28-07-2024 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 31-12-20 মধুবন


"সঞ্চয়ের খাতা জমা করে অখন্ড মহাদানী হও"


আজ নবযুগ রচয়িতা নিজের নব যুগ অধিকারী বাচ্চাদের দেখছেন। আজ পুরানো যুগে তারা সাধারণ আর কাল নতুন যুগে রাজ্য অধিকারী পূজ্য। আজ আর কালের খেলা। আজ কী আর কাল কী! যারা অনন্য জ্ঞানী তু আত্মা বাচ্চারা রয়েছে, তাদের সামনে আগামী কালও এতটাই স্পষ্ট যতটা আজ স্পষ্ট। তোমরা সবাই তো নতুন বছর উদযাপন করতে এসেছ, কিন্তু বাপদাদা নতুন যুগ দেখছে। নতুন বছরে তো প্রত্যেকে নিজের নিজের নতুন প্ল্যান বানিয়েই থাকবে। আজ পুরানোর সমাপ্তি, সমাপ্তিতে সারা বছরের রেজাল্ট দেখা হয়ে থাকে। তো আজ বাপদাদাও প্রত্যেক বাচ্চার বছরের রেজাল্ট দেখেছেন। বাপদাদার তো দেখতে সময় লাগে না। তাইতো আজ বিশেষ সব বাচ্চার সঞ্চয়ের খাতা দেখেছেন। পুরুষার্থ তো সব বাচ্চা করেছে, স্মরণেও থেকেছে, সেবাও করেছে, লৌকিক কিংবা অলৌকিক পরিবারে সম্বন্ধ-সম্পর্কও পালন করেছে, কিন্তু এই তিন বিষয়ে সঞ্চয়ের খাতা কত হয়েছে?

আজ বতনে বাপদাদা জগৎ অম্বা মাকে ইমার্জ করেছেন। (কাশি হলো) আজ বাজনা একটু খারাপ আছে, তবুও বাজাতে হবে তো না! তো বাপদাদা আর মাম্মা মিলে সকলের সঞ্চয়ের খাতা দেখেছেন। সঞ্চয় করে জমা কত হয়েছে! তাহলে কী দেখেছেন? নম্বরক্রমে তো সবাই আছেই, কিন্তু জমার খাতা যতটা হওয়া উচিত ততটা খাতায় কম ছিল। তো জগৎ অম্বা মা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন - স্মরণের সাব্জেক্টে কিছু বাচ্চার লক্ষ্যও ভালো, পুরুষার্থও ভালো, তাহলে জমার খাতা যতটা হওয়া প্রয়োজন ততটা কম কেন? তাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন, আত্মিক বার্তালাপ চলাকালীন এই রেজাল্ট বেরিয়েছে যে যোগের অভ্যাস তো তারা করছে কিন্তু যোগের স্টেজের (স্থিতি) পার্সেন্টেজ সাধারণ হওয়ার কারণে জমার খাতা সাধারণই রয়েছে। তোমাদের যোগের লক্ষ্য ভালো, কিন্তু যোগের রেজাল্ট হবে যোগযুক্ত, যুক্তিযুক্ত বোল আর আচার-আচরণ। এতে খামতি থাকার কারণে যোগ লাগানোর সময় তোমরা যোগে ভালো, কিন্তু যোগী অর্থাৎ যোগীর জীবনে যোগের প্রভাব পড়া। সেইজন্য সঞ্চয়ের খাতা কোনো কোনো সময়ের জমা হয়, কিন্তু সব সময় জমা হয় না। চলতে চলতে স্মরণের পার্সেন্টেজ সাধারণ হয়ে যায়। তা'তে

জমা খাতা অনেক কম হয়।

দ্বিতীয়তঃ- সেবার সম্বন্ধে আত্মিক বার্তালাপ হয়েছে। তোমরা তো অনেক সেবা করো, দিনরাত বিজিও থাকো। খুব ভালো ভালো প্ল্যানও বানাও আর সেবাতে খুব ভালো বৃদ্ধিও হচ্ছে। তবুও মেজরিটির জমার খাতা কম কেন? তো অধ্যাত্ম আলাপচারিতায় এটা বেরিয়েছে যে সেবা তো সবাই করছে, নিজেকে বিজি রাখার পুরুষার্থও ভালো করছে। তাহলে কারণ কী? এই কারণই বেরিয়েছে যে সেবার বলও প্রাপ্ত হয়, ফলও প্রাপ্ত হয়। বল হলো নিজের হৃদয়ের সন্তুষ্টতা এবং ফল হলো সকলের সন্তুষ্টতা। যদি তোমরা সেবাতে পরিশ্রম আর সময় লাগাও তাহলে হৃদয়ের সন্তুষ্টতা এবং সকলের সন্তুষ্টতা, হয় সাথী কিংবা যাদের সেবা করেছ তাদের হৃদয়ে তারা যেন সন্তুষ্টতা অনুভব করে, এমন হওয়া উচিত হবে না যে তারা খুব ভালো খুব ভালো বলে চলে যাবে, না। তাদের হৃদয়ে যেন তারা সন্তুষ্টতার তরঙ্গ অনুভব করে। আমরা কিছু পেয়েছি, খুব ভালো কিছু শুনেছি এটা বলা আলাদা বিষয়। কিছু পেয়েছি, কিছু লাভ হয়েছে, যেটা সম্পর্কে বাপদাদা আগেই শুনিয়েছিলেন - এক হলো মস্তক পর্যন্ত তীর লাগা, আরেক হলো হৃদয় পর্যন্ত তীর লাগা। সেবার এবং নিজের সন্তুষ্টতা, নিজেকে খুশি করার সন্তুষ্টতা নয়, খুব ভালো হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে, যদিও এটা নয়। হৃদয় মানে নিজেরও আর সকলেরও। আরেকটা বিষয় হলো যে সেবার এবং তার রেজাল্ট নিজের পরিশ্রম কিংবা আমি করেছি... আমি করেছি..., আমি করেছি এটা স্বীকার করা অর্থাৎ সেবার ফল তুমি খেয়ে নিয়েছো। জমা হয়নি। বাপদাদা করিয়েছেন, এটাতেই বাপদাদার দিকে তুমি তাদের অ্যাটেনশন টানতে পারবে, আপন আত্মা প্রতি নয়। এই বোন খুব ভালো, এই ভাই খুব ভালো, না। উচিত হবে এটা, 'এদের বাপদাদা খুব ভালো', তাদেরকে এই অনুভব করানো - এটা হলো জমার খাতা বাড়ানো। সেইজন্য দেখা গেছে টোটাল রেজাল্টে তোমরা পরিশ্রম করেছো বেশি, সময় এনার্জি দিয়েছো বেশি আর অল্পস্বল্প শো বেশি। সেইজন্য সঞ্চয়ের খাতা কম হতে থাকে। জমার খাতার চাবি খুব সহজ, সেটা ডায়মন্ড চাবি, তোমরা গোল্ডেন চাবি লাগিয়ে থাকো কিন্তু জমার ডায়মন্ড চাবি হলো "নিমিত্ত ভাব আর নির্মাণ ভাব।" যদি প্রত্যেক আত্মার প্রতি, সাথী হোক বা যে আত্মার জন্য সেবা করছ, দুটো ক্ষেত্রেই সেবার সময়, আগে পরে নয়, সেবা করার সময় নিমিত্ত ভাব, নির্মাণ ভাব, নিঃস্বার্থ শুভ ভাবনা এবং শুভ স্নেহ ইমার্জ হলে তবে জমার খাতা বাড়তে থাকবে।

বাপদাদা জগদম্বা মাকে দেখিয়েছেন যে এই বিধি দ্বারা যারা সেবা করছে তাদের জমার খাতা কীভাবে বেড়ে যায়। ব্যস্, সেকেন্ডে অনেক ঘণ্টার জমা খাতা সঞ্চিত হয়। ঘড়ির মেশিন যেমন প্রতিটা সেকেন্ড টিক্ টিক্ টিক্ করে অব্যাহতভাবে চলছে, তেমনই তোমরাও দৃঢ়তার সঙ্গে সবকিছু তাড়াতাড়ি করো। তো জগৎ অম্বা বড়ই খুশি হচ্ছিলেন যে সঞ্চয়ের খাতা জমা করা তো অনেক সহজ। তাইতো উভয়ের (বাপদাদার এবং জগৎ অম্বার) পরামর্শ হলো যে এখন নতুন বছর শুরু হচ্ছে তো জমার খাতা চেক করো, সারাদিনে ভুল করনি কিন্তু সময়, সংকল্প, সেবা, সম্বন্ধ-সম্পর্কে স্নেহ, সন্তুষ্টতা দ্বারা কত জমা করেছ? অনেক বাচ্চা শুধু এটাই চেক করে - আজ খারাপ কিছু হয়নি। কাউকে দুঃখ দিইনি। কিন্তু এখন এটা চেক করো যে সারাদিনে শ্রেষ্ঠ সংকল্পের খাতা কত জমা হয়েছে? কত আত্মাদের কোনও কার্য দ্বারা কতজনকে সুখ দিয়েছ? যোগ লাগিয়েছ কিন্তু যোগের পার্সেন্টেজ কী ধরনের ছিল? আজকের দিনে আশীর্বাদের খাতা কত জমা করেছো?

এই নতুন বছরে কী করতে হবে? যা কিছু করো তা' মন্সা হোক বা বাচা অথবা কর্মণা কিন্তু সময় অনুসারে মনে এটা যেন নিরন্তর বাজতে থাকে - আমাকে অখন্ড মহাদানী হতেই হবে। অখন্ড মহাদানী, মহাদানী নয়, অখন্ড। মন্সা দ্বারা শক্তির দান, বাচা দ্বারা জ্ঞানের দান আর নিজের কর্ম দ্বারা গুণ দান। আজকাল দুনিয়াতে, হতে পারে ব্রাহ্মণ পরিবারের দুনিয়া, বা অজ্ঞানীর দুনিয়ায় শোনার পরিবর্তে দেখতে চায়। দেখে করতে চায়। তোমাদের কেন সহজ হয়েছে? ব্রহ্মাবাবাকে কর্মের মাধ্যমে গুণ-দানমূর্ত রূপে দেখেছো। তোমরা তো গুণ দান করেই থাকো, কিন্তু এই বছরে বিশেষ খেয়াল রাখো - সব আত্মাকে গুণ দান অর্থাৎ নিজের জীবনের গুণ দ্বারা সহযোগ দেওয়া। ব্রাহ্মণকে তো দান করবে না, তাই না, সহযোগ দিয়ে থাকো। যা কিছু হয়ে যায় যাক, কেউ যতই না কেন অপগুণধারী হোক, কিন্তু আমার নিজের জীবনের দ্বারা, কর্ম দ্বারা, সম্পর্ক দ্বারা গুণ দান অর্থাৎ সহযোগী হওয়া। এক্ষেত্রে অন্যকে দেখো না, এ' করে না তাহলে আমি কীভাবে করবো, এ' তো এইরকমই। ব্রহ্মাবাবা সি (see) শিব বাবা করেছেন। তোমাদের যদি দেখতে হয় তো ব্রহ্মা বাবাকে দেখ। এতে অন্যকে না দেখে এই লক্ষ্য রাখো যেমন ব্রহ্মা বাবার স্লোগান ছিল "ওটে সো অর্জুন" অর্থাৎ যে নিজেকে নিমিত্ত বানাবে সে নম্বর ওয়ান অর্জুন হয়ে যাবে। ব্রহ্মা বাবা নম্বর ওয়ান অর্জুন হয়েছেন। যদি অন্যকে দেখে করবে তবে নম্বর ওয়ান হবে না। নম্বরক্রমে যদি আসবে তাহলে নম্বর ওয়ান হতে পারবে না। আর যখন তোমাদের হাত উঠাতে বলা হয় তখন সবাই নম্বরক্রমে হাত উঠাও নাকি নম্বর ওয়ানে হাত উঠাও? সুতরাং কী লক্ষ্য রাখবে? অখন্ড গুণদানী, অটল, কেউ যতই টলানোর চেষ্টা করুক, টলমল ক'রো না। প্রত্যেকে একে অপরকে বলে থাকে, সবাই এইরকম, তুমি কেন নিজেকে এইভাবে মারছো, তুমিও আমাদের সাথে মিলে যাও। দুর্বল বানায় এমন সাথী অনেক পাওয়া যায়। কিন্তু বাপদাদার চাই যারা সাহস, উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ায় তেমন সাথী। সুতরাং বুঝেছো কি করতে হবে? সেবা করো, কিন্তু জমার খাতা বাড়াতে বাড়াতে করো, খুব সেবা করো। প্রথমে নিজের সেবা, তারপরে সকলের সেবা। আরও একটা বিষয় বাপদাদা নোট করেছেন, তিনি কি শোনাবেন?

আজ চন্দ্র আর সূর্যের মিলন ছিল, তাই না! তো জগৎ অম্বা মা বলেন, অ্যাডভান্স পার্টি কত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? যখন কেবল তোমরা অ্যাডভান্স স্টেজে যাবে তখন অ্যাডভান্স পার্টির কার্য সম্পূর্ণ হবে। তো জগৎ অম্বা মা আজ বাপদাদাকে খুব ধীরে, খুব যুক্তির সাথে একটা বিষয় শুনিয়েছেন, সেই একটা বিষয় কী শুনিয়েছেন? বাপদাদা তো জানেন, তবুও আজ তো অধ্যাত্ম আলাপচারিতা ছিল তো না! তো কী বলেছি, আমিও পরিক্রমা করি, মধুবনেও পরিক্রমা করি তো সেন্টারগুলোতেও করি। তো যারা জগৎ অম্বাকে দেখেছে তারা জানে যে তিনি মজাচ্ছলে ইশারার মাধ্যমে বলেন, সোজাসুজি বলেন না। তিনি বলেন যে আজকাল এক বিশেষত্ব দেখা যাচ্ছে। কোন্ বিশেষত্ব? তিনি বলেন, আজকাল অনেক রকমের অসাবধানতা এসে গেছে। কারও মধ্যে এক ধরনের অসাবধানতা, কারও মধ্যে আরেক ধরনের অসাবধানতা। হয়ে যাবে, করে নেবো... অন্যরাও তো করছে, আমিও করে নেবো... এ' তো হতেই থাকে, এইরকম চলতেই থাকে... এই ভাষা উপেক্ষার সংকল্পে তো আছেই এমনকি বোলেও আছে। তো বাপদাদা বলেন যে এর জন্য নতুন বছরে তুমি কোনো বিধি শোনাও বাচ্চাদের। তো তোমাদের সকলের জানা আছে যে জগত অম্বা মায়ের সদা এক ধারণার স্লোগান থেকেছে, মনে আছে তোমাদের? কা'র মনে আছে? (হুকুমই হুকুম চালাচ্ছেন..) তো জগত অম্বা বললেন, যদি সবাই এই ধারণা করে নেয় যে বাপদাদা আমাদের চালাচ্ছেন, তাঁর হুকুমে প্রতিটা কদম চালাচ্ছেন, আমাদের চালানোর মালিক ডাইরেক্ট বাবা - এই স্মৃতি থাকলে তাহলে নজর কোথায় যাবে? যারা চলছে তাদের নজর তো যিনি চালাচ্ছেন তাঁর দিকেই যাবে, অন্যদিকে তো যাবে না। তো করাবনহার নিমিত্ত বানিয়ে করাচ্ছেন, চালাচ্ছেন। উত্তরদায়িত্ব করাবনহারের। তারপর সেবাতে তোমাদের যে মাথা ভারী হয়ে যায় তা' সদা হাল্কা থাকবে, যেমন অধ্যাত্ম গোলাপ। বুঝেছো, কি করতে হবে? অখন্ড মহাদানী। আচ্ছা।

নববর্ষ উদযাপন করার জন্য সবাই তোমরা ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছে গেছো। এটা ভালো হাউজ ফুল হয়ে গেছে। আচ্ছা, জল তো পেয়েছো না! পেয়েছো জল? তবুও তাদেরকে অভিনন্দন যারা জল আনার জন্য পরিশ্রম করেছে। এত হাজারের জন্য জল পৌঁছানো, কোনো দু'-চার বালতি নয় তো না! ঠিক আছে, কাল থেকে তো ফিরে যাওয়ার মিলন মেলা হবে। সবাই আরামে থেকেছো? একটু সামান্য তুফান তোমাদের পেপার নিয়েছে। অল্প হাওয়া বয়েছে। সবাই তোমরা ঠিক ছিলে? পান্ডবরা ঠিক ছিলে? ঠিক আছে, কুম্ভ মেলা থেকে তো এটা ভালো, তাই না! আচ্ছা তিন পা ভূমি পেয়েছো তো না। খাটিয়া পাওনি কিন্তু তিন পা ভূমি পেয়েছো তো না! তো নতুন বছরে চতুর্দিকের বাচ্চারা বিদেশেও, দেশেও নতুন বছরের সেরিমনি বুদ্ধি দ্বারা দেখছে, কান দ্বারা শুনছে। মধুবনেও দেখছে। যারা মধুবনের তারাও যজ্ঞ রক্ষক হয়ে সেবার পার্ট প্লে করেছে, খুব ভালো। যারা দেশের এবং বিদেশের তাদের সাথে মধুবনবাসী যারা সেবার নিমিত্ত তাদেরও বাপদাদা অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আচ্ছা। তাছাড়া তো অনেক কার্ড এসেছে। কার্ড তো কোনো বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু এর মধ্যে হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা স্নেহ রয়েছে। তাইতো বাপদাদা কার্ডের শোভা দেখেন না, বরং এটাই দেখেন হৃদয়ে কত বহুমূল্য স্নেহ ভরা আছে, তো সবাই তোমরা নিজের নিজের হৃদয়ের স্নেহ পাঠিয়েছ। এমন আত্মাদের বিশেষভাবে প্রত্যেকের নাম তো নেবেন না, তাই না! কিন্তু বাপদাদা কার্ডের বদলে এমন বাচ্চাদের স্নেহ ভরা রিগার্ড দিচ্ছেন। স্মরণ পত্র, টেলিফোন, কম্পিউটার, ই-মেল, যা কিছু সাধন আছে সেই সব সাধনের আগে প্রথমে সংকল্প দ্বারাই বাপদাদার কাছে পৌঁছে যায়, তারপরে তোমাদের কম্পিউটার আর ই-মেল আসে। বাচ্চাদের স্নেহ বাপদাদার কাছে সবসময় পৌঁছেই যায়। কিন্তু আজ বিশেষভাবে অনেকেই নতুন বছরের প্ল্যানও লিখেছে, প্রতিজ্ঞাও করেছে, অতীতকে অতীত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস রেখেছে। সবাইকে বাপদাদা বলছেন, অনেক অনেক সাবাশ বাচ্চারা, সাবাশ!

তোমরা সবাই খুশি হচ্ছো তো না! তারাও খুশি হচ্ছে। এখন বাপদাদার হৃদয়ের এটাই আশা যে - "দাতার বাচ্চা প্রত্যেকে দাতা হও।" চেও না - এটা পাওয়া চাই, এটা হওয়া চাই, এটা করা চাই। দাতা হও, একে অপরকে সামনে এগিয়ে দেওয়ায় উদারচিত্ত হও। বাপদাদাকে ছোটরা বলে যে বড়দের ভালোবাসা চাই আমাদের। আর বাবা ছোটদের বলেন, বড়দের রিগার্ড রাখো তো ভালোবাসা পেয়ে যাবে। রিগার্ড দেওয়াই হলো রিগার্ড নেওয়া। রিগার্ড এইভাবে পাওয়া যায় না। দেওয়াই নেওয়া। যেমন তোমাদের জড় চিত্র দিয়ে থাকে। দেবতার অর্থই হলো যিনি দেন। দেবীর অর্থই যিনি দেন। সুতরাং তোমরা চৈতন্য দেবী দেবতারা দাতা হও, দাও। তোমরা যারা দেবে তারা যদি সবাই দাতা হয়ে যাও, তবে নেওয়ার জন্য কেউই তো অবশিষ্ট থাকবে না! তারপর চতুর্দিকে সন্তুষ্টতার রুহানী (অধ্যাত্ম) গোলাপের সুরভি ছড়িয়ে পড়বে। শুনেছ!

সুতরাং নতুন বছরে পুরানো ভাষা বলবে না, যে পুরানো ভাষা কেউ কেউ বলে থাকে, যা ভালো লাগে না, সুতরাং পুরানো বোল, পুরানো আচরণ, পুরানো যে কোনো কিছুর অভ্যাসে বাধ্য হয়ো না। সব ব্যাপারে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো যে নতুন কি! নতুন কী করেছি? ব্যস্, শুধু একুশ সাল উদযাপন করতে হবে, ২১ জন্মের সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার ২১ সালে পেতেই হবে। পেতেই হবে তো না! আচ্ছা!

চতুর্দিকের নবযুগ অধিকারী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, সকল বাচ্চাকে, যারা সদা প্রতি কদমে পদম সঞ্চয়কারী আত্মা, যারা সদা নিজেদেরকে ব্রহ্মা বাবা সমান সকলের সামনে স্যাম্পল হয়ে সিম্পল বানায় এমন আত্মাদের, সদা নিজেদের জীবনে গুণাবলি প্রত্যক্ষ করে অন্যদের গুণবান বানায়, সদা অখন্ড মহাদানী, মহা সহযোগী আত্মাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার।

এই সময় পুরানো আর নতুন বছরের সঙ্গম সময়। সঙ্গম সময় অর্থাৎ পুরানোর সমাপ্তি আর নতুনের শুরু হওয়া। যেমন অসীম সঙ্গমে তোমরা সব ব্রাহ্মণ আত্মা বিশ্ব পরিবর্তন করার নিমিত্ত হয়েছ, তেমনই আজ এই পুরানো আর নতুন বছরের সঙ্গমেও স্ব পরিবর্তনের সংকল্প মজবুত করেছো আর করতেই হবে। যেটা তোমাদের বলা হয়েছে, প্রতিটা সেকেন্ড অনড়, অখন্ড মহাদানী হতে হবে। দাতার বাচ্চা মাস্টার দাতা হতে হবে। পুরানো বছরকে বিদায় দেওয়ার সাথে সাথে পুরানো দুনিয়ার আকর্ষণ আর পুরানো সংস্কারকে বিদায় দিয়ে নতুন শ্রেষ্ঠ সংস্কারকে আহ্বান করতে হবে। সবাইকে কোটি কোটি বার অভিনন্দন, অভিনন্দন, অভিনন্দন।

বরদান:-
প্রাপ্তি স্বরূপ হয়ে কেন, কি-এর প্রশ্ন থেকে পার হয়ে সদা প্রসন্নচিত্ত ভব

যারা প্রসন্নচিত্ত আত্মা তাদের কখনও কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে না। তাদের মুখ এবং আচরণে প্রসন্নতার পার্সোনালিটি দেখা যাবে, একেই বলে সন্তুষ্টতা। যদি‌ প্রসন্নতা কম হয় তাহলে তার কারণ হলো প্রাপ্তি কম আর প্রাপ্তি কম হওয়ার কারণ হলো কোনো না কোনো ইচ্ছা। অতি সূক্ষ্ম ইচ্ছাগুলো অপ্রাপ্তির দিকে টেনে নেয়। সেইজন্য অল্পকালের ইচ্ছা সমূহকে ছেড়ে প্রাপ্তিস্বরূপ হও, তাহলে সদা প্রসন্নচিত্ত থাকবে।

স্লোগান:-
পরমাত্ম ভালোবাসায় লভলীন থাকো, তবে মায়ার আকর্ষণ সমাপ্ত হয়ে যাবে।