একেই বলে সীমাহীন অজ্ঞতা । এটাও জানে না যে, কোনও মানুষের ৪ বাহু হতে পারে না । সত্যযুগেও প্রত্যেকের ২টিই বাহু । ব্রহ্মারও ২ বাহু । ব্রহ্মার কন্যা সরস্বতী, দু'জনের মিলিতভাবে ৪ বাহু দেখানো হয়েছে । সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী নন, ইনি তো প্রজাপিতা ব্রহ্মার কন্যা । যত সংখ্যক বাচ্চা দত্তক নেওয়া হয় বাহু তত বৃদ্ধি পেতে থাকে । ব্রহ্মার ১০৮ বাহু বলা হয়ে থাকে । বিষ্ণু বা শঙ্করের জন্য একথা বলা হয় না । ব্রহ্মার অসংখ্য বাহু। ভক্তি মার্গে তো কিছুই বোঝে না । বাবা এসেই বাচ্চাদের বুঝিয়ে থাকেন । তোমরাও বলে থাকো, বাবা এসেই আমাদের বিচক্ষণ বানিয়ে তোলেন । মানুষ বলে থাকে- আমরা শিব ভক্ত । আচ্ছা, তোমরা শিবকে কি মনে কর ? এখন তোমরা বুঝতে পেরেছ শিববাবা সমস্ত আত্মার পিতা, সেইজন্যই ওঁনার পূজো করে । প্রধান বিষয় বাবাই বলে থাকেন ‐ মামেকম্ স্মরণ কর । তোমরাও আহ্বান করে বলেছ - হে পতিত-পাবন এসে আমাদের পবিত্র করে তোল । সবাই অবিরত বলে থাকে - পতিত-পাবন সীতারাম । গীতও গায় ।

ব্রহ্মা বাবা তো জানতেন-ই না যে, বাবা স্বয়ং এসে তার মধ্যে প্রবেশ করবেন । কি আশ্চর্যের বিষয়! কখনও কল্পনাও করেননি আগে । প্রথমে তিনি অবাক হয়ে ভাবতেন এটা তার সাথে কি ঘটছে ! আমি যখন কাউকে দেখতাম সে আকৃষ্ট হতো। এসব কি ঘটছে! শিববাবাই আকৃষ্ট করতেন । তার সামনে এসে কেউ বসলেই ধ্যানে চলে যেত । তিনি অবাক হয়ে ভাবতেন এসব কি হচ্ছে? এইসব বিষয় বোঝার জন্য নির্জনতা প্রয়োজন আর তখন থেকেই বৈরাগ্য আসে । তিনি ভাবতে লাগলেন কোথায় যাব? ঠিক আছে, বেনারস যাবো ।

এটা ছিল সেই আকর্ষণ যা তাকে দিয়ে সব করিয়ে নিতে তৈরি করে তুলছিল । এত বিশাল ব্যাবসা সব ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । সেই মানুষগুলো কী করে বুঝবে কেন তিনি বেনারস চলে গেলেন । সেখানে গিয়ে একটা বড়ো বাগিচায় বসলেন । হাতে একটা পেনসিল নিয়ে দেওয়ালের উপর চক্র আঁকতে লাগলেন । বাবা কি করাতে চান কিছুই বুঝতে পারছিলেন না । রাতে ঘুমিয়ে পড়লে মনে হতো কোথায় উড়ে চলেছেন, তারপর আবার যেন নীচে নেমে আসতেন । কিছুই বুঝতে পারতেন না কেন এমন হচ্ছে । প্রথম দিকে এইরকম অনেক সাক্ষাৎকার হতো । বাচ্চারাও বসে বসে ধ্যানে চলে যেতো । তোমরা অনেক কিছু দেখেছো । তোমরা বলতে পারো আমরা যা দেখেছি তা তোমরা দেখোনি । অন্তিমে বাবা অনেক সাক্ষাৎকার করাবেন। কেননা তোমরা ক্রমশঃ অনেক নিকটে চলে যাবে । আচ্ছা!

মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ সুমন আর সুপ্রভাত । আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার ।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) বাবার সন্দেশ (বার্তা) শুনিয়ে সবার দুঃখ দূর করতে হবে । সবাইকে সুখের পথ বলে দিতে হবে । সীমিত থেকে বেরিয়ে অসীমে (হদ থেকে বেরিয়ে বেহদে) যেতে হবে ।

২ ) অন্তিমে সব সাক্ষাৎকার করার জন্য তথা বাবার স্নেহে লালিত হওয়ার জন্য জ্ঞান-যোগে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে । অন্যদের কথা চিন্তন না করে যোগবলের দ্বারা নিজের আয়ু বৃদ্ধি করতে হবে ।

বরদান:-
অমনোযোগিতা আর ইগো-কে (অভিমানকে) ছাড়ার প্রতি অ্যাটেনশান দিয়ে বাবার সাহায্যের পাত্র হওয়া সহজ পুরুষার্থী ভব

কিছু বাচ্চা সাহস রাখার পরিবর্তে অমনোযোগিতার কারণে ইগো-তে (অভিমানে) এসে যায় যে আমি তো সর্বদাই যোগ্য পাত্র । বাবা আমাকে সাহায্য করবেন না তো আর কাকে করবেন! এই অহমিকার কারণে সাহস রাখার বিধিকে ভুলে যায়। কিছু বাচ্চার মধ্যে তো আবার অ্যাটেনশান পাওয়ার অহমিকাও থাকে, যা কিনা বাবার সহায়তা থেকে বঞ্চিত করে দেয়। মনে করে - আমি তো অনেক যোগ করেছি, জ্ঞানী-যোগী আত্মা হয়ে গেছি, সেবার রাজধানী হয়ে গেছি... এই প্রকারের অহমিকাকে (অভিমান) ছেড়ে সাহসিকতার আধারে বাবার সহায়তা প্রাপ্ত করার পাত্র হও তাহলে সহজ পুরুষার্থী হয়ে যাবে।

স্লোগান:-
যে ওয়েস্ট (ব্যর্থ) আর নেগেটিভ সংকল্প চলছে তাকে পরিবর্তন করে বিশ্ব কল্যাণের কাজে লাগাও।