29-09-2024 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
03-02-2002 মধুবন
"লক্ষ্য আর লক্ষণ সমান বানাও, সর্ব ভান্ডারে সম্পন্ন
হও"
আজ সর্ব ভান্ডারের মালিক ভান্ডারে সম্পন্ন তাঁর নিজের বাচ্চাদের দেখছেন। প্রত্যেক
বাচ্চা সর্ব ভান্ডারে সম্পন্ন। যে সম্পন্ন হয় তার লক্ষণ সদা প্রাপ্তি স্বরূপ,
তৃপ্ত আত্মা রূপে প্রতীয়মান হবে। নজরে আসবে তারা সদা খুশি কেননা, পরিপূর্ণ তারা।
সুতরাং প্রত্যেকে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, আমার কাছে কত ভান্ডার জমা আছে! এই অবিনাশী
ভান্ডার এখনও প্রাপ্ত হয়েছে আর ভবিষ্যতেও অনেক জন্ম সাথে থাকবে। এই ভান্ডার শেষ
হওয়ার নয়। সবচেয়ে প্রথম ভান্ডার হলো - জ্ঞানের ভান্ডার, যে জ্ঞানের ভান্ডারে এই
সময়ও তোমরা সবাই মুক্তি আর জীবন্মুক্তির অনুভব করছো। জীবনে থেকে, পুরানো দুনিয়ায়
থেকে, তমোগুণী বায়ুমন্ডলে থেকে জ্ঞানের ভান্ডারের আধারে এই সব বায়ুমন্ডল,
ভাইব্রেশন থেকে বিচ্ছিন্ন ও মুক্ত হও। কমল পুষ্প সমান স্বতন্ত্র ও মুক্ত আত্মারা
দুঃখ থেকে, চিন্তা থেকে, অশান্তি থেকে মুক্ত হও। জীবনে থেকে খারাপের বন্ধন থেকে
মুক্ত হও। ব্যর্থ সংকল্পের তুফান থেকে মুক্ত হও। মুক্ত তোমরা? সবাই হাত নাড়ছে।
সুতরাং মুক্তি আর জীবনমুক্তি এই জ্ঞানের ভান্ডারের ফল, এটা প্রাপ্তি। হয়তো ব্যর্থ
সংকল্প আসার চেষ্টা করে, নেগেটিভও আসে, কিন্তু জ্ঞান অর্থাৎ বোধ আছে যে, ব্যর্থ
সংকল্প বা নেগেটিভের কাজ হলো আসা এবং তোমরা সব জ্ঞানী তু আত্মার কাজ হলো এর থেকে
মুক্ত, স্বতন্ত্র এবং বাবার প্রিয় থাকা। সুতরাং চেক করো - জ্ঞানের ভান্ডার প্রাপ্ত
হয়েছে? পরিপূর্ণ হয়েছে? সম্পন্ন হয়েছে নাকি কম আছে? যদি কম থাকে তবে তা' জমা করো,
খালি থেকো না।
যোগের ভান্ডার - যার দ্বারা এই ভাবেই সর্ব শক্তির প্রাপ্তি হয়। তো নিজেকে দেখ
যোগের ভান্ডার দ্বারা সর্ব শক্তি জমা হয়েছে? সর্ব? একটা শক্তিও যদি কম হয় তবে
প্রয়োজনের সময় তোমাকে প্রতারণা করবে। তোমাদের সকলের টাইটেল - মাস্টার
সর্বশক্তিমান, শক্তিমান নয়, সর্বশক্তিমান। তো সর্বশক্তির ভান্ডার যোগবল দ্বারা জমা
হয়েছে? পরিপূর্ণ, প্রাপ্তি স্বরূপ তোমরা, নাকি খামতি আছে? কেন? এখন তোমাদের খামতি
পরিপূর্ণ করে নিতে পারো। এখনও তোমাদের চান্স আছে। পরে নিজেকে সম্পন্ন করার সময়
সমাপ্ত হয়ে যাবে, তো খামতি থেকেই যাবে। চেক করো - প্রতিটা শক্তি তোমাদের সামনে নিয়ে
এসো আর সারাদিনের দিনচর্চায় চেক করো - যদি পার্সেন্টেজও কম থাকে তবে ফুল পাস বলা
হবে না কেননা, বাচ্চারা তোমাদের যে কোনো কাউকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তোমাদের সবার
লক্ষ্য কী, ফুল পাশ হওয়া নাকি হাফ পাশ? তখন তোমরা সবাই বলে থাকো, আমি তো সূর্যবংশী
হবো, চন্দ্রবংশী হবো না। চন্দ্রবংশী হবে তোমরা? বাপদাদা খুব ভালো রাজ-সিংহাসন দেবেন,
হবে চন্দ্রবংশী? ইন্ডিয়ার যারা সূর্যবংশী হবে, ফরেনের যারা চন্দ্রবংশী হবে, হবে?
হবে না? সূর্যবংশী হবে? অবশ্যই সেটা তোমাদের হতে হবে। এটা তো বাপদাদা চিটচ্যাট
করছেন। যখন দৃঢ় নিশ্চয় আছে সূর্যবংশী হতেই হবে এবং বাবার কাছে আর নিজের কাছে
প্রতিজ্ঞা করেছ তো এখন থেকে কোনও শক্তির পার্সেন্টেজ যেন কম না হয়। যদি বলবে
সরকমস্ট্যান্স অনুসারে, সমূহ সমস্যা অনুসারে পার্সেন্টেজ কম থেকে গেছে তো ১৪ কলা হয়ে
যাবে। সেইজন্য আজকাল বাপদাদা চতুর্দিকের সব বাচ্চার পোতামেল, রেজিস্টার চেক করছেন।
বাপদাদার কাছেও প্রত্যেকের রেজিস্টার আছে, কেননা, সময় অনুসারে আগেই বাপদাদা
বাচ্চাদের শুনাচ্ছেন যে, সময়ের গতি অনুসারে এখন 'কবে' ব'লো না, এই ক্ষণে। কখনো হয়ে
যাবে, পরে করে নেবো... এতো হতেই হবে... এটা ভেবো না। এইরকম নয় এটা তো হবেই, বরং
এখন এখনই এটা তোমাদের করতেই হবে। সময়ের গতি তীব্র হচ্ছে, সেইজন্য তোমরা যে লক্ষ্য
রেখেছ বাবা সমান হওয়ার, ফুল পাশ হওয়ার, ১৬ কলা সম্পন্ন হওয়ার, তো বাপদাদাও এটাই
চান যে লক্ষ্য আর লক্ষণ সমান হোক। যখন লক্ষ্য আর লক্ষণ সমান হবে তখনই সহজে বাবা
সমান হয়ে যাবে। সুতরাং চেক করো, হয়ে যাবে, আমি হয়েই যাবো... এটা অসতর্কতা। যা
করতে হবে, যা হতে হবে, যে লক্ষ্য রয়েছে, তা' এখন থেকেই করতে হবে, হতে হবে। 'কখনো'
শব্দ প্রয়োগ ক'রো না, এক্ষুনি এক্ষুনি।
তো জ্ঞানের ভান্ডার, যোগের ভান্ডার, আরও ধারণার ভান্ডার আছে, যার দ্বারা (ধারণার
দ্বারা) গুণের ভান্ডার জমা হয়ে যায়। গুণের মধ্যেও যেমন সর্বশক্তি আছে, সেরকমই
সর্বগুণ রয়েছে, শুধু গুণ নয়, সর্বগুণ রয়েছে। তো সর্ব গুণ আছে তোমাদের, নাকি ভাবছ
দু'-একটা গুণ কম আছে তো কী হয়েছে! তা'তে সব কিছু ঠিক চলবে? চলবে না। সুতরাং
তোমাদের সর্ব গুণের ভান্ডার জমা হয়েছে? কোন্ গুণের অভাব আছে, তা' চেক করে পরিপূর্ণ
হও।
চতুর্থ বিষয় হলো - সেবা। সেবার দ্বারা সবার অনুভব আছে, যখনই মন্সা সেবা কিংবা
বাণীর দ্বারা বা কর্মের দ্বারাও তোমরা সেবা করো তখন তার প্রাপ্তি হিসেবে আত্মিক খুশি
মেলে। তো চেক করো সেবা দ্বারা খুশির অনুভূতি কতটা করেছ? যদি সেবা করেছ আর খুশি হয়নি,
তবে সেই সেবা যথার্থ সেবা নয়। সেবাতে কোনো না কোনো খামতি আছে, সেইজন্য খুশির
প্রাপ্তি হয় না। সেবার অর্থ হলো, আত্মা নিজেকে প্রফুল্ল, সম্পূর্ণ রূপে বিকশিত
অধ্যাত্ম গোলাপ, খুশির দোলায় দোদুল্যমান অনুভব করবে। সুতরাং চেক করো - সারা দিন
সেবা করেছো কিন্তু সারাদিনের সেবার তুলনায় এত খুশি হয়েছে নাকি ভাবনা চিন্তাই চলতে
থেকেছে, এটা নয় এটা, এটা নয় এটা...? আর তোমাদের খুশির প্রভাব এক সেবা স্থানে,
দ্বিতীয় সেবা সাথীদের ওপরে, তৃতীয় - যে আত্মাদের তোমরা সেবা করেছো সেই আত্মাদের
ওপরে যেন পড়ে, বায়ুমন্ডলও যেন খুশি হয়ে যায়। এই খুশি হলো সেবার ভান্ডার।
আরেকটা বিষয় - চার সাবজেক্ট তো এসেই গেছে। আর আছে সম্বন্ধ- সম্পর্ক, সেটাও
অত্যাবশ্যক, কেন? কিছু কিছু বাচ্চা মনে করে বাপদাদার সাথে সম্বন্ধ তো আছেই।
পরিবারের সাথে সম্বন্ধ থাকলো কি থাকলো না, সেটা এমন কি ব্যাপার (কী ক্ষতি) বীজের
সাথে তো সম্বন্ধ আছেই। কিন্তু তোমাদের বিশ্ব- রাজত্ব করতে হবে তো না! সুতরাং রাজ্যে
তো সম্বন্ধে আসতেই হবে। সেইজন্য সম্বন্ধ-সম্পর্কে আসতেই হবে। কিন্তু
সম্বন্ধ-সম্পর্কে তোমাদের যথার্থ ভান্ডার প্রাপ্তি হয়, আশীর্বাদ। সম্বন্ধ-সম্পর্ক
ব্যতীত তোমাদের কাছে আশীর্বাদের ভান্ডার জমা হবে না। মা বাবার আশীর্বাদ তো আছে,
কিন্তু সম্বন্ধ-সম্পর্ক থেকেও আশীর্বাদ নিতে হবে। যদি আশীর্বাদ প্রাপ্ত না হয়,
সর্ব ভান্ডারে সম্পন্ন আত্মাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ- সুমন আর নমস্কারের ফিলিংস
না আসে তবে বুঝবে সম্বন্ধ-সম্পর্কে কোনো খামতি আছে। যথার্থ রীতিতে যদি
সম্বন্ধ-সম্পর্ক থাকে তবে আশীর্বাদের অনুভূতি হওয়া উচিত। আর আশীর্বাদের অনুভূতি কী
হবে? তোমরা অনুভাবী তো না! যদি সেবা থেকে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় তবে আশীর্বাদ
পাওয়ার অনুভব এটাই হবে যে অন্যদের সাথে সম্বন্ধে এসে, যে কোনো কার্য করতে করতে
নিজেও ডবল লাইট (হাল্কা) হবে, বোঝা অনুভব করবে না এবং যাদের সেবা করেছো, তোমাদের
সম্বন্ধ-সম্পর্কে এসেছে তারাও ডবল লাইট ফিল করবে। তারা অনুভব করবে যে এই সম্বন্ধে
তারা সদা হাল্কা অর্থাৎ ইজি, ভারী বোধ করবে না। তোমাদের সাথে সম্বন্ধে আসুক কি না
আসুক... কিন্তু আশীর্বাদ প্রাপ্তির কারণে উভয় তরফ নিয়মানুসারে ইজি হবে। তবে,
এতটাও ইজিও নয় যে - যেমন প্রবাদ আছে যে, বেশি মিষ্টিতে অনেক পিঁপড়ে আসে। সুতরাং
এত ইজিও নয়, কিন্তু তোমরা ডবল লাইট থাকবে। তো বাপদাদা বলেন - নিজের ভান্ডার চেক করো।
তোমাদের সময় দেওয়া হচ্ছে। এখনো সমাপ্তির বোর্ড লাগানো হয়নি। অতএব, চেক করো আর
এগিয়ে চলো।
বাচ্চাদের প্রতি বাপদাদার ভালবাসা আছে তো না! তাইতো বাপদাদা মনে করেন কোনও বাচ্চা
যেন পিছনে থেকে না যায়। প্রত্যেক বাচ্চা যেন সামনে আরও সামনে এগিয়ে যায়। চলতে চলতে
দেহ-অভিমান চলে আসে। স্বমান এবং দেহ-অভিমান। দেহ-অভিমানের কারণ হলো স্বমানে
পূর্ণতার অভাব হয়ে যায়। তো দেহ-অভিমান শেষ করার খুব সহজ সাধন রয়েছে । দেহ-অভিমান
আসার একটাই অক্ষর, একটাই শব্দ, সেটা জানো তোমরা। দেহ-অভিমানের সেই একটি শব্দ কী? (ম্যায়/আমি)
আচ্ছা, তো কতবার তোমরা আমি আমি বলো? সারাদিনে কতবার "আমি" বলো কখনো নোট করেছ? আচ্ছা
একদিন নোট ক'রো। বারবার আমি শব্দ তো আসেই। কিন্তু আমি কে? প্রথম পাঠ হলো আমি কে?
তোমরা দেহ-অভিমানে আমি বলো, কিন্তু বাস্তবে আমি কে? আত্মা নাকি দেহ? আত্মা দেহ ধারণ
করেছে, নাকি দেহ আত্মাকে ধারণ করেছে? কী হয়েছে? আত্মা দেহ ধারণ করেছে। ঠিক আছে তো
না? আত্মা দেহ ধারণ করেছে, তাহলে আমি কে? আত্মা তো না! সুতরাং সহজ সাধন হলো, যখনই
আমি শব্দ বলবে, তখন স্মরণ করো আমি কোন্ আত্মা? আত্মা নিরাকার, দেহ সাকার। নিরাকার
আত্মা সাকার দেহ ধারণ করেছে, তো যতবারই আমি আমি শব্দ বলো, ততো সময় এটা স্মরণ করো
যে আমি নিরাকার আত্মা সাকারে প্রবেশ করেছি। যখন নিরাকার স্থিতি স্মরণ হবে তখন
নিরহংকারী আপনা থেকেই হয়ে যাবে। দেহবোধ শেষ হয়ে যাবে। সেই প্রথম পাঠ আমি কে? এটা
স্মৃতিতে রেখে আমি কোন্ আত্মা স্মরণে আসতে নিরাকারী স্থিতি পাকা হয়ে যাবে। যেখানে
নিরাকারী স্থিতি হবে সেখানে নিরহংকারী, নির্বিকারী স্থিতি হয়েই যাবে। তো কাল থেকে
নোট করবে - যখন আমি শব্দ বলো তখন কী স্মরণে আসে? আর যতবার আমি শব্দ ইউজ করবে ততবার
নিরাকারী, নিরহংকারী, নির্বিকারী আপনা থেকেই হয়ে যাবে।
আচ্ছা - আজ ইউথ গ্রুপ এসেছে। ইউথ অনেক। বাপদাদা ইউথ গ্রুপকে বরদান দেন, সদা খুশিতে
পরিপূর্ণ থাকো। একটা ভান্ডারও বরবাদ ক'রো না, প্রসন্ন থাকো, প্রসন্ন করো। লৌকিক
গুরুরা আশীর্বাদ দেয় আয়ুষ্মান ভব আর বাপদাদা বলেন, শরীরের আয়ু তো যত আছে ততটা
থাকবে, সেইজন্য শরীরের আয়ুর হিসেবে তিনি আয়ুষ্মান ভব-র বরদান দেন না, বরং এই
ব্রাহ্মণ জীবনে সদা আয়ুষ্মান ভব। কেন? যে ব্রাহ্মণ সেই দেবতা হবে। সুতরাং
আয়ুষ্মান হবে তো না! ইউথের একটি বিশেষত্ব থাকে। ইউথ, তোমরা নিজেদের বিশেষত্বকে জানো?
কী বিশেষত্ব থাকে জানো? কী বিশেষত্ব রয়েছে তোমাদের মধ্যে? (যা চাই তাই করতে পারি)
আচ্ছা - করতে পারো তোমরা? এটা ভালো ব্যাপার, দুনিয়ার হিসেবে বলা হয়, ইউথ খুব জেদি
হয়, যা ভাবে তা' করে দেখাবে। তারা উল্টো বলে। ব্রাহ্মণ ইউথ এখানে জেদি নয় বরং
নিজের প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকে। তারা তাদের প্রতিজ্ঞা থেকে সরে যায় না। ইউথ এইরকম
কি তোমরা? হাত তোলা তো অনেক সহজ। বাপদাদা খুশি কারণ, তোমাদের অন্ততঃ হাত উঁচু করার
সাহস রয়েছে । কিন্তু প্রতিদিন অমৃতবেলায় বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে যে আমরা এই
ব্রাহ্মণ জীবনের প্রাপ্তি দ্বারা, সেবা দ্বারা সংকল্প থেকে কখনও সরে যাবো না। এই
সাহস, প্রতিজ্ঞা রোজ পুনরাবৃত্তি করো এবং বারবার চেক করো, যে সাহস বজায় রেখেছো,
সংকল্প করেছো সেটা প্র্যাকটিক্যালি হচ্ছে কিনা।
গভর্নমেন্ট তো বলে, শুধু দু'-চার লাখ ইউথও যদি শক্তিশালী হয়ে যায় তবুও সেটা ঠিক
আছ। তোমরা কে! ব্রাহ্মণ তোমরা, তাই না! বাপদাদা বলেন - প্রত্যেক ব্রাহ্মণ ইউথ এক এক
লাখের সমান। এত মজবুত তোমরা? দেখ, এরকম নয় যে গৃহে ফিরে গিয়ে তারপর লিখবে বাবা!
মায়া এসে গেছে, সংস্কার এসে গেছে, সমস্যা এসে গেছে। সমস্যার সমাধান স্বরূপ হও।
সমস্যা তো আসবে কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞাসা করো আমি কে? সমাধান স্বরূপ নাকি সমস্যার কাছে
হার মেনে নেওয়া রত্ন? তোমরা বিজয়ী রত্ন। ব্রাহ্মণ জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই বাপদাদা
প্রত্যেক ব্রাহ্মণের মস্তকে বিজয়ের অমর তিলক লাগিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং অমরভব-র
বরদানী তোমরা। এখন নিজের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করো। যদি এখানে তোমাদের প্রতিজ্ঞা করতে
বলা হয় তো তোমরা সবাই করে নেবে, কিন্তু নিজের মনে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করো - আমি
কখনও সংস্কারের বশ হবো না, যা বাবার সংস্কার তা' আমি-ব্রাহ্মণ-আত্মার সংস্কার। যা
দ্বাপর কলিযুগের সংস্কার তা' আমার সংস্কার নয়, কারণ সেগুলো বাবার সংস্কার নয়। ওই
তমোগুণী সংস্কার ব্রাহ্মণের সংস্কার? না তো! তাহলে, তোমরা কে? ব্রাহ্মণ, তাই না?
বাপদাদারও ইউথ গ্রুপের জন্য গর্ব হয়। দেখ, দাদিদেরও ইউথের জন্য গর্ব হয়। ইউথদের
প্রতি দাদির ভালবাসা আছে তো না। এক্সট্রা ভালোবাসা আছে। কুমার হলো সুকুমার। কুমার
নয় সুকুমার। এক এক কুমার বিশ্বের কুমারদের পরিবর্তন করে দেখাতে সক্ষম। আচ্ছা,
কুমারদের কাজ দেওয়া যায়? সাহস আছে তোমাদের? করতে হবে। কুমারীরা করবে?
তো বাবা তোমাদের কাজ দিচ্ছেন, মনোযোগের সঙ্গে শোনো। সুতরাং পরবর্তী যে সিজন হবে,
সেই পরবর্তী সিজনে কুমারদের জন্য আমরা এরকমই স্পেশাল প্রোগ্রাম রাখবো কিন্তু... একটা
কিন্তুও আছে। বাবা বেশি কাজ দেন না, একেক কুমার প্রত্যেক দশ দশ কুমারের ছোট ছোট
হাতের বালা তৈরি করে এনো। বালা হাতে পরে, তাই না! ব্রহ্মা বাবাকে তোমরা সদাসর্বদা
ফুলের বালা পরিয়ে থাকো। তো একেক কুমার অপরিপক্ব নিয়ে এসো না, পরিপক্ব এনো। মধুবনে
তো আসবে তারপর গৃহে ফিরে বদলে যাবে! না। এমন পরিপক্ব বানিয়ে আনবে যে বাপদাদা দেখে
বলেন বাহ্ কুমার বাঃ! এভাবে করতে তৈরি আছ তোমরা? করবে এটা? একটু ভাবো। এভাবে হাত
তুলো না। করতে হবে। তাদেরকে বানাতে হবে। ডবল ফরেনার্সও করবে? ডবল ফরেনার্স কুমার
হাত উঠাও। তো তোমরাও ১০ আনবে, আনবে না? ফরেনার্সও আনবে, যারা ইন্ডিয়ার তারাও আনবে।
তখন, যে ফার্স্টক্লাস কোয়ালিটি নিয়ে আসবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। খুব ভালো
উপহার দেওয়া হবে, নিকৃষ্ট দেওয়া হবে না। কুমারদের প্রতি ভালোবাসা আছে তো না!
গভর্নমেন্ট যদি পজিটিভ কর্ম করে এমন সর্বোচ্চ সংখ্যক কুমার পেয়ে যায় তাহলে
গভর্নমেন্ট কত খুশি হবে। যদি তোমরা প্রত্যেকে ১০-১০ কুমার আনো তবে পুরো হলো কুমার-এ
ভরে যাবে আর তখন আমরা গভর্নমেন্টকে ডাকতে পারবো, দেখো, এরা কুমার। যতই হোক, তাদেরকে
তোমাদের আনতে হবে, বানাতে হবে। যদি তোমাদের স্থিতি, লক্ষ্য এবং লক্ষণ সমান রাখো তবে
সেবায় সফলতা হবে কি হবে না - এই সংকল্পও উঠতে পারে না। সম্পন্ন হয়েই আছে। শুধু
তোমাদের নিমিত্ত হতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা সদা রিভাইস করতে থাকো। চমৎকার তো করতেই হবে।
আচ্ছা।
ডবল বিদেশিও এসেছে। বাপদাদা বলেন যে, ডবল বিদেশিরা বাপদাদার একটা টাইটেল
প্র্যাকটিক্যালি প্রত্যক্ষ করেছে, সেটা কোনটা? (বিশ্ব-কল্যাণকারী) যখন প্রথম স্থাপন
হয়েছে তখন ভারত কল্যাণকারী হয়েছে কিন্তু যখন থেকে ডবল ফরেনার্স ব্রাহ্মণ আত্মা
হয়েছে তখন বাবার বিশ্ব-কল্যাণকারী টাইটেল প্র্যাকটিক্যালি প্রত্যক্ষ হয়েছে।
সেইজন্য বাপদাদার ডবল ফরেনারদের প্রতি বিশেষ গর্ব হয়। বাপদাদা দেখেছেন যে ডবল
ফরেনার্স সেবার এক অবিরাম চেষ্টায় লেগে আছে, কোনও কোণা যেন বাকি থেকে না যায়!
(মুরলীর মাঝখানে হঠাৎ বাপদাদার সামনে দুই কুমার স্টেজে চলে এলো, যাদের স্টেজ থেকে
নামানো হয়েছে)
আচ্ছা। তোমরা খেলার মধ্যে খেলা দেখেছো। এখন বাপদাদা বলছেন, সাক্ষী হয়ে খেলা দেখেছো,
এনজয় করেছো, এখন এক সেকেন্ডে একদম দেহ থেকে স্বতন্ত্র পাওয়ারফুল আত্মিক রূপে
স্থিত হতে পারো? ফুলস্টপ।
(বাপদাদা অনেক পাওয়ারফুল ড্রিল করিয়েছেন)
আচ্ছা - এই অভ্যাসই সবসময় মাঝখানে মাঝখানে করা উচিত। এই মুহূর্তে কার্যে আসলে, আর
পর-মুহূর্তে কার্য থেকে পৃথক, সাকারী তথা নিরাকারী স্থিতিতে স্থিত হয়ে যাও। এভাবেই
এই একটা অনুভব তোমরা দেখেছো, যখন কোনও সমস্যা থাকবে তখন এইরকমই এক সেকেন্ডে সাক্ষী
দ্রষ্টা হয়ে, সমস্যাকে একটা সাইড সীন মনে করে তুফানকে তোহফা (উপহার) মনে করে তাকে
পার করো। এই অভ্যাস আছে না? ভবিষ্যতে তো এইরকম অভ্যাসের আবশ্যকতা হবে। ফুলস্টপ।
কোশ্চেন মার্ক নয়, এটা কেন হলো, এটা কীভাবে হলো? হয়ে গেছে। ফুলস্টপ আর নিজের ফুল
(full) শক্তিশালী স্টেজে স্থিত হয়ে যাও। সমস্যা নিচে থেকে যাবে, তোমরা উঁচু স্টেজ
থেকে সমস্যাকে সাইড সিন হিসেবে দেখতে থাকবে। আচ্ছা।
চতুর্দিকের সর্ব ভান্ডারে সম্পন্ন আত্মাদের, সদা সবসময় প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ,
সহাস্য আনন্দিত আত্মাদের, সদা বাবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা জীবনে প্রত্যক্ষ করায় এমন
জ্ঞানী তু আত্মাদের, যোগী তু আত্মা-বাচ্চাদের, যারা সদা লক্ষ্য আর লক্ষণকে সমান করে
এমন বাবা সমান আত্মাদের, সদা সবসময় সর্ব ভান্ডারের স্টক করে এবং স্টপ লাগানো তীব্র
পুরুষার্থী শ্রেষ্ঠ আত্মাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার।
বরদান:-
সমস্ত পরিস্থিতিকে শিক্ষক মনে করে তার থেকে পাঠ পড়ে
অনুভাবী মূর্ত ভব
কোনও পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যাওয়ার পরিবর্তে অল্প
সময়ের জন্য তাকে শিক্ষক মনে করো। পরিস্থিতি তোমাকে বিশেষ দুটো শক্তির অনুভাবী
বানায়, এক হলো সহন শক্তি, আরেক হলো মোকাবিলা করার শক্তি। এই দুটো পাঠ পড়ে নাও তবে
অনুভাবী হয়ে যাবে। যখন তোমরা বলেই থাকো যে আমি তো ট্রাস্টি, আমার কিছু নেই, তখন
আবার পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যাও কেন? ট্রাস্টি মানে সবকিছু বাবাকে হস্তান্তরিত করে
দিয়েছো, সেইজন্য যা হবে ভালোই হবে এই স্মৃতিতে নিশ্চিন্ত, সমর্থ স্বরূপে থাকো।
স্লোগান:-
যার মেজাজ (স্বভাব) মিষ্টি হয় সে ভুল করেও কখনো
অন্যকে দুঃখ দিতে পারে না।